২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হবে কেন ? | সারা বিশ্ব খাদ্য সংকটে - Why will there be a famine in 2023?
বর্তমানে সমগ্র বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশ সহ বহু দেশের মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্য কিনতে পারছে না । তার চেয়েও খারাপ খবর হলো এই সংকট শীঘ্রই কেটে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই । বরং আগামী বছর সমগ্র পৃথিবীতে ভয়াবহ এক দুর্ভিক্ষ তৈরি হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি । বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে 2023 সালের সম্ভাব্য খাদ্যঘাটতির আশঙ্কায় নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে । সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেশ কয়েকবার দুর্ভিক্ষ পূর্ববর্তী প্রস্তুতি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন । শুধু এশিয়া বা আফ্রিকা নয় ইউরোপ-আমেরিকার তথাকথিত উন্নত দেশগুলোতে ও মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য সংকট আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে । সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের আলামত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। 2023 সালে কি সত্যিই ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আসতে যাচ্ছে ? আর যদি দুর্ভিক্ষ আসে তাহলে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের কারণ গুলো কি ? সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে নিওটেরিক আইটির এই পর্বে ।
২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হবে কেন Why will there be a famine in 2023 - NeotericIT.com
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতিমধ্যে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আগামী বছর খাদ্যসঙ্কট জোরালো হবার আভাস দিয়েছেন । জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে 2023 সালে বিশ্বের 45 টি দেশে তীব্র খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে । এসব দেশের প্রায় 20 কোটি মানুষ অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে । দুর্ভিক্ষ প্রবণ দেশ গুলোর মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু দেশ রয়েছে । ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়ার , সোমালিয়া এবং দক্ষিণ সুদানের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হতে পারে । এছাড়া এশিয়া মহাদেশের ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানের খাদ্য নিরাপত্তা ও আশঙ্কাজনক । খাদ্য ঘাটতির ম্ভাবনায় থাকা 45 টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ও আছে । বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রধান বলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে এবং আরেকটি বড় কারণ হবে যুদ্ধ এবং সারের সংকট । তিনি আরো বলেন এটি এমন এক ধরনের সংকট হতে যাচ্ছে যে আমাদের জীবদ্দশায় দেখিনি ।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের রিজার্ভ কমলো কেন ও তার কারণ
বিশ্ব খাদ্য সংকটের কারন
কেন বিশ্ব খাদ্য সংকটে পরবে ? কেন দুর্ভিক্ষ হবে অধিকাংশ দেশে ?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আফ্রিকান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক একটি রিপোর্টে বলেছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সারের ব্যাপক সংকট তৈরি হয়েছে । এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আফ্রিকা মহাদেশের খাদ্য উৎপাদন 20% কমে যাবে । চলতি বছরের জুন মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন 2022 সালে কয়েকটি দুর্ভিক্ষ ঘোষণার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে । এবং 2023 সালে এই পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে । পৃথিবীর 45 টি দেশের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের জন্য বেশকিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে । কারণগুলো হলো ঃ
- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ,
- জলবায়ু পরিবর্তন,
- করোনা মহামারী
- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি
সমগ্র বিশ্বে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ গম বার্লি উৎপাদিত হয় রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বিস্তৃত সষ্য খেতে । শুধু তাই নয় বৈশ্বিক চাহিদার 70 ভাগ সূর্যমুখী তেল আসে এই অঞ্চল থেকে । ইউক্রেনের একাই বিশ্বের 40% সূর্যমুখী এবং 16% ভুট্টা উৎপাদন করে । যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে । ফলে বিশ্বের প্রয়োজনীয় খাদ্য শস্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে । একই কারণে বেশ কিছুদিন আগে ভোজ্যতেলের একটি সংকট তৈরি হয়েছিল । সেই প্রভাবে বাংলাদেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লাগামছাড়া হয়ে ওঠে অবস্থা এখন যেহেতু খুব বেশি স্থিতিশীল নয় তাই আগামী বছর রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে আসা খাদ্যেও বিশাল ঘাটতি থেকে যাবে । রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুধু এই অঞ্চলে নয় বরং সমগ্র বিশ্বের খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখছে ।
বিশ্ব খাদ্য সংকটের কারন সারের দাম বেড়ে যাওয়া
যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সারের দাম অনেক বেড়ে গেছে । এর কারণ হলো সমগ্র বিশ্বের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সারের বিশাল একটি অংশ তৈরি হয় রাশিয়ায় । পৃথিবীর 25 শতাংশ নাইট্রোজেন সার, 22 শতাংশ অ্যামোনিয়া সার, 14% ইউরিয়া এবং ফসফেট সার উৎপাদন করে রাশিয়া। ইউক্রেনেও অনেক ধরনের রাসায়নিক সারের কারখানা রয়েছে । যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলের সার রপ্তানি হয়নি বললেই চলে । শুধু তাই নয় প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও সার উৎপাদনের খরচ অনেক বেড়ে গেছে । আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে খাদ্য এবং সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত 48 টি দেশ কে অতিরিক্ত 9 বিলিয়ন ডলার খরচ করতে হবে । সারের দাম এখন বিশ্ববাজারে অনেক বেশি এবং আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী বছর হয়তো সার পাওয়া যাবে না । পৃথিবীতে যত মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে তার মধ্যে 60% বসবাস করে যুদ্ধ-বিগ্রহ কবলিত এলাকা গুলোতে । ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে যুদ্ধের কারণে খাদ্যঘাটতির কতটা খারাপ হতে পারে । এই যুদ্ধ চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।
আরো পড়ুন ঃ বাংলাদেশের ডলার সংকট
জলবায়ু জনিত কারনে বিশ্ব খাদ্য সংকট
2023 সালের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হলো জলবায়ু জনিত । জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা পৃথিবীতেই খাদ্য উৎপাদন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে । পৃথিবীর কোথাও হয় অতি বন্যা হচ্ছে না হয় অন্য কোন অঞ্চল খরায় ভুগছে । বিশ্বের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ লোক বসবাস করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে । এই অঞ্চলের একশো বিশ কোটিরও বেশি লোক সরাসরি বন্যার ঝুঁকির মধ্যে বাস করে । এর মধ্যে শুধু চীন এবং ভারতের প্রায় 80 কোটি লোক ভয়াবহ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে । কয়েক মাস আগে বাংলাদেশেও অসময়ের বনাই বিপুল পরিমাণ সর্ষের ক্ষতি হয়েছে । শুধু এশিয়া নয় অস্ট্রেলিয়া থেকে নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, পৃথিবীর কোন অঞ্চলে বন্যার প্রকোপ মুক্ত নয় । এর বিপরীতে বহু উর্ভর অঞ্চলে পানির অভাবে ব্যাপক করা দেখা দিচ্ছে । অস্ট্রেলিয়া বন্নার পাশপাশি খরার দিক থেকেও শীর্ষে রয়েছে । দক্ষিণ আমেরিকার খাদ্য রপ্তানিকারক দেশ গুলোতে বিগত এক হাজার এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা তৈরি হয়েছে । চিলিতে প্রায় 13 বছর ব্যাপী মহা খড়া চলমান রয়েছে । এছাড়া মেক্সিকো ব্রাজিল আর্জেন্টিনা বলিভিয়া সহ বেশ কিছু দেশে খরার কারণে ভুট্টা সয়াবিন কফি চিনি এবং তুলার মত চাহিদা সম্পন্ন সর্ষের ঘাটতি তৈরি হয়েছে ।
করোনা মহামারীর কারনে বিশ্ব খাদ্য সংকট
জলবায়ু জনিত কারণ ছাড়াও করোনা মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সেটি এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি । মহামারীর সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে ঘাঁটি তৈরি হয়েছিল তার ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায় । এখনো যে হারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ছে তাতে আগামী বছরের মধ্যে অনেকের জন্যই খাদ্য কেনা কঠিন হয়ে যাবে । শুধু খাদ্যদ্রব্যই নয় সামগ্রিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি খাদ্য ঘাটতির কারণে হতে পারে । খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে । বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে ২০১৯ সালে তুলনায় এখন তাদের পরিচালনা ব্যয় যে পরিমাণ বেড়েছে সেই টাকা দিয়ে প্রতি মাসে তারা আরো 40 লাখ বেশি মানুষকে খাওয়াতে পারত । 2023 সালে বিশ্ব খাদ্য সংকটে পড়লে বাংলাদেশ ও তার থেকে খুব বেশি নিরাপদ থাকতে পারবে না । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্ভিক্ষের বিষয় যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁর সমগ্র বিশ্বের সাথে সম্পৃক্ত লাগামছাড়া মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে । বাংলাদেশের শুধু মূল্যস্ফীতি নয় , ডলার সংকট জ্বালানি সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাও রয়েছে । বাংলাদেশে এবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আমন ধানের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে । একদিকে মূল্যস্ফীতি অন্যদিকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যের সংকট বাংলাদেশকে অনেক বেশি নাজুক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে পৃথিবীর বহু দেশে এখন থেকেই খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করছে । অথবা খাদ্য রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার জন্য বেশি বেশি শুল্ক আরোপ করছে । বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট দেখা দিলে অনেক দেশ খাদ্য রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও জোরালো করতে পারে । তাই আগামী দিনগুলোতে খাদ্যশস্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের উপর নির্ভরশীল হওয়া মোটেও ঠিক হবে না ।
আরো পড়ুন ঃ কাতার বিশ্বকাপ ২০২২
বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ করনীয়
বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করতে হলে এখন থেকেই দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে । খাদ্যাভাব থেকে বাংলাদেশের বাঁচার প্রধান রক্ষাকবচ কৃষি–এ কথা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে। বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বলেছেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা গেলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি খাদ্যপণ্য উচ্চমূল্যে বিশ্ববাজারে রফতানির মাধ্যমে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। একই সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পরিমিত পরিমাণে নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজি ও প্রাণিজ আমিষ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হবে?
২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হবে কেন এই নিয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন গুগলে সার্চ করেই যাচ্ছে । তাদের জন্যই এই আর্টিকেল সাজিয়েছি নিওটেরিক আইটির ওয়েবসাটে । ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হবে কেন ছাড়া ও অনেকে ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ,২০২৩ সালে কি দুর্ভিক্ষ হবে,২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ আসছে,২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে,২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হবে কেন?,২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ শেখ হাসিনা,দুর্ভিক্ষ ২০২৩,২০২৩ সালে আসছে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ,২০২৩ সালের দুর্ভিক্ষ,২০২৩ সালে কি হবে,২০২৩ সালে দেখা দিবে দুর্ভিক্ষ,২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ আসছে প্রধানমন্ত্রী,২০২৩ সালে দেখা দিবে বিশ্বব্যাপী ভয়বাহ দুর্ভিক্ষ,২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ ওয়াজ,দুর্ভিক্ষ,২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষ হবে,২০২৩ সালে হবে দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি লিখে মানুষ সার্চ করে থাকেন গুগলে ।