১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস | ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বক্তব্য - 15 august
১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস আপনারা সকলে জানেন । আপনারা নিশ্চয় ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস সম্পর্কে জানার জন্যই আমাদের এই পেইজে এসেছেন । 15ই আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ স্থান ধারণ করে, কিন্তু কোনো কারণে সাধারণত জাতীয় উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। যদিও অনেক দেশ তাদের স্বাধীনতা বা বিজয়কে তাদের জাতীয় দিবসে স্মরণ করে, বাংলাদেশ ১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে। এই গৌরবময় অনুষ্ঠানটি একটি মর্মান্তিক ঘটনার স্মারক হিসাবে কাজ করে যা জাতির ইতিহাসের গতিপথকে চিরতরে বদলে দিয়েছিল - জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের হত্যাকাণ্ড। এই প্রবন্ধে, আমরা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সেই দুর্ভাগ্যজনক দিন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা, পরবর্তী ঘটনা এবং ১৫ই আগস্টকে শোকের দিন হিসেবে স্মরণ করার তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব ।
১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস - ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বক্তব্য - 15 august - NeotericIT.com
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট - ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের গল্পটি স্থিতিশীলতা, ত্যাগ এবং সংকল্পের একটি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তির ফলে জন্ম নেওয়া পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) পরবর্তী দশকগুলিতে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের দ্বারা নিজেকে প্রান্তিক এবং নিপীড়িত বলে মনে করে। পাকিস্তানের দুই শাখার মধ্যে ভাষাগত, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবির দিকে পরিচালিত করে।
শেখ মুজিবুর রহমান, যাকে প্রায়ই "বঙ্গবন্ধু" (বাংলার বন্ধু) বলা হয়, তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে, বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। তার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব এবং আবেগপ্রবণ বক্তৃতা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে জাগিয়ে তুলেছিল, যারা তাদের নিজস্ব পরিচয় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ক্রমশ আকুল আকাঙ্ক্ষা করছিল।
স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম - ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস
1960 এবং 1970-এর দশকের গোড়ার দিকে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, যা একের পর এক প্রতিবাদ, ধর্মঘট এবং নাগরিক অস্থিরতায় পরিণত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা পদ্ধতিগত বৈষম্য, অর্থনৈতিক শোষণ এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সম্মুখীন হয়। সমঅধিকার, ভাষাগত স্বীকৃতি এবং সম্পদের ন্যায্য অংশের দাবিতে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাঙালির কণ্ঠস্বর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
1970 সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচন স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় চিহ্নিত করে। আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ব্যাপক বিজয় লাভ করে। যাইহোক, পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষ বাঙালি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অনিচ্ছুক ছিল, যার ফলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
অদৃষ্টের দিন - ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস
রাজনৈতিক অস্থিরতার এই পটভূমিতে, 1975 সালের 15ই আগস্ট একটি মর্মান্তিক মোড় নেয় যা চিরতরে বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ পরিবর্তন করে দেয়। একদল অসন্তুষ্ট সামরিক অফিসার, তাদের নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের প্রতি ক্ষোভের কারণে, একটি অভ্যুত্থান ঘটায়। তার বাসভবনে নৃশংস ও গণনামূলক হামলায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করা হয়।
সেই নির্মম রাতের ঘটনা জাতিকে শোক ও শোকের মধ্যে ফেলে দেয়। তাদের প্রিয় নেতাকে হারানো, যিনি অক্লান্তভাবে তাদের অধিকার এবং আকাঙ্ক্ষার পক্ষে ছিলেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বিধ্বংসী আঘাত। দেশ শুধু তার রাজনৈতিক দূরদর্শীই নয়, আশা, স্থিতিশীলতা ও ঐক্যের প্রতীককেও হারিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশকে এক বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে নিমজ্জিত করে। একের পর এক সামরিক অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটে, যার ফলে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়। রাজনৈতিক পটভূমি অস্থিতিশীল ছিল এবং শেখ মুজিবুর রহমান যে আদর্শের জন্য লড়াই করেছিলেন তা অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং ক্ষমতার লড়াই দ্বারা ছেয়ে গেছে।
1996 সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি বেসামরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সামরিক শাসনের একটি উত্তাল সময়ের অবসান ঘটিয়ে। বছরের পর বছর ধরে এই হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করা হয়েছে। 2010 সালে, অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি বিচার শুরু হয়, যদিও আইনি প্রক্রিয়াটি তার সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আরও কয়েক বছর লেগেছিল।
জাতীয় শোক দিবসের তাৎপর্য - ১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস
১৫ই আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত জটিল অথচ প্রয়োজনীয়। এটি শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবার এবং অগণিত অন্যান্য যারা ন্যায়বিচার, সমতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিল তাদের ত্যাগের একটি মর্মস্পর্শী অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে। দিনটি বাংলাদেশি জনগণের স্থিতিস্থাপকতার একটি প্রমাণ, যারা তাদের প্রিয় নেতার স্মৃতিকে সম্মান করে চলেছেন এবং যে নীতির জন্য তিনি দাঁড়িয়েছিলেন তা সমুন্নত রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় শোক দিবস উদযাপন হল একটি উপায় যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম তাদের জাতির স্বাধীনতা ও উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করে এমন সংগ্রাম ও ত্যাগ সম্পর্কে সচেতন হয়। এটি প্রতিফলন, শিক্ষা এবং স্মরণের দিন, সেইসাথে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার আহ্বান।
