বাংলাদেশের ডলার সংকট | বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ডলার সংকটের প্রভাব
প্রিয় বন্ধুরা নিওটেরিক আইটি আপনাদের জন্য এই আর্টিকেলে নিয়ে এলো বাংলাদেশের ডলার সংকট ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব । আপনারা যারা নিয়মিত নিওটেরিক আইটিতে আর্টিকেল পড়েন তারা হয়ত এইটা আমাদের ওয়েবসাইটে দেখতে পারবেন কিন্তু অধিকাংশ ভিসিটর গুগল থেকে বাংলাদেশের ডলার সংকট লিখে সার্চ করে আমাদের ওয়েবসাইটে এসেছেন । তাদের জন্য আজকের এই পর্বে আমরা বাংলাদেশের রিজার্ভ কিভাবে কমে গেল এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ।
বাংলাদেশের ডলার সংকট ও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব - Dollar crisis in Bangladesh - বাংলাদেশের ডলার সঙ্কট কতটা ভয়াবহ ?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রায় ২০টি ব্যাংকের কাছে ঋণপত্রের দায় মেটানোর মতো কোনো ডলার নেই। বিভিন্ন পন্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকে প্রয়োজনীয় ডলার না থাকায় গ্রাহকদের ডলার ভাঙিয়ে দায় পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ডলারের সঙ্কট তৈরী হয়েছে। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে ডলারের কোন সঙ্কট নেই। বাস্তবে ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে ঋণপত্র খুলতে ব্যার্থ হচ্ছেন, ফলে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে ঋণপত্র কী এবং ডলার সঙ্কটের কারণে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে কেন সমস্যা হচ্ছে, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে কিকেনকিভাবে র এই পর্বে।
আরো পড়ুন ঃ বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর নিয়ম
বাংলাদেশের ডলার সঙ্কট কতটা ভয়াবহ ?
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেশের প্রায় বৃষ্টি ব্যাংকের কাছে ঋণপত্রের দায় মেটানোর মতো কোন ডলার নেই । বিভিন্ন পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে গিয়ে ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকগুলো । ব্যাংকে প্রয়োজনীয় ডলার না থাকায় গ্রাহকদের ডলার ভাঙিয়ে দায় পরিশোধের চেষ্টা করা হচ্ছে । যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন দেশে ডলারের কোনো সংকট নেই । বাস্তবে সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে ঋণপত্র খুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন । ফলে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে । বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঋণপত্র কি এবং ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে কেন সমস্যা হচ্ছে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হবে ।
এল সি বা ঋনপত্র ( LC ) প্রায় বন্ধ
ঋণপত্র কে বলা হয় লেটার অফ ক্রেডিট ( LC ) । যা সংক্ষেপে এলসি নামে পরিচিত । বৈষিক বাণিজ্য এলসি বা ঋণপত্র অনেক দরকারি একটি বিষয় । কারণ একজন বিদেশী রপ্তানিকারক বাংলাদেশি আমদানিকারকের সম্পর্কে না জেনে বা তার আর্থিক সঙ্গতি সম্পর্কে ধারণা না রেখে মূল্য পরিশোধ করার আগে বিদেশ থেকে পণ্য পাঠাতে চাইবে না । একইভাবে বাংলাদেশী কোন আমদানিকারক বিদেশী কোন রপ্তানিকারককে অন্ধ বিশ্বাস করে পণ্য হাতে পাওয়ার আগেই নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে চাইবে না । এই অবস্থায় ঋণপত্র বার লেটার অফ ক্রেডিট কার্যকরী ভূমিকা রাখে । LC ঋণপত্র হল একজন আমদানিকারকের পক্ষে ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারনামা বা নিশ্চয়তাপত্র । ঋণপত্রে উল্লেখ থাকে যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালামাল সঠিকভাবে আমদানিকারকের কাছে পৌঁছালে আমদানিকারকের ব্যাংক রপ্তানিকারকের ব্যাংক একাউন্টে তার প্রাপ্য অর্থ পাঠিয়ে দিবে । আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অর্থ পরিশোধের যতগুলো পদ্ধতি আছে এলসি সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় । এলসি বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে নিরাপদ সর্বজন গ্রাহ্য অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে হিসেবেও বিবেচিত । বাংলাদেশে রেমিটেন্স এবং রপ্তানি থেকে যে পরিমাণ ডলার আয় করছে দেশের আমদানি ব্যয় এবং গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন । সেজন্য খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা বর্তমানে প্রায় বন্ধ রয়েছে । যে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে এখনো ডলার আছে সেগুলো কমে আসছে । আর এই সংকটের কারণে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বাজার এই অবস্থায় এলসির নিশ্চয়তা দেওয়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে । বাংলাদেশের পণ্য আমদানির পর মূল্য পরিশোধের বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারছে না । তাই বিদেশী অনেক ব্যাংকে এখন বাংলাদেশের জন্য নিজেদের ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিতে শুরু করেছে । পরিচয় গোপন রেখে ব্যাংকের প্রধান জানিয়েছেন বিদ্যমান ডলার সংকট পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ কিন্তু নীতিনির্ধারকরা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারছেন । না প্রতিদিনই কোন না কোন ব্যাংক এলসিডি পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন ।
ব্যাংকে ডলার ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে
ব্যাংকগুলোর ডলার ঘাটতির পরিমাণ বাড়ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহ যে হারে কমছে তাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে ডলার সংকট আরো তীব্র হবে । ব্যাংকগুলোর এল সি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বিদেশি ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশের এলসি নেয়ায় বন্ধ করে দিতে পারেন । সংকট সমাধানে বিকল্প মুদ্রা লেনদেনের চেষ্টা করা হলেও তাতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না । সম্প্রতি চীনা মুদ্রা এলসি খোলার সুযোগ দেওয়া হলেও ব্যাংক এবং গ্রাহক কারো পক্ষ থেকেই তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি । এজন্য বাধ্য হয়ে দেশের আমদানি করা হচ্ছে । সাম্প্রতিক সময়ে এলসি খোলার হার কমলেও পরিষদের হার অনেক বেড়েছে । কারণ এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য আমদানি হয় না । বেশির ভাগই দেনা পরিশোধ হয় কোন দেশে আসার পর । কয়েক মাস আগে যে সমস্ত পণ্য আমদানি করা হয়েছিল সে সবারই মূল্য এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে । বর্তমানে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ এবং ফলের মতো পণ্য আমদানিতে অনেক ক্ষেত্রেই অনুমতি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ এ ধরনের পণ্যের এলসি খোলার খুব কম সময়ের মধ্যেই অন্য দেশে চলে আসেন । তাই এগুলোর মূল্য খুব তাড়াতাড়ি পরিশোধ করতে হয় । বাংলাদেশ ডলার সংকটের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কাছে এলসির মেটানোর মতো অর্থ নেই সেই সাথে 256 মিলিয়ন ডলারের ঘাঁটিতে তৈরি হয়েছে । গ্রাহকদের হিসেবে ধাকা ডলার ভাঙিয়ে এইসব ঘাটতি মেটানো হচ্ছে । তার মানে বিপদে পড়ে ব্যাংকগুলোর সাধারণ মানুষের ডলার খরচ করতে শুরু করেছে । গ্রাহক ডলার ফেরত চাইলে ব্যাংক নিতে পারবে না । একই পরিস্থিতি তৈরি কারণে সোনালি রুপালি ও জনতা ব্যাংক অনেক এলসি দায় পরিশোধের বিলম্ব করছে । রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ব্যাংক রয়েছে ব্যর্থ হওয়ার তালিকায় । অনেক বেসরকারি ব্যাংক ঘাটতি মেটাতে গ্রাহকের ডলার ভাঙতে শুরু করেছে ।
ইসলামী ব্যাংক দায় পরিশোধে ব্যর্থ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর মতো দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক নির্ধারিত সময়ে এলসি দায় পরিশোধ করতে পারেনি দেশের মোট রেমিটেন্স প্রবাহে প্রায় 30 শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে । আবার রপ্তানি আয়ের দিক থেকেও ব্যাংকের অবস্থান সবার শীর্ষে । তারপরও আমদানি দায় পরিশোধ নিয়ে বিপদে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই ব্যাংক । ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয় দেশের কোন ব্যাংকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না । এ কারণে সব ব্যাংকেই কমবেশি সংকট আছে । ডলার সংকটের কারণে বর্তমানে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণপত্র খুলতে পারছে না । শুধু তাই নয় অতীতে বহু ঋণপত্রের দায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠিত অনেক ব্যাংক । এমনকি বহু ব্যাংকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে । ফলে অনেকেই বাইরে থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেনা । যার প্রভাবে স্থানীয় শিল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । আগে যে পণ্য আসার পর টাকা দিতে হতো এখন পণ্য আসার দুই থেকে তিন মাস আগে টাকা দিতে হচ্ছে । এর ফলে বড় ব্যবসায়ীরা দু-একটি এলসি খুলতে পারলে ও মাঝারি এবং ক্ষুদ্র আমদানিকারকদের ব্যবসা প্রায় বন্ধ হবার পথে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী দেশের ব্যাংক গুলো নিজেদের মূলধনের 15% সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ করতে পারে । কিন্তু অনেক ব্যাংকেরই সংরক্ষণের সীমা পরিমাণ ডলার তো দূরের কথা উল্টো কয়েক মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি রয়েছে । বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোন ব্যাংকের ডলার ঘাঁটি অনুমোদিত সীমার বেশি হয়ে গেলে ওই ব্যাংক খেলাপি হতে বাধ্য । সে হিসেবে বাংলাদেশের বহু ব্যাংক এই ঝুঁকিতে রয়েছে । ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাফেদা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠকে বসে দাবি জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা দেওয়া না হলে দেশের অনেক ব্যাংকে এলসি দায় পরিশোধ করতে পারবেনা । রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া না হলেও অন্তত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সব করার সুযোগ চায় তারা । কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এসব দাবির সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে ।
ডলারের বাজার স্মৃতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ডলারের বাজার স্মৃতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে । বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি খোলার পরিমাণ প্রায় 40 শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি দল ব্যাংকের খোলা পর্যবেক্ষণ করছেন কারণ এসব এলসি বাড়ির পত্রের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার হওয়ার একটি বড় সুযোগ থেকে যায় । অনেক ব্যবসায়ী তাদের আমদানি পণ্যের প্রকৃত মূল্য এর চেয়ে অনেক বেশী দামে দেখিয়ে এলসি কোলে । এই অতিরিক্ত অর্থ সহজেই সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যায় । এরকম ভাবে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে বহু অসাধু লোক বিদেশে দামি বাড়ি গাড়িসহ বিলাসী জীবন যাপন করছেন । দুবাই , সিঙ্গাপুর , মালয়েশিয়া , ইংল্যান্ড , আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডায় বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজরা দেশের অর্থ পাচার করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন । টাকা পাচারের কথা আসলেই কানাডার বেগম পাড়ার নাম সবচেয়ে বেশি শোনা যায় । সাধারণত অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অনেকেই দেশে থাকলেও তাদের স্ত্রী সন্তানরা থাকে কানাডায় । অসাধু লোকদের বেগম না যেখানে থাকে সেইসব এলাকার নাম হয়েছে বেগম পাড়া । কানাডা বেগম পাড়া আসলে কোথায় এবং বেগম পাড়া গুলো কিভাবে গড়ে উঠেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে ।