আজ বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস | জাতীয় অটিজম দিবস বাংলাদেশ - Autism Awareness Day
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ২রা এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করা হয়। অটিজম হল একটি জটিল বিকাশমূলক অক্ষমতা যা একজন ব্যক্তির যোগাযোগ, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। এই দিবসের লক্ষ্য হল সমাজে অটিজমের স্বীকৃতি, অন্তর্ভুক্তি এবং বোঝার প্রচার করা।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ 2007 সালে 2শে এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। প্রস্তাবটি সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাকে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন উন্নত করতে এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং হস্তক্ষেপকে উত্সাহিত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানায়। তারপর থেকে, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতা এবং বোঝাপড়ার জন্য বিশ্বব্যাপী এই দিনটি পালন করা হচ্ছে।
অটিজম বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে, এবং সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, প্রতি ১৬০ শিশুর মধ্যে একজনের অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার রয়েছে। মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের অটিজম ধরা পড়ার সম্ভাবনা চারগুণ বেশি। অটিজম একটি আজীবন অবস্থা, এবং প্রাথমিক হস্তক্ষেপ অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের জন্য জীবনের মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস 2022-এর থিম হল "কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি: মহামারী পরবর্তী বিশ্বে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ।" COVID-19 মহামারী অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন, বিশেষ করে তাদের শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগকে ব্যাহত করেছে। থিমটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয় যা অটিজম এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সমান সুযোগ প্রদান করে।
বিশ্বব্যাপী অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে অনুষ্ঠান ও কার্যক্রমের আয়োজন করে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন করে। এই ইভেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে সেমিনার, কর্মশালা, তহবিল সংগ্রহকারী এবং সামাজিক মিডিয়া প্রচারাভিযান। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং সহ বিশ্বের অনেক ল্যান্ডমার্ক অটিজম সচেতনতার প্রতি সমর্থন দেখানোর জন্য নীল রঙে আলোকিত করা হয়েছে।
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস সমাজে অটিজম সম্পর্কে বোঝার এবং গ্রহণযোগ্যতা প্রচার করার একটি সুযোগ প্রদান করে। এটি একটি অনুস্মারক যে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিপূর্ণ জীবনযাপন করার এবং তাদের সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার অধিকার রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধি, গ্রহণযোগ্যতা প্রচার এবং সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে, আমরা অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব তৈরি করতে পারি।
অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) একটি স্নায়বিক অবস্থা যা একজন ব্যক্তির যোগাযোগ, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং আচরণকে প্রভাবিত করে। এটি একটি স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, যার মানে এটি ব্যক্তিদেরকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে এবং লক্ষণগুলির তীব্রতা হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে। অটিজমে আক্রান্ত কিছু ব্যক্তির সামাজিক মিথস্ক্রিয়া এবং যোগাযোগে অসুবিধা হতে পারে, অন্যদের পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ বা সীমিত আগ্রহ থাকতে পারে।
অটিজমের জন্য কোন পরিচিত প্রতিকার নেই, তবে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং হস্তক্ষেপ অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এবং তাদের পরিবারের জন্য জীবনের মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। অটিজমের চিকিৎসায় সাধারণত আচরণগত থেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং পেশাগত থেরাপির মতো থেরাপির সংমিশ্রণ জড়িত থাকে। অটিজমের কিছু উপসর্গ যেমন উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা পরিচালনা করার জন্য ওষুধও নির্ধারিত হতে পারে।
বিশ্বব্যাপী অটিজমের ব্যাপকতা থাকা সত্ত্বেও, সমাজে অটিজম সম্পর্কে বোঝার এবং গ্রহণযোগ্যতার অভাব রয়েছে। অটিজম সহ অনেক ব্যক্তি এবং তাদের পরিবার বৈষম্য এবং কলঙ্কের সম্মুখীন হয়, যা তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার অ্যাক্সেসকে সীমিত করতে পারে। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের লক্ষ্য সমাজে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতা, বোঝাপড়া এবং অন্তর্ভুক্তির প্রচার করা।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, অটিজম সচেতনতা এবং অন্তর্ভুক্তি প্রচারের জন্য অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু নিয়োগকর্তা কর্মক্ষেত্রে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য কাজের সুযোগ এবং সহায়তা দিতে শুরু করেছেন। অটিজম স্পিকস এবং অটিজম সোসাইটির মতো অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের এবং তাদের পরিবারের জন্য সংস্থান এবং সহায়তা প্রদান করে এমন অনেক সংস্থা রয়েছে।
সচেতনতা বৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তির প্রচারের পাশাপাশি, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের শক্তি এবং অনন্য গুণাবলী উদযাপন করার একটি সুযোগ। অটিজমে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তির গণিত, সঙ্গীত এবং শিল্পের মতো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী দক্ষতা রয়েছে। এই শক্তিগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং উদযাপন করার মাধ্যমে, আমরা একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারি যা সমস্ত ব্যক্তির অবদানকে মূল্য দেয়।
উপসংহারে, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন যা অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ায় এবং সমাজে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের গ্রহণযোগ্যতা ও অন্তর্ভুক্তির প্রচার করে। এটি একটি অনুস্মারক যে অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিপূর্ণ জীবন যাপন করার এবং তাদের সম্প্রদায়ের অংশ হওয়ার অধিকার রয়েছে। বোঝাপড়ার প্রচার এবং সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে, আমরা অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব তৈরি করতে পারি।
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস কবে পালিত হয়
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৭ সালের ২ এপ্রিলে। এই দিবসটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটি উদ্দেশ্যে - অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে সমাজে একতা, সমন্বয় এবং সহযোগিতা প্রচার করা। এছাড়াও, এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে সম্পর্কিত বিষয়গুলি আলোচনা করে এবং প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত স্তরে অটিজম সম্পর্কিত কাজে জরুরি প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে।
জাতীয় অটিজম দিবস বাংলাদেশ
জাতীয় অটিজম দিবস বাংলাদেশে প্রথম পালিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ২ এপ্রিলে। এই দিনটি অটিজম স্পেক্ট্রাম ডিসঅর্ডার (ASD) সম্পর্কে জাগরুকতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলির কাজের উপযোগিতা করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের অটিজম সম্পর্কে বিভিন্ন অগ্রগামী সংস্থা এই দিবসটি সকলের জানানোর চেষ্টা করে থাকে। এছাড়াও অটিজম দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় এবং সকল ব্যক্তির সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়।
বিশ্ব অটিজম দিবস কবে
বিশ্ব অটিজ দিবসটি প্রতিবছর 2 এপ্রিলে পালন করা হয়। এই দিনটি বিশ্বব্যাপীভাবে সমাজে অটিজম সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য পরিচালিত হয়।
জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস
জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস বাংলাদেশে ৩ ডিসেম্বর প্রতিবছর পালন করা হয়। এই দিনটি প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও সমাজে তাদের সম্মান বৃদ্ধি করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশে এই দিনটি বিভিন্ন কার্যক্রম দ্বারা পালন করা হয়, যেমন র্যালি, সেমিনার, কথোপকথন ইত্যাদি।
প্রতিবন্ধী দিবস কবে
জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস বাংলাদেশে ৩ ডিসেম্বর প্রতিবছর পালন করা হয়।