রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পড়ার জন্য আপনারা যারা গুগলে নিয়মিত সার্চ করেই যাচ্ছেন তাদের জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল । আপনাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলে নিয়ে আসলাম গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম । আপনারা অনেকেই রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প,ভালোবাসার গল্প,দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প,রোমান্টিক গল্প,রোমান্টিক ঝগড়া,স্বামী স্ত্রী রোমান্টিক ভালোবাসা গল্প,রোমান্টিক প্রেমের গল্প,খুনসুটি ভালোবাসা,বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প,রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প সকল পর্ব,পিচ্চি বউ রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প,ভালবাসার গল্প,স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প,রোমান্টিক বউ,স্বামী-স্ত্রীর একটি রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প,বিয়ের রাতের গল্প,ভালোবাসার রোমান্টিক ভিডিও ইত্যাদি লিখে গুগলে সার্চ করে থাকেন ।
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম - রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Romantic love story
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম - রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প - Romantic love story আপনারা পড়ার সুবিধার্থে পর্ব হিসেবে ভাগ করে দিয়েছি যাতে আপনারা একদিন এক এক পর্ব পড়তে পারেন ।
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১
#EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖
#লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
#পর্বঃ ১ম
সাহিদ বাবা উঠ।আর কতো ঘুমাবি। কলেজে যাবি না।আজকে তো তোর কলেজের প্রথম দিন।
আমিঃ ওমমম,,, আম্মু তুমি যাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।( ঘুম ঘুম চোখে)
এবার পরিচয় দেই, আমি হলাম সাহিদ হাসান সাহি। এবার অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে। বাবা মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। আমার বড় ভাই আছে নাম হচ্ছে সাইম আহম্মেদ। আমার বাবা হলেন এদেশের টপ বিজনেসম্যান দের একজন। বাবা আর ভাইয়া মিলে আমাদের বিজনেস দেখা শুনা করেন।
আর একটু আগে যিনি আমার ঘুম ভাঙানো তিনি হলেন আমার কলিজার টুকরা আম্মু এবং বেস্ট ফ্রেন্ড।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। খাবার টেবিলে বসতেই আম্মু এসে খাবার বেড়ে দিল।আমি আম্মুকে
জিজ্ঞাসা করলামঃ আম্মু ভাইয়া আর আব্বু কে তো দেখতেছি না।
আম্মুঃ তোর আব্বু আর ভাইয়া অফিসে গেছে।আজকে নাকি জরুরী মিটিং আছে তাই সকালে গেছে।
আমিঃ ওহহ।
নাস্তা শেষ করে আম্মুকে বলে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলাম। বাসা থেকে বের হয়ে আমার বন্ধু রাফিকে ফোন দিলাম,,,,
আমিঃহ্যালো, কোথায় আছিস?
রাফিঃ বাসা থেকে বের হয়েছি। তুই কোথায়?
আমিঃ আমি রাস্তায় আছি।
রাফিঃ আচ্ছা ওয়েট কর।
আমিঃ তাড়াতাড়ি আসিস।
এরপর সিফাত কে ফোন দিয়ে আসতে বললাম।
সিফাত রাফি এবং আমি এই তিন জন হলাম বেস্ট ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে আমরা তিনজন হলাম একেঅপরের ভাইয়ের মতো।
আমাদের তিনজনের মধ্যে যদি কারো সমস্যা হয় তাহলে আমরা তিনজন মিলে সমাধান করি।
এছাড়া আমাদের তিনজনের একটি সংগঠন আছে। যেটার মাধ্যমে গরিব,এতিম, ভিক্ষুক দের সাহায্য করি।
যাইহোক, তিনজন একত্রে হওয়ার পর একটা রিকশা ডাকলাম। রিকশায় তিনজন ধরবেনা। এজন্য সিফাত আমাকে কোলে নিলো।
তাদের তুলনায় আমার ওজন কম হওয়াতে আমি আর না করিনি। আমাদের বাসা থেকে কলেজ বেশি দুরে নয়।
রিকশা করে আসলে আধাঘণ্টা সময়ের মধ্যে আসা যায়।
কলেজের গেটের সামনে রিকশা দাঁড় করালো। আমি নামিয়ে ভাড়া দিলাম। কলেজে ঢুকে দেখলাম বেশ ভালোই কলেজ।
যাজ্ঞে, আমরা এখানে লেখাপড়া করতে এসেছি। কলেজে দেখতে নয়।
তিনজন মিলে ক্লাসে গেলাম।যাইয়ে সামনের একটি বেঞ্চে বসে পড়লাম। আসলে আমার প্রথম বেঞ্চ ছাড়া ভালো লাগেনা।
একটু পর স্যার আসলেন। স্যার এসে সবার সাথে পরিচিত হয়ে আমাদেরও পরিচয় নিলেন।এভাবে প্রতিটা স্যারের সাথে পরিচিত হওয়ার পর ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনে গেলাম কিছু খাওয়ার জন্য।অতঃপর তিনজন কলেজ থেকে বাসায় আসলাম।
বাসায় আসার পর,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২
#EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖
#লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
#পর্বঃ ২য়
বাসায় এসে গোসল করে যোহরের নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে গেলাম।
সন্ধ্যায় উঠলাম। আমি আসলেই একটা ঘুম পাগল😏😏
ঘুমানোর সময় পাশ থেকে কেউ যদি আমর বউকে নিয়ে চলে যায়, তবুও বলতে পারবোনা।তাই বলে আপনারা যেনো চান্স নিয়েন না।আসে লাভ হবেনা।কারণ, এখনো আমি বিয়ে করিনি 😜😜😜😜
যাইহোক, একটু ছাদে গেলাম।তারপর নিচে এসে হালকা নাস্তা করে পড়তে বসলাম।
রাতে পরিবারের সবাই একসাথে ডিনার করলাম। ডিনার শেষে আব্বু আমাকে জিজ্ঞাসা করল,,,
আব্বুঃ প্রথম দিন কেমন কাটলো?
আমিঃ ভালো।
ভাইয়াঃ যাওয়ার সময় অসুবিধা হয়নি তো?
আমিঃ না ভাইয়া।
আব্বুঃ তোমাকে কতো করে বলি গাড়ি ব্যবহার করবে।
আমিঃ না আব্বু ।আমাকে এভাবেই ভালো লাগে।
আব্বুঃ আচ্ছা,,যা ভালো বুঝো।যাও ঘুমিয়ে পড়।
আমিঃ ঠিক আছে।
রুমে এসে একটু ফেসবুক লগইন করলাম।
আসলে আসলে আব্বু আমাকে খুব ভালো বাসে। রিকশা করে যেতে যদি অসুবিধা হয় তাই গাড়ি নিয়ে যাতে বলতেছে।
কি করব বলেন, আমার এসব ভালো লাগে না। সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করি।
ঘুমিয়ে পড়লাম।ফজরে ওঠে না নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।আজকেও আম্মু এসে ডেকে তুলে দিয়ে গেলেন। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে তিনজন একসাথে কলেজে গেলাম।
গেট দিয়ে ঢুকতে যাবো তখন ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। ওমা আমার সাথে একটা মেয়েও পড়ে আছে। তারমানে এর সাথেই ধাক্কা খেয়েছি।
দেখতে তো মাশাআল্লাহ। ক্রাশ খেলাম।
যাইহোক, মেয়েটি কে তুলে বললামঃ সরি।দেখতে পাইনি।
মেয়েটিঃ ইটস্ ওকে। কোন ইয়ার?
আমিঃ ফাস্ট ইয়ার। আপনি?
মেয়েটিঃ সেকেন্ড ইয়ার। সিনিয়র সম্মান দিবে। বলেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।
আমি তো তার ব্যবহার দেখে মুগ্ধ।মনে করেছিলাম, কয়েকটা চড় দিবে। তা না কর কত সুন্দর করে কথা বলল। আমি আবার ক্রাশ খেলাম। আমি একধানে মেয়েটি র চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি।
রাফিঃ কি যে মামা কি হয়েছে?
আমিঃ ক্রাশ খাইছি মামা।
সিফাতঃ কস কি মামা। এই রাফি আমাকে চিমটি দেতো। আমি কোনো স্বপ্ন দেখছি না তো।
সিফাতঃ আহহ,,,
আমিঃ কি হলো রে।
সিফাতঃ ঐ শালা তোকে আমি এতো জোরে চিমটি দিতে বললাম।(রাফি কে বললো)
রাফিঃ তুই বলেছিস ধিরে দিতে।
আমিঃ তোরা পারিসও বটে।
রাফিঃ মামা ট্রিট দিবি কখন?
আমিঃ পরে দিবো আগে ক্লাসে চল।
ক্লাস করার পর ক্যান্টিনে তিনজন মিলে নাস্তা করতেছি।
এমন সময়,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ৩
# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ৩য়
ক্লাস করার পরে তিনজন মিলে ক্যান্টিনে গিয়ে নাস্তা করতেছি এমন সময় মেয়েটি মানে আমার ক্রাশ আসলো😜😜😜
এসে সোজায় আমার পাশে বসলো, আমার হাত পা কাঁপতে শুয়ে করে দিয়েছে।আসলে মেয়েদের প্রতি আমার এলার্জি আছে,, কাছে থাকলেই কেমন জানি ভয় ভয় লাগে🙃🙃🙃
যাইহোক, মেয়েটি কে আমার পাশে বসতে দেখে রাফি আর সিফাত অন্য টেবিলে বসলো।
আমার হাত কাঁপছে দেখে মেয়েটি বললঃ এই যে,মশাই কাপতেছো কেন???
আমিঃ কই নাতো,,,(সত্যি টা বললে মন সম্মান আর থাকবে না)
মেয়েটিঃ বাই দা ওয়ে,, তোমার নাম কি?
আমিঃ সাহিদ হাসান সাহি। আপনার?
মেয়েটিঃ সামিয়া জাহান।
আমিঃ আহা কি নামরে যেমন চেহারা তেমন নাম।আবার ক্রাশ খেলাম,,(বিড়বিড় করে)
সামিয়াঃ কিছু বললে।
আমিঃ কইইই ন নাতো।
সামিয়াঃ তোমার নাম্বার দেও।
আমিঃহোয়াট,,, আমি কেন আপনার মতো ডাইনিকে নাম্বার দিতে যাবো। আমাকে কি ঐ রকম ছেলে মনে হয়,,।( ভাব নিয়ে)
সামিয়াঃ কি বললি,😠😠😠😠
আমিঃকইই কিছু না।এই নিন নাম্বার,০১৭৬৪৪৯****
( এহেরে ভাব নিতে যাইয়ে একটু বেশি রাগাইয়া ফেলেছি,,)
সামিয়াঃ আর শোন কোন মেয়ের সাথে কথা বলবি না এবং চোখ তুলে তাকাবি না।
আমিঃ ঠিক আছে আপু।
সামিয়াঃ আপু বলে ডাকবি না।বুঝলি??
আমিঃ তাহলে কি বলবো।
সামিয়াঃ নাম ধরে ডাকবি।
আমিঃ ঠিক আছে।
সামিয়া কে বিদায় দিয়ে রাফি দের টেবিলে দেখি ওরা দুজন নাই,,
আমি বিল দিতে চাইলে বলল, সামিয়া নাকি দিয়ে গেছে।
ক্যাম্পাসের বকুল গাছের নিচে দেখি ওরা দুজন বসে আছে।
ওদের কাছে যাতেই রাফি বললঃ মামা এতো দেরী হলো কেন?
আমি ওদের কে সব কিছু বললাম।
সিফাতঃ মামা সামিয়া আপি মনে হয় তোকে ভালোবাসে।
আমিঃ তাই যেন হয় মামা দোয়া কর।
ওদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর বাসায় আসলাম।
রোটিং অনুযায়ী আবার সন্ধ্যায় আম্মু ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে একটু ঘুরাঘুরি করতেই আজান দিলো।
নামাজ পড়ে বাসায় এসে পড়তে বসলাম।রাতে ডিনার করে ঘুমাতে যাবো এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো।
দেখি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। প্রথমে ধরলাম না।পরে আবার দিলো ধরলাম না।
আবার দিলো এবার ধরলাম,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম।কে বলতেছেন?
অপরিচিতঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আমি সামিয়া।
আমিঃ এতো রাতে কি জন্য ফোন দিয়েছেন?
সামিয়াঃ কথা বলার জন্য।
আমিঃ আজব তো, আমি এই প্রশ্ন করলাম,।
সামিয়াঃ ওসব বাদ দাও। ডিনার করেছো?
আমিঃ হ্যাঁ। আপনি করেছেন?
সামিয়াঃ হুমম।
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলে রাখে দিলাম।
পরের দিন ক্যাম্পাসে বসে তিনজন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম এমন সময় একটা মেয়ে এসে বললো,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ৪
তিনজন মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম এমন সময় একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলোঃ ভাইয়া অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের রুম কোনটি?
আমিঃ তুমি নতুন নাকি?
মেয়েটিঃ হ্যাঁ।
রাফিঃ আমরাও সেম ইয়ার।
মেয়েটিঃ তাহলে কি আমি আপনাদের বন্ধু হতে পারি।না মানে আমি এখানে নতুন তেমন কেউ পরিচিত নেই।
আমিঃ ঠিক আছে। কিন্তু তুই করে বলতে হবে।
মেয়েটিঃ আচ্ছা।
আমিঃ তোর নাম কি?
মেয়েটিঃ মিম। তোদের?
আমিঃ আমি সাহিদ হাসান সাহি।
রাফিঃ আমি রাফি।
সিফাতঃ আমি সিফাত।
মিমঃ ক্লাসে যাবি না।
আমিঃ হুমম চল।
ক্লাস শেষে বসে থেকে চারজন বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন সামিয়া আমার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে চলে গেল।
আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।
যাইহোক, আড্ডা দিয়ে বাসায় গেলাম। রাতে ঘুমানোর সময় ফেসবুক লগইন করলাম।
একটু পরে সামিয়া ফোন দিলো,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম।আপু কেমন আছেন?
সামিয়াঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ওই আমি তোর কোন কালের আপু লাগি। আমাকে আর আপু ডাকি না😡😡😡😡 ( একদম রেগে)
আমিঃ ঠিক আছে।কি করতেছেন?
সামিয়াঃ বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছি (অস্পষ্ট কর)
আমিঃ কীছু বললেন?
সামিয়াঃ কিছু না। ডিনার করেছো?
আমিঃ হ্যাঁ। আপনি করেছেন?
সামিয়াঃ হ্যাঁ।
কথা বলার পর ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে গেলাম।
দেখি ওরা তিনজন বসে আছে। আমিও মিমের পাশে বসলাম।
চারজন মিলে কথা বলতেছি আর হাসাহাসি করতেছি।
ঠিক তখনি,কোথা থেকে সামিয়া এসে আমার শার্টের কলার ধরে টেনে নির্জনে নিয়ে গেল। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম রাগে সামিয়ার চোখ লাল হয়ে গেছে।
সামিয়াঃ বল তোর এতো কেন মেয়ের সঙ্গে কথা।কই আমার সাথে তো হেঁসে হেঁসে কথা বলিস না😠😠😠
আমিঃ আপনি আমার কে যে আপনার সাথে কথা বলতে হবে।
সামিয়ার মুখ নিমিষেই মলিন হয়ে গেল।
সামিয়াঃ তুমি কি কিছুই বোঝ না।( করুন সুরে)
আমিঃ না বললে কী ভাবে বুঝবো।
সামিয়াঃ দেখো, আমি তোমাকে আমি স্পষ্ট ভাবে বলতেছি, তোমাকে অন্য কোন মেয়ের পাশে দেখলে আমার সহ্য হয়না। তোমাকে অন্য মেয়ের পাশে দেখলে আমার মনে হারানোর ভয় থাকে। এসবের কারণ কি জানো? কারণ টা হলো, আমি তোমাকে ভালবাসি। ( এক নিঃশ্বাসে)
আমিঃ এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি 😏😏😏।,(মনে মনে)
আমিঃ কবে থেকে আমাকে ভালবাসেন?
সামিয়াঃ মনে আছে, একদিন তুমি একটা এতিম খানায় গিয়েছিলে বাচ্চাদের খাবার আর পোশাক দিতে। আমি কোন সেখানে গিয়েছিলাম।
তোমার এই কাজ আমার খুবই ভালো লাগে।তারপর ম্যানেজারের কাছে থেকে জানতে পারি চুমু এখানে নিয়মিত আসো।তখন থেকেই তোমাকে নিয়ে ভাবতে থাকি।
তার কয়েক দিন পরে তোমাকে দেখি, একটা ভিক্ষুকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাইয়ে লাঞ্চ করাতে। তারপর থেকে তোমার প্রতি আমার ভাবনা কে আরো গভীর করে তুলেছে।আর আস্তে আস্তে এই ভাবনা টাই ভালোবাসা য় পরিণত হয়েছে।আর যখন জানতে পারলাম যে এই কলেজেই তুমি ভর্তি হয়েছো।তখন,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ৫
সামিয়াঃ আমি যখন জানতে পারলাম তুমি এই কলেজেই ভর্তি হয়েছো,তখন যে আমি কি পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম তা তোমাকে বোঝাতে পারবোনা। প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।( লক্ষ্য করলাম সামিয়ার চোখের কোনে পানি এসেছে)
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ আমিও যে ভালোবাসি আমার সিনিয়র ক্রাশকে।
সামিয়াঃ সত্যি।আই লাভ ইউ।
বলেই জড়িয়ে ধরলো।
আমিও জড়িয়ে ধরে বললামঃ আই লাভ ইউ টু।
সামিয়া জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে।
আমিঃ এই পাগলি কান্না করতেছেন কেন?
সামিয়াঃ কখনো ছেড়ে যাবে না তো।
আমিঃ যাবো না।আল্লাহ ছাড়া কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
দুজন জড়িয়ে ধরে কথা বলতেছি। হঠাৎ করে কে যেন গলা ঝাড়া দিলো। পিছনে ফিরে দেখি রাফি আর সিফাত দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আর সামিয়া ওদের দেখে সাথে সাথে ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে আছি।
রাফিঃ হয়েছে থাক আপনাকে আর লজ্জা পেতে হবেনা স্যার।
সিফাতঃ আমরা তোর জন্য কতো চিন্তা করেছিলাম।আর তুই এখানে। কর মামা কর সমস্যা নেই।
রাফিঃ ভাবি আমাদের বন্ধু টাকে দেখে রাখেন।
সামিয়াঃ সেটা আর তোমাদের বলতে হবে না।
সিফাতঃ আচ্ছা। কিরে দোস্ত তুই আজকে ক্লাস করবি।
আমিঃ না আজকে আর ক্লাস করব না। ঘুরতে যাব।
রাফি ও সিফাতঃ ঠিক আছে যা।
ওরা চলে গেল।আর আমি সামিয়া কে বললামঃ চলেন পার্কে যাই।
সামিয়াঃ এখনো কি আপনি করে বলবে? তুমি করে বলবা।
আমিঃ ঠিক আছে চলো।
সামিয়া কে নিয়ে একটা পার্কে আসলাম। কোনদিন কোনো মেয়ে সাথে আসিনি। নিজেকে কেমন কেমন মনে হচ্ছে।
যাইহোক, সামিয়া কে নিয়ে অনেক ঘুরলাম।ওকে ওর বাসায় রেখে আমিও আমার বাসায় আসলাম।
রাতে শুয়ে আছি তখন সামিয়া ফোন দিলো।ওর সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে গেলাম।
লেখাপড়া করা, আড্ডা দেওয়া, সামিয়া কে ঘোরাফেরা করা এভাবে চলে গেল একবছর। সামিয়া আর আমার ভালোবাসা টা অনেক গভীর হয়েছে।
আমাদের সম্পর্ক টা আমাদের বাবা মা জেনে গেছে।
আগামীকাল থেকে আমার ইয়ার চেন্জ পরিক্ষা।
আল্লাহর রহমতে এক একে সব পরিক্ষা ভালো ভাবেই দিয়েছি।
আজকে আমার রেজাল্ট দিয়েছে। আমি ফার্স্ট হয়েছি।
আর সামিয়া ওদের ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হয়েছে।
এজন্য আমাদের বাসায় সকলেই খুশি। তাদের কথা যাইহোক, লেখাপড়া ঠিকমতো হচ্ছে তো।
আরেকটা কথা, আমাদের রিলেশনের কথা কলেজের কেউ জানে না। শুধু আমার আর সামিয়ার বান্ধুরা জানে।
আজকে আমার কলেজে আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে।
কলেজে ঢুকতেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেলো। কেননা, কলেজের মাঠে,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ৬
কলেজে ঢুকতেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। কেননা,রিপন সামিয়া কে বাজে কথা বলতেছে আর ওড়না নিয়ে টানাটানি করতেছে।
রিপন হলো এই কলেজের সবচাইতে বেশি বখাটে টাইপের ছেলে।এর আগে আমরা রিপনকে এসব কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করেছি।
যাইহোক, আমি সিফাত কে আমাদের সিক্রেট স্থান থেকে হকিস্টিক গুলো নিয়ে আসতে বললাম।
আমি দ্রুত সামিয়ার কাছে গেলাম। আমাকে দেখে রিপন বলতে লাগলোঃ দেখ সাহিদ তুই আমাদের কাজে বাঁধা দিস না। প্রয়োজনে তুইও আমাদের সাথে ইনজয় করতে পারিস।
রিপনের কথা শুনে রক্ত টগবগ করতে শুরু করলো। সামিয়া কে ওর বান্ধবীদের কাছে রেখে এসে রিপনকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করলাম।
আমি রিপনকে মারতেছি আর ঐদিকে রাফি, সিফাত আরো কয়েকজন মিলে রিপনের বন্ধুদের মারতেছে।
আমাদের কাছে হকিস্টিক থাকায় ওরা আমাদের সাথে পেরে উঠতে পারে নি।
আমি রিপনকে মারতে মারতে ওর মুখ দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছি।
রাফি আর সিফাত এসে আমাকে রিপনের কিছু থেকে সরে নিয়ে গেল আর রিপনকে হাসপাতালে ভর্তি করে দিলো।
আমি আর ক্লাস করলাম না। বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় আসার পর আম্মু জিজ্ঞাসা করলঃ কি হয়েছে?
আমি আম্মুকে সব বলে দিলাম। আম্মু জানে যে আমি কোন অন্যায় সহ্য করতে পারিনা।
বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম। পরদিন সকালে কলেজে গিয়ে জানতে পারলাম যে রিপন অনেক অসুস্থ।
আসলে রিপনের বাবা এই কলেজের সভাপতি হওয়াই তার ছেলে কে মারার জন্য আজকে আমাদের বিচার হবে। হলরুমে বিচার শুরু হলো,,সকল ছাত্র-ছাত্রী রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেছে।কারণ,সকল ছাত্র-ছাত্রী রিপনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। যাইহোক, রিপনের জন্য শাস্তি তেমন দেয়নি। শুধু 50 হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
আজকে ক্লাস শেষে সামিয়া কে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। ঘোরাফেরা করে বাসায় আসলাম।
এভাবে কেটে গেল 15 দিন। আজকে কলেজের ক্যাম্পাসে বসে আছি এমন সময় একটি মেয়ে এসে বললোঃ আমি। কি আপনাদের ফ্রেন্ড হতে পারি।
আমিঃ কোন ইয়ার?
মেয়েটিঃ অনার্স ফার্স্ট ইয়ার।
রাফিঃ জুনিয়র।
মেয়েটিঃ সমস্যা নেই। ভাইয়া বলে ডাকবো।
আমিঃ নাম কি তোমার?
মেয়েটিঃ রিপা।
আমিঃ বন্ধু হতে পারবোনা।তবে ভাইবোন হিসেবে থাকতে পারি।
রিপাঃ সমস্যা নেই।আপু আপনার নাম কি?
(মিমকে বললো)
মিমঃ আমার নাম মিম।
সবাই মিলে আড্ডা দিলাম।
ক্লাস শেষে বাসায় আসলাম। লাঞ্চ করার সময় বাবু বললঃ সাহিদ সামিয়া মামনি কে নিয়ে একদিন।
আমিঃ ঠিক আছে বাবা।
লেখাপড়া করা, আড্ডা দেওয়া এভাবে চলে গেল আরো তিন মাস। রিপার সাথে আমাদের সম্পর্ক ভাই বোনের মতো।
একদিন রাতে রুমে বসে আছি রাত প্রায় আটটা বাজে।
বসে থেকে ফোন টিপতেছি।
মনে হলো কে যেন রুমে ঢুকেছে।দেখি রিপা।
আমিঃ রিপা তুমি এখানে?
এরপর রিপা যা করলো,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ৭
রিপা কে রুমে ঢুকতে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কেননা, রিপা আসবে একথা সে আমাকে আগে বলেনি। তারপরেও এই সময়ে আসাটা কেমন জানি সন্দেহ হচ্ছে।
রিপা কে প্রশ্ন করলামঃ রিপা তুমি এখানে?
রিপা মুচকি হেসে বললোঃ আমি না আসলে কে আসবে মিস্টার সাহিদ হাসান সাহি।
আমিঃ মমমানে,,( অবাক হয়ে)
রিপাঃ মানে টা নাহয় একটু পরেই জানতে পারবে।আগে হিসাব টা মিটিয়ে নেই।
আমিঃ কিসের হিসাবের কথা তুমি বলতেছো,,(অবাক হয়ে)
রিপাঃ মনে আছে তোমার আজ থেকে 15 দিন আগে তুমি আমার ভাইকে মেরে ছিলে।
আমার ভাই এখনও বিছানায় পড়ে রয়েছে। তখন থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে করেই হোক আমি এটার প্রতিশোধ নেব।
তারপর থেকে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি করোনি। তুমি বলেছিলে ভাই বোন থাকতে আমিও রাজি হয়ে গেছিলাম।
শুধুমাত্র আমার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য।
একথা বলেই রিপা দরজা লাগিয়ে দিয়ে নিজের জামা টেনে ছিড়তে শুরু করল আর চিৎকার করতে লাগলো। আমি শুধু নির্বাক দর্শকের মত
দেখতেছি। রিপার কাহিনী দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। রিপার শীৎকার শুনে বাবা বলতেছেঃ কি হয়েছে মা দরজা খোলো।
রিপা দরজা খুলে সবাই তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে আর বলতেছে বাবা তোমরা না আসলে সেহেতু আমার সাথে,,,,, বলে কান্না শুরু করে দিল।
রিপার বাবার পিছনে দেখি মা বাবা, ভাইয়া আর ভাবী দাঁড়িয়ে আছে।
বাবার কোনো কথা না বলে সোজা এসে আমাকে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় মারল।
আমি বললামঃ আব্বু বিশ্বাস করো,,,,
আব্বুঃ ঠাসস ঠাসস এই মুখ দিয়ে আর আমাকে আব্বু বলে ডাকি না 😡😡😡।
রিপার আব্বুঃ ছি ছি আমজাদ(আমার আব্বুর নাম) ছি তোকে আমার বন্ধু ভাবতে ঘৃণা হয়( রিপার বাবা আর আমার বাবা বন্ধ)।
আমার ছেলে একটি মেয়েকে খারাপ কথা বলেছে তার জন্য তোর ছেলে আমার ছেলেকে এমন মার মেরেছে এখনো বিছানা থেকে উঠতে পারতেছে
না।আর তোর সেই ছেলে ছিঃ
আব্বুঃ বন্ধু আমাকে মাফ করে দে,, আমি ওকে মানুষ করতে পারিনি।
আমিঃ আব্বু আমার কথা শোনো,,,,
আব্বুঃ ঠাসস ঠাসস তোর কোনো কথা শুনতে চাই না।তুই বাসা থেকে বের হয়ে যা।আজ থেকে আমাদের একটাই ছেলে।
আমি কান্না করতে করতে আম্মুর কাছে যায়ে বললামঃ আম্মু তুমি তো বিশ্বাস করবে।
আম্মুঃ তোর বাবা তোকে কি বললো শুনতে পাসনি।
আমি ভাইয়াকে বললামঃ ভাইয়া তুমিও আমাকে ভুল বুঝবেন।
ভাইয়াও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আমি দৌড়ে গিয়ে আব্বুর পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললামঃ আব্বু আমাকে বাসা থেকে বের করে দিওনা।
আমি তোমাদের ছাড়া বাঁচবো না।
আব্বু আমাকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে বললোঃ তুই যদি বাসা থেকে বের হয়ে না যায় তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি।
এতোক্ষণ থেকে যে কথা গুলো শুনতে ছিলাম সেই কথাতে যে কষ্ট পাইনি এই একটা কথা যে তার চেয়ে শতগুণ বেশি কষ্ট পেয়েছি।
আমিঃ আমি তোমাদের কাছে এতোই ঘৃণার পাত্র হয়েছি।যার জন্য আমি বাসায় থাকলে তোমাদের মরা মুখ দেখতে হবে।
বেশ আমি চলে যাচ্ছি,তবে ,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ৮
আমিঃ হ্যাঁ আমি চলে যাচ্ছি।তবে আফসোস তোমরা যেদিন তোমাদের ভুল বুঝতে পারবে সেদিন খুব কান্না
করবে।এর থেকেও বড় আফসোস সেদিন তোমরা আমাকে খুঁজেও পাবে না। ভালো থেকো সবাই।
বলেই আমি বাসা থেকে বের হয়ে দরজার কাছে এসে ভাবীকে বললামঃ আম্মু কে দেখে রেখো।
আর এই অধম কে ক্ষমা করে দিয়ো।
ভাবি আমার কথা শুনে অঝোরে কান্না করতে লাগলো।
আমি আবার বলতে শুরু করলামঃ এই যে মিস রিপা খান আপনি খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন। যদি
অভিনেত্রী হিসেবে যোগদান করেন তাহলে সেরা এওয়ার্ড টা পেতে পারেন।ভালো থেকো।
আর পারলে এই ধর্ষককে ক্ষমা করো।
বলেই একটা অট্টহাসি দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম।বাসার বাহিরে এসে ভাবতে দেখলাম কোথায় যাব
কোথায় থাকবো, কি খাব ?
না এসব ভাবলে হবে না আমার। আমাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। চলে যাবো এই স্বার্থপর শহরের স্বার্থপর
মানুষ দের কাছ থেকে। যেখানে থাকবে না কোনো স্বার্থপরতা আর না থাকবে অবিশ্বাসীদের অস্তিত্ব।
হায়রে মা বাবা, যেখানে নিজের ছেলেকে বিশ্বাস না করে একটা মেয়ের কথা বিশ্বাস করে নিজের ছেলেকে দুরের ঠেলে দিলে।
তবে এখানে তাদের কোন দোষ ছিলনা।যে কেউ আমাকে এই অবস্থায় দেখলে ধর্ষকের উপাধি দিয়ে পিছু
পা হবে না। হয়তোবা আমার মা-বাবার চোখে আমার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্বাস টা ছিলো না।
যাইহোক, ভাবলাম আজকে রাতে রাফির বাসায় থাকবো।কালকে সকালে কলেজ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে
চলে যাবো এই শহর ছেড়ে।চলে যাবো অজানা পথে। ভাবতেই চোখের কোণায় বিন্দু বিন্দু জল বাসা
বাঁধতে শুরু করলো।হাত দিয়ে চোখের পানি মুছলাম।
রাফির বাড়িতে পৌঁছে কলিং বেল বাজাতেই আন্টি দরজা খুলে দিল। আমাকে দেখে আন্টি জিজ্ঞাসা
করলঃ কেমন আছো বাবা?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
আন্টিঃ আলহামদুলিল্লাহ। বাবা তোমার কি হয়েছে কন্ঠ এমন লাগছে কেন?
আমিঃ কিছু হয়নি আন্টি আমি ঠিক আছে। রাফি বাসায় আছে?
আন্টিঃ হ্যাঁ বাবা আসো রুমে যাও।
আমি রাবির রুমে এসে দেখি রাফি শুয়ে থেকে ফোন টিপতেছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলঃ
কিরে সাহিদ তুই এত রাতে?(অবাক হয়ে)
আমি আর কিছু না বলে রাফিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
রাফি আমাকে কাঁদতে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলোঃ কি হয়েছে সাহিদ? বল আমাকে তোর কি
হয়েছে।
আমি রাফিকে সব বললাম।রাফি আমাকে শান্তনা দিয়ে বললোঃ দেখ দোস যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে
শুরু করে। একদিন তারা তাদের ভুল ঠিকই বুঝতে পারবে।
আমি চুপ আছি।
রাফি বললঃ সাহিদ রাতে কিছু খেয়েছিল কী?
আমিঃ নারে দোস ভালো লাগতেছে না,খাবো না।
রাফি আর কিছু না বলে বাইরে চলে গেল।
আর আমি খাটে বসে থেকে ভাবতেছি কি হয়ে গেল আমার জীবনে শুধু মাত্র একটা সন্ধ্যার মধ্যেই সবকিছু পাল্টে
গেল
রাফি রুমে এসে বললোঃ সাহিদ প্লেটে খাবার আছে। ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নে ভাই।
আমিঃ নারে খাবো না।
রাফিঃ দেখ দোস না খেলে শরীর খারাপ হয়ে যাবে।
তারপর রাবির জোরাজুরিতে কিছু খেলাম।
খাওয়া দাওয়া করে খাটে এসে শুয়ে পড়লাম।
রাফি প্লেট রেখে এসে আমার পাশে বসে বললোঃ এখন কি করতে চাচ্ছিস তুই?
আমিঃ এই শহর ছেড়ে চলে যাবো।আর হ্যাঁ কাল সকালে আমার সাথে একটু কলেজে যাবি ।
রাফিঃ ঠিক আছে।ঘুমা,,।
রাফি আমার পাশে শুয়ে পড়লো। আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতেছি সামিয়ার কথা সেকি আমাকে বিশ্বাস
করবে নাকি দূরে ঠেলে দিবে। ভাবতেই বুকের ভিতর টা মুচোড় দিয়ে উঠলো।
যাইহোক, আজকের রাতটা কোন মতো পার করলাম
সকালে ওঠে নাস্তা করে আন্টির থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। আন্টি কে চলে আসার কথা বলিনি।
বললে হয়তো আসতেই দিতো না।
কলেজে এসে প্রিন্সিপালের কাছে থেকে টিসি নিলাম।টিসি নেওয়ার সময়ও প্রিন্সিপাল অনেক কথা
শুনানো। সেগুলো মুখ বুজে সহ্য করে নিলাম।
প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে থেকে বাহির এসে দেখি সামিয়া দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়ার দিকে লক্ষ্য করতেই দেখি, সামিয়ার,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ৯
প্রিন্সিপাল স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি সামিয়া শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি সামিয়ার সামনে যায়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখের কোণায় পানি টলমল করতেছে।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই বলতে লাগলোঃ কি দোষ করেছিলাম আমি। কেন আমাকে ঠকালে? তোমার যখন এতই
দেহের প্রয়োজন তাহলে আমাকে বলতে আমি নিজেকে তোমার কাছে সপে দিতাম। ( কান্না করতে করতে)
আমিঃ সামিয়া আমার কথাটা শোনো,,।
সামিয়াঃ কি শুনবো হ্যাঁ। তোমাকে আমার ঘৃণা হয় শুধু ঘৃণা। তোমাকে ভালোবেসেছি এটাই আমার বড় ভুল।
তোমাকে আমার জাস্ট সহ্য হয়না। চলে যাও আমার সামনে থেকে।
একথা বলেই কান্না করতে করতে চলে যেতে চাইলে আমি ওর হাত ধরে থামিয়ে বললামঃ সামিয়া বিশ্বাস,,,
আমাকে আর বলতে না দিয়েই,,
সামিয়াঃ ঠাসসস ঠাসস তোর সাহস কি করে হয় আমার হাত ধরার? আর কি বললি বিশ্বাস।
হা হা হা কাকে বিশ্বাস করবো তোকে। একটা মেয়েকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে আমার কাছে এসে বলবি আমি কিছু করিনি।
আমি তাই বিশ্বাস করবো। তোর মতো চরিত্রহীন কে আমি ঘৃণা করি ঘৃণা।আর কখনো
তোর ঐ পাপী মুখ নিয়ে আমার সামনে আসবি না।
সামিয়ার মুখে চরিত্রহীন কথা শুনে আমার শরীর অবশ হয়ে গেল।এ আমি কাকে
এতো দিন যাবৎ ভালোবেসে এসেছি। যে আমার একটা কথা না একটা মিথ্যা অপবাদ দিলো।
সামিয়ার সব কথা গুলো শুনে যতটা কষ্ট পেয়েছি তার চেয়ে চরিত্রহীন উপাধি পেয়ে বেশি
কষ্ট পেয়েছি।
আমি সামিয়া কে বললামঃ সামিয়া তুমি আমার কথা না শুনে আমাকে এতো বড় অপবাদ দিলে।
তবে একটা কথা মনে রেখ, যেদিন সত্যটা জানতে পারবে সেদিন আমার জন্য খুব কান্না করবে। কিন্তু আফসোস আমাকে
আর পাবেনা।আর কোনো দিন তোমার সামনে আসবো না।
আর হ্যাঁ পরলে এই চরিত্রহীন কে ক্ষমা করে দিও।
ভালো থেকো আর নিজের যত্ন নিও।
বলেই চলে আসলাম। এখন আমার উদ্দেশ্য হলো এই শহর ছেড়ে চলে যাওয়া যাতে
করে আর কারো মায়ায় না পড়ি।আর নিজেকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
করা।
ভাবতে ভাবতে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। সকালে আমি রাফিকে বলেছিলাম যে আমার
জন্য ঢাকা যাওয়ার একটা টিকিট কাটতে।
বাসে উঠে সিটে বসে পড়লাম। একটু পরেই বাস ছেড়ে দিলো।বাস চলার দুরত্ব যতই বাড়তেছে আমার মনের ভিতর
অশান্তি ততোই বাড়িয়েছে। নিজের শহর ছেড়ে চলে যেতে মন
চাচ্ছে না। কিন্তু বাধ্য।
এই ছিল সামিয়ার ভালোবাসা।এই ছিল আমার জন্য সামিয়ার মনে বিশ্বাস। তবে অবিশ্বাস করারই কথা। যেখানে নিজের পরিবারের লোক নিজের মা বাবা অবিশ্বাস করলো আর এখানে তো দুমিনিটের ভালোবাসার সম্পর্ক।
ভাবতে ছি ঢাকা যায়ে আমি কি করবো কি খাবো? আমার কাছে ক্রেডিট কার্ড,ম্যানিব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল যা কিছু ছিল সব বাসায় রেখে এসেছি। শুধু সিম কার্ড টা পকেটে আছে।আসার সময় রাফি আমাকে জোর করে দশ হাজার টাকা দিয়েছিল। এটাই আমার শেষ সম্বল।
এসব চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বলতে পারবো না।
বাসের হেলপারের ডাকে ঘুম ভাঙলো।
হেলপারঃ মামা ঢাকা পৌঁছে গেছি নামেন।
আমিঃ আচ্ছা মামা।
বাস থেকে নেমে রাস্তা দিয়ে হাঁটতেছি আর ভাবতেছি কোথায় থাকবো।বাসা কোথায় পাবো।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে পেটের মধ্যে ক্ষুধা অনুভব করলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি একটা টং
চায়ের দোকান। এই দোকানে যায়ে একটা রুটি আর একটা কলা খেয়ে পানি খেলাম।
বিল দিয়ে দোকানদারকে বললামঃ মামা এখানে বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে?
দোকানদারঃ নতুন নাকি মামা?
আমিঃ হ্যাঁ।
দোকানদারঃ মামা ঢাকা শহরে তো বাসা পাওয়া মুশকিল। সামনের দিকে খোঁজ করেন দেখি।
আমিঃ আচ্ছা।
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ছি আর মনে মনে বলতেছি, এই ব্যস্ত শহরে বাসা ভাড়া পাওয়া টা কি সহজ ব্যাপার?
না না এই শহর ব্যস্ত না এই শহরের মানুষ গুলো ব্যস্ত।
হঠাৎ করেই চোখ পড়লো একটা বয়স্ক লোক (বয়স মিনিমাম পঞ্চাশ বছর)। ফোনে কথা বলতে বলতে
রাস্তার বেশ মাঝখানে চলে গেছে।
বিপরীত দিক থেকে যে একটা ট্রাক হর্ণ দিতে দিতে সজোরে আসতেছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
আমি আর কোন কিছু না ভেবে দৌড়ে যায়ে লোকটিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলাম।এরপর আর আমার
কিছু মনে নেই।
চোখ খুলে নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম।আমার চোখ খুলতে দেখে পাশে। বসে থাকা নার্স বললঃ
অবশেষে ১৩ দিন পরে তাহলে আপনার জ্ঞান ফিরলো।
আমিঃ কিহহহ ১৩ দিন পরে আমার জ্ঞান ফিরলো।কি হয়েছিলো আমার? আর এখানেই বা
কে নিয়ে আসলো?
নার্সঃ প্লিজ আপনি শান্ত হন। আপনার বেশি কথা বলা বারণ আছে।
আমি আসতেছি।
নার্সিং বাহিরে চলে গেল।আর আমি ভাবতে লাগলাম কে আমাকে এখানে
নিয়ে আসলো। আমি তো ঐ লোকটা কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলাম। তিনি
কি এখনো বেঁচে আছে কি।
নানান চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।হঠাৎ কে যেন বললোঃ তাহলে আপনার। জ্ঞান ফিরেছে।
কথাটা শুনে দরজার দিকে তাকালৈ। দরজার দিকে তাকিয়ে অবাক। কেননা
দরজা দিয়ে রুমে যে লোকটা ঢুকতেছে সে হলো,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১০
লোকটাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারণ, লোকটা হলো সেই লোকে যাকে আমি ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম।
লোকটি বললোঃ বাবা তাহলে তোমার জ্ঞান ফিরিয়ে। এখন কেমন লাগতেছে?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি কেমন আছেন আংকেল? আর আমাকে এখানে কে নিয়ে এসেছে?
আংকেলঃ আলহামদুলিল্লাহ বাবা ভালো আছি।আমি তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি।
আমিঃ কি হয়েছিলো আমার?
আংকেলঃ তুমি যখন আমাকে বাঁচানোর জন্য ধাক্কা দিয়েছিলে ঠিক তখনি তুমি ট্রাক টির সাথে ধাক্কা
খাও।আর পড়ে যায়ে তোমার মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় অনেক ব্লাড বের হয়। সেখান থেকে দ্রুত তোমাকে হাসপাতালে
এনে ভর্তি করাই।আজ ১৩ দিন পর তোমার জ্ঞান ফিরলো।
আমি চুপ করে শুনেছি। ডাক্তার আমাকে চেকআপ করে বললেনঃ সমস্যা যেমন নেই দুদিন পরে রোগীকে বাসায় নিয়ে যাতে
পারবেন। বাসায় যায়ে কিছু দিন রেস্ট নিতে হবে।আর মাঝে মাঝে চেকআপে করতে হবে।
এটা বলে ডাক্তার রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
আংকেল আমার কাছে এসে বললোঃতোমার নাম কি?
আমিঃ সাহিদ হাসান সাহি।
আংকেলঃ বাবা তোমার বাসা কোথায় ? আর তোমার বাবা মা কোথায়?
আমিঃ আসলে আমি এই শহরে নতুন।আর আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে।
আংকেলঃ বাসা থেকে বের করে দিয়েছে মানে,,,,,( অবাক হয়ে)
আমিঃ হ্যাঁ,,, এরপর সব কিছু বললাম।
আংকেলঃ মন খারাপ করো না বাবা । আমি আছি। আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি কিছু খাবার নিয়ে আসি।
আমিঃ আচ্ছা।
আংকেল চলে গেল আর আমি ভাবতে লাগলাম কী থেকে কি হয়ে গেল আমার জীবনে।
একটু পরে আংকেল খাবার নিয়ে আসলো। আমি খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
কোনো ভাবে দুদিন পার করলাম বদ্ধ রুমে।
আজকে আমার রিলিজ দিবে। ডাক্তারের কাছ থেকে রিলিজ নিয়ে আংকেলের সাথে হাসপাতাল
থেকে বেরিয়ে আসলাম। বাহিরে এসে দেখি সামনে একটা দামি গাড়ি পার্কিং করা আছে। আমরা
সেটাই উঠে একটা রাজপ্রাসাদের মতো বাসায় চলে আসলাম। তবে এই বাসা টা আমাদের বাসা
সরি সেটা তো আর আমার বাসা নেই। আমজাদ চৌধুরীর (আমার বাবা) বাসা থেকেও বড়।
যাইহোক,বাসার ভেতর ঢুকে আংকেল আমাকে একটা রুম দেখে দিলো থাকার জন্য। রুমটা বেশ গোছানো। রুমটা দেখতেছি,এমন সময় আংকেল এসে
বললঃ পছন্দ হয়ে কী তোমার?
আমিঃ হ্যাঁ। আপনি কি এই বাসায় একাই থাকেন?
আংকেলঃ হ্যাঁ বাবা।
আমিঃ আংকেল এই রুমে কে থাকতো?
আংকেল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললোঃ এখানে আমার
ছেলে থাকতো।
আমিঃ কোথায় গেছে আপনার ছেলে?(অবাক হয়ে)
আংকেলঃ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
আমিঃ মানে,,,(কৌতুহল নিয়ে)
আংকেলঃ তাহলে শুনো, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ছিলো আমার সুখের সংসার।
তোমার বয়সের এবং তোমার মতো দেখতে আমার একটা ছেলে ছিলো।একটাই সন্তান আমাদের।
আমি ব্যবহার কাজে বাহিরে যাই।সেখান থেকে ফিরে আসতেই ছেলে আমার কাছে বায়না ধরলো
আমাদের কে নিয়ে সিলেটে ভ্রমণে যাবে। আমিও আর না করতে পারলাম না। ছেলের খুশিতে আমরা খুশি।
তারপরে, আমরা গাড়ি নিয়ে বের হলাম সিলেটের উদ্দেশ্য। আমার ছেলে নিজেই ড্রাইভ করবে। সেদিন ড্রাইভারকে
রেখে আসলাম। আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবে সিলেটে ঘোরাফেরা করলাম।কে জানতো যে এই ঘোরাফেরা টাই ওদের
সাথে আমার শেষ ঘোরাফেরা হবে। সেখানে সবকিছু ভালোভাবেই দেখলাম। সবাই খুশি হয়েছি। পরের দিন আমার একটা
জরুরী মিটিং থাকায় সেদিন সন্ধ্যায় বের হলাম ঢাকার উদ্দেশে। আসার সময় আকাশ টা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ছিলো।
মাঝপথে আসতেই হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হলো।গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। হঠাৎ করে একটা পাথরের ট্রাকের সাথে
আমাদের গাড়ি ধাক্কা খায়।যার ফলে আমাদের গাড়ি দুমড়ে মুচড়ে যায়।তারপরে আর আমার কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফিরলে দেখি আমার অফিসে ম্যানেজার আমার পাশে বসে আছে। আমার অফিসের ম্যানেজার টা ছিলো খুব ভালো মানুষ।
আমি তাকে আমার স্তূপ আর ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করলে চুপ করে থাকে। এতেই আমি বুঝতে পেরেছি ওরা আর পৃথিবীতে নেই।
তারপর থেকে আমি একাই থাকি । এই বয়সে আর আমার জীবনে কাউকে জড়াইনি,,,।
কথাগুলো বলেই আংকেল চোখের পানি মুছলেন।
আংকেলঃ বাবা তোর কাছে আমার একটা আবদার আছে পূরণ করবি।(অসহায় হয়ে)
আমিঃ হুমম বলেন?
আংকেলঃ বাবা তুই আমার ছেলে হয়ে থাক। তোকে কোনো দিন কষ্ট দিবো না।তুই শুধু আমাকে বাবা বলে ডাকবি,,,,,,(অঝোরে নয়নে কাঁদতে কাঁদতে)
আমি জড়িয়ে ধরে বললামঃ হ্যাঁ আজ থেকে তুমিই আমার বাবা। তুমি এখন থেকে আমার উপর ছেলের অধিকার খাটাবে।
আংকেল মানে বাবু জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলেন। আমি চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ বাবা আর কেঁদো না।এই দেখ তোমার
ছেলে ফিরে এসেছে।
অনেক্ষণ ধরে কাঁদার পরে বাবা আমাকে ছেড়ে দিয়ে খাবার নেওয়ার জন্য নিচে গেলো।
আমিও ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে আছি। বাবা খাবার নিয়ে এসে আমাকে নিজ হাতে তুলে খাওয়ালো।
খাওয়া দাওয়া করাইয়ে আমাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুমিয়ে যাতে বললো।
রুমে এসে ভাবতে লাগলাম, হায়রে দুনিয়া যেখানে নিজের মানুষ অবিশ্বাস করে ছুঁড়ে ফেলে দিলো আর একজন অপরিচিত
।লোক রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে
বিশ্বাস করে নিজের সন্তানের মর্যাদা দিলো।মা বাবার কথা মনে পড়েছে খুব। কেমন আছে তারা।
ভাবতেই চোখের কোণায় পানি আসলো। ঘুমিয়ে গেলাম।ফজরের আব্বুর ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম।অজু করে আব্বুর
সাথে নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে আব্বু আমার রুমে নাস্তা নিয়ে এসে খাইয়ে দিলো আর বললো একটু বাহিরে যাবে।
আমি রুমে বসে আছি। প্রায় একঘন্টা পর আব্বু আসলো।হাতে দেখি কিছু ব্যাগ। ব্যাগ
গুলো আমাকে দিয়ে বললোঃ এখানে কিছু প্যান্ট আর টিশার্ট আছে আর এই ব্যাগে ফোন আছে এটা ব্যবহার করিস।
আমিঃ এতো কিছু নিয়ে আসার কি দরকার।
আব্বুঃ তোর দরকার না থাকলে আমার দরকার। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
কি আর করার নিলাম। ফোনের ব্যাগটা খুলে দেখি Redmi 8A Dual ,, আগের মডেল চলবে সমস্যা নেই।
যাইহোক, পনেরো দিন কাটে গেল। আব্বুর সেবাযত্নে আমি এখন অনেক সুস্থ।
সকালে নাস্তা করার সময় আব্বুকে বললামঃ আব্বু আমি একটা জব করতে চাই।
আব্বুঃ কিহহ,,, আমার কি কম আছে?
আমিঃ তা নয় আব্বু। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।
আব্বুঃ তাহলে অফিসে জয়েন করো।
আমিঃ আমি তো বেশি লেখাপড়া করেনি।
আব্বুঃ সমস্যা নেই।
আমিঃ আচ্ছা।
আব্বুঃ কবে থেকে জয়েন করবি।
আমিঃ কাল থেকে।
আব্বুঃ ঠিক আছে।
পরের দিন সকালে নাস্তা করে রিকশা করে অফিসে গেলাম। আব্বু গাড়িতে
যেতে বলেছিল বাট আমি যাইনি।আর আব্বু আমাকে অফিসটা দেখিয়েছিল। এজন্য আস্তে কোন সমস্যা হয়নি।
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে অফিসে ঢুকেই,,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১১
রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে অফিসের ভিতরে ঢুকতেই ম্যানেজার এসে আমাকে আমার কেবিনে নিয়ে গেলেন।
একটু পরে আব্বু এসে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। আর ম্যানেজার কে বললো আমাকে যেন বেশি কাজ না দেওয়া
হয়। ম্যানেজার স্যার আমার কেবিনে এসে কাজ বুঝিয়ে দিলেন।
যাইহোক, প্রথম দিন তাই তেমন কাজ নেই। এছাড়া এই কাজগুলো আমার জানা ছিলো।
টুকিটাকি কাজ করছিলাম।এমন সময় পিয়ন এসে বললো স্যার মানে আব্বু নাকি ডাকতেছে।
আমি আব্বুর কেবিনের সামনে যায়ে বললামঃ আসতে পারি স্যার।
আব্বুঃ আমাকে আর কখনো স্যার বলবি না। আর তোর আসতে কোনো অনুমতি লাগবে না
আমিঃ আচ্ছা। কি জন্য ডেকেছো?
আব্বুঃ আয় বস এখানে। লাঞ্চের সময় হয়েছে লাঞ্চ করে।
এরপর আব্বুর সাথে লাঞ্চ করতে বসলাম। আব্বু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে আমিও
আব্বুকে খাইয়ে দিচ্ছি। লক্ষ্য করলাম আব্বুর চোখের কোণায় পানি। আমি আর
কিছু বললাম না। কারণ, এই পানি কষ্টের পানি নয়, এই পানি হলো হারানো
সুখ কে খুঁজে পাওয়ার পানি।
লাঞ্চ শেষ করে আব্বুকে বলে আমার কেবিনে আসলাম।কাজ করতে করতে কখন যে পাঁচটা
বেজে গেলো বুঝতেই পারিনি। আব্বু এসে বললোঃ পাঁচটা বেজে গেছে বাসায় কখন যাবি?
আমিঃ এইতো এখনি যাবো।
আব্বুঃ চল্ গাড়িতে করে যাই।
আমিঃ না আব্বু তুমি যাও আমি রিকশায় চড়ে যাবো।
আব্বুঃ রিকশায় চড়ে যাবি মানে 😠😠😠?
আমিঃ আব্বু বুঝার চেষ্টা করো।আমি রিকশায় করে যাচ্ছি তুমি চলো।
আব্বুঃ ঠিক আছে আয়(মন খারাপ করে)।
আমিও রিকশা করে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় পৌছে দেখি আব্বু বসে থেকে টিভি দেখতেছে।
আমাকে দেখে বললোঃ ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করবি।
আমিঃ আচ্ছা।
রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। আব্বুর সাথে
নাস্তা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে। বাহিরে আসলাম। বাহিরে একটু হাঁটাহাঁটি করে
বাসায় গেলাম।নতুন শহরে কোনো বন্ধু না থাকায় বাহির বেশিক্ষণ থাকলাম না।
বাসায় এসে আব্বুর সাথে আড্ডা দিয়ে ডিনার করে রুমে রুমে গেলাম।
পরদিন সকালে নাস্তা করে অফিসে গেলাম। অফিসে যায়ে কাজ করে বাসায় চলে আসলাম।
এভাবে চলে গেল একমাস।এই এক মাসে আমার কাজ দেখে আব্বু মুগ্ধ হয়েছে। আসলে আমি আগে মাঝে মধ্যে
ভাইয়ার (সাইম আহম্মেদ) আর আব্বুর (আমজাদ চৌধুরী) সাথে অফিসে যেতাম। ইচ্ছা করেই এই কাজ গুলো করতাম।
যার ফলস্বরূপ আজকে আমার কাজগুলো সহজ হয়ে গেছে।
এই এক মাসে অফিসের স্টাফদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।এদের নাম হলো আঁখি,
ববি, নাহিদ,রাকিব আর রিমন। প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও নাস্তা করে রিকশায় চড়ে অফিসে গেলাম।
তবে আরেকটি কথা, এখনো অবধি কেউ জানে না যে, আমি এই কম্পানির মালিকের ছেলে। আব্বু সবার সাথে আব্বুর সূত্রে পরিচয়
করিয়ে দিতে চাইছিলো। কিন্তু আমি হইনি। আমি সাধারন ভাবেই আছি।
রাতে ডিনার করার সময় আব্বু বললঃ বাবা তুই লেখাপড়াটা একেবারে শেষ করে নাহয় আমায় ব্যাবহার দ্বায়িত্ব টা ঘাড়ে নে। আমি আর কতই।
আমিঃ আব্বু আমি কয়েক দিন অফিসে কাজ করবো তারপরে আবার লেখাপড়া শুরু করবো।
আব্বুঃ আচ্ছা তুই যা ভালো মনে করিস।
যাইহোক, ডিনার করে রুমে এসে ঘুমিয়ে গেলাম । সকালে ওঠে নাস্তা করে পূর্বের ন্যায় গেলাম।
অফিসে যাইয়ে কাজ করতেছি এমন সময় পিয়ন এসে বললো আব্বু আমাকে ডাকতেছে। আমিও চলে গেলাম
আব্বুর কেবিনে।
আব্বুর কেবিনের দরজা নক করে বললামঃ আসতে পারি।
আব্বুঃ হ্যাঁ আয়।আর তোকে কতবার বলবো আমার কেবিনে আসতে তোর অনুমতি লাগবে না। কথা কি তোর কানে যায়না,😡😡😡(একদম রেগে)
আমি যায়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ আমার সোনা আব্বু রাগ করে না। ভুল হয়ে গেছে আর এরকম হবে না,,(বলেই কপালে একটা চুমু দিলাম)
কী জন্য ডেকেছো বলো।
আব্বু আমাকে একটা লেটার হাতে দিয়ে বললোঃ এটা ভালো ভাবে পড়।
আমি লেটারটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলাম।পড়া শেষে করে আমি যে কি
পরিমান খুশি হয়েছি তা বুঝতে পারবোনা।লেটারটা ছিলো আমার প্রোমোশনের। আমার পোস্ট টা হলো
ম্যানেজারের নিচের পোস্ট।
আমি আব্বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বললামঃ ধন্যবাদ আব্বু।
আব্বুঃ ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই এটা তোর কাজের দক্ষতাই হয়েছে।আর
সবচেয়ে বড় কথা আমার ছেলে খুশি হয়েছে কি?
আমিঃ হ্যাঁ আব্বু খুশি হয়েছি।
আব্বুঃ খুব ভালো।
আমিঃ আব্বু তুমি থাকো আমি আমার কেবিনে গেলাম।
কেবিনে এসে কাজ করতে লাগলাম।অফিস শেষে আমার সব বন্ধুকে
আমার প্রোমোশনের কথা জানালাম।তারাও খুশি হয়েছে।
আঁখি বললঃ দোস অনেক দিন থেকে পেট পুরে খাওয়া হয়নি। আজ যদি তুই কিছু খাওয়াতিস।
আমিঃ শাকচুন্নী আপনার তো খালি খাওয়া।এই নাহিদ বিয়ের পর তুই এই রাক্ষসীকে খাওয়াবি কী?(আঁখি নাহিদের গার্লফ্রেন্ড)
নাহিদঃ সেটাই তো চিন্তারে ভাই। এখন থেকেই যে খাওয়া খায় । বিয়ের পর না জানি
আমাকে ফকির বানিয়ে দেয়😞😞😞।
নাহিদের কথা শুনে আঁখি বাদে আমারা সবাই হেঁসে দিলাম।আর আঁখি রাগ ফুঁসতে ফুঁসতে
বললঃ কি বললি আমি বেশি খাই😠😠😠😠।যা তোর সাথে কথাই নেই।
একথা বলেই আঁখি জোরে জোরে রাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করে দিলো।
আর নাহিদ বেচারা আঁখির রাগ ভাঙাতে ওর পিছে পিছে দৌড় দিল।
আমরা আড্ডা দিচ্ছি কিছুক্ষণ পর ওরা দুজনে আসলো।
আমি বললামঃ দোস তাহলে তোরা সবাই সন্ধ্যায় পাঁচ তারকা রেস্টুরেন্টে আসিস।
আমি ট্রিট দিবো।
সবাই খুশি মনে বললোঃ ঠিক আছে।
এরপরে বাসায় আসলাম। আব্বু এখনো আসেনি। অফিসে একটা মিটিং করতেছে।
যাইহোক ফ্রেশ হয়ে আসরের নামাজ পড়লাম।
আজকে একটু ছাদে গেলাম পড়ন্ত সূর্য টাকে দেখার জন্য। ছাদে বেশ কিছুক্ষণ থাকার পরে
নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি আব্বু এসেছে।
আব্বুর সাথে বসে থেকে টিভিতে করোনা ভাইরাসের খবর শুনেছিলাম। হঠাৎ মনে হলো আজকে
ট্রিট দেওয়ার কথা।
আব্বুকে বললামঃ আব্বু আমি একটু বাইরে যাবো আসতে রাত হতে পারে।
আব্বুঃ কেন?
আমিঃ আসলে আব্বু আমার প্রোমোশনের জন্য বন্ধুরা ট্রিট চাইছে।তাই রেস্টুরেন্টে যাবো।
আব্বুঃ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি ফিরবি।
আমিঃ আচ্ছা।
দরজার কাছে আসতেই আব্বু আবার ডাক দিলো।
আব্বুঃ বাবা এদিকে একটু আয়।
আমি কাছে যায়ে বললামঃ কী হয়েছে?
আব্বু আমাকে একটা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বললো এটা কাছে রাখতে।
আমিও আর না করলাম না।কারণ, আমি যদি না নেই তাহলে আব্বু আমাকে ছাড়বে না।
বাসা থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টে গেলাম। যায়ে দেখি সবাই এসেছে শুধু রিমন আপনি। আমরা ভিতরে ঢুকে
একটা টেবিলে বসলাম। অবশ্য টেবিল টা আমি আগেই বুক করে নিয়েছি।
রিমনকে ফোন দিলাম,,
আমিঃ হ্যালো এই কোথায় তুই?
রিমনঃ এই তো চলে এসেছি।
আমিঃ ঠিক আছে আয়।
বলেই ফোন কেটে দিলাম। একটু পরে রিমন আসলো।
তারপরে যে যার মতো অর্ডার করলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার
বাসায় চলে আসলাম।রাত প্রায় ১০ টা বেজে গেছে।
বাসায় এসে দেখি আব্বু বসে থেকে অফিসের কাজ করতেছে।
আমি বললামঃ আব্বু তুমি ঘুমাওনি।
আব্বুঃ তোর জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। ভাবলাম বসে থেকে না থেকে কাজ করি।
আমিঃ ডিনার করেছো?
আব্বুঃ হ্যাঁ এই মাত্র করলাম। ঘুমিয়ে পড় তাড়াতাড়ি।
আমিঃ হ্যাঁ তুমিও ঘুমিয়ে পড়।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। মোবাইল টা হাতে নিয়ে
নতুন করে ফেসবুকের একটি আইডি খুললাম।নাম দিলাম " অবিশ্বাসীদের অবহেলার পাত্র"।
কিছুক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি করে ফোন টা রেখে দিলাম।ভাবতে লাগলাম মা বাজ কথা। কেমন আছেন তারা হয়তোবা
ভালো আছে। আমার মতো পাপিষ্ট ছেলেকে ছাড়া। কিন্তু আমি ভালো নেই তাদের ছাড়া।এই বেইমান
মন বার বার তাদের কথা ভাবে। তাদের কথা ভাবলে এমন কোন দিন
নেই যেদিন চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভিজে না। মাঝে মাঝে মনে পড়ে সামিয়ার কথা।
সে হয়তো আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কাউকে বেঁচে নিয়েছে। আমার মতো চরিত্রহীন কে তো ঘৃণা করতো।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে ওঠে নাস্তা করে অফিসে গেলাম।
এভাবে কেটে গেল আরো একবছর।এই একবছরে অনেক কিছু চেন্জ হয়েছে।
আজকে অফিস আগে ই ছুটি দিয়েছে। অফিস থেকে এসে লাঞ্চ করতেছি তখন
আব্বু বললোঃ বাবা এবার লেখা পড়াটা শুরু কর।
আমিঃ হ্যাঁ বাবা এখন ভর্তি হবো।
আব্বুঃ ঠিক আছে । বাসার থেকে একটু দূরে একটা ভালো কলেজ আছে এই কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে কথা বলতেছি আজকে।কবে ভর্তি হবি?
আমিঃ কালকে ব্যবস্থা হলে কালকে ই।
পরের দিন আব্বুর যায়ে সাথে কলেজে ভর্তি হলাম। সেখানে আব্বু আমার ছেলে হিসেবে পরিচয় দিলো। আমিও আর কিছু
বললাম না।
যাইহোক প্রথম দিন কিছু বন্ধু বানিয়ে বাসায় চলে আসলাম।এরপর থেকে শুরু হলো আমার লেখাপড়ার জীবন মানে ছাত্রজীবন।
দেখতে দেখতে একবছর হয়ে গেল আমার কলেজে ভর্তি হওয়ার। ইয়ার চেন্জ পরিক্ষা দিলাম। এবার আমি
তৃতীয় বর্ষে। কলেজে আমার বেশ কয়েকটা বন্ধু হয়েছে।
আজকে রেজাল্ট দিয়েছে বেশ ভালোই রেজাল্ট করেছি। ভালো ছাত্র হওয়ায় এবারো আল্লাহর রহমতে ফার্স্ট হয়েছি।
আব্বুকে বললে আব্বুও খুব খুশি হয়েছে। আব্বু আমার মাঝেই আগের ছেলেকে খুঁজে পায়।
কারণ আব্বুর আগের ছেলেও লেখাপড়ায় ভালো ছিলো।
আব্বু আমাকে একটা বাইক উপহার দিয়েছে।
একদিন ক্যাম্পাসে বসে থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি এমন সময় আব্বু ফোন দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি অফিসে যাতে। একথা বলেই ফোন কেটে দিল।
আমার মনে অজানা ভয় ঢুকে গেল। বন্ধুদের বলে বাইক নিয়ে দ্রুত অফিসে চলে আসলাম।
অফিসে যায়ে দেখি অফিসটা ফাঁকা। আমার মনের ভয় বেড়ে গেল।
আমাকে দেখে পিয়ন এসে বললো আব্বু নাকি আমাকে হলরুমে যেতে বলেছে।
আমি আর দেরি না করে হলরুমের দিকে দ্রুত হাঁটতে লাগলাম। হলরুমে যায়ে দেখি সব স্টাফ বসে আছে।আর আব্বু স্টেজে মাইক্রোফোন হাতে
নিয়ে বসে আছে। আমাকে রুমে ঢুকতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়ে বলতে শুরু করলো,,,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১২
আমাকে রুমে ঢুকতে দেখে আব্বু দাঁড়িয়ে যায়ে মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে বলতে লাগলোঃ লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান
আজ আমি আপনাদের যে জন্য হলরুমে ডেকেছি তা হলো আপনারা জানেন আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে। আজ থেকে ছয় বছর আগে
আমি আমার পরিবার হারিয়েছি। হারিয়েছি একটা ছেলে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি আবার আরেকটা
ছেলে পেয়েছি। যে ছেলে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে আমাকে এক্সিডেন্ট থেকে রক্ষা করেছিলো(যদিও এখানে আল্লাহ তায়ালা বাঁচিয়েছে)
। আমার ছেলে এই অফিসেই কাজ করে। যেদিন আমার ছেলে এই অফিসে জয়েন করে সেদিন আমি তাকে বলেছিলাম বাবা আমার এতো সম্পত্তি
থাকার পরেও তোমাকে জব করতে হবে কেন। সেদিন আমার ছেলে বলেছিলো আব্বু আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আমি তাকে সবার সাথে পরিচয়
করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম আমার ছেলে হিসেবে কিন্তু সে বলেছিল। আব্বু আমি যেমনি আছি তেমনি ভালো।তার মধ্যে নেই কোন অহংকার নেই কোন বড় মানুষিকতা। আমি যদি তাকে বলি বাবা আমাদের গাড়ি আছে। তুমি গাড়ি নিয়ে অফিসে যাবে।সে বলে কি জানেন বাবা আমি এমনি ভালো আছি।আপনারা কি জানেন বা চিনেন আমার ছেলে কে?
সবাইঃ না স্যার।
সবাই উৎসুক জনতার মতো আব্বুর দিকে তাকিয়ে আছে। আব্বু আবার বলতে লাগলো,
আব্বুঃ আজকে আপনাদেরকে আমি এইজন্যই ডেকেছিলাম যে, আমার ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। আমার ছেলে আর কেউ নয় আমার ছেলে হলো
আপনাদের পরিচিত সাহিদ হাসান সাহি।
আমার নাম শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। আমি এতোক্ষণ কলিগ মানে
অফিসের বন্ধুদের সাথে বসে ছিলাম। বন্ধুরাও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর অবাক হওয়ারই কথা। কারণ, এই এক বছরে কাউকে বুঝতে দেইনি যে আমি মালিকের ছেলে।
যাইহোক, কথা বলা শেষে আব্বু আমাকে স্টেজে ডাকলো। আমিও গেলাম।আমি যাওয়ার পরে আব্বু আমাকে
ফুল দিয়ে বরণ করে নিলো।আর এই অফিসের এমডির চেয়ারে বসতে বললো।
আমি চেয়ারে বসতেই আব্বু আবার বলতে শুরু করলঃ এই কম্পানি এবং সব সম্পত্তির মালিক এখন আমার ছেলে।
এখন আমি বেশ অসুস্থ আবার হায়াতের কথা বলাও যায়না এছাড়াও যদি কোনো কারণে আমি অফিসে আসতে না পারি তাহলে আমার
ছেলে সাহিদ হাসান সাহি এই অফিস দেখা শুনা করবে।আর আমি আশা করি আপনারা আমার অনুপস্থিতিতে কাজের কোনো গ্যাফলতি করবেন না।
আব্বু আরো কিছুক্ষণ লেকচার দেওয়ার পরে সবাই ছুটি দিলো।
হলরুম থেকে বের হয়ে বন্ধুদের কাছে রাতেই ববি বললঃ স্যার আপনি এখানে কোনো দরকার কী?
আমিঃ শোন তোরা আমার বন্ধু ছিলি আর এখনো থাকবি সো কোনো স্যার স্যার
করবি না।
রিমনঃ তা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু তুই এতো দিন আমাদেরকে এই কথা জানায়নি কেনো?
আমিঃ আমি যদি তোদের বলতাম তাহলে তোরা আমার সাথে এতো ফ্রিলি থাকছি না।
নাহিদঃ সত্যি রে তুই মহান।
ওদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
রাতে ডিনার করার সময় আব্বুকে বললামঃ আব্বু এসব বলার কি প্রয়োজন ছিলো।
আব্বুঃ দেখ বাবা আমার শরীর টা বেশ খারাপ কখন কি হয়।
আমিঃ আর কখনো এসব কথা বলবে না। তোমার কিছু হলে আমি কি করে থাকবো।
আব্বুঃ আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আর বলবো না। এবার খুশি।
আমিঃ হুমমম। আর তুমি এখন থেকে রেস্ট নেও।আর অফিসে একটা
এমডি পোস্টের সার্কুলার ছাড়ো।
আব্বুঃ ঠিক আছে।
আব্বুর সাথে কথা বলে রুমে আসলাম। ঘুমিয়ে গেলাম।
সকালে উঠে নাস্তা করে আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে আসলাম।
কলেজ শেষ করে বাসায় আসলাম।এসে দেখি আব্বু এখনো আসেনি। আব্বুকে ফোন দিলাম।
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম আব্বু কোথায় আছো?
আব্বুঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাবা আমিতো অফিসে আছি। কেন?
আমিঃ বাসায় কখন আসবে?
আব্বুঃ বিকেলে আসবো।
আমিঃ আচ্ছা।
এভাবে চলে গেল প্রায় চার মাস। আব্বুর শরীর টা বেশ খারাপ। হার্টের রোগী।
কলেজে ক্লাস করেছিলাম এমন সময় আব্বুর পিএ আমার কাছে ফোন দিয়ে হাসপাতালে যেতে বললো।
আমার বুকের ভিতর ধুকপুক শুরু হয়ে গেল।আমি বাইক নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে গেলাম।
হাসপাতালে পৌঁছে দেখি আব্বুর পিএ হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে আমার কাছে আসলো।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আব্বুর কি হয়েছে?
আব্বুর পিএঃ স্যার অফিসে বসে থেকে কাজ করতে করতে স্ট্রোক করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসলে আপনাকে
তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসতে বলে।
আমি আব্বুর পিএ এর সঙ্গে যেই রুমে আব্বুকে শিফট করা হয়েছে সেখানে গেলাম।
আব্বুর রুমে যায়ে দেখি আব্বুর পাশে উকিল বসে আছে আর মুখে অক্সিজেনের মাস্ক লাগানো
আছে।
আব্বু আমাকে দেখতে পাইয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে তার কাছে ডাকলো আমিও আব্বুর পাশে
বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর কান্না করতেছি।
আব্বু তার মুখের মাস্কটি খুলে দিতে বললো। খুলে দেওয়ার পরে
আব্বু আমার কপালে চুমু খেয়ে বললোঃ এই পাগল ছেলে
কান্না করিস কেন?একদম কাঁদবি না।আর উকিল সাহেব আপনি আমার
সমস্ত সম্পত্তি আমার ছেলের নামে ট্রান্সফার করে দিন ।
ঊকিলঃ আচ্ছা স্যার।
এরপরে আব্বু তার সমস্ত সম্পত্তি আমার নামে ট্রান্সফার করে দিলো।
হঠাৎ আব্বুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।আমি ডাক্তার কে ডাকতেই ডাক্তার এসে আব্বুকে নিয়ে
আইসিওতে নিয়ে গেল।
আমি আইপিওর রুমের পাশে বসে থেকে অঝর ভাবে কান্না করতেছি।
এতোক্ষণে অফিসের সব স্টাফ হাসপাতালে চলে এসেছে।
আমার বন্ধুরা এসে আমাকে শান্তনা দিচ্ছে।
একটু পরে ডাক্তার বের হয়ে আসলো। ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি বিষন্নতার ছাপ।
আমি দৌড়ে যায়ে ডাক্তার কে বললামঃ ডাক্তার আমার আব্বু কেমন আছে? ( কান্না করতে করতে)
ডাক্তারঃ ,,,,,,( চুপ করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে)
আমিঃ কি হলো ডাক্তার বলুন আমার আব্বু কেমন আছে? আমার আব্বুর কিছু হয়নি তো,,(কান্না করতে করতে)
ডাক্তারঃ সরি আমরা স্যার কে বাঁচাতে পারলাম না।
একথা শুনে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেল।
আমিঃ আবববববববু,,,,,,
এরপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।আর আমার অফিসের আর কলেজের
বন্ধুরা আমার পাশে বসে আছে।
আমার চোখ খোলা দেখে নাহিদ বললঃ দোস এটা ভাগ্য ছিল,,,
আমিঃ আমি আব্বুর কাছে যাবো আমাকে আব্বুর কাছে নিয়ে চল।
রিমনঃ দোস শান্ত হ।
আমিঃ না আমি আব্বুকে দেখবো।
শেষে ওরা আমার জোরাজুরিতে আব্বুর কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তার আমাকে বললো,,
ডাক্তারঃ প্লিজ আপনি উত্তেজিত হবেন না। আপনার মাথার সমস্যা হবে।
বন্ধুরাঃ ঠিক আছে স্যার আমরা দেখছি।
আব্বুর কাছে যায়ে দেখি আব্বুকে একটা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
আমি দৌড়ে যায়ে মুখের কাপড় খুলে দিয়ে কান্না করে বলতে লাগলামঃ আব্বু তুমি আমাকে একা করে কেন চলে গেল।কে
আমাকে আদর করে তুলে খাওয়াবে, কে আমাকে আদর করে বাবা বলে ডাকবে,কে আমাকে শ্বাসন করবে? কেন আমাকে একাই
রেখে চলে গেলে,।
রিমন আর রাকিব এসে আমাকে আব্বুর কাছে থেকে সরে নিয়ে গেল।
রিমন বললঃ দেখ ভাই এটা ভাগ্যে ছিলো এটা মেনে নিতে হবে।আর সময় নষ্ট না করে স্যারের দাফন কাজ শেষ করি।
আমিঃ হুমম চল।
এরপরে আব্বুর জানাযা করিয়ে দাফন শেষ করলাম। অবশ্য আমিই জানাযার
নামাজ পড়িয়েছি।
আব্বুর দাফন কাজ শেষ করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাসায় আসলাম। আমার সাথে রিমন,নাহিদ আর রাকিব আসলো আমার বাসায়
আমার সাথে থাকার জন্য।
বাসায় এসে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারতেছিলাম না। যেখানেই যাই সেখানেই আব্বুকে খুঁজে পায়।
যাইহোক, রুমে যায়ে শুয়ে পড়লাম। বন্ধুরা খাওয়ার জন্য জোর করলো। কিন্তু আমি খেলাম না।
রাতটা কোন মতো পার করলাম। ফজরের আজান শুনে মসজিদে গেলাম। নামাজ পড়ে এসে
আব্বুর কবরে যায়ে জিয়ারত করে চলে আসলাম।
প্রিয়জনের হারানো দুঃখ নিয়ে কেটে গেল পনেরো দিন। এখন আমি কিছু টা স্বাভাবিক।
আর অফিসের জন্য একটা এমডি রেখেছি।
এভাবে চলে গেলে দুই মাস। কয়েকদিন আগে থেকে ক্লাস করতে শুরু করে দিয়েছি।
আজকে সকালে অফিসে গেলাম। অফিসে যায়ে সবার সাথে দেখা করে এমডির কেবিনে গেলাম
হিসাব বুঝে নেওয়ার জন্য। মাঝে মাঝেই আমি আসি হিসেব বুঝে নেওয়ার জন্য।
অফিস থেকে কলেজে গেলাম । ক্লাস করে বাসায় ফিরলাম। গোসল করে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম। নামাজ পড়ে আব্বুর কবরে যায়ে আব্বুর জন্য
দোয়া করে বাসায় আসলাম। হাল লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে গেলাম।
বাসায় কাজের জন্য একটা বুয়া মানে একটা খালা আছে।
কয়েকদিন আগে এক কাজে সন্ধ্যায় রেলস্টেশনে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখি একজন বৃদ্ধা মহিলা মাথা হেলে কান্না করতেছে।
আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ কি হয়েছে আপনার?
মহিলাটিঃ বাবা আমি এই শহরে আমার ছেলের বাসায় থাকতাম। কিন্তু বউয়ের কথা শুনে আজকে
আমাকূ বাসা থেকে বের করে দিয়েছে,,,(কান্না করতে করতে)
মানুষ কত নিষ্ঠুর হতে পারে। বউয়ের কথা শুনে নিজেকে গর্ভধারিনী কে বাসা থেকে বিতাড়িত করলো। হায়রে মানুষ।
ধিক্কার জানাই সে সব সন্তান কে। হ্যাঁ মা বৃদ্ধা হয়েছে উল্টোপাল্টা কথা বলতে বা হিসেব করতেই পারে। তাই বলে নিজের
মাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া।
আমি বললামঃ কোথায় থাকবেন এখন?
মহিলাঃ রাস্তায় পাশে থেকে ই রাত কাটাবো।
আমিঃ আপনাকে রাস্তায় থাকতে হবে না আমার বাসায় চলুন।
মহিলাঃ না বাবা তোমার বাসায় গেলে তোমার মা বাবার সমস্যা হবে।
আমিঃ আমার মা বাবা কেউ নেই চলুন।
তার পর থেকে এই মহিলা আমার বাসায় থাকে। আমি কাজ করতে না দিলেও করে।
যাইহোক, এবার বাস্তবে ফিরি। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে হাসপাতালে গেলাম।কারণ মাঝে মাঝে আমার মাথার সমস্যার জন্য মাথার চেকাপ করাতে হয়।
চেকআপ করে ডাক্তারের কেবিনে থেকে বের হয়ে আসি।
হাসপাতাল থেকে বাহির এসে দেখি একটা মেয়ে বয়স আনুমানিক ১৭ থেকে ১৮ বছর হবে। চেয়ারে বসে থেকে কান্না করতেছে।
আমি মেয়েটিকে বললামঃ কি হয়েছে আপু?
মেয়েটি বললোঃ আমার আম্মু,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১৩
মেয়েটিঃ আমার আম্মুর ব্রেন টিউমার ছিলো। হঠাৎ করে আজকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে
আসি। কিন্তু ডাক্তার আমার আম্মুকে দেখে বললো আম্মুর অপারেশন করতে হবে। আর এর জন্য
দুই লক্ষ টাকা প্রয়োজন। টাকা ছাড়া আম্মুকে অপারেশন করবে না। আর ডাক্তার বললো অপারেশন
ছাড়া আম্মুকে বাঁচানো যাবে না।(কান্না করতে করতে বললো)
আমিঃ আপু তুমি কোনো চিন্তা করো না। তোমার আম্মুর অপারেশন হবে। তোমার আম্মুর কাছে আমাকে নিয়ে চলো।
আমার কথা শুনে মেয়েটির চোখে মুখে খুশির আভা দেখতে পেলাম।
মেয়েটিঃ সত্যি আপনি আমার আম্মুর অপারেশন করার টাকা দিবেন?(খুশি হয়)
আমিঃ হুমম আপু তোমার আম্মুর কাছে আমাকে নিয়ে চলো।
মেয়েটিঃ চলুন।
মেয়েটির সাথে ওর মায়ের কাছে গেলাম।যায়ে দেখি একটা বেডে শুয়ে রাখা হয়েছে। চোখ বন্ধ করে আছে।
মনে হয় ঘুমিয়ে গেছ। আমি মেয়েটিকে করে চলে আসলাম। ডাক্তার দের কেবিনে। কিছু ডাক্তার বসে থেকে নাস্তা করতেছে আর
টিভি দেখতেছে।এটা দেখে প্রচুর পরিমাণে রাগ উঠলো।
ঐ রোগিটার আশেপাশে কোনো ডাক্তার বা নার্স কেউ নেই। একটা মানুষ মৃত্যু শয্যায় মৃত্যুর প্রহর গুনতেছে আর ডাক্তার রা তাদের রুমে
বসে থেকে চা নাস্তা করতেছে।আজ যদি এই মানুষটা ধনী বা কোনো প্রভাবশালী হতো তাহলে হয়তোবা ঐই রুমটাতে ডাক্তারের সিরিয়াল পড়ে যেত।
শুধু বাধাটা কোথায় জানেন? বাঁধা টা হলো অর্থ সম্পদে।
এই মহিলা টার যদি অর্থ সম্পদ থাকতো তাহলে আর এই বাধা থাকতো না। একটা ডাক্তার উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে এসে যদি একটা মানুষ কে এই অবস্থায় রেখে
দিতে পারে, তাহলে তাদের মনুষ্যত্ব টা কোথায়?
আমাকে দেখে যে ডাক্তার আমাকে চেকআপ করাই তিনি আমার কাছে এসে
বললঃ স্যার আপনার কোনো সমস্যা হয়েছে কী?
আমিঃ সমস্যা আমার না সমস্যাটা হলো আপনাদের 😠😠😠😠।
ডাক্তারঃ কেন কী হয়েছে স্যার?
আমিঃ কি হয়েছে মানে? ১৩২ নাম্বার কেবিনে যে ব্রেন টিউমারের রুগী আছে
আপনারা তাকে একাই রেখে এসে এখানে বসে চা নাস্তা করতেছেন 😡😡😡( একদম রেগে)
ডাক্তারঃ আসলে স্যার আমরা উনাকে ২লক্ষ টাকা আনতে বলেছিলাম।
কিন্তু আনেনাই । এজন্য আমরা ঐ রুগিকে ওটিতে নেইনি।
আমিঃ এই আপনাদের মানসিকতা।একজন রুগী মৃত্যু শয্যায় আছে আর আপনারা
ছিঃ
ডাক্তারঃ সরি স্যার।
আমিঃ দ্রুত ওই রুগির অপারেশনের ব্যবস্থা করুন?
ডাক্তারঃ ওকে স্যার।
এরপরে কয়েকটি ডাক্তার মিলে ঐ মহিলাকে ওটিতে নিয়ে গেল।
আর আমি মেয়েটিকে শান্তনা দিচ্ছি। আমি মেয়েটিকে বললামঃ আপু তোমার
নাম কী?
মেয়েটিঃ আমার নাম নেহা।
আমিঃ খুব সুন্দর নাম আপু তোমার। কান্না করো না আচ্ছা। তোমার আম্মু সুস্থ
হয়ে যাবে।
নেহাঃ ভাইয়া আমার আম্মু ছাড়া আর কেউ নেই এই পৃথিবীতে।
আমিঃ কে বললো কেউ নেই, আমি আছি।
নেহা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ পরে শান্ত হয়ে গেল।
ওহহহ আপনাদের তো বলাই হয়নি এই হাসপাতালটা হলো একটা
বেসরকারি হাসপাতাল। আর এই হাসপাতালের মালিক এবং প্রতিষ্ঠাতা হলো আমার আব্বু।
আর এখান থেকে যা কিছু আয় হয়, তা এতিমখানায় দান করি।
তবে এটার মালিক বর্তমানে আমি।
যাইহোক, নেহাকে নিয়ে আমি ওটির দজার পাশে ছোফায় বসে আছি।
একটু পরে ডাক্তার বের হয়ে এসে বললোঃ স্যার আপনাকে আর এই মেয়েকে
পেশেন্ট ভিতরে ডাকতেছে।
আমি নেহাকে নিয়ে ওটিতে গেলাম। মহিলাটি আমাকে ডাকলে।
আমিও কাছে গেলাম। মহিলা টি আমার হাত ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললোঃ বাবা আমি জানি
আমার আর হায়াত বেশি নেই। বাবা তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ, তুমি আমার এই মেয়েকে দেখে রেখো।
আমি ছাড়া এই দুনিয়ায় ওর আর কেউ নেই। আর আমি যদি না থাকি তাহলে নেহা মা তুই একদম কান্না করবি না।
আমিঃ আন্টি আল্লাহ রহমতে আপনার কিছু হবে না।আর আমি নেহাকে নিজের বোন হিসেবে
কাছে রাখবো।
আন্টিঃ তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বাআআবা,,,(কথা গুলো কষ্ট করে বলতেছিলো)
হঠাৎ দেখি আন্টি চোখের পাতাগুলো নামিয়ে নিলো।
ডাক্তার দ্রুত আন্টির পালস্ চেক করে বললোঃ সরি স্যার উনি মৃত্যু বরণ করছেন।
আর উনার ব্রেন টিউমারের লাস্ট স্টেজে যাওয়ার জন্য আমরা বাচাতে পারিনি।
নেহা ওর মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ আম্মু
তুমি আমাকে একা রেখে কেন চলে গেলে। আমি কার কাছে থাকবো। তুমি ছাড়া যে এই পৃথিবীতে
আমার আর কেউ নেই। তুমি কেন আমাকে একা রেখে চলে গেলে😭😭😭(কান্না করতে করতে)
আমি পিছন থেকে নেহার কাঁধে হাত রেখে বললামঃ বোন ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
আর কে বললো এই পৃথিবীতে তোর কেউ নেই আমি তো আছি।আজ থেকে তুই আমার
বোন আর আমি তোর ভাই।
নেহা আমার কথা শুনে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ ভাইয়া আমার সাথে এমন কেন হলো
বলতে পারবে? জন্মের একমাস আগে বাবা কে হারিয়েছি । কোনো দিন বাবার আদর পাইনি।
বাবার কোলে চড়ে কোনোদিন ঘুরে বেড়ায় নি। ছোট বেলায় স্কুলে সবার বাবা তার ছেলেমেয়ে দিয়ে আসতো-নিয়ে আসতো।
আর আমি আমার বাবার জন্য পথ চেয়ে স্কুলের গেটে বসে থাকতাম।এই বুঝি আমার বাবা এসে আমাকে কোলে নিয়ে
কপালে চুমু খেয়ে বলবে, মামনি তুমি কান্না করো না। এই দেখো তোমার বাবা এসে গেছে।
কিন্তু কোন দিন সেই আশা আমার পূরণ হলোনা।
আর আজ আমার আম্মু আমাকে ছেড়ে চলে গেল। কে আমার মাথায় তেল দিয়ে বলবে,নেহা তোর চুল গুলো খুব সুন্দর ? কে আমাকে তুলে খাওয়াবে ?
কেন এমন হলো ভাইয়া কেন?😭😭😭( কান্না করতে করতে)
আমি কি বলে তাকে শান্তনা দিবো সেই ভাষাই হারিয়ে ফেলেছি। চারিপাশে তাকিয়ে দেখি ডাক্তার সহ নার্সদের চোখেও পানি টলমল করতেছে।
আমি নিজেকে সামলে নিয়ে নেহার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ দেখ বোন যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।আর কান্না করলেও তা ফিরিয়ে আসবো না।
আন্টি তো তোকে নিষেধ করলো কান্না করতে। তারপরেও যদি কান্না করিস তাহলে তো আন্টির কথা রাখতে পারলি না।প্লিজ বোন আমার কান্না করিস না।
নেহাঃ সরি ভাইয়া আর কান্না করবো না।
আমিঃ এইতো সুন্দর বোন আমার।
তারপরে নেহাকে ওর আম্মুর মুখ শেষ বারের মতো দেখালাম।
নেহা শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতেছে।
নেহাকে আমার বাসায় রেখে খালার (বুয়া) পরিচয় করিয়ে দিলাম।
এরপরে আমার বন্ধুরা মিলে আন্টির দাফনের কাজ সেরে ফেললাম।
দাফনের কাজ শেষ করতে রাত আটটা বেজে গেল। বন্ধুদের বিদায় দিয়ে বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে দেখি নেহা খালার রুমে মনমরা হয়ে বসে আছে।
আমাকে দেখে আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো।
আমি বললামঃ আপু তুই ডিনার করবি না?
নেহাঃ না ভাইয়া ভালো লাগতেছে না।
আমিঃ তা বললে তো হবে না আপু। চল তোকে খাইয়ে দেয়।
তারপরে, নেহাকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে আনে চেয়ারে বসালাম।
আমি ওকে নিজ হাতে খাইয়ে দিলাম।ভাত খাওয়ানোর পরে
একটা ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে দিলাম।যাতে রাতে একটু ঘুমাতে পারে।
নেসাকে আমার পাশের রুমে নিয়ে এসে শুয়ে দিলাম। এরপরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলাম। গায়ে
একটা কম্বল টেনে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে আসলাম।
ছাদে এসে ভাবতে লাগলাম আমার জীবন কাহিনী টা।
হাহা হা কী থেকে কী হয়ে গেল। নিজের পরিবার ছুড়ে ফেলে দিল।
আর আজকে নতুন একটা পরিবার পেলাম।কি দোস করেছিলাম আমি তাদের কাছে?
না আমাকে ভেঙ্গে পড়লে হবে না। নেহার জন্য হলেও আমাকে বাঁচতে হবে।
ছাদে অনেক ক্ষণ থাকার পরে নেহার রুমে গেলাম। দেখি নেহা ঘুমিয়ে আছে।
রুমটা একটু গরম করতেছে।এসি টা চালু করে দিলাম।
আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরে উঠে নামাজ পড়ে আন্টির কবরে যায়ে দোয়া কর আসলাম।
বাসায় এসে নেহাকে ঘুম থেকে উঠিলাম। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বললাম।
নেহা নিচে আসতেই আন্টি,নেহা আর আমি একসাথে নাস্তা করলাম।
নাস্তা শেষে নেহা বললামঃ আপু তোর বাসায় যাই চল। প্রয়োজনীয় যা কিছু আছে নিয়ে আসি।
নেহাঃ আচ্ছা ভাইয়া।
আমি আর নেহা গাড়ি নিয়ে বের হলাম নেহার বাসার উদ্দেশ্যে। নেহার বাসায় পৌছে শুধু বইগুলো আর কিছু প্রয়োজনীয়
জিনিস নিয়ে আসলাম।
আমার বাসায় এসে নেহাক জিজ্ঞাসা করলামঃ আপু তুই কোন ক্লাসে পড়িস?
নেহাঃ ইন্টারনেট ফার্স্ট ইয়ারে।
আমিঃ তোকে আমি যেই কলেজে পড়ি সেই কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবো।
নেহাঃ ঠিক আছে। ভাইয়া তোমার সম্পর্কে কিছু বলো?
আমিঃ হা হা হা আমার সম্পর্কে আবার কি বলবো। এটা আমার বাসা আর আমার বাবা কয়েক মাস আগে মারা গেছে।
আর আমি এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষে আর নাম হলো সাহিদ হাসান সাহি। তুই আমাকে
তুই বলবি।আর শোন বিকেলে তোকে নিয়ে শপিং মলে যাবো।
নেহাঃ আচ্ছা ভাইয়া।
আমি রুমে এসে শুয়ে থাকতে ঘুমিয়ে গেলাম। দুপুরে নেহার ডাকে
ঘুম ভাঙলো।
নেহাঃ ভাইয়া এই ভাইয়া উঠ?
আমিঃ হুমম আপু তুই যা আমি উঠতেছি।
ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নামাজ পড়ে নেহাক ডেকে নিয়ে যায়ে আমার
হাতে তুলে ডিনার করলাম।
বিকেলে নেহাকে নিয়ে শপিং মলে গেলাম। নেহার জন্য প্রয়োজনীয় কাপড় আর খালার জন্য কিছু কাপড় নিলাম।
নিয়ে বাসায় আসলাম।
নেহাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করেই কয়েক দিন কেটে দিলাম।যাতে ওর মনটা ফ্রেশ হয়ে।
এভাবে চলে গেল একমাস।নেহা এখন মোটামুটি সুস্থ।
আর কয়েকদিন আগে খালাকে এসে তার ছেলে নিয়ে গেছে।খালা এখন তার ছেলের কাছে আছে।
আজকে নেহাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিলাম।নেহা কিছু বন্ধু বানিয়ে নিলো।
তারপরে ওকে নিয়ে একটু ঘুরাঘুরি বাসায় আসলাম।
পরের দিন দুই ভাই বোনে একসাথে কলেজে গেলাম।নেহা ওর বন্ধুদের
কাছে চলে গেল আর আমি আমার বন্ধুদের কাছে গেলাম।
আমার আপু বেশ ভালো স্টুডেন্ট। আপুকে রাতে পড়ানো, খাইয়ে দেওয়া, মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া,ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া আর এদিকে
আমার অফিস দেখাশোনা করা এসব করতে আরো একটি বছর কেটে গেল।
নেহা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে আর আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে।আমার আপু
ভালো ছাত্রী হওয়ায় এবার ফার্স্ট হয়েছে।
পরিক্ষার পর কলেজ ছুটি ছিলো। ছুটিটা ভালো কাটলো দুই ভাই বোনের ঘোরাফেরা করে।
কাল থেকে কলেজ শুরু। রাতে দুই ভাই বোন একসাথে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম।আর এখন বুয়া এসে কাজ করে দিয়ে যায়।
আপু করতে চেয়েছিল কিন্তু আমি করতে দেইনি।
নিত্য দিনের ন্যায় সকালে উঠে নাস্তা করে ভাই বোন কলেজে গেলাম।
কলেজে বন্ধুদের কাছে যাতেই ইকবাল [(আমার বন্ধু ।আরো দুজন আছে ওরা হলো শাকিব আর রিয়াদ)] বললোঃ সাহিদ দোস কলেজে তো
ইংলিশ ম্যাম,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১৪
নেহাকে নিয়ে কলেজে গেলাম।নেহাকে ওর বান্ধবীদের কাছে দিয়ে আমি
আমার বন্ধুদের কাছে গেলাম। বন্ধুদের কাছে যাতেই ইকবাল [( ইকবাল
হলো আমার বন্ধু।আরো দুজন আছে। শাকিব আর রিয়াদ)] বললঃ সাহিদ
দোস্ কলেজে নাকি একটা ইংলিশ জয়েন করবো।
রিয়াদঃ শালা তোর তো শুধু মেয়েদের কথা। কোথায় নতুন মেডাম
জয়েন করবে, কোথায় নতুন ম্যাডাম প্রাইভেট পড়াবে এসব। ছেলেটা
কেবল আসলো কেমন আছে তা জিজ্ঞাসা না করে তিনি শুরু করেছেন
ম্যাডামের কথা।
রিয়াদের কথা শুনে আমরা হেঁসে দিলাম আর ইকবাল শুধু রাগে
ফোসতেছে।
আমিঃ দোস্ত এসব বাদ দে। ইকবাল নতুন ম্যাডাম ম্যারিড নাকি
আনম্যারিড রে ?
ইকবালঃ আমি কেমন করে বলবো😞😞😞( গম্ভীর ভাবে)
রিয়াদঃ সরিরে দোস্ত,রাগ করিস না প্লিজ। তুই রাগ করলে আজকে
আমাদের খাওয়াবে কে?
ইকবালঃ মানে?(অবাক হয়ে)
আমিঃ শালা মানে বুঝিস না। আজকে তোর খাওয়ানোর
তারিখ।
ইকবালঃ ভাই আজকে আমার কাছে টাকা নাই। আজকে আমি
পারবো না।
শাকিবঃ পারবি না বললে তো আমরা শুনবো না।তুই এর আগে আমার থেকে
জোর করে খাইয়ে ছিলি,,।
ইকবালঃ ভাই তোরা বুঝার চেষ্টা কর।(করুন সুরে)
আমিঃ কোনো বুঝা বুঝি নেই খাওয়াবি নাকি তোর গার্লফ্রেন্ডকে
উল্টোপাল্টা কিছু বলতে হবে 😎😎😎।(ভাব নিয়ে)
ইকবালঃ না না তোকে কিছু বলতে হবে না। আমি রাজি আছি।
শালা তোরা বন্ধু নাকি শত্রু।
আমিঃ এইতো গুড বয়। যা ভাবিস ,,চল।
এরপরে আমরা চারজন মিলে ক্যান্টিনে গেলাম। যাওয়ার পরে তিনজন
ইচ্ছে মতো খেলাম, ইকবাল তো নিজের টাকায় বেশি খাবে না।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে উঠতেই দেখি নেহা আর ওর
কয়েকটা বান্ধবী ক্যান্টিনে আসতেছে।
আমি বললামঃ আপু তুই এখানে? কী খাবি?
নেহাঃ ভাইয়া ফুচকা খেতে মন চাইলো, তাই আসলাম।
আমিঃ আচ্ছা তোরা যায়ে টেবিলে বসিয়ে পড়। আমি অর্ডার করতেছি।
নেহাঃ না ভাইয়া, তুই যা আমরা খাচ্ছি।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে।আর এটা নিয়ে রাখ।
নেহার হাতে কিছু টাকা দিয়ে আসলাম। চারজন মিলে ক্লাসে গেলাম।
ক্লাস শুরু হতেই পিয়ন এসে বললেন এই ক্লাসের শেষে প্রিন্সিপাল স্যার
আমাদের নাকি হলো রুমে যেতে বলেছে।
ক্লাস শেষ করে আমরা সবাই কলেজের হলরুমে গেলাম।যায়ে দেখি প্রিন্সিপাল
স্যার এখনো আসেনি।
আসলে আমাদের ক্লাসে অনেক ছাত্র ছাত্রী প্রায় আড়াইশো জন। এজন্য স্যার
আমাদের হলরুমে ডাকলেন।
যাইহোক আমরা আমাদের আসনে বসে গেলাম। একটু পরে স্যার আসলেন।
আমরা সকলে সালাম দিলাম। স্যার সালামের জবাব দিয়ে বলতে
লাগলেনঃ প্রিয় শিক্ষার্থী বিন্দু তোমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছো যে,
আমাদের কলেজে একটা ইংলিশ টিচার জয়েন করবে। আমাদের এই কলেজের
নীতি অনুযায়ী যদি কোনো টিচার জয়েন করে তাহলে আমরা সেই টিচারকে একটা
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানাই।
এবারও এটার ব্যতিক্রম হবে না।
সবাইঃ জ্বি স্যার।
আমিঃ কবে জয়েন করবে স্যার?
প্রিন্সিপাল স্যারঃ আগামী ২২ তারিখে কলেজে একটা প্রোগ্রাম আছে
আর সেদিন তোমাদের নতুন টিচার জয়েন করবেন। তোমাদের এই কথা গুলো
বলার উদ্দেশ্য হলো তোমরা হলে এই কলেজের সিনিয়র। সকল কিছু করার দায়িত্ব
তোমাদেরই থাকে। এক কথায় তোমরা এই কলেজটা কে মাতিয়ে
রাখো। আর এই বারের যে অনুষ্ঠান হবে তার আয়োজন কিন্তু
তোমাদের কেই করতে হবে।
সবাইঃ ঠিক আছে স্যার।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ এই অনুষ্ঠানের সকল কিছুর দায়িত্ব থাকবে
তোমাদের ক্লাসের ফার্স্ট বয় সাহিদ হাসান সাহির উপর।আর আমি আশা
করি সে এই কাজে কোনো অবহেলা করবে না।সাহিদ হাসান দাঁড়াও।
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ তোমার কি এই কাজে কোনো সমস্যা আছে?
আমিঃ না স্যার। কোন সমস্যা নেই।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ গুড। আজকে ১৮ তারিখ।আর বাকি তিন দিন।
যা করার ভালোভাবে করবে।তাহলে তোমরা যাও।আর সাহিদ তুমি আমার
সাথে দেখা করবে।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার।
আমরা সবাই হলরুমে থেকে বের হয়ে ক্লাসে গেলাম।সব ক্লাস
শেষ করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেলাম।
আমিঃ মে আই কাম ইন স্যার।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ ইয়েস,, আসো।
আমিও রুমের ভেতরে গেলাম। স্যার আমাকে বললেনঃ
সাহিদ শোন তোমাকে কিন্তু সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আমিঃ জ্বি স্যার।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ আমি তোমাকে কিছু কথা বলি আর এইভাবেই এই
অনুষ্ঠানের সকল কিছু প্রস্তুত করবে।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার।
এরপরে প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে কিছু কাছে কথা বললেন
যেগুলো করলে অনুষ্ঠানটি ভালো ভাবে প্রদর্শিত হবে।
স্যারের রুম থেকে বের হয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেহার কাছে গেলাম।
এরপরে নেহাকে ক্যান্টিনে নিয়ে যায়ে একপ্লেট ফুচকা অর্ডার করলাম।
আর সেটা নিজ হাতে নেহাকে তুলে খাওয়ালাম।
এটা আমার প্রতিদিন কলেজ শেষের ডিউটি আর কি😁😁😁।
প্রতি দিন কলেজ ছুটির পর নেহাকে নিজ হাতে ফুচকা খাওয়াই।
এতে আমাকে খুব ভালো লাগে। এই বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করে না।
কারণ,সবাই জানে আমরা ভাইবোন।
যাইহোক, আমার আপুকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে গোসল করে নামাজ পড়লাম।নেহার নামাজ পড়ে।
নামাজ পড়ে দুই ভাই বোন একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম।
আমি আমার আপুকে তুলে খাইয়ে দিচ্ছি আর আপু আমাকে তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আপুর রুমে যায়ে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে
আমি আমার রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসরের নামাজ পড়ে আপুর রুমে
গেলাম।যায়ে দেখি আপু নামাজ পড়তেছে।
এরপরে দুই জনে হালকা নাস্তা করে গাড়ি( আব্বুর কার) নিয়ে বের হলাম এতিমখানায়।
আর হ্যাঁ আমি একটা এতিম খানা তৈরি করেছি। সেটা আজ থেকে প্রায় আট
থেকে নয় মাস আগে।এতিম খানা তৈরি করার আগে আমি আর নেহা দুজনে
বিকেলের দিকে ঘুরতে গিয়েছিলাম একটা লেকের পাড়ে। সেখান থেকে ফিরে
আসতে রাত প্রায় নয়টার বেজে গিয়েছিলো।
আর তখন ছিলো শীত কাল। শীতকালে রাত নয়টা মানে অনেক
রাত।বাইক নিয়ে আসতেছি হঠাৎ নজর পড়লো কয়েকটা পথ
শিশুর উপর।
আমি বাইক নিয়ে ওদের কাছে গেলাম।বয়স হয়তোবা ছয় সাত
এরকম হবে।রাস্তাও ধারে শুয়ে আছে আর শীতে কাঁপতেছে। যাদের
কাছে একটা করে পাতলা কাপড় আছে তাদের গায়ের সাথে
অন্যজনেরা লেপ্টে আছে।
তবুও তারা শীতের সঙ্গে পেরে উঠতে পারতেছে না।
পাশেই একটা বাচ্চাকে দেখে চমকে উঠেছিলাম।কারণ
তার গায়ে কোন কাপড় ছিলনা। শুধু পড়নে যেটা ছিলো
সেটাই আছে। একেতো সে ছোট বাচ্চা চার থেকে পাঁচ বছর
হবে, তারপরে গায়ে কিছু নেই আবার প্রচন্ড শীত। যার ফলে
কাঁপতেছে।
এটা দেখে আমি আর স্থির থাকতে পারলাম।আমার গায়ের
জ্যাকেট খুলে ওই বাচ্চা টাকে পড়িয়ে দিয়ে সেখান থেকে নেহাকে
নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
রাতে ডিনার করার সময় নেহাকে বললামঃ নেহা আমি একটা
সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
নেহাঃ কি সিদ্ধান্ত ভাইয়া?
আমিঃ এই পথ শিশুদের জন্য একটা এতিম খানা তৈরি করতে
চাই।
নেহাঃ এতো ভালো সিদ্ধান্ত ভাইয়া।
আমিঃ হুমমম।
তারপরে এতিমখানা তৈরীর উদ্যোগ নেই।আর আল্লাহর রহমতে সেটাতে সফলও
হই।ঐ পথ শিশুগুলো সহ মোট চল্লিশ জন ছেলে মেয়ে আছে
আমার এই এতিম খানায়।
যাইহোক,নেহাকে নিয়ে এতিমখানায় গেলাম।গাড়ি থেকে নেমে চকলেটের
একটা বক্স হাতে নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। আমাকে দেখে আমার মেয়ে মিম দৌড়ে
এসে আমার কোলে উঠে বললোঃ বাবাই থুমি এতেথো?
আমিঃ হ্যাঁ মামনি আমি এসেছি।
মিমঃ আমাল দন্য তি নিয়ে এতেথো?
আমিঃ আমার আম্মুর জন্য আমি চকলেট এনেছি।
মিমঃ থত্যি,,, আমার চুন্দল বাবা,।( কপালে চুমু দিয়ে)
আন্নি(আন্টি) তুমি তেমন আথো?
নেহাঃ ভালো আছি। আমার আম্মু টা কেমন আছে?
মিমঃ আমিও ধালো আথি।
আমিঃ আম্মু তোমার ভাইয়া আপুদের ডেকে নিয়ে এসো।
মিমঃ আততা বাবাই।
মিম ওদের ডাকতে চলে গেল।
অবাক হওয়ার কিছুই নেই মিম আমার মেয়ে এটা নিয়ে।
আট মাস আগে একটা বোরকা আর হিজাব পড়া মহিলা এসে এই
বাচ্চা কে এখানে নিয়ে আসে।ঐ মহিলাটি কোন কথা না বলে বাচ্চাটিকে
আমার কোলে দিয়ে চলে যায়।
বাচ্চাটি ছিলো খুব সুন্দর।তখন তার বয়স ছিলো চার মাসের মতো। সে আমার
কোলে ঘুমাতো। আর তখন আমি এখানে ই বেশি সময় থাকতাম।
যাইহোক, বাচ্চাটির প্রতি আমার একপ্রকার মায়া
জন্মে। আস্তে আস্তে বাচ্চাটি বড় হয়।আর তার নাম রাখি মিম।
সে ছোট বেলা থেকেই আমাকে বাবাই বলে ডাকে আর নেহাকে আম্মু না
বলে আন্নি আই মিন আন্টি বলে ডাকো।
তার কথা শুনলে আমার প্রাণ জুড়ে যায়।
সেজন্য আমি এখানে দিনে দুই থেকে তিন বার আসি। রাতে এসে মিমকে ঘুম
পাড়িয়ে দিয়ে চলে যায়।
আর এই এতিম খানা টা আমার বাসার পাশেই ।
একটু পর মিম সবাইকে খাবার জন্য ডেকে নিয়ে আসলো।ওরা সবাই ছাদে
খেলতে গিয়েছিল। মিম এসে আমার কোলে বসলো।
দারোয়ান চাচাকে আমার গাড়িতে যেই বিরিয়ানি ছিলো
তা নিয়ে আসতে বললাম।
দারোয়ান চাচা বিরিয়ানি নিয়ে আসার পরে সবাইকে এক
প্যাকেট করে দিলাম। নেহা অন্য ছোট বাচ্চা কে খাইয়ে দিচ্ছে
আর আমূল মিমকে খাইয়ে দিচ্ছি।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওদের সবাইকে পাঁচটি করে চকলেট দিলাম।
ওদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে খালা ওদের দেখা শুনা
করে তার সাথে কথা বলে মিমকে নিয়ে আমার বাসায় আসার জন্য গাড়ির
কাছে আসলাম।মিমকে আজ আমার বাড়িতে রাখবো।
গাড়িতে উঠার সময় হঠাৎ করে আমার,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১৫
এতিমখানার বাচ্চা দের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে খালা
বাচ্চা গুলো কে দেখাশোনা করে তার সাথে কিছু কথা বলে
মিমকে নিয়ে বাসা থেকে বাহিরে আসলাম।
মিম আজকে আমার বাসায় থাকবে। মাঝে মাঝেই আমার
বাসায় নিয়ে যাই। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ির কাছে যেতেই হঠাৎ
করে আমার মাথাটা ঘুরে আসলো।এরপরে আমার আর
কিছুই মনে নেই।
চোখ খুলে দেখি আমি একটা রুমে শুয়ে আছি। রুমটা আমার
কাছে অপরিচিত মনে হলো। চারিপাশে তাকিয়ে বুঝলাম এটা
হাসপাতালের রুম। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে বুঝতে
পারলাম সকাল হয়েছে। আবার কিছু শহুরে পাখি যেমন কাক
ইত্যাদি পাখি ডাকতেছে।
আমার শরীরের দিকে লক্ষ্য করে দেখি দুজন আমার
দুই হাত ধরে শুয়ে আছে।তারা দুজন হলো নেহা আর মিম
আমি একটু নড়ে উঠতেই নেহা জেগে গেল। আমার দিকে
তাকিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
আমি মাথায় হাত বুলিয়ে বললামঃ এই পাগলি বোন আমার
কাদছিস কেন?
নেহা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে করতে বললোঃ ভাইয়া
তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। তোমার কিছু
হলে আমি কিভাবে থাকবো? কি নিয়ে বাঁচবো?😭😭😭
আমিঃ আল্লাহর রহমতে আমার কিছুই হবে না বোন।
আমাদের দুজনের কথাই আমার মেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়লো।
আমার মেয়েও আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে
করতে বললোঃ বাবাই থুমি থিত আতো?
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ হ্যাঁ আমার
আম্মু আমার কাছে থাকলে আমি সবসময় ভালো থাকি।
মিম আমার কপালে গালে চুমু খেতে খেতে বললোঃ বাবাই
তুমি দেনো আমারে থেলে দেওয়ো না। আমি তোমালে থালা
বাদবো না।
তোমাল মতো থেউ আমালে থুলে থাওয়ায় না। তেও আমারে
ঘুলতে নিয়ে দায়না।
আমারে থেলে দেওয়ো না বাবাই😭😭😭।
আমি আর কী বলবো নিজের কান্না আর ধরে রাখতে পারলাম
না। আমিও আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অজস্র চুমু দিতে দিতে বললামঃ
আমি কখনো আমার আম্মুকে ছেড়ে যাবো না।
আমার আপু আমার হাত ধরে কান্না করতেছে আর আমার
মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতেছে।
এরা দুজন আমাকে এতো ভালবাসে? তা আজকের দিন না
আসলে বুঝতে পারতাম না। তারা আমার রক্তের সম্পর্কের
কেউ না। তারপরেও তারা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
অথচ যাদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক তারাই আজ আমাকে
ছুঁড়ে ফেলে দিলো।
হয়তোবা এটাই দুনিয়ায় টিকে থাকার একটা পরিক্ষা।
যাইহোক,বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার আপু আর মেয়ে কান্না
বন্ধ করলো।এখনো জড়িয়ে ধরেই আছে।
নেহাকে দেখে মনে হচ্ছে রাতে কিছু মুখে দেয়নি। তাই আমি
আপুকে বললামঃ আপু তুই মনে হয় রাতে কিছু খাসনি, এখন
ফ্রেশ হয়ে নে। আমি খাবার অর্ডার করতেছি। খাবার অর্ডার
করলাম।
আপু আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেল।আপু যেতেই ডাক্তার
রুমে প্রবেশ করলো। আমি আমার মেয়েকে বললামঃ আম্মু তুমি
একটু উঠো। তোমার বাবাই উঠে বসবে। ডাক্তার এসেছে।
আমার কথা শুনে আমার মেয়ে আমার বুক থেকে উঠে পাশে বসলো।
আমি উঠে বসতেই আমার হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
ডাক্তার আমার কাছে এসে বললোঃ এখন কেমন বোধ করতেছেন
স্যার?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আমার কি হয়েছিলো?
ডাক্তারঃ স্যার আপনি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রেগুলার ভাবে
চেকআপ করেন নি। আর গতকাল মনে হয় আপনি কোন বিষয়ে
উত্তেজিত বা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।যার ফলে আপনার
ব্রেনে একপ্রকার চাপ পড়ে আর আপনি সেন্সলেস হয়ে পড়েন।
আমিঃ আমি কী আজকে বাসায় যেতে পারবো?
ডাক্তারঃ হ্যাঁ পারবেন। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করে আপনাকে চলতে
হবে আর নিয়মিত চেকআপে করতে হবে।
আমিঃ ঠিক আছে।
নেহা ফ্রেশ হয়ে আসলো। ডাক্তার কে দেখে বললোঃ কেমন
আছেন ডাক্তার?
ডাক্তারঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো আপু?
নেহাঃ আলহামদুলিল্লাহ। ভাইয়া কে কী আজকে বাসায়
নিয়ে যেতে পারবো।
ডাক্তারঃ হ্যাঁ পারবেন।তবে সতর্ক ভাবে চলতে হবে। যেন কোন
ভাবে উত্তেজিত না হয়।
নেহাঃ ঠিক আছে।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পরে বয় এসে খাবার দিয়ে গেল।
আমি উঠে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি আমার
মেয়ে আর আপু একটা প্লেটে খাবার নিয়ে বসে আছে।
বুঝতে পারলাম আমার কলিজা দুটা আমার হাতে খাওয়ার জন্য
বসে আছে।
আমি যায়ে ওদের কাছে বসতেই আমার আম্মু এসে আমার কোলে
ওঠে বসলো। আমি আর কথা না বাড়িয়ে দুজনকেই খাইয়ে দিলাম।
নেহাও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।এটা দেখে আমার আম্মু
বললঃ বাবাই আমিও থোমাতে থাইয়ে তিবো,,(বাবাই আমিও
তোমাকে খাইয়ে দিবো।)
আমিঃ না আম্মু তুমি আমাকে খাইয়ে দিতে পারবে না। তুমি এখন
ছোট আগে বড় হও।
আম্মুঃ না বাবাই আমি পালবো। আন্নি তোমালে থাইয়ে জিততে
আমিও তিবো।
আমিঃ আচ্ছা আম্মু দেও।
এরপরে আমার মেয়ে আমাকে তার ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে
বিরিয়ানি আমার মুখে তুলে দিচ্ছে। খাওয়ানোর সময় তার
ছোট্ট হাত দিয়ে আমার গালে এবং নাকে খাবার লেগে যাচ্ছে
এটা দেখে আমার মেয়ের হাসি আর আটকে না।ফোকলা দাত
দিনে খিলখিল করে হাসতেছে। আমার মেয়ের হাসি যে যেন
মুক্তা ঝরতেছে। কে বলবে কিছু সময় আগে এদের জীবনে
অন্ধকার বিরাজ করেছিলো।
এদের দুজনের এই হাসিকে আজীবন টিকিয়ে রাখার জন্য
আমি আমার জীবনটা বিলিয়ে দিতে রাজি।
যাইহোক, অসীম আনন্দের মাধ্যমে খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম।
ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম।
নেহাকে বললামঃ আপু আজকে তুই কলেজে যাস না। রাতে তোর
ঘুম জাগা আছে।আর আমার আম্মুকে দেখে রাখিস।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া তাড়াতাড়ি ফিরো।
আমিঃ আচ্ছা।
কোথা থেকে আমার মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললোঃ
বাবাই থুমি তোথায় দাবে?
আমিঃ কলেজে যাবো আম্মু।
আমার মেয়েঃ আততা দাও।আল আতার থময় আমাল
দন্য তকলেত আনবে।
আমিঃ ঠিক আছে আম্মু।আর কোনো দুষ্টুমি করবে না।
আমার মেয়েঃ আততা বাবাই।
বলেই কপালে একটা চুমু দিয়ে আমার কোলে থেকে নেমে গেল।
কলেজে এসে ক্লাস করে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু
কাজ করে বাসায় আসলাম।শরীরটাও বেশ ভালো নেই।
বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতে ই আমার আম্মু এসে দরজা খুলে
দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বরলোঃ বাবাই আমাল দন্য তাদের
এনেতো?
পকেট থেকে চকলেট বের করে দিতে দিতে বললামঃ আমার আম্মু
আমাকে আনতে বলেছে আমি না নিয়ে এসে পারি।
চকলেট নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ আমার বেত্ত(বেস্ট) বাবাই।
বলে কোল থেকে নেমে চিৎকার করে বলতে লাগলোঃ আন্নি আন্নি
দেথো আমাল বাবাই আমাল দন্য তকলেত নিয়ে এতেথে। তুমি
নিবে?
নেহাঃ না আম্মু তুমি খাও।
আমার মেয়েঃ না আন্নি থুমি এততা (একটা) নেও।না হলে লাখ তলবো।
নেহাঃ ওরে বাবা আমার আম্মু টা দেখছি রাগও করতে জানে। তোমাকে
আর রাগ করতে হবে না দাও একটা আমি নিচ্ছি।
আমার মেয়েঃ এইতো চুন্দল আন্নি।
আমি ওদের কাহিনী দেখতেছি আর হাসতে ছি।
সন্ধ্যায় এতিম খানায় যায়ে মিমকে রেখে কিছুক্ষণ থেকে ওকে
ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে চলে আসলাম।
পরের দিন দুজনে কলেজে গেলাম।ক্লাস করে বাহিরে এসে দেখি
নেহা দের ক্লাসের একটা বাজে ছেলে নেহাকে বলতেছে। [যেগুলো আমি নাই বললাম]
ওর কথা শুনে নেহা কথা শুনে নেহা কাঁদছে।আর ছেলে
মেয়েরা পাশে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে।আমি যে এখানে এসেছি তা
ওরা কেউ জানে না। আমার সাথে আমার বন্ধুরা ছিলো।তারা
মারা-মারির জন্য এক্সপার্ট।
আমি আর কোনো কথা না বলে ঐ ছেলেগুলোর উপর ঝাপিয়ে পড়লাম।
সাথে আমার বন্ধুরাও।
ওদের ইচ্ছে মতো পিটাইলাম।আর আপনারা হয়তো জানেন আমি
আগে থেকেই অন্যায় সহ্য করতে পারিনা। আমার আজকের রুপ
এর আগে এই কলেজে আর কেউ দেখেনি।
একটু পরে পুলিশ আসলো। এরমধ্যেই কে যেন ফোন করেছে।
পুলিশ আসতেই। ঐ ছেলে গুলোর একজন বললোঃ দেখুন স্যার
আমাদের কি ভাবে মেরেছে।
পুলিশ অফিসার আমাকে দেখে বললোঃ আরে সাহিদ স্যার আপনি এখানে?
ব্যাবসা, এতিমখানা, হাসপাতাল থাকার কারণে এলাকার সবাই
না চিনলেও প্রভাবশালী আর ক্ষমতাশালীরা আমাকে চিনে।
পুলিশ অফিসারও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমি
যে এই কলেজে পড়ি তা জানে না।
আমিঃ আমি এই কলেজের ছাত্র।
পুলিশ অফিসারঃ আচ্ছা স্যার আমরা আসি।
এই এদের (ছেলে গুলোকে) গাড়িতে উঠাও?
সহকারীঃ ওকে স্যার।
পুলিশ অফিসার সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো
সবাই কিছুটা হতাশার মধ্যে আছে। তাই বললেনঃ তোমরা
হয়তোবা ভাবতেছো আমি ইনাকে এ্যরেস্ট করলাম না কেন?
শুনুন, এনি হলেন সেই সাহিদ হাসান যিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ ছাড়া
কাউকে মারে না।ইনি হলেন সেই সাহিদ হাসান যিনি কয়েক মাস
আগে নিজের টাকায় গরিব পথ শিশুদের জন্য এতিমখানা
তৈরি করেছেন। আরো আছে তার অবদান।
আশা করি তোমরা বুঝতে পেরোছো।
পুলিশের কথা শুনে সবাই অবাক ।
আমি বললামঃ একটা কথা সবাই কান খুলে শুনে রেখো আজ
থেকে কেউ যদি কোন মেয়েকে আর বিশেষ করে আমার বোন কে
বাজে কথা বলে তার চোখ আমি তুলে নিবো, সে যেই হোক।
মনে থাকে যেন।
এরপরে বন্ধুদের বিদায় দিয়ে নেহাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করে অফিসে গেলাম।এমডি সাহেবের সাথে কিছু
কথা বলে হিসাবটা নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। হাসপাতালে যায়ে সবকিছু দেখে শুনে
বাসায় আসলাম।
বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে গেল তিন দিন।
আজকে কলেজে নতুন ম্যাম আসবে।আর অনুষ্ঠান শুরু হবে
দুপুর বারোটায়।
নেহাকে নিয়ে কলেজে গেলাম। যাওয়ার পরে ডেকোরেশন থেকে
শুরু করে সবকিছু ভালোভাবে দেখে নিলাম।যাতে কোনো ধরনের
সমস্যায় পড়তে না হয়।
অতঃপর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরে চলে আসলো সেই
আনন্দদায়ক মূহুর্ত।মানে নতুন ম্যাম স্টেজে ওঠার সময়।
আমি আর আমার বন্ধুরা স্টেজের সামনে চেয়ারে বসে থেকে বিভিন্ন
দিকে লক্ষ্য রাখতে ছি।
হঠাৎ প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দু আমরা আজ
এখন সেই সময়ে উপনীত হয়েছি। যেটার জন্য আমরা এই বিশাল
আয়োজনের ব্যবস্থা করেছি। এখনি তোমাদের নতুন টিচার স্টেজে
আসবেন।আর তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমি স্টেজে আসার
জন্য অনুরোধ করতেছি এই কলেজের ছাত্র সাহিদ হাসান সাহি কে।
সাহিদ হাসান সাহি তুমি কোথায় আছো এই মূহুর্তে স্টেজে উপস্থিত হও।
আমি আর দেরি না করে স্টেজে উঠে গেলাম। আমি
নিচের দিকে তাকিয়ে ফুলের তোড়া টা ঠিক করতেছি।
একটু পরেই ছাত্র ছাত্রীরা তালি দিতে লাগলো। বুঝলাম
কেউ একজন স্টেজে উঠেছে। ভাবলাম ম্যাডাম হবে।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ এখন নতুন ম্যাম কে বরণ করে নেওয়ার জন্য
সাহিদ হাসান কে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আমি ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতেই,,,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১৬
আমি ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে পিছনে ফিরে নতুন ম্যামের দিকে
তাকাতেই অবাক হয়ে গেলাম।আমার মুখ দিয়ে আর কোনো
কথা বের হচ্ছে না। গায়ের লোম গুলি খাড়া হয়ে গেল।এ আমি
কাকে দেখছি ? এটা কি করে সম্ভব ? ম্যাম আর কেউ নয় ম্যাম
হলো আমার EX গার্লফ্রেন্ড সামিয়া।
সামিয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সামিয়াও হয়তো
ভাবতেছে যে, আমি এখানে কেন ?
প্রিন্সিপাল স্যারঃ সাহিদ হাসান কে আমি আবারো অনুরোধ করতেছি
নতুন টিচারকে বরণ করে নেওয়ার জন্য।
প্রিন্সিপাল স্যারের কথায় আমার ধ্যান ভাঙলো। আমি কাঁপা কাঁপা
হাতে সামিয়াকে ফুলের তোড়া দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়েছে
স্টেজে থেকে নেমে আসলাম।
আমাকে এভাবে নেমে আসতে দেখে উপস্থিত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা
কিছুটা অবাক হয়ে গেল।
আমি স্টেজ থেকে নেমে এসে ক্যাম্পাসের বকুল গাছের নিচে বসে
পড়লাম। এখানে কেউ নেই এখন। তেমন নিরিবিলি পরিবেশ নয়।
একটু দূরেই সাউন্ড বক্সে বাজতেছে। আর এই সাউন্ড বক্সের
মাধ্যমে ভেসে আসতেছে সামিয়া নামের অবিশ্বাসীর কথা।
সামিয়া লেকচার দেওয়ার পরে প্রিন্সিপাল স্যার কিছুক্ষণ লেকচার
দিলেন। তারপরে অনুষ্ঠান শেষ করে দিলেন।
আমি বসে থেকে ভাবতেছি যে, সামিয়া এখানে কেন? সামিয়ায় কী
আমাদের ইংলিশ ম্যাম। আর সে এখানেই বা কেন জয়েন করলো।
সেই স্বার্থপর শহরেই তো ভালো ভালো কলেজ ছিল।
[ EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖 লেখকঃ Sahid Hasan
Sahi]
না আর ভাবতে পারছি না। মাথাটা ব্যাথা করতে শুরু করলো।
হঠাৎ করে কে যেন আমার কাঁধে হাত রাখল। পিছনে ফিরে দেখি
ইকবাল আমার কাঁধে হাত রেখে আছে। শাকিব আর রিয়াদ
ইকবালের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ইকবাল আমাকে বলল,,,,
ইকবালঃ সাহিদ তোর কী হয়েছে? এখানে একাই বসে আছিস কেন?
আমিঃ নারে দোস্ত তেমন কিছু হয়নি। মাথাটা একটু ব্যাথা করতেছে।
( সত্যটা বলা যাবে না এদের)
রিয়াদঃ আচ্ছা চল তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
আমিঃ আমি ঠিক আছি।
রিয়াদঃ সাহিদ তোকে প্রিন্সিপাল স্যার দেখা করতে বলেছেন।
আমিঃ যাচ্ছি। আমার সাথে তোরাও চল?
শাকিবঃ চল্।
ওদের সাথে নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেলাম। দরজায় যায়ে
বললামঃ মে আই কাম ইন স্যার।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ হুমমম,, এসো।
আমি রুমের ভেতরে ঢুকে গেলাম। স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ কী ব্যাপার সাহিদ তুমি তখন স্টেজে থেকে
নেমে গেলে আর আসলে না কেন?
[ EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖 লেখকঃ Sahid Hasan Sahi]
আমি বললামঃ স্যার তখন আমার মাথার ব্যাথা শুরু হয়েছিল।আর
আপনি তো জানেন আমার মাথায় প্রবলেম আছে।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ হুমম ঠিক আছে। তবে তুমি আমাকে বললেই ডাক্তার কে
বলতাম।
আমিঃ সমস্যা নেই স্যার।আর কোনো কাজ আছে কী?
প্রিন্সিপাল স্যারঃ না নেই তুমি বাসায় যাও।আর কালকে একটু
তাড়াতাড়ি কলেজে এসো।
আমিঃ আচ্ছা স্যার।
স্যারের রুম থেকে বের বন্ধুদের বিদায় দিয়ে নেহার কাছে গেলাম।
নেহার কাছে যেতেই দেখি নেহা আর ওর কিছু বান্ধবী বসে থেকে
আড্ডা দিচ্ছে।
আমি নেহাকে বললামঃ আপু বাসায় যাবি না এখন?
নেহাঃ হ্যাঁ ভাইয়া চল।
তারপরে ওকে নিয়ে ক্যান্টিনে যায়ে কিছু খাইয়ে দিয়ে বাসায় চলে
আসলাম। বাসায় এসে গোসল করলাম। যোহরের নামাজ পড়ে দুই
ভাই বোন একসাথে লাঞ্চ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে নেহার ডাকে
ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে আসরের নামাজ পড়ে একটু ফেসবুকে
ঢুকলাম। কিছুক্ষণ পরে লগআউট করে রেখে দিলাম।
[ EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম 💖 লেখকঃ Sahid Hasan Sahi]
সন্ধ্যায় এতিমখানায় গেলাম। সেখানে আমার
মেয়েকে নিয়ে কিছু সময় আড্ডা দিলাম। আমার মেয়েকে ঘুম
পাড়িয়ে দিয়ে উঠে আসতে যাবো ঠিক তখনি মেয়ে দুই হাতে
আমার ডান হাত জড়িয়ে ধরে বললঃ বাবাই আমি
থোমাল কাথে থাদবো।থুমি দেওনা।
আমিঃ আম্মু আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে
দেই আর তুমি ঘুমিয়ে যাও।
আমার মেয়েঃ না থুমিও আমাল থাতে দুমাবে,,,,বলেই কান্না
করতে লাগলো।
আমি আমার মেয়ের কান্না সহ্য করতে না পেরে ওকে নিয়ে আমার
বাসায় আসলাম।আর আমি এই এতিম খানায় ঘুমাতে পারবো না।
এটার বেশ কয়েকটি কারণ আছে। আরেকটা কথা আমি যদি
আমার মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে আসি তাহলে সকালে ওঠে
কান্না করে দিবে।কারণ সকালে দেখবে যে আমি ওর পাশে নেই।
আর আমার মেয়ের এই বয়সে আল্লাহর রহমতে ব্রেন শক্তিটা বেশি।
{( আসলে বাস্তবে আমি জানি না এই বয়সের ছেলে মেয়েগুলো
এতোটা মেধাবী হয় কিনা?তবে গল্পের ক্ষেত্রে এটা লিখলাম,
সো ফ্রি মাইন্ডে পড়বেন,, লেখকঃ Sahid Hasan Sahi)}
মিমকে নিয়ে এতিমখানা থেকে বাহির হয়ে বাইকের
কাছে আসলাম। আজকে নেহা আসেনি আমার সাথে।ওর নাকি
শরীর খারাপ।তাই আমিও নিয়ে আনিনি।
যাইহোক, আমি বাইকে উঠে আমার মেয়েকে আমার সামনে বসিয়ে
নিলাম । ছোট বাচ্চা পিছনে বসিয়ে রাখা টা উচিত নয়।
এরপরে মেয়ের সাথে গল্প করতে করতে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই নেহা এসে দরজা খুলে দিলো।
মিম নেহাকে দেখে আমার কোল থেকে নেমে ওর আন্নি কে জড়িয়ে
ধরে বললোঃ আন্নি আদকে আমি তোমাদেল কাতে থাদবো।
নেহাঃ ঠিক আছে আম্মু এসো।
এরপরে সবাই একসাথে মানে নেহা,মিম আর আমি একসাথে ডিনার
করতে বসলাম।মিম আগেই খেয়েছে তারপরেও নাকি আমার
সাথে খাবে। আমার মেয়ে তো খাবে না আমার সাথে শুধু দুষ্টামি করবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেহা ওর রুমে ঘুমাতে গেল। আর
আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আমার রুমে ঘুমাতে আসলাম।
রুমে এসে আমি শুয়ে পড়তেই আমার মেয়ে আমার বুকে মাথা
রেখে শুয়ে পড়লো। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন
গল্প শুনাচ্ছি। আর সে আমার গল্প শুনে ফোকলা দাঁত দিয়ে
হাসতেছে। একটু পরে দেখি আমার মেয়ে আর হাসতেছে না।
নড়াচড়া করতেছে না। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে দেখি মেয়ে
আমার পরম সুখে ঘুমাচ্ছে। আমি ওর মাথায়
হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।এর মাঝে এক অজানা সুখ মনের গহিনে
অনুভব করলাম।
হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল সামিয়ার কথা মনে পড়তেই।
আমি তো এখানে একাই ভালো আছি। কেনো তুমি আবার সেই
পুরোনো ক্ষত টাকে জাগিয়ে দিচ্ছ। আমি তো আর চাইনা
তোমাদের মতো অবিশ্বাসীদের কাছে ফিরে যেতে। আমি তো
এখানে একটা বোন আর একটা টুকটুকে মেয়ে পেয়েছি তোমাদেরকে
আর আমি চাই না, তোমাদেরকে আর আমি চাইনা।
মা-বাবার কথাটা ভাবতেই বালিশটা ভিজে গেল। ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে আমার মেয়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম।
মিমঃ বাবাই ও বাবাই ওতো থতাল হয়েতে।
আমিঃ হুম্মাম আম্মু উঠেতেছি।
উঠে ফ্রেশ হয়ে তিনজন নাস্তা করলাম। নাস্তা করার সময়
নেহা বললোঃ ভাইয়া আজকে আমার আম্মুটাকে কলেজে
নিয়ে চলো।
আমিঃ আম্মু তুমি আমার কলেজে যাবে?
মিমঃ দাবো তবে আমালে তকলেত তিনে দিতে হবে।
নেহাঃ আচ্ছা আম্মু দিবো চলো।
এরপরে আমার মেয়েকে ভালো কাপড়। পড়িয়ে দিলাম। হাজার
হলেও আমার প্রিন্সেস বলে কথা। যাইহোক, আমার মেয়ে আর
বোন কে নিয়ে কলেজে গেলাম।
কলেজে পৌঁছে ওদের নামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বললাম।
আমি বাইক পার্ক করে ওদের কাছে গেলাম। এরপরে ওদের নিয়ে
ক্যান্টিনে গেলাম। আমার বন্ধুরা এখনো আসেনি।
আমরা একটা টেবিলে বসলাম।আমি আর নেহা দুজনে দুই পাশে
আর আমার প্রিন্সেস মাঝখানে। অপরিচিত কেউ দেখলে আমাদেরকে
একটা ফ্যামিলি ভাববে।
অনেক সময় ধরে আমরা তিনজন বসে থেকে খাওয়া দাওয়া
আর আড্ডা দিতে লাগলাম। ওঠে আসতে যাবো তখন আমার
মেয়েকে বললামঃ আম্মু তুমি আর কিছু খাবে?
মিমঃ আইততিম,,(আইসক্রিম) থাবো।
আমি ওয়েটারকে বলে আইসক্রিম আনাই।
আইসক্রিম এনে আমার মেয়েকে দিলাম।সে পরম আনন্দে
খাচ্ছে। আমি আর নেহা ওর খাওয়া দেখে হাসতেছি।কারণ,
আমার মেয়ের গাল ও নাক মেখে গেছে আইসক্রিমে।
আমার মেয়ে আমাকে বললঃ বাবাই থুমি আমাল আইততিম
থাবে?
আমিঃ না আম্মু তুমি খাও।
আমার মেয়েঃ আততা বাবাই।
আমরা তিনজন এমন টেবিলে বসে আছি যেখানে কলেজের
ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে গেটের সব ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা
অনায়াসে আমাদের দেখতে পাবে।
আমি আমার মেয়েকে বললামঃ মামনি আর কিছু খাবে?
আমার মেয়েঃ না বাবাই আর থাবো না।
"বাহ,, ভালোই তো সংসার শুরু করেছে।"
হঠাৎ করে কথাটা পিছন থেকে কে যেন বললো।
পিছনে ফিরে দেখল তো আমার হাত পা অবশ হয়ে গেল।
কারণ,পিছন থেকে সামিয়া এই কথা বললো। হাঁটতে হাঁটতে
আমাদের টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো।
সামিয়া কে দেখে নেহা সালাম দিলো কিন্তু সামিয়া সালামের
জবাব দিলো না।
সামিয়া আবার বলতে শুরু করলঃ তাহলে বিয়েও করে ফেলেছো।
মেয়েও একটা হয়েছে খুব কিউট তো।আর এটা ( নেহাকে
উদ্দেশ্য করে) তোমার বউ।বেশ ভালোই মানাচ্ছে দুজনকে।
কবে বিয়ে করলে?
সামিয়ার কথা শুনে নেহা আর আমি অবাক হলাম। সামিয়ার
কথা গুলো শুনে বুঝা যাচ্ছে সে খুব কষ্টে কথা গুলো বললো।
তাহলে কী সামিয়া আমাকে ভালোবাসে না না এ হতে পারে না।
আমি চুপ করে এসব ভাবতেছি। আবার নেহা বললোঃ কী
হলো বললে না যে, কবে বিয়ে করেছো?
নেহা এবার বলতে লাগলোঃ ম্যাম আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে?
সামিয়াঃ আমার আবার কোথায় ভুল? তোমাদের পারিবারিক কথা
জিজ্ঞাসা করে?
নেহাঃ না ম্যাম আপনি যা ভাবছেন তা নয়। উনি আমার
হাজবেন্ড নয় উনি আমার ভাইয়া। আমাকে রাস্তা থেকে তুলে
এনে বোনের মর্যাদা দিয়েছে।
সামিয়া নেহার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। তারপরেও
নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললোঃ তাহলে এই বাচ্চাটা কে?
নেহাঃ ভাইয়ার একটি এতিমখানা আছে।আর সেখানে প্রায়
বছর আগে একটা মহিলা এই বাচ্চাটা কে ভাইয়ার কাছে দিয়ে
যায় আর,,,,,,,
আমি আর নেহাকে বলতে না দিয়ে বললামঃ আহহ নেহা চুপ কর।
আর কাউকে যেন বলবি না মিম আমার মেয়ে নয়।মিম আমার
মেয়ে।বুঝলি?(রেগে)
নেহাঃ আচ্ছা ভাইয়া।
আমিঃ হুম্মাম চল। আম্মু তুমি আন্নির সাথে যাবে নাকি
আমার সাথে?
মিমঃ বাবাই আমি তোমাল থাতে দাবো।
আমিঃ চলো আম্মু।
এরপরে নেহাকে ওর বান্ধবীদের কাছে দিয়ে আমি আমার মেয়েকে
নিয়ে আমার বন্ধুদের কাছে গেলাম। ওদের কাছে যেতেই ইকবাল
মিমকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।
মিমঃ তেমন আথেন আনতেল?( কেমন আছেন আংকেল?)
ইকবালঃ আমি ভালো আছি। আমার ভাতিজী কেমন আছে?
মিমঃ বাবাই ভাতিদি তি?( বাবাই ভাতিজি ক? আমার মেয়ে
জানে না ভাতিজি কি)
আমিঃ তুমি আমার মেয়ে আর তোমার আংকেলের কাছে
ভাতিজি।বুঝেছো আম্মু?
মিমঃ হুম বাবাই।
কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ক্লাসে গেলাম। ক্লাসের সবাই মিমকে চিনে।
মিম বলতে ওরা পাগল। যাইহোক, প্রথম ক্লাস করলাম। দ্বিতীয়
ক্লাসে নাকি ইংলিশ হবে।
একটু পরে প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে সামিয়া ক্লাসে ঢুকলো।
সরি। এখন তো আর সামিয়া বলা যাবে না।এখন ম্যাম বলতে
হবে।
ক্লাসে ঢুকেই স্যার পরিচয় করিয়ে দিলেন।এরপর সামিয়াও
কিছু বললো। তবে আমি একটা বিষয়ে অবাক হলাম। আর তা
হলো সামিয়া নাম বলার সময় বললো আমার নাম মিস
সামিয়া। তারমানে সিংগেল।
আহহ সে সিংগেল হোক আর মিংগেল হোক তা আমার
দেখার বিষয় নয়।
এরপরে সামিয়া মানে ম্যাম আমাকে যেই প্রশ্ন করলো
তা শুনে আমি সহ ক্লাসের,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১৭
প্রিন্সিপাল স্যার সামিয়াকে সরি নতুন ম্যাম কে সঙ্গে নিয়ে ক্লাসে আসলেন। এরপরে প্রিন্সিপাল স্যার কিছু নীতি কথা
চলে গেলেন। চলে যাওয়ার সময় বললেনঃ মিস সামিয়া
আপনার যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে সেটা আপনি
সাহিদ হাসান কে বলবেন।সাহিদ হাসান হলো এই ক্লাসের
ফার্স্ট বয়।
ম্যামঃ ওকে স্যার।
প্রিন্সিপাল স্যারের কথা শুনে আমার আমার খুব খারাপ
লাগলো। আমার কথা কেন তাকে বলতে হবে। আমি ছাড়া কী আর কেউ নেই? তবে, এটা যদি অন্য কোনো টিচারের জন্য বলতেন তাহলে আমার মনে আনন্দ জাগতো। কিন্তু সামিয়ার জন্য আনন্দটা বেদনায় পরিণত হয়েছে। কেননা,
আমি আর চাইনা ওর মতো অবিশ্বাসীর মায়ায় নিজেকে
জড়াতে।
যাইহোক, এইবার ইংলিশ ম্যাম তাঁর পরিচয় দিতে লাগলেন।নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তিনি সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচয় নিচ্ছেন।
এবার আমার পালা। আমি সামনের বেঞ্চে বসেছিলাম।আর ম্যাম পিছনের বেঞ্চ থেকে পরিচয় নিয়ে শুরু করেছেন।
ম্যাম আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেনঃ এই ছেলে তোমার নাম কী?
আমি কিছুটা অবাক হলাম, আমার নাম জানার পরেও জিজ্ঞাসা করতেছে। হয়তোবা ভুলে গেছে আমার মতো
চরিত্রহীনের কথা।
এসব ভাবতেছি তখন আবার বললোঃ কী হলো নাম বলো?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বললামঃ সাহিদ হাসান সাহি। তবে কেউ চরিত্রহীন উপাধিও দিয়েছিলো।
আমার এই কথা শুনে ম্যাম কিছুটা অনুশোচনা বোধ করলো। ম্যামঃ তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে ?
ম্যামের প্রশ্ন শুনে আমি সহ ক্লাসের সকল ছাত্র-ছাত্রী অবাক হয়ে গেলাম।ম্যাম বলে কি?
আমিঃ ছিলো কিন্তু এখন নেই।
ম্যামঃ নাই কেন?
আমিঃ হা হা হা জানতে চাচ্ছেন নাই কেন? তাহলে শুনুন, একটা মেয়েকে আমি খুব ভালোবাসতাম। সে ছিলো একজন অবিশ্বাসী।
ম্যামঃ কিহহ আমি অবিশ্বাসী?(একদম রেগে)
ম্যামের এমন আচরণ দেখে ছাত্র-ছাত্রীরা কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেল।
ইকবাল আমার পাশেই বসেছিল। ইকবাল বললঃ ম্যাম আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন?
ম্যাম কিছুটা অপমান বোধ করলো।
আমি আবার বলতে শুরু করলাম।কারণ, আজকে আমি সামিয়া কে বলতে চাই তার প্রতি আমার জমানো অভিমানের কথা গুলো।
আমিঃ বলতে গেলে সেই ছিলো আমার বর্তমান সেই ছিলো আমার ভবিষ্যৎ।
তাকে ছাড়া আমি অন্য কোনো মেয়ের প্রতি চোখ তুলে তাকাই নি। সে আমাকে ভালোবাসাতো কি না জানি
না।তবে আমার প্রতি তার বিশ্বাস টা ছিলো খুবই ক্ষুদ্র পরিমাণে। যেটা দ্বারা আমার জন্য তার ভালোবাসাটাকে
টিকিয়ে রাখতে পারেনি। কোন এক অপবাদে সে আমাকে চরিত্রহীন উপাধি দেয়। সেই থেকে আমি আর কোনো মেয়েকে বিশ্বাস করিনি। যদি এই মেয়েও আমাকে সেই অবিশ্বাসী, প্রতারকের মতো চরিত্রহীন উপাধি দেয়।(এক নিঃশ্বাসে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে দিলাম)
ম্যাম আমি বসতে পারি কী?
ম্যামঃ হুমম বসো।(নরম সুরে)
ম্যাম তাঁর চেয়ারে যায়ে বসতেই আমার মেয়ে বললোঃ বাবাই এতা (সামিয়া কে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে) তোমাল তে হয়?
আমার মেয়ের কথা শুনে তো আমি বোকা বুনে গেলাম।কী বলবো আমার মেয়েকে? এসব ভাবতেই রিয়াদ বললোঃ মামনি এটা তোমার বাবাইয়ের ম্যাম হয়।
যাক বাঁচলাম। শালা রিয়াদ তুইতো আর জানিস না ভাই এটা আমার সেই EX গার্লফ্রেন্ড।
যাইহোক, সামিয়ার ক্লাসটা কোনো মত শেষ করলাম। ক্লাসের সময় বারবার সামিয়া আমার দিকে তাকাচ্ছিলো।
আর আমি আঁড় চোখে তা দেখতেছি।
ক্লাস শেষ করে মিমকে নিয়ে নেহার ক্লাসে গেলাম। যায়ে দেখি স্যার ক্লাস নিচ্ছেন।
আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ক্লাসের বাহিরে অপেক্ষা করতে লাগলাম। একটু পরে নেহা বের হয়ে আসলো।নেহা আমার মেয়েকে কোলে নিলো।এর পরে আমরা তিনজন ক্যান্টিনে গেলাম। সেখানে কিছু খাওয়ার পরে বাসায় আসলাম। তবে সামিয়ার সাথে আর দেখা হয়নি।
বাসায় এসে আমার মেয়েকে গোসল করে দিয়ে আমিও গোসল করলাম।এর পরে নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ার সময় আমার মেয়েও আমার পাশে এসে নামাজ পড়তে লাগলো।
নামাজ পড়ে তিনজন মিলে লাঞ্চ করতে বসলাম। লাঞ্চ করার পরে দুপুরে ঘুমিয়ে গেলাম।
এভাবে কেটে গেল পনেরো দিন।এই পনেরো দিনে প্রতিদিন ক্লাসে সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর এই
সন্ধ্যায় এতিমখানায় গেলাম। সেখানে একটা নতুন মহিলাকে বাচ্চাদের দেখাশুনা করার জন্য রেখেছি।তার সঙ্গে কিছু কথা বলে আমার মেয়েকে নিয়ে আমার বাসায় আসলাম।এখন থেকে আমার বাসায় মিমকে রাখবো। আর আমার আর নেহার কলেজ টাইমে এতিম খানায় রেখে আসবো। বাসায় তো আর ছোট বাচ্চাকে একায় রেখে যাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া সেখানে কিছু সময় ছেলে মেয়েদের সাথে থাকলে একাকিত্ব টা আর থাকবে না।আর আমার মেয়েকে আমার বাসায় নিয়ে আসার কারণ হলো, কয়েক দিন আগে এতিমখানার খালাটা মারা গেছে। আসলে তার লেভার ক্যান্সার ছিলো।যেটা মৃত্যুর দুদি আগে ধরা পরেছে।
তিনি ছিলেন খুব নরম এবং মিশুক মানুষ। তার কোনো সন্তান না থাকায় সে এতিমখানার ছেলে মেয়েদের নিজের সন্তানের মতোই দেখতেন।আর আমার মেয়েই ছিল এতিম
খানায় বয়সের দিক থেকে সবচেয়ে ছোট। এখন এই মহিলা( বর্তমানের) যদি আগের মহিলার তুলনায় বিপরীত হয় তাহলে মুশকিল।
আর এজন্য আমার মেয়েকে আমার বাসায় নিয়ে আসলাম।
অপরদিকে সামিয়া ভাবতেছে, আসলেই কী সাহিদ রিপার সাথে এরকম কাজ করার চেষ্টা করেছিলো? আর সাহিদ এখানে কেন? না এটার রহস্য আমাকে বের করতে হবে।
এটা জানার জন্য আমার নেহাকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন। কালকে কলেজে যায়ে জিজ্ঞাসা করবো।
আমি, নেহা আর আমার মেয়ে একসাথে ডিনার করে রাতে ঘুমিয়ে গেলাম। পরের দিন সকালে নাস্তা করে কলেজের জন্য বের হলাম। মিমকে সাথে নিয়ে ওকে এতিমখানায় বাচ্চাদের কাছে রেখে এসে নেহা আর আমি কলেজে গেলাম।
কলেজে পৌঁছে নেহাকে ওর বান্ধবীদের কাছে দিয়ে আমি আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ক্লাসে গেলাম।
সামিয়া নেহাকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। হঠাৎ দেখে নেহা আসতেছে।,এই তো নেহা এসেছে।
সামিয়াঃ নেহা তোমার সাথে আমার একটা পার্সোনাল কথা আছে।
নেহাঃ জ্বি ম্যাম বলুন।
সামিয়াঃ নেহা তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে আমাকে কিছু বলবে।
নেহাঃ আমার ভাইয়ের সম্পর্কে (অবাক হয়ে)।
কী জানতে চাইছেন আপনি।
সামিয়াঃ এখানে নয়। আমার তুমি আমার অফিস রুমে এসো।
নেহাঃ আচ্ছা ম্যাম চলুন।
সামিয়ার অফিস রুমে যায়ে।
সামিয়াঃ আচ্ছা নেহা আমার জানা মতে তোমার ভাইয়ের কোনো বোন নেই তাহলে,,,
সামিয়া কে আর বলতে না দিয়ে নেহাঃ আপনি জানতে চাচ্ছেন আমি তাহলে কোথায় থেকে আসলাম?
হুমম আপনি ঠিকই ভেবেছেন, আমার ভাইয়া আমাকে একটা হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে বোনের মর্যাদা দিয়েছে।
সামিয়াঃ ওহহ,, তোমার ভাইয়ের মা বাবা কে? (যদিও জানে)
নেহাঃ আমার ভাইয়ার বাবা হলেন এদেশের টপ ব্যবসায়ী।আর তাঁর একটি হাসপাতালও আছে।আজ থেকে প্রায় দেড় বছর আগে ভাইয়ার বাবা মৃত্যু বরণ করে।আর সেই সময় থেকে ভাইয়া এসব দেখাশোনা করে।
সামিয়াঃ তুমি কবে থেকে তোমার ভাইয়ের সাথে আছো?
নেহাঃ একবছরের বেশি থেকে। কিন্তু ম্যাম আপনি এসব কেন জানতে চাচ্ছেন?
সামিয়াঃ না তেমন কিছু নয়।(মুচকি হেসে)
নেহাঃ কী ব্যাপার ম্যাম সামথিং সামথিং নাকি।( হেসে হেসে)
সামিয়াঃ বেশি পেকেছো,,,।(মাথা নিচু করে)
নেহাঃ আপনার যদি সাহায্য প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে বলবেন।আর জানেন কি ম্যাম, আমার ভাইয়া খুব ভালো।এই রকম একটা ভাই পেয়ে আমি খুশি। কোনো দিন কোনো মেয়ের সাথে বাজে বিহেভ করে নি। আপনি যদি আমার ভাইয়াকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পান তাহলে আপনি খুব লাকি হবেন।(এক নিঃশ্বাসে)
সামিয়াঃ আমার তো মনে বলে তোমার ভাইয়া খারাপ নয়। তারপরে সেদিন কেন যে এমন ব্যবহার করতে গিয়েছিলাম (বিরবির করে)
নেহাঃ ম্যাম কিছু বললেন?
সামিয়াঃ না,, তুমি যাও সাহায্য লাগলে বলবো।আর তোমার ফোন নাম্বার দাও।
নেহাঃ আচ্ছা ম্যাম। ফোন নাম্বার তুলুন ০১৭২৯৭৬****
আসি তাহলে ম্যাম।
সামিয়াঃ আচ্ছা যাও।
নেহা সামিয়ার রুমে থেকে যাওয়ার পরে সামিয়া হাতে কলম ঘুরাচ্ছে আর ভাবতেছে,, নেহার কাছে তো আমি কিছু জানতে পারলাম। তবে সাহিদের বাবা কে? কীভাবে আসলো এখানে? এটা জানতে হবে।আর এটা জানার জন্য এমন কারো কাছে যাতে হবে যে সাহিদের ব্যপারে সবকিছুই জানে।কে হতে পারে এটা কে হতে পারে?ওহ প্রিন্সিপাল স্যার বলতে পারবে। কারণ শুনেছিলাম সাহিদ এই কলেজে তিন বছর আগে ভর্তি হয়েছে। তারমানে আমার আর সাহিদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির পর থেকেই এখানে আছে।
সামিয়া আর দেরি না করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেল।
সামিয়াঃ মে আই কাম ইন স্যার।
স্যারঃ ইয়েস আসো মিস সামিয়া।
সামিয়াঃ স্যার আপনার সাথে জরুরী কথা ছিল।
স্যারঃ হুমম বলো।
সামিয়াঃ স্যার সাহিদ কবে থেকে এখানে লেখাপড়া করতেছে আর ওর বাবা কে?
স্যারঃ কেন? তা জেনে তুমি কি করবে?
সামিয়াঃ আমার খুব প্রয়োজন বলুন স্যার।
স্যারঃ তাহলে শোনো,,,,,,(সব বললেন)
সামিয়াঃ ঠিক আছে স্যার তাহলে আমি আসি।
স্যারঃ ঠিক আছে যাও।
সামিয়া নিজের রুমে এসে ভাবতে লাগলো,, সব ক্লিয়ার এখন শুধু আমাকে জানতে হবে সাহিদ কী সত্যিই রিপার সাথে না না আমার মন বলে সাহিদ এরকম কিছু করে নি।
এটা জানতে হলে আমাকে আবার রাজশাহী যেতে হবে সাহিলের বাবা মায়ের কাছে। এর জন্য দুদিন আমাকে কলেজ ছুটি নিতে হবে যে করেই হোক। আর দেরি করলে চলবে না।[ আপনাদের হয়তো আগে বলা হয়নি যে,রাজশাহী আমার আর সামিয়ার বাসা]
সামিয়া আর দেরি না করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে গেল।
সামিয়াঃ স্যার আমার দুই দিন ছুটি প্রয়োজন ।
স্যারঃ কেন?
সামিয়াঃ স্যার রাজশাহী যাবো।
স্যারঃ কিন্তু তোমার তো এখানো একমাস হয়নি।
সামিয়াঃ প্লিজ স্যার।(করুন সুরে)
স্যারঃ ওকে। তবে দুদিনের বেশি নয়।
সামিয়াঃ ধন্যবাদ স্যার।
এরপরে সামিয়া তার অফিস রুমে এসে বাসায় ফোন করে বলল যে,সে আজকে বাসায় যাবে।
আমি ক্লাস শেষ করে নেহাকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেলাম।নেহাকে নিজ হাত দিয়ে ফুচকা খাইয়ে দিচ্ছি।আর অন্য দিকে সামিয়া এটা দেখে রাগে ফোসতেছে আর মনে মনে বলতেছেঃকোই আমাকে তো একদিনো তুলে খাওয়াই নি আর আজকে বোনকে পেয়ে,,,😡😡😡। দোয়া করি তুই বউ যেন না হয়।ছিঃ ছিঃ এটা কি বললাম আমি ওর যদি বউ না হয় তাহলে আমার কি হবে।করলো আমি পাগল হয়ে গেলাম।
আমি নেহাকে নিয়ে এতিমখানায় গেলাম। সেখানে যায়ে মিমকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
লাঞ্চ করে অফিসে গেলাম। সেখান থেকে হাসপাতালে গেলাম। সবকিছু দেখা শুনা করে বাসায় ফিরলাম।
নিত্য দিনের ন্যায় পরের দিন আবার কলেজে গেলাম। আজকে সামিয়া কে দেখলাম না। প্রিন্সিপাল স্যার এসে বললো ম্যাম নাকি দুদিন ছুটি নিয়েছে।এই দুদিন অন্য স্যার ক্লাস নিবেন
ওফফ বাবা বাঁচলাম এই দুদিন।
এদিকে সামিয়া বাসায় পৌছে আর দেরি না করে সাহিদের বাসায় গেলো।সাহিদের বাসায় যায়ে যা শুনলো,তা শুনে তো,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১৮
সামিয়া রাজশাহী পৌঁছে বাস থেকে নেমে নিজের বাসায় চলে যায়। সামিয়ার মা-বাবা তাকে দেখে খুব খুশি হয়েছে। কিন্তু সামিয়ার মনে এখন শুধু অশান্তি বিরাজ করতেছে।
ছোফাই বসে আছে তিনজন। হঠাৎ সামিয়ার বাবা বললোঃ সামিয়া আমি তোমার জন্য একটা ছেলে দেখেছি, তুমি যদি
রাজি থাকো তাহলে আমরা বিয়ের কথা বলতে পারি।
এই কথা শুনে তো সামিয়া রেগে গিয়ে ওর বাবাকে বললোঃ আব্বু আমি এখন বিয়ে করবো না, এই কথা তোমাদের কত বার বলতে হবে 😡😡?
সামিয়ার বাবাঃ ঠিক আছে মা তুমি যা বলবে তাই হবে।
সামিয়ার মা বাবা আর কোনো কথা বললেন না। কারণ তারা জানে তাদের মেয়ে এমনি এমনি রেগে যায় না। আর যখন রেগে যায় তখন কেউ তার রাগ থামাতে পায় না।
মা-বাবার সাথে কিছু কথা বলে আর এক মূহুর্ত দেরি না করে সাহিদের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলো। সাহিদের বাসার পৌঁছে গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখে সাহিদের মা, বাবা, ভাইয়া, ভাবী আর ভাইয়ের কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা, মনে হয় সাহিদের ভাইয়ের ছেলে এই পাঁচ জন তাদের প্রাইভেট কারে উঠতেছে।
সামিয়া তাদের সামনে যাতেই সাহিদের ভাইয়া সাইম আহম্মেদ তাকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে এসে বললোঃ এই মেয়ে তুমি সামিয়া না ? আর এদিকে কোথায় যাচ্ছো?
সামিয়াঃ হ্যাঁ ভাইয়া আমি সামিয়া আর আপনাদের কাছেই এসেছিলাম।
সাইম আহম্মেদঃ আমাদের কাছে এসেছো? আর এতো দিন কোথায় ছিলে?(অবাক হয়ে)
আসলে সাহিদ কে যখন বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলেন তখন সাহিদের কথা ভাবতে ভাবতে সাহিদের মা অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করতো না, কথা বলতো না। একসময় গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ডাক্তার সাহিদের মাকে দেখে বলেনঃ রোগির প্যরালাইসিস হয়েছে। বেশি চিন্তা করার জন্য এই রকম হয়েছে। তবে বাহিরে নিয়ে গেলে হয়তোবা ঠিক হয়ে যেতে পারে। তবে আল্লাহ ভরসা।
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই ভেঙ্গে পড়ে।সাইম আহম্মেদ ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলোঃ ডাক্তার কোন দেশে নিয়ে গেলে আমার আম্মু কে সুস্থ ভাবে ফিরে পাবো?
ডাক্তারঃ সিঙ্গাপুরে নিয়ে যান। সেখানে প্যরালাইজড রোগিদের জন্য অনেক ভালো ভালো ডাক্তার রয়েছে।আর সেখানে আমার একটা বন্ধুও আছে। আপনারা যদি নিয়ে যেতে চান তাহলে আমি আমার বন্ধুকে বলতেছি।
সাইম আহম্মেদ ও আমজাদ চৌধুরী হ্যাঁ সম্মতি দিয়ে বললেনঃ আপনি ব্যবস্থা করুন প্লিজ।
ডাক্তারঃ ঠিক আছে।
এরপরে সাহিদের মাকে নিয়ে সাহিদের সপরিবারে মানে সাহিদের ভাইয়া,ভাবি আর আব্বু তার মায়ের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান।
সেখানে প্রায় সাত মাস থাকার পরে সাহিদের আম্মু মোটামুটি সুস্থতা লাভ করে। তারপরে তাকে নিয়ে নিয়ে সপরিবারে সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে চলে আসে।আর সিঙ্গাপুরে থাকা অবস্থায় সাইম আহম্মেদ অথবা তার আব্বু আমজাদ চৌধুরী মাঝে মাঝেই দেশে আসতেন নিজেদের বিজনেস দেখা শুনা করার জন্য। ফ্রি টাইমে আবার সিঙ্গাপুর যেতেন।
আর কলেজে সামিয়া যেদিন সাহিদকে ভুল বুঝে চরিত্রহীন উপাধি দিয়েছিলো সেদিন সাহিদ সামিয়ার কাছ থেকে চলে যায়।সাহিদ তার কাছ থেকে চলে যাওয়ার পরে সামিয়া বাসায় এসে কান্না শুরু করে। শুধু কান্নায় করে। একদিন কেটে যাওয়ার পরেও সামিয়া কিছুই খায়না। শুধু রুমে বসে থেকে সাহিদের একটা ছবি বুকে নিয়ে কান্না করতে থাকে। একমাত্র মেয়ের এমন বিহেব দেখে সামিয়ার মা- বাবা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মেয়েকে নিয়ে তারা তার নানুর বাড়ী সিলেটে যায়। তারপরে তারা সিলেটে যায় আর সেখানেই বেশ কয়েক দিন থাকে।
সিলেটে সামিয়া স্বাভাবিক ভাবেই ছিলো। তাকে নিয়ে তার মা বাবা আবার রাজশাহী আসে। সামিয়া বাসায় এসে সাহিদের বাসার সামনে যায়ে দেখে তাদের বাসায় তালা দেওয়া। সামিয়া আর জানতো না সাহিদের পরিবার সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছে।
এর কয়েক দিন পরে সামিয়ার বাবা ট্রান্সফার হয়ে চট্টগ্রামে আসেন। সামিয়ার বাবা একজন সরকারি ডাক্তার। চট্টগ্রামে তার পরিবারকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন। যার ফলে সামিয়ার সঙ্গে আর সাহিদের পরিবারের কারোর দেখা হয়নি। সামিয়ার কলেজে চাকরি হওয়ার আগে সামিয়ার বাবা আবার রাজশাহীতে ট্রান্সফার হয়ে আসেন। রাজশাহীতে এসে সামিয়া জানতে পারে যে সাহিদের পরিবার এখানে থাকে কিন্তু সাহিদ থাকে না।
তবে সামিয়া আর সাহিদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি।কারণ,সাহিদের প্রতি সামিয়ার একটা ঘৃণা তৈরি হয়েছিলো।
যাইহোক এবার বর্তমানে আসি,,,
সামিয়াঃ আসলে ভাইয়া বাবার ট্রান্সফারের জন্য আমরা চট্টগ্রামে ছিলাম।
সাইম আহম্মেদঃ ওহহহ তো আমাদের কা,,
সাইম আহম্মেদের কথা শেষ না হতেই আমজাদ চৌধুরী বললঃ আরে সামিয়া মা যে কেমন আছো?
সামিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন আংকেল?
আমজাদ চৌধুরীঃ আলহামদুলিল্লাহ। তো কোথায় যাচ্ছো?
সামিয়াঃ আপনাদের বাসায় এসেছিলাম।
আমজাদ চৌধুরীঃ কি প্রয়োজন মা বলো?
সামিয়াঃ আসলে আংকেল সাহিদ কোথায় আছে বলতে পারবেন কি?
আমজাদ চৌধুরীঃ না মা আমরা জানি না। সেদিন বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলাম আর দেখা হয়নি।কেন কি হয়েছে তুমি ঐ পাপিষ্ঠার কথা জিজ্ঞাসা করতেছো কেন?
যে তোমার বিশ্বাস, তোমার পবিত্র ভালোবাসার মর্যাদা দেয়নি তার কথা বলতেছো কেন?
সামিয়াঃ না আংকেল এমনি (সত্যটা বলা যাবে না)। আপনারা কোথায় যাচ্ছেন?
আমজাদ চৌধুরীঃ আসলে মা আমার বন্ধুর মেয়ের ব্রেন টিউমার হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন বাঁচার সম্ভাবনা কম। তবে আজ রাতে অপারেশন করবে।এতে যদি ভালো হয় তাহলে হবে নইলে মারা যাবে।তাই আমরা দেখা করতে যাচ্ছি।ওহহ তুমি চিনো মনে হয়, রিপা ছিলো যে। যাকে আমার ছেলে রেপ করার চেষ্টা করেছিলো সে। তুমি যাবে কী আমাদের সাথে?
রিপার কথা শুনে সামিয়া যাওয়ার জন্য রাজি হয়।কারণ, সামিয়া এখন বুঝতে পারতেছে সাহিদ কোনো ভাবেই এই কাজ করেছিলো না । এর মধ্যে নিশ্চয় কোনো রহস্য আছে।আর এই ব্যপারটা সে রিপার থেকে জানতে পারবে। যদিও রিপা অসুস্থ তারপরেও জিজ্ঞাসা করবে।
সামিয়া গাড়িতে উঠে বসতেই সাহিদের আম্মু তাকে নানান প্রশ্ন করে। এতো দিন কোথায় ছিল, এখন কী করে,আমার ছেলে অপরাধ করেছে কিন্তু আমরা তো অপরাধ করিনি তারপরেও কেন আমাদের বাসায় আসা হয়নি ইত্যাদি ইত্যাদি ?
সামিয়া মিসেস সাইম আহম্মেদকে জিজ্ঞাসা করলোঃ ভাবি এই বাচ্চাটা কে?
মিসেস সাইম আহম্মেদঃ এটা আমাদের কলিজার টুকরা ছেলে সন্তান।
সামিয়াঃ খুব মিষ্টি তো। নাম কি আর বয়স কত?
মিসেস সাইম আহম্মেদঃ নাম রেখেছি আব্দুল্লাহ আল রাফি চৌধুরী।আর বয়স দেড় বৎসর চলতেছে।
সামিয়াঃ খুব সুন্দর নাম।দেন আমার কোলে দেন আমি একটু নেই।
মিসেস সাইম আহম্মেদ তার ছেলে আব্দুল্লাহ আল রাফি চৌধুরীকে সামিয়ার কোলে দিলো। সামিয়া আবদুল্লাহ আল রাফি চৌধুরীকে কোলে নিয়ে আদর করতেছে আর ভাবতেছে, বাহ এক ভাইয়ের মেয়ে সন্তান আর অন্যজনের ছেলে সন্তান। একজন বিয়ে করে ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছে আর অন্য জন বিয়ে না করেই মেয়ে সন্তানের জনক হয়েগেছে।বাহ কী লাকি লাইফ। যতসব আমার লাইফ না পেলাম স্বামী না পেলাম সন্তান 😓😓😓।
সুখ এবং দুঃখের কথা বার্তা বলতে বলতে গাড়ি রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। গাড়ি থেকে নেমে ওরা সবাই রিপা কে দেখতে গেলো।
রিপা কে রাখা হয়েছে ১১৩ নাম্বার রুমে। যেটা আগে থেকেই আমজাদ চৌধুরী জানতেন। যার জন্য ওদের পৌঁছতে কোনো অসুবিধা হয়নি।
রিপার কেবিনের সামনে দেখে রিপার ভাই রিপন দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়া কে দেখে সে কিছু টা অবাক হয়ে গেল। কিন্তু সেই বিষয়ে বেশি মাথা ঘামালো না।
আমজাদ চৌধুরীকে দেখে রিপার বাবা এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।কারণ, নিজের মেয়েকে মৃত্যু শয্যায় রেখে নিজের আবেগ আর ধরে রাখতে পারলো না।
একটু পরে আমজাদ চৌধুরী রিপার বাবাকে বললোঃ রিপা মার কি অবস্থা এখন?
রিপার বাবাঃ এখন বেশি সিরিয়াস তবে রিপা শুধু একটা কথাই বারবার বলতেছে।( ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে)
আমজাদ চৌধুরীঃ কী কথা?(অবাক হয়ে)
রিপার বাবাঃ সব সময় বলতেছে "আমি আমার পাপের শাস্তি ভোগ করতেছি"
এতক্ষনে সাহিদের পরিবারের সবাই কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে রিপার বাবার কথা গুলো শুনতেছিলো।কি রিপার বলা কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে ভাবতেছে কী এমন পাপ।মির কথা রিপা এমন অবস্থায় বলতেছে।
সবাই মনে মনে একই প্রশ্ন ভাবতেছে কিন্তু সামিয়ার মনে ভিন্ন ভাবনা চলতেছে।
একটু পরে সবাই রিপার কেবিনে ঢুকলো। রিপার সাথে দেখা করে কয়েক জন ছাড়া সবাই বাইরে গেল। কারণ রুগির কাছে ভিড় জমানো ঠিক নয়।
রিপার কাছে আছে শুধু সামিয়া আর সাহিদের আম্মু। মিসেস সাইম আহম্মেদ তার ছেলেকে নিয়ে বাইরে গেছে। কারণ তার ছেলে কান্না করতেছে।আর রিপার মা সেন্সলেস অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে।মেয়ের এই অবস্থা দেখে আর কয়জন ঠিক থাকতে পারে।
রিপা একটু একটু করে কথা বলতেছে। সামিয়া তাকে বললোঃ রিপা আমি তোমাকে যা প্রশ্ন করবো তার সঠিক উত্তর আমাকে দিবে কী?
রিপাঃ কী প্রশ্ন আপু?
সামিয়াঃ আগে প্রমিস করো বলবে?
রিপাঃ ঠিক আছে আপু প্রমিস করলাম।
সামিয়াঃ সাহিদ কী তোমার সাথে সত্যিই রেপ করতে চেয়েছিল?
সামিয়ার প্রশ্ন শুনে সাহিদের আম্মু অবাক হয়ে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু রিপা কি বলবে তা ভেবে পাচ্ছে না।(লেখকঃ সাহিদ হাসান সাহি)
রিপাকে চুপ করে থাকতে দেখে সামিয়া বললোঃ কী হলো বলো?
রিপা মুচকি হেঁসে সামিয়া কে বললঃ বলবো, তার আগে আপনি সবাইকে এই রুমে আসতে বলেন?
সামিয়া আর দেরি না করে কেবিনের বাইরে যায়ে আমজাদ চৌধুরী, রিপার বাবা, রিপার ভাই রিপন,সাইম আহম্মেদ, মিসেস সাইম আহম্মেদ এদের সবাইকে ডেকে রিপার কেবিনে নিয়ে আসলো।আর এদিকে সাহিদের আম্মু চিন্তাই পড়ে গেছে।
সবাইকে রুমে ঢুকতে দেখে রিপা উঠার চেষ্টা করতেছে। কিন্তু পারতেছে না। অবশেষে শুয়ে থেকেই বলতে
লাগলোঃ আব্বু তুমি আমাকে বারবার জিজ্ঞাসা করতে না যে, আমি কিসের পাপের কথা বলতেছি। তাহলে শুনে, তবে শোনার পরে আমাকে ভুল বুঝলে চলবে না।
এরপরে রিপা সাহিদের সাথে কলেজ থেকে শুরু করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে সব কিছু বললো।
রিপার সব কথা শুনে সাহিদের আম্মু সেন্সলেস হয়ে পড়লো।আর আমজাদ চৌধুরী আর সাইম আহম্মেদ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। রিপার বাবা রিপার কথা শুনে মারতে যাবে তখনি সাইম আহম্মেদ এসে বাঁধা দিয়ে বললোঃ আংকেল কি করতে চাচ্ছেন রিপা অসুস্থ?
রিপার বাবাঃ তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, ওকে আমি মেরেই ফেলবো। ওর একটা মিথ্যা অপবাদের জন্য একটা নিষ্পাপ ছেলে তার পরিবারকে হারিয়ে চলে গেল। (রেগে)
আমজাদ চৌধুরীঃ বন্ধু শান্ত হ,, বাচ্চা মানুষ ভুল করতেই পারে। আচ্ছা দোস তুই থাক আমরা বাসায় গেলাম।আর রাতে আসবো।
রিপার বাবাঃ বন্ধু তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস্।(হাত জোড় করে)
আমজাদ চৌধুরীঃ দেখ দোস্ত এসব ভুলে যা আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি।যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন এসব চিন্তা করে লাভ নেই। তুই থাক আমি বাসায় গেলাম। রাতে আসবো।
রিপার বাবাঃ আচ্ছা ভালোভাবে যাস।
এরপরে সাহিদের পরিবারের সবাই বাসায় আসে। গাড়িতে কেউ কোনো কথা বলেনি। সবাই নিজের কাজের জন্য নিজেকে অনুতপ্ত মনে করতেছে।
সামিয়া সাহিদের বাসায় যায়ে গাড়ি থেকে নেমে কোনো কথা না বলে রিকশা করে নিজের বাসায় চলে আসলো।
বাসায় এসে নিজের রুমে যায়ে দরজা বন্ধ করে দিয়ে কান্না করতে লাগলো। আবার আগের মতো খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে। শুধু একটাই চিন্তা সাহিদ আমাকে মাফ করে দিবেন তো।
এভাবে কেটে গেল বিকেলবেলাটা।এখনো সামিয়া রুমে আছে। তার মা বাবা দুজনেই চিন্তা ই পড়ে গেল। কেননা মেয়ের সেই তিন বছর আগের মতো বিহেব এখন করতেছে।
সামিয়ার বাবা সামিয়ার রুমে ঢুকে বললঃ কী হয়েছে আমার আম্মুর?
সামিয়া তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে সাহিদের সম্পর্কে রিপা যা যা বলেছে সব কিছু তার বাবাকে বললো।
সামিয়ার বাবাঃ এখন সাহিদ কোথায় আছে জানো?
সামিয়াঃ হুমম এখন ঢাকায় আছে আর আমার কলেজে পড়ে।
সামিয়ার বাবাঃ তাহলে তো সহজ কাজ।সহজ বলতেও কিন্তু সহজ নয় তোমার প্রতি তার একটা অভিমান আছে সেটা আগে ভাঙাতে হবে।
সামিয়াঃ হুমম,, কিন্তু কীভাবে?
সামিয়া বাবাঃ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, (কিছু বুদ্ধি দিয়ে)। এইভাবে কাজ করবার তাহলে হবে।
সামিয়াঃ ওকে আমার বেস্ট বাবা। আর তুমি এসব কথা কাউকে বলবে না।
সামিয়ার বাবাঃ আচ্ছা থাকো। আর একটু পরে ডিনার করতে এসো।
সামিয়ার বাবা চলে রাতেই সামিয়া ফোন বের করে নেহাকে ফোন দিয়ে সাহিদের কথা জিজ্ঞাসা করলো। পরের দিন সকালে সামিয়া ঢাকাতে রওনা দিবে।
সাহিদের পরিবারের সবাই বিষন্ন মন নিয়ে যে যার রুমে বসে আছে।সবার একই চিন্তা সাহিদ কে কোথায় পাওয়া যাবে।আর সাহিদের আম্মুর অবস্থাও খারাপের দিকে যাচ্ছে। শুধু সাহিদের কথা বলতেছে।
_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-__-_-_-
আমি আমার মেয়ে আর নেহা এই তিন জন আজকে একটা পার্কে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যায় এসে বাসায় পৌঁছলাম। রুমে এসে আমার মেয়েকে ফ্রেশ করে দিয়ে আমিও ফ্রেশ হলাম।
ফ্রেশ হয়ে ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখি রাফি পাঁচবার ফোন দিয়েছে। সাইলেন্ট মোডে রাখার জন্য বুঝতে পারিনি।
আর আপনারা হয়তোবা জানেন না বা বলাই হয়নি যে, রাফি আর সিফাতের সাথে আমার মাঝে মাঝেই ফোনে কথা হতো। তবে ওদের আমি এই কথা অন্য কাউকে বলতে নিষেধ করেছি।
যাইহোক, আমি ফোন রাফি কে ফোন দিলাম। একবার টোঁ করে শব্দ হতেই ফোন রিসিভ করলো,,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম,দোস্ত কেমন আছিস?
রাফিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
আমিঃ ভালো নারে😞😞।
রাফিঃ কেন?
আমিঃ# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম--- হয় তখন কেমন করে ভালো থাকিস।(মন খারাপ করে)
রাফিঃ কিহহ, তারমানে সামিয়া তোর হাহা হা,,,,,
আমিঃ এই একদম হাসি না।
রাফিঃ আচ্ছা শোন তোকে যে কারণে ফোন দিয়েছিলাম।
আমিঃ হুম্মাম বল।
রাফিঃ আজকে সামিয়া কে তোদের বাসায় দেখলাম।
আমিঃ কিহহ।
রাফিঃ হুমম। শুধু তাই নয়, তোর বাবার সাথে গাড়িতে মুখে কোথায় যেন গেল।
আমিঃ ওহহহ কোথাও মনে হয় যাবে,,
রাফির সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিলাম।
পরেরদিন কলেজের গেলাম।আজকেও সামিয়া আসেনি।আহহ কী যে ভালো লাগতেছে। ক্লাস করে নেহাকে নিয়ে এতিমখানায় গেলাম। সেখান থেকে মিমকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
পরেরদিন একটু দেরি যে ঘুম ভাঙলো তাও আমার মেয়ের ডাকে। ঘুম থেকে উঠে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হলাম। আমার মেয়েও বায়না ধরেছে আমার সাথে কলেজে যায়ে তকলেত খাবে। আসলে আমার সাথে কলেজে গেলে সবাই আদর করে, চকলেট দেয় ।ছোট বাচ্চা তো এগুলোর জন্য যাওয়ার জন্য চাহিদা করে।
তিন জন মিলে কলেজে গেলাম।আমরাই কলেজের টপার স্টুডেন্ট।কারণ, আমরা এক পরিবার থেকে তিনজন একসাথে কলেজে যায়😎😎😎😎।
কলেজে যায়ে প্রথম ক্লাস করলাম। দ্বিতীয় ক্লাস আমার EX এর। আজকে মনে হয় এসেছে।কারণ, দুই দিন ছুটি নিয়েছিল।আর আজকে শেষ।
একটু পরে প্রিন্সিপাল স্যার আর ম্যাম আসলেন ক্লাসে। এরপরে প্রিন্সিপাল স্যার যা বললো তার শুনে তো আমার,,,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ১৯
প্রথম ক্লাস শেষ করে রুমে বসে আছি।একটু পরে প্রিন্সিপাল স্যার আর ম্যাম ক্লাসে আসলেন। প্রিন্সিপাল স্যার যেন রুমে ঢুকে যা বললো তা শুনে তো আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ প্রিয় শিক্ষার্থীরা তোমরা জানো মিস সামিয়া তোমাদের নতুন টিচার। দুই দিন হলো জয়েন করেছেন। নতুন হওয়ায় তাঁর বেশ কিছু সমস্যা হচ্ছে। এজন্য তিনি আমার কাছে এসে বলেছেন, তাঁর একটি এসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন। আর সেটা তিনি তোমাদের ক্লাস থেকেই নিতে চাচ্ছেন।
তাই আমি ঠিক করেছি সাহিদ হাসানকে তাঁর এসিস্ট্যান্ট করে দিবো।সাহিদ তোমার কোনো আপত্তি আছে কী?
প্রিন্সিপাল স্যারের কথা শুনে তো মন চাচ্ছে কলেজ ছেড়ে চলে যায়।ঠান্ডা মাথায় নরম কন্ঠে বললামঃ স্যার আপনি বারবার আমাকে কেন এসব কাজে জড়াচ্ছেন? আর আপনি তো জানেন আমি সবসময় ব্যস্ত থাকি। তারপরেও এসব কীভাবে করবো? আপনি অন্য কাউকে বলেন।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ দেখো সাহিদ তোমাকে আমি পছন্দ করি। আর তোমার প্রতি আমার যেই পরিমান বিশ্বাস আছে তা অন্য কারোর প্রতি নেই। তাছাড়া তোমার ম্যাম নিজে তোমাকে সিলেক্ট করেছেন।
আমিঃ স্যার তবু----
আমাকে আর বলতে না দিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ আর কোনো কথা নয়।আজ থেকে তুমি মিস সামিয়ার এসিস্ট্যান্ট। তুমি তার কাজে তাকে সহযোগিতা করবে।
এই কথা বলে প্রিন্সিপাল স্যার ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন। আমি আমার সিটে বসে ভাবতে লাগলাম, যার থেকে দুরে থাকার জন্য আজ এতো দূর, আজ তারই আবার এসিস্ট্যান্ট। সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি মুচকি হাসতেছে। তারমানে এটা তার টোপ।
হা হা হা সামিয়া তুমি যতই টোপ ব্যবহার করো না কেন, এই মাছ তোমার ছিপে ( বরশি) ধরা দিবে না (মনে মনে)। যাজ্ঞে ক্লাস নিতে লাগলো, আমিও পড়ায় মনোনিবেশ করলাম। হঠাৎ, শাকিব আমার পিছনে বসে থেকে আমার পিটে ঘুতাচ্ছে আর বলতেছেঃ মামা ট্রিট কখন দিবি?
আমিঃ কিসের ট্রিট দিবো?(অবাক হয়ে)
রিয়াদঃ বোঝনা তুমি কচি খোকা তাই না? সুন্দরী ম্যাডামের এসিস্ট্যান্ট হচ্ছো তাহলে তো আমাদের ট্রিট দিতেই হবে।
আমিঃ আমি দিতে পারবো না 😠😠😠।
শাকিবঃ পারবি না মানে?(একটু জোরে)
শাকিব একটু জোরে বলাই ম্যাম শাকিবের কথা শুনতে পেয়েছে। টেবিলের উপর বই রেখে আমাদের কাছে এসে বললোঃ এই কি হয়েছে এখানে এতো কথা হচ্ছে কেন?
রিয়াদঃ কিছু না ম্যাম। ,(ভয়ে ভয়ে)
ম্যামঃ কিছু না মানে? কি বলতেছিলে বলো?😡😡
রিয়াদঃ আসলে ম্যাম সাহিদ তো আপনার এসিস্ট্যান্ট হয়েছে তাই ওর থেকে ট্রিট চাচ্ছিলাম। কিন্তু সে দিতে চাচ্ছে না 😚😚(মন খারাপ করে)
সামিয়া মুচকি হেঁসে বললঃ ওওও এই ব্যাপার। তাহলে তোমরা ক্যান্টিনে এসো আমি তোমাদের ট্রিট দিবো।
সামিয়ার কথা শুনে ওরা সহ ক্লাসের কিছুটা অবাক হয়ে পড়লো।
সাহিদের বদলে ম্যাম ট্রিট দিবে? কেউ ভাবতেই পারতেছে না।
যাইহোক, কোনো রকম ক্লাস টা শেষ হয়ে গেল। সামিয়া রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় আমার কাছে এসে বললোঃ এইযে মিস্টার সাহিদ হাসান ছুটির সময় আমার অফিস রুমে আসবে।
আমি আর কিছু বললাম না।কারণ, ওর সাথে কথা বলার ইচ্ছা আমার নেই। কলেজ শেষে আমি আমার মেয়েকে চকলেট দিয়ে গেলাম। আমার মেয়ে ওর আন্নির কাছে ছিলো। চকলেট দিয়ে এসে দেখি আমার বন্ধুরা একজনও আগের জায়গায় নেই। আমি বসে থেকে ফোন টিপাটিপি করতেছি।দশ মিনিট হওয়ার পরেও ওদের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই।
একটু পরে ওরা তিনজন আসলো।
আমিঃ কীরে তোরা কোথায় গিয়েছিলি?
ইকবালঃ ভাবি ট্রিট দিতে চেয়েছিলো,সেটা খাইতে গিয়েছিলাম।
(ঢেঁকুর তুলতে তুলতে)
ইকবালের কথা শুনে চমকে উঠলাম।ভাবি মানে ? সব জেনে গেছে নাকি আর সামিয়া কী এদের সব বলেছে,,? এদের কে আগে জিজ্ঞাসা করি।
আমিঃ ভাবি মানে কার কথা বলতেছিস?
রিয়াদঃ আরে ভাই, ম্যাম যদি তোকে ভালোবাসে আর বিয়ে করে তাহলে তো আমাদের ভাবি হবেই।(পাশে বসতে বসতে)
আমিঃ ওও তাই বল,,,,, ( বাঁচলাম,নইলে এরা যদি জানে তাহলে আমাকে প্যঁচাবে)। ম্যাম আমাকে ভালোবাসতে যাবে কেন? আমিই ভালোবাসো কেন? আর কোনো দিন ভাবি বলবি না,,😡😡😡(রেগে)
ইকবালঃ আরে শালা ভালো না বাসলে তোর জন্য সে অন্য কাউকে খাওয়ানো? আবার সেটা তারই এসিস্ট্যান্টের ট্রিট হিসেবে,, হা হা হা।
আমি মনে মনে ভাবলাম, ইকবাল ও তো ঠিক বলেছে, তাহলে সামিয়া আমাকে ভালোবাসে কি?? না না কোনো মতেই আমি গলে যাবো না।
শাকিবঃ কিরে কী ভাবতেছিস?
আমিঃ কিছু না।
ইকবালঃ দোস তোকে ভাবি সরি ম্যাম যেতে বলেছিলো যে।
আমিঃ হুমম তোরা বাসায় যা আমি গেলাম ম্যামের রুমে।
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গেলাম। দরজার কাছে যায়ে না করে বললামঃ মে আই কাম ইন,,,
সামিয়াঃ হুমম এসো। আর আমার রুমে আসতে তোমার অনুমতি লাগবে না বুঝেছো,,।
আমিঃ হা হা হা চরিত্রহীন ছেলে আমি আমার তো অনুমতি নিতেই হবে।
সাহিদের কথাটা যেন সামিয়ার বুকে বাঁধলো। তবুও নিরবে সহ্য করলো।কারণ, এর থেকে বেশি কষ্ট সাহিদ কে সে দিয়েছে।
আমিঃ বাই দ্যা ওয়ে ম্যাম আমাকে কি কাজ করতে হবে বলুন।
সামিয়াঃ তোমাকে কোনো কাজ করতে হবে না তুমি চেয়ারে বসো।
আমিঃ না না ম্যাম, আমি চরিত্রহীন ছেলে আপনার সাথে বসে থেকে আপনার কি ক্ষতি করি না করি তা বলা যাবে না।
সামিয়া অশ্রু ভেজা নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললোঃ প্লিজ সাহিদ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমিঃ ছি ছি ম্যাম আপনি কেন আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন? সবাইকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি।
সামিয়াঃ তাহলে আমার সা,,,
হঠাৎ আমার মেয়ে সামিয়ার রুমে ঢুকে দৌড়ে সামিয়ার কাছে যায়ে বললোঃ মামনি মামনি থুমি তি কলতেথো?
আমার মেয়ের কথা শুনে আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম।বলে কি এই বাচ্চা মেয়ে 😲😲😲।
এতোক্ষণে মিমকে আমাকে লক্ষ্য করেনি। সামিয়ার কোলে ওঠে বসে সামনে তাকাতেই আমাকে দেখতে পেলো। আমাকে দেখতে পেয়ে সামিয়ার কোলে থেকে নেমে আমার কাছে আসলো।
আমি মিমকে কোলে তুলে নিতেই মিম বললোঃ দানো বাবাই আমাল মামনি আমালে এতো (হাত দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে) দুলো তকলেত দিয়েতে।
আমি আমার মেয়ের কথা শুনে কিছুটা খুশি হলাম সামিয়ার প্রতি আর বেশি রেগে গেলাম আমার নেহার প্রতি। কেনো সে আমার মেয়েকে অপরিচিত ব্যক্তির কাছে পাঠিয়েছে?
যদিও সামিয়া অপরিচিত নয় তবুও,,,।
আমি আমার মেয়ে ধমক দিয়ে বললামঃ কে বলেছে ইনি তোমার মামনি?
মিমঃ আন্নি বলেতে।
আমিঃ আন্নি বলেছে তাই তুমি বলবে? আর চকলেট নিয়েছো কেন?( ধমকের সুরে, জোরে)
আমার ধমক শুনে আমার মেয়ে কান্না করতে লাগলো।আমি তাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম।
সামিয়াঃ প্লিজ মিমকে তুমি কিছু বলো না। সে তো ছোট বাচ্চা যা বলার আমাকে বলো।
আমি আর কিছু না বলে মিমকে নিয়ে সামিয়ার রুম থেকে বের হয়ে নেহার কাছে গেলাম।
নেহার কাছে যায়ে নেহাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ নেহা তুই মিমকে কি বলেছিস?(রেগে)
নেহাঃ কি ভাইয়া আমি তো কিছু বলিনি,,।(ভয়ে ভয়ে)
আমিঃ কিছু বলিসনি তাহলে ইংলিশ ম্যাম কে মামনি বলে ডাকলো কেন?(প্রচন্ড রেগে)
আমার এমন আচরণ নেহা কোনো দিন দেখেনি। যারফলে আজকে নেহার চোখের কোণায় পানি এসে গেছে।
নেহাঃ আসলে ভাইয়া,,
আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে ওদের দুজনকে নিয়ে ক্যান্টিনে আসলাম।কী করবো বর্তমানে ওরা দুজনেই আমার পৃথিবী। ওদের চোখের পানি আমার সহ্য হয়না।
যাইহোক, ক্যান্টিনে কিছু খাওয়ার পরে ওদেরকে নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে গোসল করে নামাজ পড়লাম। তিন জন একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম। বসতেই অফিসের এমডি সাহেব ফোন দিলো। আমি রিসিভ করতে এমডি সাহেব বললেন,,,
এমডিঃ আসসালামুয়ালাইকুম। স্যার আজকে একটু আপনাকে অফিসে আসতে হতো।
আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেন কিছু হয়েছে নাকি?
এমডিঃ একটু সমস্যা হয়েছে আপনি আসলে ভালো হতো।
আমিঃ ঠিক আছে। কয়টায় যাবো?
এমডিঃ বিকেল চারটায়।
আমিঃ ঠিক আছে।
এমডিঃ ওকে স্যার। আসসালামুয়ালাইকুম।
আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম।
ফোন রাখতেই আমার মেয়ে বললোঃ বাবাই কাল চাথে তথা বললে আমাল মামনিল চাথে?
হায় হায় আমার মেয়ে তো আমাকে পাগল বানিয়ে দেবে। অফিসের এমডির সাথে কথা বললাম।আর তিনি বলতেছেন তাঁর মামনির কথা। আল্লাহ আমার মেয়ের মাথায় মামনির ভূত ঢুকলো কোথা থেকে 😚😚!
আমিঃ না,, আম্মু অফিসের এমডির সঙ্গে।
মিমঃ ওওওও,,,(মন খারাপ করে)
নেহাঃ আচ্ছা আম্মু তোমার কী মামনি লাগবে?
মিমঃ হুমম আন্নি,,।
নেহাঃ তাহলে তোমার বাবাইকে বলো।
মিমঃ বাবাই আমাল একতা মামনি আনে তিবে।(করুন সুরে)
আমিঃ ঠিক আছে মামনি তোমার জন্য একটা মামনি আনবো। এখন আমার ভালো আম্মুর মতো খাও।
মিমঃ আততা। তিন্তু বাবাই আমাল মামনি যে আমি নিয়ে আনবো।
এটুকু মেয়ে বলে কি😲😲😲।আমিঃ তুমি কোথায় পাবে ।(অবাক হয়ে)
মিমঃ আদকে আমালে দে তকলেত দিয়েতে তোলে নিয়ে আদল তলেতে সেতাই আমাল মামনি।
মেয়ের কথা শুনে আমার গলায় ভাত আটকে গেল।নেহা আমাকে পানি এগিয়ে দিয়ে বললোঃ আহহ ভাইয়া এখন খাও। পরে নাহয় ভাবির কথা ভেবো।
আমিঃ তোর ভাবিকে কোথায় পাইলি?
নেহাঃ কে আবার, মিমের মামনি 😏😏😏।
আমিঃ পেকে গেছিস😡😡😡।
নেহাঃ দেখো ভাইয়া তোমার বয়স হয়ে যাচ্ছে, আবার মিমের তো একটা মামনির প্রয়োজন প্লাস আমার তো ভাবি তো লাগবেই। তাহলে। তুমি এমন করতেছো কেন। নিয়ে আসো না,,(করুন সুরে)
আমিঃ আমার কথা তোকে ভাবতে হবে না, তুই খা তাড়াতাড়ি।
নেহাঃ হুঁ,,(মন খারাপ করে)
খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।মিম নেহার রুমে গেছে।
চারটায় অফিসে গেলাম। অফিসে যেই বিষয়ে সমস্যা হয়েছে সেটা সলভ করে দিয়ে সকল স্টাফের সাথে দেখা করে চলে আসলাম।
অপরদিকে সামিয়া ভাবতেছে, আজকে আমার কলিজাটা অনেক রেগে গিয়েছে।না জানি নেহাকে কী বললো।নেহাকে একটু ফোন দিয়ে দেখি। নেহাকে ফোন দিতেই নেহা রিসিভ করলো,,,,
নেহাঃ আসসালামুয়ালাইকুম। ম্যাম কেমন আছেন?
সামিয়াঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
নেহাঃ আলহামদুলিল্লাহ।
সামিয়াঃ তোমাকে কত বার বলবো তুমি আমাকে আপু বলে ডাকবে?
নেহাঃ ঠিক আছে আপু।
সামিয়াঃ আচ্ছা। তোমার ভাইয়া তোমাকে কিছু বলেছিলো কি?
নেহাঃ না কিছু বলেনি।
সামিয়াঃ ওহহ।তো আমার মেয়ে কি করতেছে?
নেহাঃ তোমার মেয়ে আমার সঙ্গে শুয়ে আছে। কথা বলবে কি?
সামিয়াঃ হুমম দাও,,,
মিমঃ আততালামুআলাইতুম,, মামনি তেমন আতো?
সামিয়াঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার আম্মু টা কেমন আছে?
মিমঃ আমিও বালো আতি।
সামিয়াঃ আম্মু বাসায় যায়ে তোমার বাবাই তোমাকে বলেছিলো কী?
মিমঃ না মামনি। বাবাই তে তোমালে আনাল তথা বলেতি।
সামিয়াঃ কী বললে আম্মু বুঝতে পারিনি।
নেহাঃ তোমার কথা তোমার আম্মু তার বাবাই কে বলেছে সেটা বললো।
সামিয়াঃ কিহহ আমার আম্মু তো দেখছি বড় হয়ে গেছে।
মিমঃ হুমম মামনি,,
সামিয়াঃ আচ্ছা আম্মু পরে কথা হবে।
মিমঃ আততা মামনি।
সামিয়াঃ হুমম নেহা তোমার ভাইয়া তোমাকে কিছু বললে আমাকে বলবে।
নেহাঃ আচ্ছা।
সামিয়াঃ হুমম বাই,,,
সামিয়া নেহার সাথে কথা বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।কারণ, সামিয়া সাহিদের রাগ সম্পর্কে জানে।
_-_-_-_-
আমি অফিস থেকে বাসায় আসলাম। সন্ধ্যায় ছাদে গেলাম। ছাদে যায়ে দোলনায় বসতেই রাফি ফোন দিলো।
আমিঃ হুমম বল, কেমন আছিস?
রাফিঃ আলহামদুলিল্লাহ,, তুই কেমন আছিস?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ।
রাফিঃ সাহিদ আজকে তোর বাবা আর ভাইয়া আমার বাসায় এসেছিলো।
আমিঃ কেন?(অবাক হয়ে)
রাফিঃ তুই কোথায় আছিস তা আমি জানি কিনা তাই।
আমিঃ হঠাৎ করে খোঁজ খবর নিচ্ছে?
রাফিঃ তোর বাবা, সামিয়া, তোর ভাই এক কথায় তোর পরিবার, সামিয়ার পরিবার আর রিপার পরিবারের সবাই সত্যটা জেনে গেছে। তুই যে নির্দোষ তা জেনে গেছে।
আমিঃ কিন্তু কীভাবে জানলো?
রাফিঃ গত কাল তোকে বললাম না যে, সামিয়া তোর বাসায় এসেছিলো।আসলে সামিয়া তোর সম্পর্কে জানতে এসেছিলো।আর এসেই তোর বাবা তাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। হাসপাতালে রিপা কে ভর্তি করানো আছে। আর সেখানে রিপা সবাইকে ডেকে সব সত্যি বলে দেয়।
আমিঃ ওহহহ। কিন্তু রিপার কী হয়েছে?
রাফিঃ ব্রেন টিউমার।
আমিঃ ওহহহ। আমার বাসার সবাই কেমন আছে?
রাফিঃ সবাই ভালো আছে কিন্তু তোর আম্মু তোর চিন্তা করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তুই চলে আয় ভাই।
আমিঃ তা সম্ভব নয়। আচ্ছা ভালো থাকিস।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। আম্মুর কথা প্রচুর মনে পড়তেছে।
রাফির কাছ থেকে এই খবর পেয়ে আমি যা খুশি হয়েছি তা বলে বোঝাতে পারবো না।কারণ, পরিবারের লোকদের কাছে এক মিথ্যা ষড়যন্ত্রের জন্য আমি ছিলাম পাপী। এখন তারা সত্যিটা জেনে ।
কিন্তু আম্মুর কথা ভেবে নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমিতো আর তাদের কাছে যাচ্ছি না।
পরেরদিন কলেজে গেলাম। মিমকে রেখে যেতে চাইলাম। কিন্তু সে আমার সাথে কলেজে যাবে সেটি কান্না। আমিও আর না করতে পারলাম না।
কলেজে পৌঁছে মিম সামিয়া কে দেখতে পেয়ে আমাকে বললোঃ
বাবাই মামনিল কাতে দাবো।
আমিঃ না যাওয়া হবে না।
ব্যস কান্না শুরু করে দিলো।আমি ওর কান্না দেখে যাওয়ার হুকুম দিলাম সাথে সাথেই কান্না অফ।
হা হা হা যাদু,,,,,
ক্লাসে ঢুকতে যাবো এমন সময় আমাদের ক্লাসের একটা মেয়ে আমার কাছে এসে একটা প্রশ্ন বুঝিয়ে নিতে চাইলো। আমি তাকে সাথে করে নিয়ে ক্যাম্পাসে একটা ফাঁকা জায়গায় বসে সেটা বুঝিয়ে দিতে লাগলাম। একটু দূরে লক্ষ্য করে দেখি সামিয়া আমার দিকে ভেজা চোখে তাকিয়ে আছে। মনে করতেছে আমি এই মেয়ের সাথে গল্প করতেছি।
আমিও সামিয়া কে রাগানোর জন্য মেয়েটির সাথে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলাম।
সামিয়া সেটা সহ্য করতে না পেরে সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
আমিও ক্লাসে গেলাম। সামিয়ার ক্লাসে সামিয়া বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিলো। ছুটির আগে সামিয়ার রুমে গেলাম।
রুমে যায়ে বসতেই সামিয়া আমার পায়ের কাছে এসে পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ প্লিজ সাহিদ আমাকে এভাবে ইগনোর আরো না। আমি আর পারছি। বলতেছি আমার। ভুল হয়েছিল কিন্তু আমাকে কি মাফ করা যায় না,(কান্না করতে করতে)
আমিঃ কি করতেছেন পা ছাড়ুন।
সামিয়াঃ না ছাড়বো না,। তুমি আমাকে মেনে না নিলে আমি পা ছাড়বো না।
আমিঃ দেখুন আপনি যদি আমার পা না ছাড়েন। তাহলে আমি এখান থেকে চলে যেতে বাধ্য হবো।
সামিয়াঃ না না, তোমাকে যেতে হবে না তুমি থাক।
আমি চেয়ারে বসলাম আর সামিয়া আমার সামনের চেয়ারে বসলো। আমার কোনো কাজ নেই শুধু বসে থাকা ছাড়া। মাঝে মাঝে সামিয়া আমাকে কিছু প্রশ্ন করতে দেয় আর আমি সেগুলো করি।
এভাবে অতিবাহিত হলো এক সপ্তাহ।আর এই এক সপ্তাহে সামিয়া আমার কাছ থেকে অনেক বার ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু আমি ক্ষমা করিনি।প্রতিবারই তার বলা কথা গুলো দ্বারা তাকেই আপমাণ করেছি। সেগুলো সে মুখ বুজে সহ্য করেছে।
হয়তোবা এখন সে আমার ভালোবাসার মর্মটা বুঝতে পেরেছো।
আর এক সপ্তাহে সামিয়ার সাথে মিমের সম্পর্কটা গভীর হয়েগেছে। মনে হবে যে তাদের সম্পর্ক টা মা এবং মেয়ের।
আজকে কলেজে গেলাম, আমি নেহা আর মিম তিন জন মিলে। মিমকে না নিয়ে গেলে আমার অস্তিত্ব রাখবে না সে।
ক্লাস শুরুর সময় নূটিশ দিল যে, প্রিন্সিপাল স্যার সকল ক্লাসের ছাত্র ছাত্রীদের হল রুমে উপস্থিত হতে বলেছেন।
ছুটির সময় সবাই হল ররুমে গেলাম। এরপরে প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ আমি তোমাদের একটা খুশির কথা বলবো।আর তা হলো এই কলেজ থেকে,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২০
প্রিন্সিপাল স্যারঃ প্রিয় শিক্ষার্থী বৃন্দ আজ কে আমি তোমাদের একটা খুশির কথা বলবো।আমি আশা করি এতে তোমরা সকলে সম্মতি প্রদান করবে। আর তা হলো আগামী ২৭ তারিখে এই কলেজ থেকে সিলেট এবং কক্সবাজারে তিন দিনব্যাপী ট্যুরে যাওয়া হবে।
সবাইঃ ইয়েস স্যার। আমরা রাজি।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ ঠিক আছে তাহলে তোমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নেও।
হলরুমে থেকে বের হয়ে নেহার কাছে গেলাম। নেহার সঙ্গে মিমও ছিলো । ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে গোসল করে যোহরের নামাজ পড়ে সবাই একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম।
আমিঃ নেহা তুই যাবি কী ট্যুরে?
নেহাঃ আসলে ভাইয়া আমি যেতে চাচ্ছি না।
আমিঃ কেন?( অবাক হয়ে)
নেহাঃ সেখানে যাওয়া মানে অযথা খরচ করা।আর আমার জন্য তুমি কত খরচ করবে বলো?
নেহার কথা শুনে ঠাসস ঠাসস করে গালে দুইটা লাগিয়ে দিয়ে বললামঃ কী বললি তোর জন্য আমি কত খরচ করবো? মানে বোঝাতে চাচ্ছিস তুই আমার কেউ না।
শোন তুই যদি না যাস তাহলে আমিও যাবো না।
বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। ভাবতেই পারিনি নেহা আমাকে এই কথা বলবে। হয়তোবা আমাকে এখনো পর ভাবে। এখনো আপন করে নিতে পারেনি। কিন্তু সে তো আর জানে না। সে আমার কাছে কতটা আপন।
রুমে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে এসব ভাবতেছি আর চোখে দিয়ে পানি পড়তেছে। হঠাৎ বুঝতে পারলাম রুমে কেউ ঢুকলো।চোখে খুলে দেখি নেহা দাঁড়িয়ে আছে।আমি বললামঃ কিছু বলবি? আমি তো তোর কেউ না😞😞।
নেহা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ ভাইয়া তুমি আমাকে এতো ভালবাসো? আমাকে মাফ করে দাও ভাইয়া, আমি বুঝতে পারিনি আমার কথা দ্বারা তুমি এতো কষ্ট পাবে😭😭। আমি ভেবেছিলাম আমার আম্মু মারা যাওয়ার পরে এই পৃথিবীতে কেউ আর আমাকে ভালোবাসবে না। কেউ আমার সাথে ভালো ব্যবহার করবে না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি একজন ভাইকে পেয়েছি যে নিজের থেকে বেশি আমার কেয়ার করে। প্লিজ ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দাও।😭😭😭😭(কান্না করতে করতে)
আমিও ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললামঃ তুই কেন বুঝিস না তোরা ছাড়া এই দুনিয়ায় আর কেউ নেই। আমার যা কিছু আছে সব তো তোদের জন্যই। আমি এসব রেখে কী করবো বল?
এখন বল তুই যাবি কিনা?
নেহা মুচকি হেসে বললঃ হুমম আমি যাবো।
আমিঃ এইতো আমার ভালো আপু্। আমার মেয়ে কী করতেছে?
নেহাঃ তোমার মেয়ে আমার রুমে ঘুমিয়ে গেছে।
আমিঃ ওহহহ।
নেহাঃ ভাইয়া আমি গেলে তো মিমকেও নিয়ে যেতে হবে।
আমিঃ হুমম যাবো তো সমস্যা কোথায়?
নেহাঃ কেউ কিছু মনে করবে না তো?
আমিঃ কে কি মনে করবে? আর বেশি সমস্যা হলে মিমের জন্য একটা সিটের বিল পে করে দিবো।
নেহাঃ হুমম। ওও আমার তো মনেই নেই যে, তোমার মেয়ের মামনি তো আবার কলেজের ম্যাম। সমস্যা হওয়ার কথাই নেই। তো ভাইয়া তোমার মেয়ের মামনি কবে বাসায় আনতেছো?(😜😜😜)
আমিঃ নেহা মার খাবি কিন্তু। বেশি পেকে গেছিস তাই না। তুই রুমে যা আমি ঘুমাবো।
নেহাঃ আচ্ছা ঘুমাও আমি ভাবির সঙ্গে কথা বলি।
আমিঃ কীহহহহহহহ?
নেহাঃ কিছু না।
বলেই রুম থেকে দৌড়। আমি মনে মনে বললাম, পাগলি একটা।
ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে মিম এসে ডাকতেছে।
মিমঃ বাবাই ওতো আদকে ঘুলতে দাবো।
আমিঃ ওকে আম্মা তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।
ফ্রেশ হয়ে এসে আসরের নামাজ পড়ে মিম আর নেহাকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম।
একটা পার্কে এসে বাইক থামালাম। এই পার্ক টা বেশ গোছানো। পার্ক টা আমার বাসা থেকে বেশ দূরে। আবার কলেজের থেকে কাছে। কেননা কলেজ আমার বাসা থেকে পূর্বে আর পার্ক টা কলেজ থেকে পশ্চিমে।
আর বন্ধুদের সূত্রে জানতে পারলাম সামিয়া এই পার্ক থেকে পশ্চিমে একটু দূরে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। যাজ্ঞে, আমি আমার মেয়ে আর বোনকে নিয়ে একটা ফুচকার দোকানে গেলাম।
নেহা আবার ফুচকা খেতে বেশ পছন্দ করে। নেহার দেখা দেখা দেখি আমার মেয়েও ফুচকা খাওয়া শিখেছে।
ওরা ফুচকা খাচ্ছে আর আমি কফি খাচ্ছি। আমরা যেই টেবিলে বসে খাচ্ছি সেই টেবিলে চারটা চেয়ার দেওয়া আছে। আমার সামনের দুই চেয়ারে মিম আর নেহা বসে থেকে ফুচকা খাচ্ছে। আর আমার পাশের চেয়ার টা ফ্রি আছে। হঠাৎ মিম মামনি মামনি বলে চিৎকার করতে লাগলো। পিছনে ফিরে দেখি সামিয়া আসতেছে।
আমি একবার সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে আবার চোখটা নামিয়ে কফি খাওয়ায় গভীর ভাবে মনোযোগ প্রদান করলাম। যাতে সামিয়া বুঝতে পারে আমি তাকে দেখিনি। মিম চেয়ার থেকে নেমে সামিয়ার কাছে গেল। আর সামিয়া মিমকে কোলে তুলে নিলো।
সামিয়া আমার পাশে এসে দাড়াতেই নেহা বললঃ আরে ভাবি যে কেমন আছেন?
আমি নেহার দিকে রক্তিম চোখে তাকালাম। নেহা ভয়ে ঢোক গিলতেছে।
সামিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ। ননদি তুমি কেমন আছো?
