ইসলামে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম | ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা | কালিমা পড়ে বিয়ের নিয়ম - islamic bibaher niyom

বিয়ে হচ্ছে সুস্থ সমাজ নির্মাণের অন্যতম একটি ভিত্তি। আমাদের জীবনের অন্যতম এই বিধান পালনে নবীজির সুন্নত অনুসরণ করা খুবই জরুরী। এর মাধ্যমে আমাদের জীবনে বরকত আসে ও জীবন সুখের হয়ে থাকে। এর জন্য যদি কোন পাত্রী পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে শরীয়ত সম্মত ভাবে সুন্নতি পন্থায় অগ্রসর হতে হবে। আজকের পোস্টে ইসলামের বিবাহ পড়ানোর নিয়ম,ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা ও কালিমা পড়ে বিয়ের নিয়ম নিয়ে কিছু তথ্য জানানো হবে। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-

ইসলামে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম - ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা - কালিমা পড়ে বিয়ের নিয়ম  - islamic bibaher niyom - NeotericIT.com


ইসলামে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম নিয়ে অনেকে জানার আগ্রহ থাকেন , অনেকে বিয়ে করার আগে গুগলে সার্চ করে এই নয়ম সম্পর্কে জানার জন্য । আজকের এই নিওটেরিক আইটির আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে  বিয়ের নিয়ম সম্পর্কে । 

ইসলামে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম - ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা - কালিমা পড়ে বিয়ের নিয়ম  - islamic bibaher niyom - NeotericIT.com

বিবাহ কি ও কেন করা হয়

বিবাহ কি ও কেন করা হয় তা জেনে নিন আগে  বিবাহ বা বিয়ে হলো এক ধরনের সামাজিক বন্ধন যার মাধ্যমে দুজন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে থাকে। বিবাহকে আরবিতে নিকাহ বলা হয়ে থাকে। ইসলামিক শরীয়ত অনুসারে বিবাহ বা নিকাহ এমন একটি চুক্তি যার মাধ্যমে যোগ্য নারী ও পুরুষের মধ্যে শরীয়ত মোতাবেক সম্পর্ক স্থাপন হবে। মানসিক শান্তি ও প্রশান্তির আস্থা হলো বিবাহ।


মুসলিম বিবাহের প্রকারভেদ 

মুসলিম বিবাহের প্রকারভেদ রয়েছে তা জেনে নেওয়া দরকার  ইসলামের দৃষ্টিকোণে বিয়ে পাঁচ ধরনের হতে পারে।নিচে এই পাঁচ ধরনের প্রকারভেদ তুলে ধরা হলো:-

ওয়াজিব বিয়ে: যখন দেহ ও মনে বিয়ের চাহিদা থাকে ও সে উপার্জন করতে সক্ষম হয়ে থাকেন তখন সেই ব্যক্তির বিয়ে করা ওয়াজিব। বিয়ে থেকে বিরত থাকলে গুনাহগার হবে। 

ফরজ বিয়ে:যদি কারো সামর্থ্য থাকার সাথে সাথে এত বেশি চাহিদা থাকে যে সে বিয়ে না করলে হারাম কোন কাজে লিপ্ত হবে। তাহলে তার বিয়ে করা ফরজ। 

সুন্নতি বিয়ে: যদি বিয়ের চাহিদা না থাকে কিন্তু স্ত্রীর অধিকার আদায়ের সামর্থ্য রাখে তাহলে বিয়ে করা সুন্নত। 

নিষিদ্ধ বিয়ে:যদি কারো কখনো আশঙ্কা হয়ে থাকে যে স্ত্রীর অধিকার আদায় করতে পারবে না সেটা দৈহিক হোক অথবা আর্থিক। তাহলে এই ক্ষেত্রে তার জন্য বিয়ে করা নিষিদ্ধ। 

মতভেদ পূর্ণ বিয়ে:যদি চাহিদা ও প্রয়োজন থাকে কিন্তু সামর্থ্য না থাকে তাহলে তার বিয়ে করা নিয়ে অনেকের অনেক মতভেদ পূর্ণ মতামত রয়েছে। আর এই ধরনের বিয়েকে সাধারণত মতভেদপূর্ণ বিয়ে বলে থাকে। 

ইসলামে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম pdf

ইসলামী শরীয়তে বিবাহ পড়ানোর সুন্নতি পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে মুসল্লিদের বিবাহ করানো উচিত। নিচে ইসলামে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম তুলে ধরা হলো:-

  • ইসলামী বিবাহ মসজিদে ও জুম্মার দিন হওয়া উচিত। এতে ঘোষণা ও জনসমাগম অনেক বেশি হয়ে থাকে।তবে চাইলে অন্যান্য দিনও বিবাহ পড়ানো যায়। 
  • বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী অর্থাৎ বর কনে যারা সারা জীবন একসাথে সংসার করবে তাদের বিয়েতে সম্মতি রয়েছে কিনা এটা জেনে নিতে হবে। অর্থাৎ বিয়েতে দুজনেরই সম্মতি থাকতে হবে। 
  • কোনভাবেই জোরপূর্বক করে বিয়ে দেওয়া উচিত নয়। এই নিয়ে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন:- হে ঈমানদাররা তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে। 
  • যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করবেন। তারপরে মেয়ের অভিভাবক বরের সামনে মেয়ের পরিচয় ও মোহরের পরিমাণ উল্লেখ করবেন।তারপরে বিবাহের প্রস্তাবনা পেশ করতে হবে। অথবা অভিভাবকের অনুমতি নিয়ে যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি হবু বরের কাছে বিবাহের প্রস্তাব তুলে ধরতে হবে। এটাকে ইসলামের পরিভাষায় ইজাব বলা হয়ে থাকে। 
  • বিবাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে মেয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া একান্ত আবশ্যক একটি বিষয়। অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কখনোই বিয়ে হবে না। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন -অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোন বিয়ে নেই। 
  • যিনি বিবাহ পড়াবেন তিনি উপস্থিত মজলিসে হবু বরের উদ্দেশ্যে বলবেন যে আমি অমুকের মেয়ে অমুককে এত টাকা মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম, আপনি বলুন কবুল বা বলুন আমি গ্রহণ করলাম। 
  • বিবাহ করানোর সময় অবশ্যই কমপক্ষে দুইজন সাক্ষী সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।বর উচ্চস্বরে কবুল বা আমি গ্রহণ করলাম এটা বলবে। অথবা বর চাইলে এখানে আলহামদুলিল্লাহও বলতে পারে।এইভাবে তিনবার বলা খুবই উত্তম। 
  • স্মরণ রাখতে হবে যে আগে খুতবা পাঠ করতে হবে তারপর ইজাব কবুল বলতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু বরকেই কবুল বলতে হবে। তারপরে কনের কাছ থেকে কোলের অভিভাবক অনুমতি নিবে।এই ক্ষেত্রে বর যদি বোবা হয়ে থাকে তাহলে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ইশারা অথবা লেখার মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হবে। এভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।তারপর সেখানে উপস্থিত সবাই পৃথকভাবে সুন্নতি দোয়া পাঠ করবে। সুন্নতি দোয়াটি হলে: বা রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়ের।
  • বিবাহের খুতবার জন্য নির্দিষ্ট কাঠামোতে হামদ, ছানা অথবা আল্লাহর প্রশংসা করবেন। তারপরে পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করবে। যেমন সূরা নিসা, সূরা আলে ইমরান, এবং সূরা আহযাব। 


এভাবে খুব সহজেই ইসলামী সুন্নতি পদ্ধতিতে বিবাহ পড়ানো যায়। 

আপনি যদি ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম pdf ডাউনলোড করতে চান তাহলে এইখানে ক্লিক করে ডাউনলোড করে নিন । 

ইসলামে বিয়ের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত। ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা

 বিয়ের দ্বারা ঈমানের পূর্ণতা লাভ হয়ে থাকে। তাই একজন মুমিনের জন্য বিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোন কাজ করার আগে অবশ্যই সেই বিষয়ে পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হয় বিবাহের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমন। ইসলামে বিয়ের যোগ্যতা সম্পর্কে জানুন 

মুত্তাকী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে: মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন যে যেমন ভাবে নিজের চরিত্র কে গড়ে তুলবেন সে সেই রকম জীবন সঙ্গিনী পাবেন। আমরা সবাই একটি সুন্দর স্বভাবের জীবনসঙ্গিনী পেতে চাই কিন্তু নিজেরা অনেক গাফেল করে থাকি। এইজন্য আমাদের নিজের চরিত্র ও আমলকে সুন্দর করতে হবে। নিজেকে সকল ধরনের পাপাচার ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে। তাহলে ইনশাল্লাহ 

দ্বীনদার পাত্র পাত্রী খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবেঃ পাত্র ও পাত্রী খুঁজে নেওয়ার জন্য অবশ্যই দ্বীনদার পাত্র-পাত্রী দিকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। এখনকার সমাজে সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে সৌন্দর্যকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে ও ছেলেদের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।কিন্তু ইসলামে দ্বীনদারকে বেশি প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। কেননা দ্বীনদার জীবনসঙ্গী পেলে সুখী হওয়া যাবে। 

বিয়ের আগে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে: বিয়ের আগে অবশ্যই স্বামী স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে তাদেরকে স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে। স্বামী তার স্ত্রীর ইজ্জত ও নিরাপত্তা সহ খাদ্য পোশাক ও যাবতীয় ভরনপোষনের দায়িত্ব পালন করবে।স্ত্রীর কাজ হল তার স্বামীর আনুগত্য হয়ে চলবে ও তার স্বামীর অপছন্দনীয় কাজগুলো থেকে বিরত থাকবে। অর্থাৎ বিয়ের আগে রান্নাবাড়া সহ প্রয়োজনীয় সকল কাজ জেনে নিতে হবে। 

হালাল উপার্জনের চেষ্টা করতে হবে:বিয়ের পর স্ত্রীর যাবতীয় ভরন পোষণের দায়িত্ব স্বামীকে পালন করতে হয়। এজন্য হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে করে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যের দ্বারস্থ হওয়া না লাগে। আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্য না থাকলে ইসলাম কখনোই তাকে বিয়ে করার জন্য উৎসাহিত করে না। 

তালাক প্রদানের মাছআলা জানতে হবে: বিয়ের আগেই আমাদেরকে একজন মুসলিম হিসাবে তালাকের মাসআলা জানতে হবে। এটা না জানলে কোন কথার মাধ্যমে হয়তো তালাক হয়ে যেতে পারে। তাই তালাকের পরে আফসোস না করে আগেই এই বিষয়ে জেনে নিতে হবে । 

পারিবারিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে:বিয়ের আগে একে অপরের শ্বশুরবাড়ির অধিকার ও পর্দা সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। কার সাথে দেখা করা যাবে কার সাথে কথা বলা যাবে ও কার সাথে কথা বলা যাবে না এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। স্ত্রীর জন্য আলাদা একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে যাতে সে সেখানে পর্দার  সহিত থাকতে পারে। আর এই ব্যবস্থা সাধারণত বিয়ের আগেই করে ফেলতে হবে। 

বিয়েতে কবুল বলার নিয়ম 

বিয়েতে কবুল বলার নিয়ম সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। বিয়ের সময় অনেক জোরে জোরে কবুল বলার কোন দরকার নেই। 

ছেলে ও মেয়ে নিজ সম্মতিতে ইজাব কবুল বলবে ও উভয়কে পরস্পর নিজ কানে শুনতে হবে।অভিভাবক অথবা প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিয়ে অনুষ্ঠিত হলে অভিভাবকরা মেয়েকে ছেলের প্রস্তাব বলবে তারপরে মেয়ের কবুল বলার শব্দ শুধু অভিভাবক শুনলেই হবে। 

বিয়ের ইজাব কবুল শোনার জন্য দুজন প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী বা একজন পুরুষ ও দুইজন জ্ঞানবান প্রাপ্তবয়স্ক নারী বিয়ের মজলিসে কবুল নিজ কানে শুনলেও হবে। তাছাড়া কোন ছেলে যদি কোন মেয়েকে সরাসরি প্রস্তাব দেয় আমি তোমাকে বিয়ে করছি বা বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছি। মেয়ে যদি জবাবে কবুল বা আলহামদুলিল্লাহ বলে তবে উল্লেখিত শর্তসাপেক্ষে বিবাহ সম্পন্ন হবে। 


কালিমা পড়ে বিয়ের নিয়ম 

কালিমা পড়ে বিয়ের নিয়মঃ অনেকের মধ্যে কালিমা পড়ে বিয়ে করা যায় এই বিষয়টা সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। কালিমার সাথে বিয়ের কোন সম্পর্ক নেই। তাই কেউ যদি কালেমা পড়ে বিয়ে করতে চাই তাহলে তার বিয়ে কখনোই সুন্নতি পদ্ধতিতে হবে না। বিয়ে পড়ানোর সঠিক নিয়ম রয়েছে অবশ্যই উক্ত সুন্নতি পদ্ধতিতে বিয়ে পড়াতে হবে। 


ইসলামে বিবাহ অনুষ্ঠান 

ইসলামে বিবাহ অনুষ্ঠান  এমন হওয়া উচিত যেখানে কোন ধরনের হারাম কাজ থাকবে না। অর্থাৎ এখানে অশালীন কোন রীতিনীতি পালন করা যাবে না এবং অশালীন কোন কাজ করা যাবে না। বিয়ের অনুষ্ঠানে যদি অশালীন কোন কাজ করা হয় তাহলে এখানে যারা দাওয়াত প্রাপ্ত রয়েছে তারা যদি অংশগ্রহণ করে থাকে তাহলে তাদেরও পাপ বা গুনাহ হবে। তাই অবশ্যই বিয়ের অনুষ্ঠান ইসলামী বিধি নিষেধ অনুযায়ী পালন করা উচিত। 



শেষ কথা, আশা করি আজকের পোস্টটি যারা পড়েছেন তারা ইসলামে বিবাহ করার নিয়ম ও বিবাহ করার যোগ্যতা ও বিবাহের প্রকারভেদ সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন। তারপরেও যদি এই নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন থেকে থাকে বা পোস্টটি পড়ে কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url