শবে কদর কোনদিন এর আমল ও ফজিলতসমূহ কি কি? - Ramadan Sobe qadar, Sobe kodor
শবে কদর কি ও কেন
রামাদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো হচ্ছে শবে কদরের দিনগুলি। শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবে কদর অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের সন্ধান বা তালাশ করতে হবে।
শবে কদর শব্দটি মূলত ফারসি ভাষার। নামাজ যেমন ফারসি সালাত হলো আরবি। শবে কদরটাও তেমনই ফারসি শব্দ তবে এর আরবি হচ্ছে লাইলাতুল কদর। কুরআন মাজিদেও শবে কদরকে “লাইলাতুল কদর” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাতের অর্থ শবে আর কদরের অর্থ অনেক যেমন সম্মান, মর্যাদা, ভাগ্য ইত্যাদি। এটিকে ভাগ্য রজনী হিসেবে সম্মানিতও বলা হয়। শবে কদর বা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অসীম। হাজার মাসের চেয়েও এটি উত্তম রাত সুবাহানআল্লাহ।
রামাদান শুরু হয় এবং দেখতে দেখতে রামাদান চলেও যায়। তবে এই রামাদানে আমাদের গুনাহ মাফ করানো হয় না। আমরা রামাদান পেয়েও সেটাকে ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারি না। কিন্তু শবে কদরের বিজোড় রাতগুলি যদি অবশিষ্ট থাকে আমাদের কাছে। আমাদের উচিত এখনই প্রস্তুত হওয়া এবং নেমে পড়া ইবাদতে। আল্লাহর কাছ থেকে মাফের এই ই সুযোগ। তানাহলে রামাদান চলে যাবে তবে আমরা গুনাহগার রয়েই যাবো।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,
ওই ব্যক্তির নাক ধুলোধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহসমূহ মাফ করার আগেই তা (রমজান) বিদায় নিল।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,,
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রামাদান মাসের সিয়াম/রোজা পালন করবে, আল্লাহ তায়ালা তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।
তাই রমজান মাস হলো সাওয়াব কামাইয়ের মাস। এই মাস আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাস নিজের গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ হবার মাস। এমন যদি হয় যে রমজান মাস চলে গেলো কিন্তু আমরা আমাদের গুনাহ মাফ করাতে পারলাম না তাহলে তো আমরা হতভাগা। আমাদের মত হতভাগা আর কেইবা হতে পারে।
তাই রমজান যেনো আমাদের গুনাহ মাফের মাস হয় সে জন্য অবশ্যই শবে কদরের তালাশ করতে হবে। শবে কদরের থেকে উত্তম রাত আর কোন রাতই নয়। হাজার মাসের থেকেও শবে কদর শ্রেষ্ঠ লাইলাতুল কদর মর্যাদাবান এবং অবশ্যই এটি ফজিলতপূর্ণ।
শবে কদরে বান্দা যখন আল্লাহ তায়ালার কাছে আত্মসমর্পণ করে সেটা কত বড় পাওয়া তা বলার মত নয়। শবে কদর আমাদের দোয়া গুলিকে কবুল করে আমাদের আমলগুলোকে মর্যাদাবান করে। আলহামদুলিল্লাহ
শবে কদর তথা মর্যাদাপূর্ণ রাত কেন এত ফজিলতপূর্ণ তা হয়তো আপনারা ভালো করেই জানেন। শবে কদর হচ্ছে সেই রাত যে রাতে কুরআন মাজিদ নাজিল করা হয়েছে। কুরআন নাজিলের মাস রমজান আর যে সময়ে কুরআন নাজিল হয়েছে সেটিই শবে কদর।
আল্লাহ তায়ালার বাণী কুরআন যা শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর নাজিল হয়েছে সেই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের জন্যই রমজানের এত মর্যাদা। এই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের জন্যই শবে কদরের এত মর্যাদা এবং এটি এত ফজিলতপূর্ণ রাত বরকতময় রাত। যে রাতে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব আল কুরআন নাজিল করা হয়েছে। এ রাতেই আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদের সরদার জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে দিয়ে প্রিয় নবী যিনি সমস্ত মানবজাতির জন্য রাহমাতুল্লিল আ’লামিন অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে ওহী প্রেরণ করেন। অর্থাৎ পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজিল করেন। সুবাহানআল্লা
এ জন্যই এটি হাজার মাস থেকেও মর্যাদার ও ফজিলতপূর্ণ রাত।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন,,
‘নিশ্চয়ই আমি এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি মর্যাদাপূর্ণ লাইলাতুল কদরে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রাত কী? মহিমান্বিত কদর রাত হাজার মাস থেকেও উত্তম। সেই রাতে ফেরেস্তাগণ হজরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে সমভিব্যহারে অবতরণ করেন; তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহর আদেশ ও অনুমতিক্রমে, সব বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা বা ফজর পর্যন্ত। (সূরা ক্বদর, সূরা নাম্বার: ৯৭)
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,,
হা মীম। শপথ এই সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি এটিকে (কুরআনকে) একটি বরকতময় রাতে নাজিল করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এই রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়সমূহ স্থিরকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা দুখান আয়াত ১ থেকে ৬)
এই কুরআন নাজিলের জন্যই রমজান মাস মর্যাদাপূর্ণ রমজান মাসে কুরআন নাজিল সম্পর্কে ও কি কারণে নাজিল হয়ে সে সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,,
“রামাদান মাস! এটি সেই মাস যে মাসে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের মুক্তির দিশারি ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনরূপে এবং সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী রূপে।” (সূরা আল বাকারা, আয়াত নং: ১৮৫)
লাইলাতুল ক্বদরের রাতে আল্লাহর সেসব বান্দারাই বেশি মর্যাদাবান হিসেবে বিবেচিত হবে যাদের সাথে এই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সাথে সম্পর্ক আছে। যাদের সাথে কুরআনের নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে। যারা কুরআন ও সুন্নাহ (হাদিস) এর আলোকে নিজের জীবন ব্যবস্থা নির্ধারণ ও পরিচালনা করেন। যারা নিজেদের জীবনকে সাজাভে কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে তারাই মূলত সফল।
তো কথা হলো কিভাবে আমরা শবে কদর তালাশ করবো কোন দিন এই শবে কদর পাওয়া যাবে। মূল কথা হলো কুরআন হাদিসে কোথাও স্পষ্ট ভাবে শবে কদর কবে তা বলা হয় নি বরং শবে কদরকে তালাশ করতে হয়। আমরা সচরাচর ২৭ রোজাকে শবে কদর হিসেবে বিবেচিত করি এবং সেই দিনেই বেশি আমল করি যা পুরোপুরি একটু ভুল ধারণা। এই ভুল ধারণার কারণে আপনি না জানতেই শবে কদরকে হাতছাড়া করবেন। তবে হাদিস থেকে সপ্তম ও পঞ্চম রাতের কথা বলা হলেও নিশ্চিত কোন দিন নেই।
এর কারণ হলো ২৭ রমজানই যে শবে কদর রাত তা আসলে ভুল। শবে কদর সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করো। অর্থাৎ রমজান মাসের শেষ দশকের যেকোন বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে তাই সেই রাতগুলোতেই লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে।
২১,২৩,২৫,২৭,২৯ দশদিনের বিজোড় মোট ৫ দিনে শবে কদরকে তালাশ করতে হবে। বিজোড় রাতগুলিকে ইবাদত কুরআন তেলওয়াত ও নানান আমলে আলোকিত করতে হবে। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট তারিখে করা যাবে না। বিজোড় রাতের কোন রাতটি মূলত শবে কদর তা যেহেতু আমরা জানি না সে কারণে আমাদের উচিত শেষ দশকের প্রতিটি রাত বিশেষকরে প্রতিটি বিজোড় রাতে শবে কদরকে তালাশ করা। ২৭ রমজানকে সম্ভব্য তারিখ বলা হলেও সেটি কুরআন হাদিস অনুযায়ী নির্দিষ্ট না বরং প্রতিটি বিজোড় রাতেই শবে কদরকে তালাশ করতে হবে। তবে সম্ভব্য তারিখ ২৭ তারিখকে বলা হয়ে থাকে।
