শিরকের গুনাহ - শিরক কাকে বলে - Shirk kake bole?


আসসালামু আলাইকুম,, প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাই।
আজকে আমরা আলোচনা করবো ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে যার নাম শিরক। শিরক ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে বড় গুনাহ যে গুনাহ সবথেকে বড় গুনাহ যার উপরে কোন গুনাহ নেই। আল্লাহ তায়ালা সকল গুনাহ চাইলে মাফ করবেন কিন্তু শিরকের গুনাহ তওবা ছাড়া মাফ করবেন না।

এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই আজকে আলোচনা করবো। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত শিরক সম্পর্কে জানা এবং এ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। যদি আমরা শিরক কি তা না জানি তাহলে নিজের অজান্তেই শিরক করে বসবো। তাই অবশ্যই আমাদের শিরক সম্পর্কে জানতে হবে। শিরক কি কেন ও শিরক করলে কি হয় এসব জানা আমাদের সব মুসলিমের জন্য জরুরি। 

শিরক কাকে বলে


শিরক ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যেটি সর্বোচ্চ পাপ বা গুনাহ। যেটি সবচেয়ে বড় গুনাহ হিসেবে ধরা হয়। শিরক হলো আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করা বা অংশীদার সাবস্থ্য করা আর এটিকেই মূলত শিরক বলে। কেউ যদি আল্লাহ তায়ালার জায়গায় অন্য কাউকে দেয় বা আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কেউকে অংশীদার সাবস্থ্য করে তাহলে সে শিরকের গুনাহ গুনাহগার হবে। 

শিরক যে করে তাকে মুশরিক বলা হয়। শিরক করে ফেললে তওবা করে ফিরে আসতে হবে অন্যথায় এই গুনাহ থেকে মাফ পাওয়া যাবে না। 

আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে বলেছেন, 

إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَـٰلًۢا بَعِيدًا ١١٦

নিশ্চয় আল্লাহ মাফ করেন না তাঁর সাথে শরিক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান মাফ করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল। (সূরা নিসা আয়াত: ৪:১১৬) 

তাই শিরক অন্যতম ও সবচেয়ে বড় একটি গুনাহ। 

শিরক কয় ধরনের


শিরক দুই ধরনের একটি বড় শিরক আরেকটি ছোট শিরক। যাকে বলা হয় শিরকে আল আকবার বা বড় শিরক আর শিরকে আল আসগার ছোট শিরক। 

আমরা অনেকে বড় শিরক না করলেও ছোট শিরক ঠিকই করি। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে আমরা সেটি সম্পর্কে অবগত হতে পারি না। তাই নিজের অজান্তেই ছোট শিরক ও বড় শিরক হয়ে যায় আমাদের মাধ্যমে। 

আসুন বড় শিরক আর ছোট শিরকের মধ্যে পার্থক্য জেনে নেই। 

বড় শিরকঃ বড় শিরক তথা শিরকে আকবর এমন একটু গুনাহ যেটি একজন মুসলিমকে মুশরিকে রুপান্তরিত করে। তার ইসলাম হারিয়ে যায় এবং তার সাথে দ্বীনের আর সম্পর্কে থাকে না। কেউ যদি শিরক করে অর্থাৎ শিরকে আকবার করে আর যদি তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে অনন্তকালের জন্য জাহান্নামী হয়ে যাবে। তাই এটি বড় পাপগুলোর মধ্যে প্রধান পাপ। 

শিরকে আকবর তখন হয় তখন হয় যখন আল্লাহ তায়ালা ব্যাতিত কোন বস্তু, ব্যাক্তি, জীব, প্রাণীর উদ্দেশ্যে ইবাদত করা। যাকে বলে গাইরুল্লাহ! গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে মানত, কুরবানী, পশু জবাই, মৃত ব্যক্তি বা কোন জিনকে শিফা রোগমুক্তি দাতা ভাবা, যেসব ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যাতীত কেউ ক্ষমতা রাখে না সেখানে অন্য কাউকে সেই স্থান দেয়া। 

এ সবই শিরকের অন্তর্ভুক্ত আর আল্লাহ তায়ালা এটিকে মাফ করবেন না তওবা ব্যতিত। 

আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে বলেছেন, 

وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَِ

অনুবাদঃ তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, না কোন উপকার। আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। (সূরা ইউনুছ, সূরানং ১০ আয়াতনং ১৮) 

শিরকে আকবরের পর আসে শিরকে আসগার বা ছোট শিরক। আসুন জেনে নেই ছোট শিরক কাকে বলে ও এর প্রকারভেদ,, 