এই দিনে শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বক্তব্য
প্রিয় বন্ধুরা আপনারা যারা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বক্তব্য তাদের জন্য এই পর্বে কিছু কথা নিয়ে হাজির হলাম । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস আজ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকদের হাতে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, দৌহিত্র রায়হান, তার ছোট ভাই শেখ নাসের, শেখ জামাল, শেখ জাহানারা আর তাদের ৯ বছরের শিশুপুত্র রাসেল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের নেতৃত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে একজন অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল।
জাতীয় শোক দিবসে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করি এবং তার অবদানকে শ্রদ্ধা জানাই। আমরা শপথ করি যে তার আদর্শকে ধারণ করে আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কিছু কর্মসূচি হল:
সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা সভা ও সেমিনার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
আমরা সকলেই এই কর্মসূচি পালনে অংশগ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করব এবং তার অবদানকে শ্রদ্ধা জানাব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তার আদর্শ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আমরা তার আদর্শকে ধারণ করে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয় কত সাল থেকে
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে ১৯৭৫ সাল থেকে পালন করা হচ্ছে।
জাতীয় শোক দিবস ২০২৩
জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। এই দিনটি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার স্মরণে পালিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের নেতৃত্ব দেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণের কাছে একজন অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল।
জাতীয় শোক দিবসে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করি এবং তার অবদানকে শ্রদ্ধা জানাই। আমরা শপথ করি যে তার আদর্শকে ধারণ করে আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস রচনা
আপনি কি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস রচনা খুজতেছেন ?
একজন পরাধীন জাতির মানুষদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা এবং সঠিক নেতৃত্ব দেওয়া সহজ কাজ নয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা সহজেই করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলিতেও তাঁর মানুষদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর ছিল মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার মতো অসাধারণ বজ্রকণ্ঠ। তিনি ছিলেন একজন অনলবর্ষী বক্তা। তাঁর বক্তৃতাগুলি মানুষকে অনুপ্রাণিত করত এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে উৎসাহিত করত।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। তাঁর মৃত্যুতে বাঙালি জাতি শোকাহত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কালো অধ্যায়। ১৫ই আগস্ট জাতির জীবনের এক কলঙ্কময় দিন। এই দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে বাঙালি জাতি।
বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় শোক দিবস :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা। তিনি আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। তিনি আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমরা তার ঋণ কখনই শোধ করতে পারব না। তিনি আমাদের মুক্তির প্রতীক। তিনি আমাদের সকল প্রেরণার উৎস। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। কিন্তু তাকে সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার হত্যা করেছে। এটা ছিল একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা তাকে কখনই ভুলব না। আমরা তার স্মৃতিকে অমর করে রাখব।
১৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন। এই দিনটিতে ঘাতকেরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। এটি ছিল বাঙালি জাতির জন্য একটি বেদনাদায়ক দিন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন মহান নেতা, তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান মানুষ, তিনি সবসময় দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে বাঙালি জাতির অগ্রগতি থামাতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আজও বাঙালি জাতির হৃদয়ে জ্বলজ্বল করছে। আমরা কখনই বঙ্গবন্ধুকে ভুলব না।
১৫ আগস্ট এর প্রেক্ষাপট:
বঙ্গবন্ধু দেশ শাসন করেছিলেন অত্যন্ত সুনির্দিষ্ঠার সাথে। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১১ই জানুয়ারি তারিখ হতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন কার্যকর ছিল। এ সময়ে অর্থাৎ মাত্র ৩ বছর ৮ মাসের মাথায় স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবের একক ও সর্বাত্মক নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ দলীয় সরকারের পতন ঘটে ও নেতত্বের অবসান হয়। নিচে এর জন্য দায়ী কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলো।
সেনাবাহিনীর প্রতি উপেক্ষা: আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি। তারা পাকিস্তান ফেরত সামরিক অফিসারদের প্রতি বৈরী মনোভাব দেখিয়েছিল এবং তাদেরকে পদোন্নতি দেয়নি। তারা প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছিল এবং রক্ষীবাহিনী তৈরি করেছিল, যার উপর তারা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এতে সেনাবাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল। মুজিব সরকারের দুর্নীতি এবং জনপ্রিয়তার হ্রাস সেনাবাহিনীর বিদ্রোহের পথকে প্রশস্ত করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু বিপদগামী অফিসার শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে।