বরকতময় এই রাত পেলে মু’মিন ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে কি দোয়া আযকার করবেন? কি চাইবেন? এ বিষয়ে নানান হাদিস রয়েছে।
একটি হাদিসে বলা হয়েছে,,
আম্মাজান আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি বলুন, আমি লাইলাতুল কদর কোন রাতে হবে তা বুঝলে বা জানতে পারলে, তাতে আমি কোন কি (দোয়া) পাঠ করবো?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি বলবে'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ'ফুয়্যুন তুহিব্বুল আ'ফওয়া ফা'ফু আ'ন্নী।’অনুবাদ: ইয়া আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি শরীফ, মিশকাত শরীফ, ইবনে মাজাহ)
লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের মর্যাদা
শবে কদর বা লাইলাতুল কদরের মর্যাদা ও সম্মান এত বেশি যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শবে কদরকে তালাশ করার জন্য এ রাতকে পাওয়ার জন্য শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন এবং তিনি তার জীবনে কখনোই ইতিকাফ ছাড়তেন না।
তবে আফসোসের বিষয় ইতিকাফ যা মুস্তাহাব তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পালন করা সুন্নতকে আমরা পালন করি না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে জীবনে কখনো ইতিকাফ ছাড়তেন না সেখানে আমরা জীবনে কখনো ইতিকাফ করি না।
কিন্তু যারা ইতিকাফ করলো তারা শবে কদরের আসল স্বাদ পেলো। কারণ যারা ইতিকাফ করে তারা নিশ্চিত শবে কদর পায়।
এ ব্যাপারে প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদিস শরীফে বলেন,,
আমি লাইলাতুল কদরের তলাশ করতার উদ্দেশ্যে রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। পরবর্তীতে আমি রমজানের মধ্যবর্তী ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। অবশেষে আমাকে জানানো হলো অর্থাৎ ওহী প্রেরণ করা হলো যে, লাইলাতুল কদর শেষ ১০ দিনে রয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ইতিকাফ করাকে পছন্দ করবে সে যেন ইতিকাফ পালন করে। তারপর সাহাবারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ইতিকাফে শরিক হন। (সহীহ মুসলিম শরীফ)
লাইলাতুল কদরের ফজিলত কি?
আমরা জানি পবিত্র আল কুরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে বলেই সকল মাসের থেকে রমজান মাস হচ্ছে বেশি বরকতময়, মর্যাদাবান ও ফজিলতপূর্ণ মাস। আর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও মর্যাদাবান রাত হচ্ছে লাইলাতুল কদর কারণ এতে কুরআন নাজিল হয়েছে।
এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি এটি নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরের রাতে। তুমি কি জান লাইলাতুল ক্বদর কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরাঃ কদর, আয়াতঃ ১ থেকে ৩)
এই আয়াতের তাফসীর/ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ নানান বিষয় উল্লেখ করেছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, লাইলাতুল কদরের ইবাদত অন্য হাজার হাজার মাসের ইবাদতের থেকে শ্রেষ্ঠ/উত্তম। (তাফসীরে ইবনে আব্বাস)
এর ব্যাখ্যায় তাবেঈ মুজাহিদ (রঃ) বলেছেন, এ আয়াতের ভাবার্থ হচ্ছে, ‘লাইলাতুল কদরের কুরআন তেলওয়াত,ইবাদত, দুরুদ পাঠ ও অন্যান্য আমল হাজার মাসের ইবাদতের থেকেও উত্তম।
মুফাসসিরে ইকরাম এটিকেই সমর্থন করেছেন। আর এটিই সঠিক। (ইবনে কাসীর)
শবে কদরের আমল কি?
অতএব যারা লাইলাতুল কদরের সন্ধান পাবে সে যেনো সেই রাতকে ইবাদত, আমল ও দোয়া আযকার করে কাঁটায়। আর এটিই শবে কদরকে কাজে লাগানোর পথ। আসুন কয়েকটি আমল সম্পর্কে জানি।
১) নফল ইবাদত অর্থাৎ নফল নামাজ পড়া।
২) মসজিদে প্রবেশ করার কর দুই রাকাত তাহিয়াতুল মাসজিদ বা দুখুলিল মাসজিদের নামাজ পড়া।
৩) দুই দুই বা মাসনা মাসনা করে নামাজ পড়া। মাগরিবের নামাজের পর ৬ রাকাত পড়া যেতে পারে। আউ-ওয়া-বিনের নামাজ পড়া।
৪) বিজোড় রাতগুলিতে অবশ্যই তারাবিহ পড়া কারণ ইবাদত বাড়াতে হবে।
৫) রাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া কমপক্ষে সেহেরির সময় উঠে আদায় করে নেয়া। যতটুকু পারা যায়।
৬) যদি পারা যায় তাহকর সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
৭) চাইলে সালাতুল হাজাত আদায় করা।
৮) চাইলে আরও নামাজ বাড়ানো যেমন সালাতুশ শোকর ও বাদবাকি নফল নামাজ সমূহ আদায় করা।
৯) অবশ্যই কুরআন তেলওয়াত করা এবং যত পারা যায় তত কুরআন তেলওয়াত করতে হবে। কমপক্ষে সূরা কদর, সূরা মুযাম্মিল, সূরা দুখান, সূরা ইয়াসিন, সূরা ত্বহা, সূরা রহমান, সূরা ওয়াকিয়া, সূরা মুদ্দাসির, সূরা কুরাইশ, সূরা মূলক, এ চার কুল যথা: সূরা কাফিরুন,সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পাঠ করা।
১০) যত পারা যায় তত দুরুদ শরীফ পাঠ করা। দুরুদ শরীফ পাঠ করলে মিলমে প্রশান্তি, মিলবে রহমত।
১১) বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। মনকে নরম করে চোখের পানি আল্লাহর কাছ থেকে মাফ চাওয়া খাস দিলে তাওবাহ করা। সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার করা।
১২) যিকির ও আযাকার করা।
১৩) বেশি বেশি দোয়া পাঠ করা। কুরআন সুন্নাহে থাকা দোয়াসমূহ।
১৪) পরিবার, আত্মীয় সজন, পিতা-মাতা, ও মৃতদের জন্য দোয়া করা তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করা, কবর যিয়ারত করা।
১৫) বেশি বেশি সদকা দেওয়া। দান সদকা বাড়িয়ে দেওয়া।
উপরের আমলগুলি করা। অবশ্যই বেশি বেশি আমল করা কারণ আমরা কেউ জানি না আমরা পরবর্তী শবে কদর বা রমজান মাস পাবো কিনা। তাই আমাদের উচিত আমরা রমজান মাস পেলে এবং শেষ দশক পেলে সেই শেষ দশকের বিজোড় রাতে আমলকে বাড়িয়ে দেওয়া ও শবে কদরের তালাশ করা। আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুক। আমিন
শবে কদরের আলামতসমূহ কি?
আসুন জেনে নেই শবে কদরের আলামতসমূহ কি কি। শবে কদরের রাত কিভাবে চিন্থিত করা যায় তার কিছু আলামত নানান স্থানে বর্ণিত হয়েছে।
তার কয়েকটি আলামত হলো,,
১) রাত অনেক অন্ধকারে ছেয়ে থাকবে, অর্থাৎ গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকবে।
২) রাতটিতে বেশি গরম ও থাকবে না আবার বেশি শীত ও থাকবে না। নাতিশীতোষ্ণ অবস্থার মত থাকবে।
৩) সেই রাতে মৃদুমন্দ হাওয়া প্রবাহিত হতে থাকবে।
৪) আর সেই রাতে ইবাদতে বেশি প্রশান্তি মিলবে অন্যদিনের তুলনায় সে রাতে মানুষ বেশি প্রশান্তি ও তৃপ্তি বোধ করবে।
৫) কোন ঈমানদার ব্যাক্তি হয়তো সে সম্পর্কে জানতেও পারে, স্বপ্নের মাধ্যমে।
৬) সেই রাতে বৃষ্টি হতে পারে। সকালে হালকা আলোকরশ্মি সহ সূর্য উদিত হবে। অনেকটা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়।
শবে কদরের রাতে এই আলামত গুলি দেখা যেতে পারে যা শবে কদরের নমুনা হিসেবে চিহ্নিত করা সহজ হবে। তাই এসব আলামত দেখেও শবে কদরকে জানা যেতে পারে।
শবে কদরে যা যা ঘটে
১) এই রজনীতে আল্লাহ তায়ালা সম্পূর্ণ কুরআন মাজিদকে লাউহে মাহফুয থেকে প্রথম আসমানে নাজিল করেন। এছাড়া অন্য আরেকটি মত এমন যে, এ রাতেই কুরআন নাজিল করা শুরু হয়েছে। তার পর দীর্ঘ ২৩ বছরে বিভিন্ন সূরা বা সূরার অংশবিশেষ নানান আয়াত ও নানান সময়ে নানান ঘটনা ও অবস্থার প্রেক্ষাপটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর উপর অবতীর্ণ হয়।
২) এই একটি রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
৩) এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেস্তা অবতরণ করে এবং তারা সেসময় দুনিয়ার মঙ্গল/কল্যাণ, বরকত ও রহমত বর্ষণ করতে থাকে।
৪) এটা শান্তি বর্ষণের রজনী। এ রজনীতে ইবাদত বন্দেগী করলে সেসব বান্দাদেরকে ফেরেস্তারা জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তির বাণী শুনিয়ে থাকে।
৫) এই রাত্রীর ফাযীলত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাজিল হয়। যার নাম সূরা ক্বদর।
৬) এ রাতে যে নফল নামাজ আদায় করবে সেসব মুমিন বান্দাদের পূর্বের ছগীরা গুনাহসমূহ
ক্ষমা করে দেয়া হয়।
শবে কদর সম্পর্কে রাসুল সাঃ কি বলেছেন?
শবে কদর সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস পড়ে নেই। আসুন জেনে নেই লাইলাতুল কদর সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) কি বলেছেন,,
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করতেন এবং বলতেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকে শবে কদর তালাশ কর।”(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে নেকি-সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদরের মধ্যে রাত জাগবে, তার পূর্ববের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী)
আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন ‘যে ব্যাক্তি রমজান মাসে ঈমানের সাথে ও নেকি লাবের আশাত সিয়াম পালন করে অর্থাৎ রোজা রাখে। তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়, এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে নেকির লাভের আশায় লাইলাতুল কদরের রাত জাগে ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী)
শেষকথা
আসুন রমজানকে কাজে লাগাই। শেষ দশককে কাজে লাগাই। সম্ভব হলে ইতিকাফ করি। শেষ বিজোড় রাত গুলিতে ইবাদতে মশগুল হই। দোয়া করি মাফ চাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ শবে কদরে আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। একইসাথে আমাদের দোয়াগুলি কবুল করবেন।
তাই শবে কদর তালাশ ও ইবাদত করার কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল মুসলিম ভাইবোনদের শবে কদর তালাশ ও এতে ইবাদত বন্দেগী করার তৌফিক দান করুক। যাতে করে আমরা হতে পারি পরিশুদ্ধ। যাতে আমাদের আত্মশুদ্ধি হয় এবং আমরা গুনাহ মুক্ত মুমিন ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা/বান্দি হতে পারি। (আমিন)