ছোট শিরকের প্রকারভেদ


শিরকে আসগার যেটি ছোট শিরক আর এর হাত ধরেই বড় শিরকে লিপ্ত হয় মানুষ। এটি মুসলিম গোষ্ঠী/মিল্লাত এর গন্ডী থেকে কাউকে খারিজ বা বের করে দেয় না। তবে এটির জন্য দিনশেষে বড় শিরক ঘটে, এটি আক্বীদাগত ভুল-ত্রুটি তৈরি করে একত্ববাদী আক্বীদা নষ্ট করে। এদের মধ্যে দুই ধরনের ভাগ আছে, প্রথমঃ সুস্পষ্ট শিরকি কর্মকাণ্ড কথা কিংবা কাজের মাধ্যমে হয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরূপ যদি বলি আমরা যদি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কিছুর কসম করি তাহলে সেটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদিসে ইরশাদ করেছেনঃ যেকোন ব্যক্তি যদি গাইরুল্লা তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শিরক করল’ 
[সুনানে তিরমিজি হাদিস নংঃ ১৫৩৫/ হাদিসের মান হাসান/সহীহ]

এসব কথার মাধ্যমে শিরক করা। যেমন কেউ যদি বলে “আল্লাহ ও তোমরা যেমন চেয়েছো যেভাবে চেয়েছো” ইত্যাদি! এ সমস্ত কথা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনেকে এই কথা বলতেন অর্থাৎ কেউ এমন বললে তিনি বলেছেন তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ সমতূল্য সাবস্থ্য করেছো? এটি বলতে নিষেধ করলেন এবং বললেন যে “বলো, আল্লাহ তায়ালা এককভাবে তা চেয়েছেন। 
(নাসায়ী শরীফ ও ইবনে আবি হা'তিম ৩৭০৪/৯৭৭) 

এ তো গেলো কথা দ্বারা শিরক করার বিষয় এছাড়াও কর্ম ধারাও শিরকের গুনাহ হয়ে থাকে, 

আমরা অনেকেই কাজের মাধ্যমে শিরকের কবলে পড়ে যাই। যেমন আমাদের জীবনে অনেক ধরনের বিপদ আপদ আসে কিন্তু এই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাদুলি, তাবিজ ইত্যাদি ব্যবহার করা। কেউ যদি এসবকে নিয়ে মনে করে যে এসব বিপদ-মুসিবত মুক্ত করবে তাহলে এটি শিরকে আসগারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কাড়ণ এসব বিপদমুক্ত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেন নি। এই ধরনের উপাদান বিপদ থেকে রক্ষা করবে বলেও আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেন নি।

এটি শিরকে আকবর হয়ে যাবে যদি কেউ বিশ্বাস করে থাকে যে এসব বিপদআপদ থেকে রক্ষা করে। তাহলে এটি বড় শিরকও হবে কারণ এতে আল্লাহ তায়ালার সাথে শরিক করা হচ্ছে কারণ আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা অন্য কিছুর প্রতি অর্পণ করা হচ্ছে যার যেসবের মালিক একমাত্র আল্লাহ। 
আর দ্বিতীয়তঃ মনের শিরক বা গোপন শিরক। যদি কারো মনে নিয়্যত ভিন্ন থাকে কেউ যদি লোক দেখানোর জন্য মানুষের উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত করে তাহলে সেটাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত হবে। মনে মনে যদি ইবাদত আল্লাহর জন্য না হয়ে অন্য কাউকে দেখানো উদ্দেশ্যে হয় যাকে রিয়া বলে সেটিও শিরকের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলে। তাই ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহর। নিয়্যত পরিশুদ্ধ রাখতে হবে লোকদেখানো ইবাদত কবুল তো হবেই না উল্টো শিরক হয়ে যাবে। 

শিরকের গুনাহ


এতক্ষণ যাবৎ আলোচনা করার পর আশাকরি সবাই বুঝতে পারছেন শিরক কত বড় একটি গুনাহ। কেউ যদি বড় শিরক করে আর তওবা না করে তাহলে সে আজীবন জাহান্নামে বসবাস করবে তাহলে ভাবুন কত মারাত্মক একটি গুনাহের নাম শিরক। 

অনেকের ছোট শিরক হয় যা দিনশেষে বড় শিরকে রুপান্তরিত হয়। তাই অবশ্যই আমাদের শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে এবং এই মহাপাপ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। 

অন্য যেকোন গুনাহ আল্লাহ যদি চাহেন মাফ হতে পারে তবে শিরকের ক্ষেত্রে এর কোন উপায় নেই। শিরক করলে মাফ পাওয়ার কোন উপায় নেই যদিনা তওবা করা হয় দুনিয়াতে। নতুবা একজন শিরককারী একজন মুশরিক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং জাহান্নামে আজীবন বসবাস করবে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url