সকালে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা | চিরতা খাওয়ার নিয়ম - chirota khawar niyom
খালি পেটে চিরতার পানি খাওয়া আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমরা অনেকেই এটাকে ভেজস ঔষধি হিসেবে চিনে থাকি।চিরতার পানি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করার জন্য দারুন কাজ করে থাকে। চিরতা ফলটি স্বাদে তেতো হলেও এর রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য গুণ। শরীরের মেদ কমানো ও জ্বর কমানো থেকে শুরু করে তারুণ্যতা ধরে রাখতে হলে চিরতা খাওয়া যেতে পারে। নিচে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা, চিরতা খেলে কি হয়, চিরতা কোথায় পাওয়া যায় এই নিয়ে আলোচনা করা হলো। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক:-
সকালে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা - চিরতা খাওয়ার নিয়ম - chirota khawar niyom - NeotericIT.com
সকালে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা
চিরতা বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। কিন্তু অনেকেই চিরতা খেতে পছন্দ করে না তিতকুটে স্বাদের কারণে। চিরতার স্বাদ তিতকুটে হলেও এর উপকারিতা কিন্তু তিতকুটে নয়। নিচে সকালে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা তুলে ধরা হলো:-
হজমের সমস্যা দূর করে থাকে
আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাদের বদহজম বা অ্যাসিডিটির সমস্যা ঘন ঘন হয়ে থাকে। তাছাড়া অনেকের হজমের সমস্যার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ও রয়েছে। তারা চাইলে নিয়মিত সকালে খালি পেটে চিরতার পানি খেতে পারেন। কিছুদিন চিরতার পানি খেতে থাকলে পরিবর্তনটা নিজেই দেখতে পারবেন।
অ্যানিমিয়া দূর করে থাকে
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। রক্তস্বল্পতাকে সাধারণত অ্যানিমিয়া বলা হয়ে থাকে। এই সমস্যা দূর করার জন্য চিরতার পানি দারুন একটি উপাদান হতে পারে।কেননা চিরতার পানি রক্ত উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
শরীর থেকে বাজে কোলেস্টেরল দূর করে ওজন কমিয়ে থাকে
চিরতার পানি সাধারণত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে থাকে। চিরতার পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দিয়ে থাকে যার মাধ্যমে শরীর থেকে বাজে কোলেস্টেরল দূর হয়। যার ফলে শরীরে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় থাকে।তাই যাদের বাড়তি ওজনের সমস্যা রয়েছে তারা সকালে খালি পেটে চিরতার পানি সেবন করতে পারেন।
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে
চিরতা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি উপাদান। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় যেমন চামড়ার ঘা ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সারাতে চিরতা দারুন কাজ করে থাকে। তাছাড়া চিরতার পানি ত্বকে অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দ্রুত সারিয়ে তুলতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে।
রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে থাকে
চিরতা রক্তকে পরিষ্কার করে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তুলতে দারুন কাজ করে থাকে। রক্ত সঞ্চালন বা ব্লাড সার্কুলেশন যত ভালো থাকবে তত তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন। যা সাধারণত আপনারা খুব সহজেই চিরতার পানি পান করার মাধ্যমে করতে পারবেন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
চিরতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য দারুন একটি উপাদান। কেননা চিরতা রক্তে চিনির পরিমাণ কমিয়ে থাকে। তাছাড়া চিরতা ব্লাডে সুগারের লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া নিয়মিত চিরতার পানি খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা অনেক কমিয়ে দেয় যা সাধারণত ডায়াবেটিস কে নিয়ন্ত্রণ করে রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে
চিরতা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে ও শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে। রাতে এক গ্লাস চিরতা পানিতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
এলার্জির সমস্যা দূর করে থাকে
যারা দীর্ঘমেয়াদি এলার্জির সমস্যায় ভুগছেন ও ঔষধ খেয়ে সমাধান পাচ্ছেন না তারা চাইলে চিরতার পানি সেবন করতে পারেন। অনেকের এলার্জির কারণে শরীর লাল হয়ে যায় ও ফুলে যায়। এক্ষেত্রে আপনারা চিরতার পানি নিয়মিত সেবন করতে পারেন তাহলে দেখবেন অনেক উপকার পাচ্ছেন।
চিরতা খাওয়ার নিয়ম
চিরতা সঠিক নিয়মে খেতে পারলে সেটা আমাদের শরীরের জন্য উপকার বয়ে আনবে।চিরতা খাওয়ার নিয়ম (chirota khawar niyom) হলো রাত্রে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস বা সমপরিমাণ পানিতে পাঁচ থেকে সাত গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপরে ঘুম থেকে উঠে সকাল বেলার দিকে ছেঁকে চিরতা ভেজানো পানি পান করতে হবে। আবার চাইলে রাতে বা ঘুমানোর আগে এই পানীয় পান করতে পারেন। তাছাড়া চিরতা খাওয়ার আরও কিছু নিয়ম রয়েছে সেগুলো অবলম্বন করা যেতে পারে:-
১.জ্বর সারাতে সাত থেকে আট কাপ চিরতা সিদ্ধ করার পর সেই পানিকে দুই থেকে তিন কাপ বানাতে হবে।তারপরে সুন্দরভাবে ছেকে নিতে হবে এবং সেই পানি সকালে অর্ধেক ও বিকালে অর্ধেক অর্থাৎ দুই বেলা খেতে হবে।
২.হাঁপানি ও কাশি যদি অনেক বেশি হয়ে থাকে তাহলে এক থেকে দুই গ্রাম চিরতা গুড়ার সাথে সামান্য মধু মিশিয়ে দুই থেকে তিন দিন খাওয়ার মাধ্যমে দ্রুত এই সমস্যা থেকে নিরাময় পাওয়া সম্ভব।
৩.যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা রয়েছে তারা চুল পড়া রোধ করতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম চিরতা রাতে গরম পানির সাথে ভিজিয়ে রেখে দিবেন। তারপরে সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবে এবং সেই পানি দিয়ে চুল সুন্দরভাবে ধুয়ে নিতে হবে। পরবর্তীতে মাথা ভালো করে পরিষ্কার করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। তাহলে চুল পড়ার সমস্যাটি দূর হয়ে যাবে।
চিরতার ক্ষতিকর দিক ও অপকারিতা
চিরতার অপকারিতা বা চিরতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি এই নিয়ে অনেকের জানার আগ্রহ রয়েছে। নিচে চিরতার কয়েকটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করা হলো:-
১.প্রয়োজনের বেশি বা অতিরিক্ত চিরতার রস পান করলে অনেকের বমি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।বমি হওয়ার মাধ্যমে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে তাই অবশ্যই অতিরিক্ত চিরতার রস কখনোই পান করা যাবে না।
২.কখনোই একটানা ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি চিরতা খাওয়া যাবে না এতে করে পরবর্তীতে শরীরে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
৩.যেহেতু চিরতা খাওয়ার ফলে ব্লাড সুগার লেভেল অনেক কমে যায় তাই অবশ্যই এটা খাওয়ার আগে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪.চিরতার রস শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়ানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাওয়ানো উচিত।
চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে
সময়ের সাথে সাথে কিডনি রোগের সংখ্যা যেন বেড়েই চলেছে। কিডনির সঠিক যত্ন না নেওয়ার কারণে অনেকেই কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।মানুষের জীবনযাপনের পরিবর্তন ও নানাবিধ কারণে অনেকের এই সমস্যাটা হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে বা যারা দীর্ঘমেয়াদী কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত তারা চিরতা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবেন। কেননা একটানা অনেকদিন ধরে চিরতা খেলে এটা কিডনির ক্ষতি সাধন করতে পারে।
চিরতা ভেজানো জল খেলে কি হয়
চিরতা ভেজানো জল খেলে অনেক উপকার হয়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্ত পরিষ্কার করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে, চুলকে ঘন ও কালো করে, জ্বর ও সর্দি-কাশির উপশম করে এবং শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে।
চিরতা ভেজানো জল তৈরির উপায় হল:
১. ১০-১৫ গ্রাম চিরতা পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
২. একটি পাত্রে চিরতা পাতা দিয়ে পানি ঢালুন।
৩. পাত্রটি ঢেকে রেখে সারারাত ঠান্ডা করে রাখুন।
৪. সকালে চিরতা পাতাগুলো ছেঁকে ফেলুন।
৫. ভেজানো পানি পান করুন।
চিরতা ভেজানো পানি খেলে যেসব উপকার হয় তা হল:
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
রক্ত পরিষ্কার করে।
ত্বককে উজ্জ্বল করে।
চুলকে ঘন ও কালো করে।
জ্বর ও সর্দি-কাশির উপশম করে।
শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখে।
চিরতা ভেজানো পানি খেতে পারেন সকালে খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে। চিরতা ভেজানো পানি খেলে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। তবে, যদি আপনি কোনও ওষুধ সেবন করেন তাহলে চিরতা ভেজানো পানি খেয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
চিরতা কোথায় পাওয়া যায়
অনেকের প্রশ্ন রয়েছে ভালো চিরতা কোথায় পাওয়া যায় বা চিরতা কোথা থেকে সংগ্রহ করবো। চিরতা গ্রামের রাস্তার আশেপাশে কিংবা বনে জঙ্গলে প্রচুর জন্মাতে দেখা যায়। চিরতা শহরে পাওয়া যায় না বললেই চলে। তবে অনেক দোকান রয়েছে যেখানে চিরতা শুকিয়ে বিক্রি করে থাকে বা অনলাইনে অনেকেই এখন চিরতা বিক্রি করছে। আপনারা অর্ডার দিলে ঘরে বসেই এখন চিরতা হোম ডেলিভারি পেয়ে যাবেন।
চিরতার দাম কত
চিরতা যদি অনেক খোঁজাখুঁজির পরো না পেয়ে থাকেন তাহলে সরাসরি কিনে নিয়ে আসতে পারেন। চিরতা অত্যন্ত তেতো হওয়ার কারণে এর দাম অনেকটা কম।তাই চিরতা অল্প পরিমাণে নিলে আপনারা অনেক দিন খেতে পারবেন।অনলাইনে যদি ১০০ গ্রাম শুকনো চিরতা নিয়ে থাকেন তাহলে ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে পড়বে।
শেষ কথা
আশা করি এতক্ষণে সকালে খালি পেটে চিরতা খাওয়ার উপকারিতা বা চিরতা খেলে কি হয় এই বিষয়ে পরিপূর্ণ ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। তাছাড়া আরো জানতে পেরেছেন চিরতা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে দূরে রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে মাঝেমধ্যে চিরতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।