ছেলে মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় | চুল পড়া রোধে ঔষধ তেলের নাম
চুল পড়ার সমস্যা নিয়ে কমবেশি আমরা সকলেই ভুগে থাকি।যখন প্রতিনিয়ত চুল পড়তে থাকে তখন অনেক খারাপ লাগে।কেননা চুল হচ্ছে আমাদের সৌন্দর্যের আধার। ক্রমাগত চুল পড়ার মধ্য দিয়ে চুল অনেক পাতলা হয়ে যায়।
অনেকে অনেক ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন বা ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করেও চুল পড়ার সমস্যাটার সমাধান করতে পারছেন না। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন চুল পড়া বন্ধ করার উপায় বা কিভাবে খুব সহজেই ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়া বন্ধ করবেন।
চুল পড়া বন্ধ করার প্রাকৃতিক উপায়
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য অনেকে অনেক ধরনের ঔষধ সেবন করে থাকেন। তবে ঘরোয়া বেশ কিছু উপায় রয়েছে যেগুলো অবলম্বন করে চুলের গোড়া শক্ত করে চুল পড়া প্রতিরোধ করা যায়।নিচে চুল পড়া বন্ধ করার কয়েকটি উপায় অবলম্বন করা হলোঃ-
ঘুমানোর আগে নারিকেল তেল দিয়ে চুল ম্যাসাজ করা
রাতে ঘুমানোর আগে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত নারিকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা যেতে পারে। ম্যাসাজ করার ফলে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং এটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।নিয়মিত নারিকেল তেল চুলের ব্যবহারের ফলে চুল পড়ার সমস্যার একেবারে সমাধান হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন
চুলের যত্নে এলোভেরা খুবই উপকারী একটি উপাদান। অ্যালোভেরা জেল চুলে ব্যবহারের মাধ্যমে চুল পড়া রোধ হয় এবং চুল অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। প্রথমে এলোভেরার পাতা নিতে হবে তারপরে জেল বের করে মাথার চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। এইভাবে অ্যালোভেরার জেল চুলে ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে।সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলেই রেজাল্টটা দেখতে পারবেন।এই প্যাকটি শুধুমাত্র চুল পড়া রোধ করে না নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে থাকে।
পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন
পুরুষ ও মহিলাদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় যারা খুজছেন তারা পেঁয়াজের রস ব্যবহার করতে পারেন। পেঁয়াজের রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার যা চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে।প্রথমে একটি বড় পেঁয়াজ নিয়ে সেটি ব্লেড করে পেঁয়াজের রস একটি পাত্রে রাখতে হবে। তারপরে চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ভালোভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। চুলে পেঁয়াজের রস এভাবে ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপরে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। যাদের প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ে থাকে তারা সাপ্তাহে তিনবার পেঁয়াজের রস চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। কিছুদিন ব্যবহারেই চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
মেহেদি পাতা ব্যবহার করতে পারেন
শীতকালে চুল পড়ার সমস্যা অনেক বেড়ে যায়।চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মেহেদী পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলের যত্নে মেহেদী পাতা খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। মেহেদী পাতা চুলের যত্নে কয়েকদিন ব্যবহার করলেই রেজাল্টটা নিজেই দেখতে পাবেন। প্রথমে দুই কাপ মত মেহেদী পাতা নিতে হবে। তারপরে মেহেদি পাতা বেটে সুন্দরভাবে একটি পাত্রে রাখতে হবে। এবার মেহেদি পাতা মাথার সমস্ত চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। এইভাবে ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপরে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।মেহেদি পাতার এই প্যাকটি আপনারা মাসে চারবার ব্যবহার করলেই খুবই ভালো ফলাফল পাবেন।
ডিম ব্যবহার করতে পারেন
ডিম আমাদের শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি চুলের যত্নে এটি কার্যকারী ভূমিকা পালন করে থাকে। ডিমে রয়েছে প্রোটিন জিঙ্ক ও আয়রনের মত উপাদান যা সাধারণত চুল পড়া রোধ করে নতুন চুল গজানোর জন্য সাহায্য করে থাকে।তাই প্রথমে একটি ডিম ভেঙে ডিমের সাদা অংশ একটি পাত্রে রাখতে হবে। তারপর এটি ধীরে ধীরে সমস্ত চুলে লাগিয়ে আস্তে আস্তে মেসেজ করতে হবে। এভাবে ৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল সুন্দরভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
ছেলে মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় - ঔষধ
প্রিয় নিওটেরিক আইটির এই পর্বের মাধ্যমে আপনি ছেলে মেয়েদের চুল পড়া বন্ধ করার উপায় বা ঔষধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন । অনেকে ঘরোয়া উপায়ে চুল পড়ার সমস্যার সমাধান করতে পারেন না তখন ডাক্তারি ওষুধের সন্ধান করে থাকেন। অযত্নের অভাবে যদি চুল পড়ে থাকে তাহলে খুব সহজেই ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বন করে সহজেই চুল গজানো যায়। কিন্তু যাদের শারীরিক কোন ব্যাধি বা শরীরের কোন সমস্যার জন্য চুল পড়ছে তাদেরকে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পর শরীরে কি সমস্যা রয়েছে সেটা চেক করতে হবে বা কি কারণে এত চুল পড়ছে সেটা খুঁজে বের করতে হবে।
অর্থাৎ আপনার চুল পড়ার কারণ যদি হরমোনের কারণে হয়ে থাকে,মাথার ত্বকের সংক্রমণের কারণে হয় তাহলে কিছু পরীক্ষা করার মাধ্যমে নির্ণয় করা যাবে। তখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কিছু ওষুধ দিবে যেগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে চুল পড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং পুনরায় নতুন চুল গজাবে।
চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম বা ঔষধ
চুল পড়া বন্ধ করার জন্য বাজারে এখন অনেক ধরনের তেল পাওয়া যায়। তবে এদের মধ্য থেকে ভালো তেল বাছাই করাটা খুবই জরুরী। কেননা তেলের গুণগত মান যদি ভালো না হয়ে থাকে তাহলে এটি ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হবে।নিচে চুল পড়া বন্ধ করার সেরা চারটি তেলের নাম দেওয়া হলোঃ-
সাউডার উড ওয়েল
চুল পড়া রোধ করার জন্য সাউডার উট অয়েল খুবই কার্যকারী একটি তেল।তেলটিতে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যা সাধারণত খুশকি ও ফ্লাকি স্কাল্পের সমস্যা থেকে চুলকে দূরে রাখে। অর্থাৎ এই তেলটি ব্যবহারের মাধ্যমে স্কাল্পের সঠিক স্বাস্থ্য বজায় থাকে। এই তেলটি আপনারা সপ্তাহে দুইবার নারিকেল তেলের সাথে ব্যবহার করতে পারেন।
ক্যাস্টর অয়েল
চুল পড়া রোধ করার জন্য এবং দ্রুত নতুন চুল গজানোর জন্য ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। চুলের যাবতীয় সমস্যার সমাধান করার জন্য ক্যাস্টর অয়েল অসাধারণ একটি তেল। যাদের চুল পড়ে অনেক পাতলা হয়ে গিয়েছে তারা নারিকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে দুইবার এই প্যাকটি ব্যবহার করলেই চুল পড়া দূর হবে এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে চুল ঘন হয়ে উঠবে।
কালোজিরার তেল
বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে প্রতিদিন একটি মানুষের ৭০ থেকে ১০০ টি চুল পড়া স্বাভাবিক।যখনই এর থেকে বেশি চুল পড়ে তখনই বিষয়টি উদ্যোগের হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের চুল পড়ে কিন্তু নতুন করে চুল গজায় না। এটা সাধারণত তখনই হয় যখন Dht ব্লক হয়ে যায়। অর্থাৎ রক্ত থেকে চুল সঠিক পরিমাণে পুষ্টি পায় না। তাই dht ব্লকের সমস্যা কাটাতে এবং চুল পড়া রোধ করার জন্য কালোজিরার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। কেননা গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে কালোজিরার তেল নিয়মিত ব্যবহারে নতুন চুল গজিয়ে থাকে।
রোজমেরী অয়েল
রোজ মেরি এসেনশিয়াল অয়েল রক্তনালী প্রসারিত করে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। এটি স্কাল্পে সঠিক অক্সিজেন সরবরাহ করে চুলকে পুষ্টি জুগিয়ে থাকে। যার মাধ্যমে চুল পড়া প্রতিরোধ হয় এবং চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয়ে থাকে। তাই চুল পড়া রোধ করার জন্য নারিকেল তেলের সাথে ৫ থেকে ৬ ফোটা রোজমেরি এসেন্সিয়াল অয়েল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে হবে। তারপরে চুলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে এবং হালকা শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
চুল পড়া বন্ধ করার ইসলামিক উপায়
প্রিয় বন্ধুরা এই পর্বে আপনি জানতে পারবেন চুল পড়া বন্ধ করার ইসলামিক উপায় । মুহাক্কিক আলিমদের বক্তব্য হল, কুরআনের নির্দিষ্ট কোনও আয়াতকে ইচ্ছেমত বিশেষ কোনও উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পাঠ করা বৈধ নয় হাদিসের দলিল ব্যতিরেকে। সুন্নত মনে করে এমনটি করা হলে তা বিদআত হিসেবে গণ্য হবে। তবে কুরআন পাঠ করে তার ওসিলায় আল্লাহর কাছে নিজের সমস্যার কথা তুলে ধরে দুআ করা হাদিস সম্মত।
من قرأ القرآن فليسأل الله به. رواه الترمذي، وصححه الألباني.قال رسول الله صلى الله عليه و سلم
قال المباركفوري في تحفة الأحوذي: فليسأل الله به ـ أي فليطلب من الله تعالى بالقرآن ما شاء من أمور الدنيا والآخرة ـ أو المراد أنه إذا مر بآية رحمة فليسألها من الله تعالى، وإما أن يدعو الله عقيب القراءة بالأدعية المأثورة.اهـ
সুতরাং মাথার চুল পড়া রোধ বা চেহারার রং ফর্সা করার উদ্দেশ্যে কুরআনের উপরোক্ত আয়াতের অংশটি পড়ে রুকিয়া করা শরিয়ত সম্মত নয়। বরং চুল পড়া রোধ বা চেহারার রং ফর্সা করার জন্য জমজম পানি পান করার পাশাপাশি তা দ্বারা গোসল করা ও মাথায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
অনুরূপভাবে হাদিস সম্মত রুকিয়া সংক্রান্ত আয়াত ও হাদিসের দুআ পড়ে রুকিয়াও করা শরিয়ত সম্মত। তৎসঙ্গে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে সমস্যা চিহ্নিত পূর্বক তার তার পরামর্শ মোতাবেক বিশেষ কোনও ক্রিম, তৈল বা ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
শেষ কথা
আশা করি আজকের পোস্টে যারা পড়েছেন তারা চুল পড়া বন্ধ করার উপায়, ছেলেদের চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধ,চুল পড়া বন্ধ করার ইসলামিক উপায় এই সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়েছেন।তারপরেও কোন বিষয় সম্পর্কে বুঝতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়ে থাকলে সরাসরি কমেন্টের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনার মূল্যবান প্রশ্নটির খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে উত্তর দেওয়া হবে।