রাজনৈতিক কারণ: ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী সংগঠন করে দেশের সমস্ত দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এতে গণতন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত করা হয়। জনসাধারণের মনে এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়। সংশোধনীর পর দেশে স্বৈরশাসন প্রবর্তন করা হয়। চারটি বাদে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়। জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়। এতে আওয়ামী লীগ সরকার জনসাধারণ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সামরিক অভ্যুত্থান: সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার সরকারের সঙ্গে অসন্তুষ্ট ছিল। সরকার তাদের সঙ্গে ভাল আচরণ করছিল না। জনগণও সরকারের সঙ্গে অসন্তুষ্ট ছিল। সরকারের জনপ্রিয়তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছিল। এই সুযোগে কিছু অসাধু সেনা অফিসার ও স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা করে। তারা নির্মমভাবে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে দেশে অস্থিরতা দেখা দেয়। অনেক মানুষ মারা যায়। অনেক মানুষ আহত হয়। অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারায়। সামরিক অভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
খুনীরা সেদিন যাঁদের হত্যা করে:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের সাথে হত্যা করে সামরিক অফিসারদের একটি দল। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা, বড় ছেলে শেখ কামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল, ভাই শেখ নাসের, ভগ্নিপতি ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী বেবী সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুষ্পুত্র শহদী সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, সামরিক সচিব কর্নেল জামিল আহমেদ এবং ১৪ বছরের কিশোর আবদুল নঈম খান রিনটুসহ ১৬ জনকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায়। এটি একটি গণতন্ত্র ও শান্তিপূর্ণ সমাজের উপর হামলা ছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ একটি অস্থিতিশীল সময়ের মধ্য দিয়ে যায়। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন চলতে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বেদনাদায়ক ঘটনা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন মহান নেতা। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বাংলাদেশের জনগণ তার হত্যাকারীদের বিচারের দাবি করে আসছে। ২০১০ সালে, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা করে। রায়টিতে ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এদের মধ্যে প্রধান আসামী ছিল মেজর জেনারেল রশিদ।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বড় বিজয়। এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে ভয় পায় না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
১৫ই আগস্ট পরবর্তী ঘটনা:
পরবর্তিতে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয়। জনগনের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হবার পর দেশে সামরিক শাসন জারি করা হয়। গণতন্ত্রকে হত্যা করে মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। কেড়ে নেয় জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার। বিশ্বে মানবাধিকার রক্ষর জন্য হত্যাকারীদের বিচারের বিধান। কিন্তু বাংলাদেশে জাতির জনকের আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দেবার জন্য ২৬ শে সেপ্টেম্বর এক সামরিক অধ্যাদেশ (ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স) জারি করা হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নামে এক কুখ্যাত কালো আইন সংবিধানে সংযুক্ত করে সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট করে। খুনিদের বিদেশে অবস্থিত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে করে।
জড়িতদের বিচার কার্যক্রম:
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে হত্যা করা হয়। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৭ সালে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে বিচার শেষে ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার একটি দীর্ঘ ও কঠিন প্রক্রিয়া ছিল। অনেক বাধা ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সরকার এই বিচারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। এই বিচারের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার হয়েছে এবং বাংলাদেশের জনগণ একটি দীর্ঘদিনের অপরাধের জন্য বিচার পেয়েছে।
২০০৯ সালে ২৯ দিন শুনানির পর ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচজন বিচারপতি রায় ঘোষণায় আপিল খারিজ করে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি আপিল বিভাগে আসামীদের রিভিউ পিটিশন দাখিল এবং তিন দিন শুনানি শেষে ২৭ জানুয়ারী চার বিচারপতি রিভিউ পিটিশনও খারিজ করেন। এদিনই মধ্যরাতের পর ২৮ জানুয়ারি পাঁচ ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ঘাতকদের একজন বিদেশে পলাতক অবস্থায় মারা গেছে এবং ছয়জন বিদেশে পলাতক রয়েছে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দাবি ৩৪ বছর পর বাস্তবায়িত হলো।
১৫ ই আগস্ট ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন সেদিন এই ঘৃণিত হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল কয়েকজন তরুণ | অসাধু সেনা কর্মকর্তা। এদের মধ্যে ১২ জন আসামীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। এরা হলেন সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, খন্দকার আবদুর রশিদ, বজলুল হুদা, শরিফুল হক ডালিম, এ এম রাশেদ চৌধুরী, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), এম এইচ এম বি নূর চৌধুরী, আজিজ পাশা (মৃত), মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ও আবদুল মাজেদ। এদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
১৫ আগস্ট নিয়ে শেষ কথা
১৫ আগস্ট প্রতিটি মূহুর্ত ছিল অমানবিক নির্যাতন। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট ছিল বাঙালি জাতির জীবনের একটি কালো অধ্যায়। তাই জাতি এই দিনটি পালন করে শোকের মধ্য দিয়ে। কেননা যিনি জাতির জনক তাঁকেই যদি এভাবে নির্মমভাবে খুন হতে হয় তাহলে এর চেয়ে বড় বেদনার মুহূর্ত ঐ জাতির জন্য আর হয় না। তাই এই দিনটি এ দেশের ১৬ কোটি মানুষ গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে।