কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম | কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো - krimi osud khawar niyom
কৃমি আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর।কৃমি আকারে খুবই ছোট হয়ে থাকে। কৃমি মানুষের অন্ত্র থেকে প্রতিদিন ০.২ মিলিমিটার রক্ত চুষে নিয়ে থাকে। তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারছেন যে কৃমি পেটে থাকলে প্রতিদিন কিছু না কিছু রক্ত শরীর হারিয়ে থাকে। যার ফলে অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। তাছাড়া কৃমির কারণে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট ও ত্বকে চুলকানির মত সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকে।
কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার মাধ্যমে এই সমস্যাটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে অনেকেই আছেন কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। তাই আজকের পোস্টে কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম, কৃমির ট্যাবলেট কয়টা খেতে হয়, কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো, কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় এই বিষয়গুলো নিয়ে জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-
কৃমি কি?
কৃমি হচ্ছে মানুষের দেহে বসবাসকারী এক ধরনের পরজীবী। কৃমি সাধারণত মানুষের অন্ত্রে
বাস করে থাকে। কৃমি রক্ত চুষে খাওয়ার পাশাপাশি মানুষের শরীরে পুষ্টিহীনতার সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। যদি কারো পেটে কৃমি থাকে তাহলে সে অনেক ভালো মানের খাবার দাবার খেলেও তার শরীরের কোন উন্নতি হবে না।
কৃমি কি ক্ষতি করে থাকে
কৃমি মানব দেহের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করতে পারে।নিচে কৃমির কারণে মানুষের যে সকল সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকে তা উল্লেখ করা হলো:-
➡️ বমির সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে
➡️ রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে।
➡️ পেট ব্যথা ও শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
➡️ ওজন কমে যেতে পারে
➡️ পেট ফাঁপা বা ক্ষুধামাদ্য হতে পারে।
➡️জন্ডিস ও অন্ত্রনালী ছিদ্র হতে পারে
সাধারণত কৃমির কারণে মানবদেহে এই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হতে পারে।
কৃমি কি কারনে হয়?
কৃমি হঠাৎ করে হয় না কৃমির হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে। কৃমি বিভিন্ন উপায়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে ধীরে ধীরে এর বংশবিস্তার করে থাকে। কৃমির ডিম সাধারণত বিভিন্ন স্থানে যেমন বাতাস, বাথরুম, খাবার, পানি, ও পশুপাখির শরীরে ছড়িয়ে থাকে। তাছাড়া কৃমির লার্ভা মানুষের ত্বক দিয়েও শরীরে প্রবেশ করতে পারে। শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে এগুলো ব্যাপক বংশবিস্তার করা শুরু করে দেয়।
তারা বেশিরভাগ সময়ে খালি পায়ে হাঁটাচলা করে থাকে ও অপরিষ্কার স্থানে বেশি ঘোরাঘুরি করে তাদের কৃমির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া ফল ও শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে না খেলে তাদেরও কৃমির সমস্যা হতে পারে।
কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
প্রতি তিন মাস পর পর পরিবারের সকলেই অ্যালবেনডাজল বরি সেবন করতে হবে।এই বরি পরিবারের সকল সদস্যদের কে পরপর তিনদিন খেতে হবে। তারপরে সাত দিন হয়ে গেলে আরেকটি ডোজ খেতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে সিরাপ খাওয়াতে হবে। তাছাড়া শিশুর বয়স যদি দুই বছরের কম হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো উচিত।
বড়দের কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম
বড়দের কৃমির ট্যাবলেট ও ছোটদের কৃমির ট্যাবলেট একই। কৃমির ক্ষেত্রে সাধারণত আমাদের দেশে দুইটি ট্যাবলেট বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।অ্যালবেনডাজল ও মেবেনডাজল। পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর একটি করে অ্যালবেনডাজোল বরি রাতে ঘুমানোর আগে খেতে পারেন। তাছাড়া কেউ চাইবে প্রতি তিন মাস পর পর মেবেনডাজোল বড়ি খেতে পারেন। মেবেনডাজোল খেলে পরপর তিনদিন এই বরি খেতে হবে।
শিশুদের কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম
শিশুদের কৃমির সমস্যাটা সাধারণত বেশি হয়ে থাকে। শিশুদের উঠতি বয়সে যদি এই সমস্যাটা হয়ে থাকে তাহলে তাদের শরীর গঠনে বাধা সৃষ্টি করে। তাই শিশুদের কৃমির সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ঔষধ খাওয়াতে হবে এবং কৃমির সমস্যা থেকে শিশুকে সকল সময় দূরে রাখতে হবে।
কৃমির ট্যাবলেট কয়টা খেতে হয়
কৃমির ট্যাবলেট পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে তিন মাস পর পর একটি করে খেতে হবে। পরিবারের কোন সদস্য যদি কৃমির ট্যাবলেট না খাই তাহলে কোন কাজ হবে না। তিন মাস শেষ হয়ে গেলে আবার পরবর্তী তিন মাস পর কৃমির ট্যাবলেট খেতে হবে। এক্ষেত্রে অ্যালবেনডাজল বরি রাতে ঘুমানোর আগে একটি খেলেই হবে।
কৃমির ঔষধ কোনটা ভালো । কৃমির ঔষধের নাম ও খাওয়ার নিয়ম
অনেক রোগীর প্রশ্ন রয়েছে কৃমির ঔষধ কোনটা খেলে ভালো হবে। যেহেতু বাংলাদেশে অ্যালবেনডাজল,মেবেনডাজল,লেভামিসোল,আইভারমেকটিন,আইপ্যাড বেন এ,আ্যালমেক্স ট্যাবলেট কৃমির চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে। এই ট্যাবলেট গুলো কৃমি দূর করতে অসাধারণ কাজ করে থাকে। তারপরও আমার কাছে মনে হয় বর্তমানে কৃমির জন্য দারুন দুইটি ঔষধ হলো আলবেনডাজল ও মেবেনডাজোল ট্যাবলেট।বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক ডাক্তার কৃমির চিকিৎসায় এই ট্যাবলেট রোগীদেরকে ব্যবহার করতে বলেন। এরমধ্যে অ্যালবানডাজল ট্যাবলেট ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে তিন মাস পরপর খেতে বলা হয়।
কৃমির ট্যাবলেট কি চুষে খেতে হয় ?
কৃমির ট্যাবলেট অনেক ডাক্তার রোগীদেরকে চুষে খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কৃমির ট্যাবলেট যদি কেউ গিলে খাই তাহলে কোন সমস্যা দেখা দেবে না। কিন্তু কৃমির ট্যাবলেট গিলে খেলে এর সঠিক কার্যকারিতা পাওয়া যায় না। যারা এলামেক্স ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন তাদের অবশ্যই কৃমির ট্যাবলেট চুষে খেতে হবে। তাহলে এই ট্যাবলেটটি ১০০ শতাংশ কাজ করবে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই কৃমি দূর হবে।
কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর কি ভিটামিন খেতে হয় ?
যাদের দীর্ঘদিন কৃমির সমস্যা ছিল তাদের অবশ্যই কৃমির ঔষধ খাওয়ার পর ভিটামিন সিরাপ খেতে হবে। তাহলে তাদের শরীরের ঘাটতি জনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যাবে। যেহেতু কৃমির প্রাদুর্ভাব এর কারনে শরীরে অপুষ্টিজনিত সমস্যা হয়ে থাকে তাই এটা প্রতিরোধ করার জন্য জোভিয়া গোল্ড মাল্টিভিটামিন ঔষধ খাওয়া যেতে পারে। এই ওষুধটি নিয়মিত খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পিরিয়ডের সময় কৃমির ঔষধ খাওয়া যায় ?
অনেকের প্রশ্ন রয়েছে পিরিয়ডের সময় কৃমির ঔষধ খাওয়া যায় কিনা। দীর্ঘদিন ধরে শরীরে কৃমি পোষণ করলে রক্তশূন্যতার সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় যদি পেটে কৃমি থেকে থাকে তাহলে সন্তানের ওজন অনেক কম হয়ে থাকে ও সন্তানের মৃত্যুর হার ১৪ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ঔষধ সেবার করতে হবে। তাহলে সন্তানের কোন ক্ষতি হবে না এবং সুস্থ সন্তান জন্ম নিবে।
কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়
কৃমির সমস্যাকে কখনোই অবহেলা করলে হবে না। কৃমি থেকে অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই কৃমি থেকে দূরে থাকতে বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। যেমন:-
➡️ অপরিষ্কার ও স্যাতসেতে পরিবেশে যাওয়া বন্ধ করতে হবে।
➡️ সকল সময় জুতা পরে চলাফেরা করতে হবে।
➡️ ফল ও শাক সবজি সহ যে কোন জিনিস ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে।
➡️ নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
➡️ শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে ও পায়ের নখ কাটতে হবে।
➡️ নিরাপদ পানি পান করতে হবে।
➡️ পায়খানা করার পর অবশ্যই সাবান ব্যবহার করতে হবে।
এই বিষয়গুলো যদি মাথায় রাখতে পারেন তাহলে কৃমির সমস্যা থেকে আপনার শরীর অনেক দূরে থাকবে।
কৃমি দেখতে কেমন কৃমির ছবি
কৃমি দেখতে কেমন কৃমির ছবি দেওয়া হলো নিছে ।
শেষ কথা, আশা করি ইতিমধ্যে কৃমির ঔষধ খাওয়ার নিয়ম ও কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।