ইলম কাকে বলে - ইলম অর্জনের পদ্ধতি - Eilm Orjon kora



জ্ঞান অর্জনের কোন শেষ নেই। একজন জ্ঞানী আর একজন না জানা ব্যাক্তি কখনো এক হয় নয়। জ্ঞান মানুষের জন্য অবশ্যক। আর এটিকেই বলা হয় ইলম। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিটি মুসলিমের জন্য ইলম অর্জন করা গুরত্বপূর্ণ। আমরা ইলম অর্জন করি না যা আমাদের জন্য দুঃখজনক একটি বিষয়। ইলম অর্জনে গাফলতি করে আমরা নিজেদেরকে ক্ষতির দিকে নিচ্ছি। 

ইলম অর্জনের গুরুত্ব ইসলামে অনেক বেশি। এমনকি নিজের ঈমান আমল ধরে রাখতে ইলমের কোন বিকল্প নেই। কারণ ইলম যদি না থাকে আমরা বিভিন্ন ভাবে বিভ্রান্ত হয়ে যাবো এবং ভুল পথে পা বাড়াবো। তাই আমাদের উচিত ইলম অর্জন করা অন্যথায় আমদের ইবাদত, আমল ত্রুটিপূর্ণ হবে। তাই জ্ঞান অর্জন করার কোন বিকল্প নেই। 

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো ইলম কাকে বলে, ইলম অর্জনের পদ্ধতি কি ইলম কত প্রকার এবং ইলম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কি শিক্ষা দিয়েছেন তা নিয়েও আলোচনা করবো। আসুন জেনে নেই ইলম সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ। 

ইলম কাকে বলে


ইলম অর্থ জ্ঞান। ইসলামিক পরিভাষায় দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনকেও ইলম বলা হয়। শুধু এটিও নয় এছাড়াও সামগ্রীকভাবে সকল জ্ঞানকেই ইলম বলা হয়। ইলম অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,, 

“তালিবুল ইলমি ফারিদাতুন আলা কুল্লি মুসলিম”
যার অর্থঃ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ইলম অর্জন করা ফরজ। 

আমাদের সবার জন্যই দ্বীনের ইলম অর্জন করা ইলম অন্বেষণ করা ফরজ আবশ্যক। 

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বিজ্ঞ আলিমদের মত হচ্ছে,, যখন যার উপর যে ইবাদত ফরজ হবে তখন সেই ইবাদতের সমস্ত জ্ঞান তার জন্য অর্জন করা ফরজ। এটি অনেকটা শিথিল করা হলেও আমাদের জন্য এটাও কষ্টকর। 

এই ব্যাখ্যা মূলত এটাই যে যখন কোন ব্যাক্তির উপর নামাজ ফরজ হয় তখন তার জন্য নামাজ সংক্রান্ত সমস্ত ইলম/জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। অর্থাৎ নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। যখন কারো উপর সিয়াম তথা রোজা ফরজ হয় তখন তার সিয়াম সংক্রান্ত সমস্ত ইলম/জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। যদি কারো যাকাত দেয়ার সামর্থ হয়ে যায় অর্থাৎ যাকাত যার জন্য ফরজ বিধান হয়ে যায় তখন যাকাতের সম্পূর্ণ জ্ঞান/ইলম অর্জন করা ফরজ। যদি কারও হজ্জ করা সামর্থ্য হয় অর্থাৎ তার উপর হজ্জ ফরজ হয়ে যায় তখন তার জন্য হজ্জ সম্পর্কে ইলম তথা জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। কিভাবে হজ্জ করতে হয় কি নিয়ম কোথায় কি করতে হবে সব কিছুর জেনে নিতে হবে। 

শুধু এসবই নয় প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই এমন, যেমন গোসলের ফরজ সুন্নাহ এসব সবই জানা আমাদের জন্য ফরজ। যখন গোসল আমাদের জন্য ফরজ হয় তখন সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ ইলম/জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। কেউ যখন বিবাহ করে তখন বিবাহ সম্পর্কে সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ ইলম/জ্ঞান অর্জন করা তার জন্য ফরজ। এমনি তালাক সংক্রান্ত ইলম অর্জন করাও ফরজ। 

একথায় আমল ইবাদত করতে হলে অবশ্যই ইলম অর্জন করতে হবে। কারণ ইলম অর্জন না করলে আমল/ইবাদত কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য হবে না। সবই বাতিল গণ্য হবে। কারণ কেউ যদি নামাজ, রোজা কিভাবে করতে হয় তা না জানে তাহলে সে ভুলভাবে তা পালন করবে আর ভুলভাবে পালন করলে তার ইবাদতে ভুলত্রুটি থাকবে যার জন্য তাকে কিয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে। 

যদিও আমাদের মুসলিমরা ইলম অর্জন করি না। আমাদের বেশিরভাগ আমল শুনে শুনে শিখা। শুনে শুনেই আমরা মূলত ইসলাম জানি ইসলামকে মানি। কিন্তু এটা উচিত নয়! ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাটাই আমাদের জন্য সর্বোত্তম। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে ইবাদত করলে নাজাত পাবার চান্স বেশি থাকবে কারণ যখন কেউ জেনে ইসলাম মানবে সে অবশ্যই সঠিক টাই মানবে। আর কেউ যদি না জেনে ইসলাম মানে তাহলে তার সেই ইবাদতের অনেক ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে যা ঈমান ও আমল পর্যন্তও ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলবে। 

আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম যে বাণী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাজিল করেছেন সেটি ছিল সূরা ইক্বরার প্রথম আয়াত অর্থাৎ,,, 

“ইক্বরা বিসমি রাব্বিকাল লাজি খালাক” (সূরা ইক্বরা/আলাক আয়াত ১) 

কুরআনের প্রথম শব্দটাই যা সর্বপ্রথম নাজিল হয়েছে সেটি হলো ইক্বরা বা পড়ো। আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম যে কথাটি বলেছেন সেটি “ইক্বরা” পড়। পড়াটা কত গুরুত্বপূর্ণ তা এটি দেখলেই বুঝা যায়। ইসলাম জ্ঞান অর্জন ইলম অর্জন পড়াকে গুরুত্ব দেয় কিন্তু আমরা এসব থেকে দূরে থাকি যা আমাদের জন্য দুঃখজনক ও আমাদের অবনতির কারণ। তাই দ্বীনের ইলম ও সামগ্রীক ইলম অর্জন করা আমাদের জন্য আবশ্যক। 

ইলম অর্জনের পদ্ধতি


দ্বীনের ইলম অর্জন করার অনেক পদ্ধতি আছে আমি চেষ্টা করবো দ্বীন অর্জন কিভাবে করবেন তা কিছু ধারণা দেবার। আপনাদের কিছু টিপস দিব যেখান থেকে ধীরে ধীরে আপনাদের দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জন হতে থাকবে। 

প্রথমে আমাদের কুরআন শিখতে হবে। কুরআনের বিশুদ্ধ তেলওয়াত শিখতে হবে। তবে কুরআনের বিশুদ্ধ তেলওয়াত এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না। কুরআনের অনুবাদ পড়তে হবে তাফসীর পড়তে হবে। একজন উস্তাদের সহবতে গিয়ে তা শিখা যেতে পারে বা অনলাইনেও শিখার নানান কোর্স এখন পাওয়া যায় সেখান থেকে জানা যেতে পারে বা কোন প্রতিষ্ঠানের দরসে শিক্ষা নেয়া যাবে। তবে সাধারণ ব্যক্তিদের বলবো উস্তাদের সহবতে ইলম অর্জন করা। 

যদি পারা যায় আরবী ভাষার টুকটাক নলেজ এচিভ করা। আমরা অন্যান্য ভাষা জানলেও আরবী শিখতে চাই না গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। কিন্তু কুরআনের গভীরে যেতে আরবী শিখা উচিত। 

হাদিস পড়া, বুখারী মুসলিম সবাই প্রথমে পড়তে পারবে না তাই আগে ছোটখাটো হাদিস গ্রন্থ পড়া। যেমন ইমাম নববীর ৪০ হাদিস। রিয়াদুস সলেহীন ইত্যাদি কিতাব পড়া কারও সহবতে যাওয়া ও আস্তে আস্তে হাদিসের গ্রন্থ দারস শুরু করা। 

সীরাত পাঠ, একটু জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সীরাতগ্রন্থ পাঠ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সীরাত পাঠ করা প্রত্যেক টি মুসলিমের জন্য আবশ্যক আমাদের সবার উচিত সীরাত পাঠ করা। আমাদের মধ্যে যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ভালোবাসা আছে সেটার শুরু সীরাত থেকেই হোক। সীরাত পাঠের মাধ্যমে নবী জীবনের কাহিনী গুলি আমরা জানবো ও শিক্ষাগ্রহণ করতে পারবো। 

এরপর পড়া যায় বিশিষ্ট ইসলামীক স্কলারদের বইসমূহ। যেসব বড় বড় আলেম ওলামারা রচনা করে গেছেন। ইমাম ইবনুল কাইয়ুম, উসাইমীন, তাইমিয়া, ত্বকি উসমানী, বিন বাজ, গাজালি ইত্যাদি। আরও অনেকের কিতাবাদী পাঠ করা যেতে পারে তবে কুরআন হাদিস, সিরাত শানে নুযুল তাফসীর এসব আগে পড়তে হবে পাশাপাশি এসবও পড়া যেতে পারে এবং উস্তাদের সহায়তা নিতে হবে। 

ইলম দুই প্রকার


ইলম মূলত দুই প্রকার একটি দ্বীনি ইলম যা নিয়ে এতক্ষণ যাবৎ আমরা আলোচনা করেছি। আর আরেকটি হলো দুনিয়াবী ইলম। আমাদের দুনিয়াবী ও দ্বীনি ইলম দুটিই অর্জন করা উচিত। 

দুনিয়াবী ইলম কিন্তু দ্বীনের বিপরীত নয় দুনিয়াবী ইলম অবশ্যই অর্জন করতে হবে কারণ এসব ইলম দিয়েও ইসলাম ও দ্বীনের খেতমত হয়। আমরা যেহেতু দুনিয়ার বাসিন্দা তাই আমাদের দুনিয়ায় চলতে হলে অবশ্যই দুনিয়াবী জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর দ্বীনি ইলমও অর্জন করতে। যদিও আমরা দ্বীনি ইলমকে গুরুত্ব দেই না যা একদম অনুচিত ও বর্জনীয় কাজ। তাই আসুন ইলম অর্জন করি দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম হই। 

যাযাকাল্লাহ খায়রান


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url