নেহাঃ আমিও ভালো আছি ভাবি সরি আপু।(ভয়ে ভয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)
সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললোঃ আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছো কেন। আর তুমি আমাকে ভাবি বলেই ডাকতে পারো।
আমিঃ নেহা তোর আরো কী ভাই আছে নাকি?(জানার পরেও)
নেহাঃ কেন?(অবাক হয়ে)
আমিঃ এইযে ম্যাম তোকে ভাবি ডাকতে বলতেছে যে? আর তোকে ননদি বলতেছে।
সামিয়াঃ নেহার ভাইতো নেহার সামনেই বসে আছে। তাই না ননদি?
😏😏😏
নেহাঃ হুমম ভাবি।
আমি মনে মনে বললাম, শালি তুই আমার বোনকেও হাত করে ফেলেছিস।
নেহাঃ কী ব্যাপার মিস্টার আমাকে বসতে বলবেন না নাকি?
আমি ধিরে ধিরে বললামঃ আমার মতো চরিত্রহীন। ছেলের পাশে আবার বসবেন?
সাহিদের কথাটা সামিয়ার কলিজার মধ্যে তীরের মতো ঢুকলো। কিন্তু সামিয়া ভাবতেছে, তুমি আমাকে যতই অবহেলা করো আর কথা শুনাও তবুও আমি তোমার পাশে থাকবো। তোমাকে আবার আমার করবোই।
সামিয়া মুখটা কালো করে আমার পাশে বসলো। মিম এখনো সামিয়ার কোলে আছে। সামিয়া টেবিল থেকে ফুচকার প্লেট টা হাতে নিয়ে মিমকে তুলে খাওয়াতে লাগলো। আমি মিমের খাওয়া দেখতেছি। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিম বললোঃ বাবাই তুমি থাবে?
আমিঃ না আম্মু তুমি খাও।
সামিয়া তুলে মিমের মুখে দিচ্ছে আর মিম খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মা তার মেয়েকে তুলে খাওয়াচ্ছে। হঠাৎ মিম বললোঃ বাবাই আজকে মামনিতে বাতাই নিয়ে দাবো।
আমি কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার মেয়ে যে আমাকে এই রকম পরিস্থিতিতে ফেলবে তা কে জানে।
সামিয়াঃ না আম্মু আমি এখন যাবো না। পরে একেবারে যাবো তোমার বাবাই এর বাসায়।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমিঃ ওই আশায় বসে থাকো।(ধীরে ধীরে)
মিমঃ আততা মামনি।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিল মিটিয়ে ফুচকার দোকান থেকে বের হয়ে বাইকের কাছে আসলাম। সামিয়া মিমকে অনেক গুলো চকলেট কিনে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে নেহার কাছে দিয়ে আমার কাছে এসে বললোঃ কালকে কলেজে তাড়াতাড়ি এসো কাজ আছে।
বলেই চলে গেল। আমি ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
রাতে মিমকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেলাম। ফজরের ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে আব্বুর কবরে যায়ে দোয়া করে চলে আসলাম।
আটটার দিকে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছি হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। পকেট থেকে বের করে দেখি সিফাত ফোন দিয়েছে।
আমি রিসিভ করে বললাম,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছিস?
সিফাতঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। কিছু বলবি কী?
সিফাতঃ হুমম সাহিদ তুই এখনি রাজশাহীতে চলে আয়।
আমিঃ কেন?(ভয় পেয়ে)
সিফাতঃ আন্টি মানে তোর আম্মু খুব অসুস্থ। মেডিকেলে ভর্তি করানো আছে।
আমার আম্মুর যদি কিছু হয় তাহলে আমি কী করে বেঁচে থাকবো।
আমিঃ আচ্ছা যাবো। কিন্তু আমি নার্সের বেশে যাবো। তুই সে ব্যবস্থা কর।
সিফাতঃ ঠিক আছে তুই আয়।
ফোনটা কেটে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখি নেহা আর মিম রেডি হয়ে ছোফায় বসে আছে।
আমি নেহার কাছে যায়ে বললামঃ নেহা আমি আজকে কলেজে যাবো না। চল তোদের নামিয়ে দিয়ে আসি।
নেহাঃ কেন কোথাও যাবে নাকি?
আমিঃ একটা কাজ আছে। একটু বাহিরে যাবো।
নেহাঃ আচ্ছা।
মিমঃ বাবাই তোথায় দাবে?
আমিঃ একটু বাহিরে যাবো আম্মু। তুমি তোমার আন্নির সাথে থাকবে আর আমি আসার সময় তোমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবো আচ্ছা।
মিমঃ আততা বাবাই।
আমি বাইকে করে নেহা আর মিমকে কলেজে নিয়ে যায়ে নামিয়ে দিয়ে বললামঃ তোদের ছুটির সময় ড্রাইভার আংকেল কে ফোন করে আসতে বলিস। আর তোরা যেন একাই বাসায় যাস না।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া। তুমি কখন আসবে।
আমিঃ সন্ধ্যায় বা রাতে।
নেহাঃ আচ্ছা সাবধানে যেও।
আমিঃ হুমম।
এর পরে ইকবাল, রিয়াদের সঙ্গে দেখা করে বাসায় আসলাম। আজকে শাকিব কলেজে আসে নি।
বাসায় এসে বাইক টা রেখে দাড়োয়ান চাচাকে বলে বের হলাম বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্য। কিছুক্ষণ আগে অনলাইনে টিকেট কেটে ছিলাম।
বাসে উঠে বসতেই মনে পড়লো আজ থেকে তিন বছর আগের কথা। কতদিন পরে আজ নিজের শহরে যাচ্ছি। বাসের সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। এটা একটা আমার বাজে অভ্যাস।
_-_-_-_-_
সামিয়াঃ নেহা আজকে তোমার ভাইয়া আসেনি?
নেহাঃ না ভাবী । ভাইয়ার কী যেন কাজ আছে তাই একটু বাইরে গিয়েছে।
সামিয়াঃ ওহহহ,,(মন খারাপ করে),[ শয়তান আজকে একটু তাড়াতাড়ি কলেজে আসতে বলেছিলাম আর তিনি কাজে গেছেন।ঢপ দেখে আর বাচিনা,, মনে মনে]
নেহাঃ ভাবি মন খারাপ করো না, চলে আসবে। এখনি এই অবস্থা বিয়ের পর না জানি।
সামিয়া লজ্জা মাখা মুখে একটা মুচকি হেসে বললঃ পাজি মেয়ে কোথাকার?
মিমঃ মামনি আমাল তকলেত থেত হয়ে দেতে।
সামিয়াঃ ওকে আম্মু চলো তোমাকে আরো চকলেট নিয়ে দেয়।
মিমঃ হুমম মামনি তলো,,।
এর পর নেহা সামিয়া আর মিম ক্যান্টিনে গেল।
_-_-_-_-_-_
দীর্ঘ সফর করে চলে আসলাম সেই অবিশ্বাসীদের শহরে। বাস থেকে নেমে সিফাত কে ফোন দিলাম,,,,
আমিঃ আমি এসেছি তুই কোথায়?
সিফাতঃ তুই এক মিনিট দাঁড়া।
আমিঃ ঠিক আছে।
একটু পরেই সিফাত আসলো। আমাকে দেখার সাথে সাথে জড়িয়ে ধরলো। আমিও জড়িয়ে ধরলাম। প্রায় তিন বছর পরে সিফাতের সঙ্গে দেখা। অনেক চেন্জ হয়েছে। তবে রাফির কয়েক বার ঢাকায় গিয়েছিল আর সেখানে তার সঙ্গে কয়েক বার দেখা হয়েছিল।
ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করার পরে সিফাত আমাকে মেডিকেলে একটি ডাক্তারের কেবিনে নিয়ে গেল। তবে যাওয়ার সময় আমার মুখে মাস্ক ছিলো ফলে যারা আমাকে দেখেছে তারা চিনতে পারে নি। ডাক্তারের কেবিনে যায়ে দেখি আমার কয়েক বছরের এক বড় ভাই মাহফুজ বসে আছে। তবে সে তিন বছর আগে মেডিক্যালের স্টুডেন্ট ছিল। তাহলে সে এখন ডাক্তার।
তবে তার সাথে আমাদের ফ্রেন্ডলি ভাবটায় বেশি ছিলো।
যাজ্ঞে, আমাকে দেখে মাহফুজ ভাই জড়িয়ে ধরলেন। আমিও জড়িয়ে ধরলাম। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর সিফাত আমাকে নার্সের ড্রেস দিলো।
আর আমি সেগুলো পড়ে নিলাম। সব কিছু চেন্জ করে একেবারে ক্ষণিকের নার্স হয়ে গেলাম।
এর পরে মাহফুজ ভাই, সিফাত আর আমি কেবিন থেকে বের হয়ে হাঁটতে লাগলাম আম্মুর কেবিনের উদ্দেশ্যে।
আম্মুর কেবিনের সামনে যায়ে দেখি আমজাদ চৌধুরী বিপরীত মুখী হয়ে ফোনে কারো সাথে যেন কথা বলতেছে। তবে বুঝতে পারিনি কিন্তু কথা শুনে বুঝতে পারলাম এটা আমজাদ চৌধুরী।
আম্মুর কেবিনের ভিতরে পা বাড়ালাম। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতেছে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে কেবিনের ভিতরে ঢুকলাম।
কেবিনের ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তা দেখে তো আমার,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২১
আম্মুর কেবিনের দিকে পা বাড়ালাম। বুকের ভিতর ধুকপুক ধুকপুক করতেছে । অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে কেবিনের ভিতরে ঢুকলাম।
কেবিনের ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তাতে আমার চোখ দিয়ে আপনাআপনি পানি বের হয়ে হচ্ছে আর চোখ দুটি অন্ধকার হয়ে আসতেছে। এ আমি কাকে দেখতেছি ? আমার আম্মুকে চিনাই যাচ্ছে না। চেহারাটা শুকিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। হয়তোবা আমার জন্য কান্না করতে করতে চোখের নিচে এমন দাগ পড়েছে।
বেডের সঙ্গে লেপ্টে শুয়ে আছে।
আম্মুর একপাশে ভাইয়া আর অন্য পাশে ভাবি বসে আছে। ভাবির কোলে একটা ছেলে সন্তান। মনে হয় এটা তাদের ছেলে।
মাহফুজ ভাই আম্মুকে চেকআপ করার জন্য আম্মু কাছে গেলেন। ভাইয়া আর ভাবিকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ সাইম ভাই আপনি আর ভাবি একটু বাহিরে যাবেন প্লিজ। রুগির চেকআপ করবো তো আপনারা বাইরে গেলে ভালো হতো।
সাইম আহম্মেদঃ আচ্ছা ভাই ঠিক আছে যাচ্ছি।
ভাইয়া আর ভাবি কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। তবে যাওয়ার সময় ভাইয়া আমার দিকে কয়েক বার সন্দেহের চোখে তাকালো।
ভাইয়া আর ভাবী যাওয়ার পরে আমি দরজাটা ভালোভাবে লাগিয়ে দিয়ে আসলাম। আমি লাগাতে যাওয়ার কারণ হলো, যাতে সবাই বুঝতে পারে আমি একজন নার্স। আর দরজা লাগানোর মাধ্যমে নার্সের কাজটাই প্রকাশ করলাম।
আম্মুর মাথার কাছে যায়ে বসলাম। আম্মু এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলো । আমি আম্মুর কপালে হাত বুলিয়ে দিতেই আম্মু জেগে গেলো। আম্মু চোখ খুলেই বলতে লাগলোঃ বাবা সাহিদ কই তুই,,? একবার আমার কাছে আয় বাবা। এসে আম্মু বলে ডাক। কোথায় গেলি তুই?😭😭😭
আম্মু এসব বলতেছে আর চোখ দিয়ে পানি ফেলতেছে। আমিও নিরবে কান্না করতেছি। আম্মু চোখ বন্ধ করে আবার বলতে লাগলোঃ সাহিদ বাবা আমি আর বাঁচবো না বাবা, কোথায় আছিস একবার আমার কোলে আয় বাবা। এই তোরা কোথায় আছিস আমার সাহিদ আমার কোলে এনে,,,
হঠাৎ আম্মু কথা বলা বন্ধ করে দিলো কেন। মাহফুজ ভাই দেখে বললো সেন্সলেস হয়েগেছে।
এরপরে আমি আম্মুকে একবার দেখে আবার মাহফুজ ভাই আর সিফাতের সাথে মাহফুজ ভাইয়ের কেবিনে আসলাম।কেবিনে এসে সোফায় ধপাস করে বসে পড়লাম। এমন পরিস্থিতিতে কেমন করে আমার আম্মুকে রেখে চলে যাবো। চোখের সামনে আমার জন্মদাত্রীর এমন অবস্থা কেমন করে সহ্য করি। আমিতো আর কিছুই করতে পারবোনা। সেই অধিকার আমার নেই। দূর থেকেই আমাকে কেঁদে কেঁদে বালিশ ভিজাতে হবে।
আমি মাহফুজ ভাইয়াকে বললামঃ ভাইয়া আমার আম্মুর অবস্থা এখন কেমন?
মাহফুজ ভাইয়াঃ আসলে সাহিদ তোমার আম্মুর অবস্থা এখন বেশ খারাপ। তুমি এখানে চলে এসো। বলা তো যায়না কখন কি হয়। আর তোমার আম্মুর এই অবস্থা শুধু তোমার জন্য চিন্তা করে। তাই বলি কি ভাই তুমি আবার তোমার মায়ের কোলে ফিরে এসো।
সিফাতঃ হ্যাঁ সাহিদ তুই ফিরে আয়। দেখলি তো আজকে আন্টি তোর জন্য কেমন আচরণ করলো। শুধু আজকে নয় আন্টিকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে প্রতিদিন আমি দেখতে আসতাম। আর প্রতিদিনই আন্টি তোর জন্য কান্না করতো। প্লিজ ভাই সব কিছু ভুলে আবার ফিরে আয়। মানুষের তো ভুল হতেই পারে। প্লিজ ভাই তুই চলে আয়।
আমি আর কি বলবো। আমারো তো মন চায় মায়ের কাছে ফিরে এসে সেই ছোট্টবেলার মতো মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থেকে রাখাল ছেলের পিঠা গাছের গল্প শুনতে, সেই আলাউদ্দিনের আশ্চর্যের প্রদিপের গল্প শুনতে, কোলে শুয়ে থেকে চাঁদের সাথে গল্প করতে, মায়ের হাতে ভাত তুলে খাইতে। কিন্তু এক অজানা শক্তি এসে বাঁধা দিচ্ছে।
ওদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে আবার আম্মুর কেবিনে গেলাম। কেবিনে ঢুকে দেখি ভাবি আম্মুর পাশে বসে আছে । আমি প্রেশার চেক করার বাহানায় আম্মুকে দেখে হাসপাতাল থেকে বাইরে আসলাম।
বাহিরে এসে সিফাত কে বলে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসলাম। বাসে উঠে সিটে বসতেই ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে নিয়ে দেখি নেহা ফোন দিয়েছে।
কেটে দিয়ে আমি ফোন দিলাম। নেহা রিসিভ করে বললো,,,,
নেহাঃ আসসালামুয়ালাইকুম। ভাইয়া কোথায় আছো?
আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাসে উঠেছি।
নেহাঃ ওহহ। কখন তুমি বাসায় পৌছবে ?
আমিঃ সন্ধ্যায়। মিম কোথায় আছে?
নেহাঃ আমার সঙ্গেই আছে। কথা বলবে ?
আমিঃ হুমম দে ?
মিমঃ আততালামুআলাইতুম। বাবাই তোথায় আতো?
আমিঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম।বাসে উঠেছি আম্মু। তুমি কি করতেছো?
মিমঃ আমি মামনিল তোলে থুয়ে আতি।
আমিঃ কিহহহ,,,। তোমার মামনি আমার বাসায় কেন?
সামিয়াঃ আমি থাকবো না তো কে থাকবে?
আমিঃ আপনি আমার বাসায় কেন? তারপরে আবার আমার অনুমতি না নিয়ে আর এসবের মানে কি?
সামিয়াঃ বারে আমি আমার হবু স্বামীর বাসায় থাকবো এতে আবার কার অনুমতি লাগবে। আর এসবের মানে তুমি ভালো করেই জানো।
আমিঃ দেখুন এসব বাদ দিন। এসবের আর আশা করেন না। হয়তো আপনারই ভালো হবে।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। কথা বলার আর ইচ্ছে নাই। একটু পরে বাস ছেড়ে দিলো। বাস তার আপন গতিতে চলতেছে। আর আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাবতে ছি, আম্মু আমাকে ছাড়া থাকবে কি করে? আম্মুর যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি নিজেকে আর ক্ষমা করতে পারবোনা। আচ্ছা আমি কি ফিরে আসবো? আবার কী তৈরি হবে তাদের সাথে আমার আজ থেকে তিন বছর আগের সেই সম্পর্ক? তাদের হলেও আমার কিন্তু হবে না তাদের প্রতি সেই ভালোবাসা, সেই শ্রদ্ধা।
তবে আম্মুর প্রতি আমার সেই ভালোবাসা সেই শ্রদ্ধা একই থাকবে। বরং তার থেকে বেশিই আম্মুর প্রতি আমার ভালোবাসা টা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, একটা মা তার ছেলেকে কতটা পরিমাণ ভালোবাসে সব সময় তার কথা বলবে, তার চিন্তায় নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিবে। সব মায়েরাই মনে হয় এমনি হয়। "হে আল্লাহ আপনি আমার আম্মুকে সুস্থতা দান করুন।"
ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলাম ফোনের রিংটোনের আওয়াজে। পকেট থেকে বের করে দেখি রাফি ফোন দিয়েছে।
আমি রিসিভ করলাম।
রাফিঃ হ্যালো সাহিদ তুই নাকি রাজশাহীতে এসেছিস?
আমিঃ হুমম। তুই কখন ফিরবি?(রাফি তার বাবার এক কাজের জন্য সাথে সিলেটে গেছে। যা আমাকে সিফাত বললো)
রাফিঃ আজকে রাতে বের হবো।
আমিঃ ওহহহ।
রাফিঃ তুই আজকে নাহয় আমার বাসায় যা আমি আসতেছি তো।
আমিঃ আরে না,, আমি বাসে উঠেছি। ঢাকায় যাবো।
রাফিঃ আচ্ছা ভালোভাবে যাস।
আমিঃ ঠিক আছে।
ফোন রেখে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বেশ কিছু সময় ধরে ঘুমালাম। বাসের হেলপারের ডাকে ঘুম ভাঙলো। বাস থেকে নেমে ড্রাইভার আংকেল কে ফোন দিয়ে আসতে বললাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সন্ধ্যা সাতটা বেজে গেছে। তারমানে মাগরিবের আজান হয়েগেছে।
হায় হায় আল্লাহ আপনি আমাকে এতো ঘুম কোথা থেকে দিয়েছেন। পাশের একটা মসজিদে যায়ে নামাজ পড়ে বের হয়ে আসলাম। একটা দোকানে যায়ে আমার মেয়ের জন্য এক বক্স চকলেট আর নেহার জন্য এক প্লেট ফুচকা কিনলাম।
একটু পরে ড্রাইভার আংকেল গাড়ি নিয়ে আসলেন। গাড়িতে উঠে বসে পড়লাম। প্রায় বিশ মিনিট পর বাসায় এসে পৌঁছলাম।
গাড়ি থেকে নেমে দরজার কাছে যায়ে কলিং বেল বাজাতেই নেহা এসে দরজা খুলে দিল। আমি ভিতরে ঢুকে ফুচকা আর চকলেটের বক্স আমার রুমে নিয়ে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি আমার মেয়ে আমার রুমে কি যেন খুঁজেতেছে।
আমি ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললামঃ কি হয়েছে আমার আম্মুটা
কি খুজতেছে?
মিমঃ আমাল তকলেত তোই?
আমি আমার মেয়েকে তার জন্য আনা চকলেটের বক্স টা দিলাম। এটা পেয়ে তো সে খুশিতে লাফাতে শুরু করেছে।
আমি ফুচকার প্যাক টা নেহা দিয়ে দিলাম। নেহাও ফুচকা পেয়ে খুশি যে লাফাতে লাগলো। ওদের কে হাসি খুশি রাখতে পারে আমাকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সুখি মনে হচ্ছে।
যাজ্ঞে, হাসি খুশির মাধ্যমে কেটে গেল রাত টা। সকালে ঘুম থেকে উঠে কলেজে গেলাম। কলেজ শেষে সামিয়ার অফিসে গেলাম। সেখানেও নিত্য দিনের ন্যায় একই কথা।
ওদের কে নিয়ে বাসায় আসলাম।
এভাবে কেটে গেল দুই দিন। আজকে প্রিন্সিপাল স্যার বলেছেন আগামী কাল সকাল সাত টায় ট্যুরে যাওয়ার জন্য বাস ছেড়ে দিবে।
সবাইকে কলেজের ক্যাম্পাসে উপস্থিত হতে হবে। আর মিমের যাওয়া নিয়ে কোনো প্রকার ঝামেলা হয়নি। বরং সবাই খুশি হয়েছে।এই রকম একটা কিউটী বাচ্চা প্লাস ফ্রেন্ডের মেয়ে তাদের সাথে যাচ্ছে ভাবা যায়। বলতে গেলে এটা তাদের ভাগ্য।😏😏😏
আজকে বিকালে ঘুম থেকে উঠতেই নেহা বায়না ধরলো আমাকে নিয়ে শপিং মলে যাবে। আমিও আর না বললাম না। কারণ, কালকে এক জায়গায় যাবে কিছু তো কেনাকাটা প্রয়োজন। তাছাড়া আমারও কিছু কেনাকাটা করার ছিল।
সন্ধ্যার আগে আমি, মিম আর নেহা এই তিন জন গাড়ি নিয়ে শপিং মলে গেলাম। আসলে শপিং করতে যাওয়ার সময় বাইক নিয়ে যাতে আমাকে ভালোলাগে না। একাই গেলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু একসাথে দুই তিনজন গেলে সমস্যা। একেতো কয়েক হালি ব্যাগ তার উপর আবার আসতে রাত হবে বা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
গাড়ি পার্ক মিমকে কোলে নিয়ে নেহার হাত ধরে শপিং মলে গেলাম। প্রথমে লেডিস সাইটে গেলাম। ওমা সেখানে যায়ে দেখি আমার EX, ইংলিশ, আমার কিউটির মামনি দাঁড়িয়ে আছে। ওহহ তাহলে নেহা ওকে আমাদের আসার কথা বলেছ।
এরপরে ম্যাম কে নিয়ে দোকানের ভিতরে ঢুকলাম। নেহা আর সামিয়া তাদের শপিং করতে ব্যস্ত।
আমি আর আমার মেয়ে অসহায়ের মত তাদের শপিং করা দেখতেছি। একটু পরে সামিয়া সেল্স ম্যানকে মিমের জন্য কিছু পোশাক দেখাতে বললো।
আমি নেহাকে বললামঃ আপু তোর ফোনটা একটু দে তো।
নেহা আমাকে ওর ফোনটা বের করে দিলো। দেখি ফোনটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। আজ থেকে একবছর আগে এটা ওকে নিয়ে দিয়েছিলাম। আজকে আবার একটা নিয়ে দিবো। চলে গেলাম শাওমির শোরুমে। সেখান থেকে নিচ মডেলের একটা ফোন কিনে লুকিয়ে নিয়ে যায়ে গাড়িতে রাখলাম। সারপ্রাইজ দিবো বলে।
ওও নেহার মোবাইল ফোন যে জন্য নিলাম, সেটা তো করাই হলো না। কল লিস্টে যায়ে দেখি ভাবি নামে সেভ করা একটা নাম্বারে বেশি কথা হয়ে। নাম্বার টা দেখে তো বেহুঁশ হওয়ার মতো অবস্থা। কেননা আমার এই নাম্বার টা হলো আমার EX এর। তারমানে নেহাই সামিয়া কে সব কিছু বলে। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। সুন্দর যে EX এর নাম্বার টা ব্লাক লিস্টে রাখলাম 😎😎😎😎।
কাজ শেষে চলে আসলাম ওদের কাছে। ওদের এখনো শপিং করা শেষ হয়নি। নেহাকে ওর ফোন দিয়ে দিলাম। আমি আমার প্রয়োজনীয় কিছু কাপড় কিনলাম। ওদের কে নিয়ে একটা জুয়েলারিতে গেলাম। সেখানে যায়ে একটি নেকলেসে আমার নজর আটকে গেল। আমি হেল্প বয়কে এটা প্যাক করে দিতে বললাম। আমি যখন নেকলেসটা প্যাক করে দিতে বলেছিলাম। তখন সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মিষ্টি হাসতেছে।
সে মনে করেছে এটি আমি তার জন্য কিনেছি।
এবার দেখো মজা কেমন লাগে, নেহাকে বললামঃ নেহা এই নেকলেস টা ভালো ভাবে রাখিস তো এটা মিমিকে গিফট করবো।
সাহিদের কথা শুনে সামিয়ার ভিতরে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিঠাচ্ছে। তবুও সব কিছু নিরবে সহ্য করে নিল। এতো কিছু করার পরেও যদি তাকে সাহিদ কে হারাতে হয়।
নেহাঃ আরে আমাদের ক্লাসের। চিনিস না? কয়েক দিন আগে আমাকে প্রোপোজ করেছিলো। আমি কয়েকদিন সময় চেয়েছিলাম। এখন ভেবেছি ট্যুরে যায়ে এই নেকলেস দিয়ে আমি আবার প্রোপোজ করবো।
সাহিদের কথায় নেহা অবাক হয়ে গেল। নেহা ভাবতেও পারেনি তার ভাই অন্য একজন কে ভালোবাসে। সামিয়া আর এক মূহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে গেল।
আমি অবাক হলাম। কী ব্যাপার এই টুকু কথাতে সামিয়া এতো হার্ট হবে ভাবতেই পারিনি। হলে হবে আমার কী? কেবল তো শুরু।
নেহা আর মিমকে নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় পৌছে ঘড়িতে দেখি রাত নয়টা বেজে গেছে। ভেবেছিলাম কোনো রেস্টুরেন্টে ডিনার করে আসবো কিন্তু তা আর হলো না। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের বক্স টা নিয়ে নেহার রুমে গেলাম। তবে একটা জিনিস ভাবাচ্ছে গাড়িতে উঠার পর থেকে বাসায় আসার অবধি নেহা আমার সাথে একটা কথাও বলেনি। মিম গাড়িতেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। ওকে কোলে করে নিয়ে এসে আমার বিছানায় শুয়ে দিলাম।
নেহার রুমে যায়ে দেখি নেহা শুয়ে আছে। আমি নেহাকে ডাক দিলাম।
আমিঃ আপু তোর কী শরির খারাপ?
আমার কথা শুনে নেহা ওঠে বসে পড়লো।
নেহাঃ না ভাইয়া ঠিক আছি।
আমিঃ তাহলে?
নেহাঃ এমনি শুয়ে আছি।
আমিঃ ওওও,, এই নে এটা (ফোনের বক্স টা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে) তোর জন্য ।
নেহাঃ কি আছে এখানে?
আমিঃ মোবাইল ফোন।
নেহাঃ আচ্ছা রেখে দেও।
নেহার এমন আচরণে আমি অবাক হয়ে গেলাম। নেহাকে বললামঃ কি হয়েছে আপু তোর?
নেহাঃ ভাইয়া তুমি কি সত্যিই মিমিকে ভালোবাসো?
ওহহ এতক্ষণে বুঝতে পারলাম এই ব্যাপার। হায়রে ভাবি পাগলি যে,,।
আমিঃ কেন?(না জানার ভান করে)
নেহাঃ এমনি বলতেছি।
আমি মুচকি হেসে বললামঃ সেটা পরে বুঝতে পারবি।
চল ডিনার করবি।
নেহাঃ আমি খাবো না। তুমি খাও।
আমিঃ সেটা বললে হবে না তুইও চল আমার সাথে।
শেষে আমার জোরাজুরিতে ডিনার করার জন্য রাজি হলো।
অতঃপর দুই ভাইবোন মিলে ডিনার করে যে যার রুমে গেলাম।
আমি রুমে এসে আমার এবং আমার মেয়ের তিন দিনের প্রয়োজনীয় ড্রেস গুলো ল্যাকেজে ভরে নিলাম।
_-_-_-_-_-_
নেহা ডিনার করে রুমে এসে সামিয়া কে ফোন দিলো।
নেহাঃ হ্যালো ভাবি কী করতেছো?
সামিয়াঃ এইতো বসে আছি। তুমি?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
নেহাঃ ডিনার করে রুমে আসলাম।
সামিয়াঃ ভালো।
নেহাঃ তোমার কন্ঠ এমন লাগতেছে কেন? কান্না করতেছো?
সামিয়াঃ কি করবো বলো, যার জন্য এতো কিছু করলাম। সে আজ অন্য কারো।(কান্না করতে করতে)
নেহাঃ ভাবি তোমার ভেঙে পড়লে চলবে না। ভাইয়া হয়তো তোমাকে হার্ট করার জন্য কথাটা বলেছে। তাছাড়া আমি ভাইয়াকে চিনি। কোনো দিন আমার কাছে কোন কথা লুকাইনি । মিমি যদি সত্যিই প্রোপোজ করতো তাহলে আমাকে আগেই বলতো। বুঝেছো। তুমি লেগে থেকো।
সামিয়াঃ ঠিক আছে। পরে কথা হবে।
নেহার কথা শুনে সামিয়া কিছুটা শান্তি পেলো।
ফজরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে [ফ্রি মাইন্ড] নামাজ নেহা আর মিমকে ডেকে তুললাম। মিমকে ফ্রেশ করে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে আসলাম। নেহা এখনো ডাইং টেবিলে আসে নি।
একটু পরে নেহা আসলো। গত কাল বুয়াকে কিছু খাবার রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিতে বলেছিলাম।
তিন জন একসাথে নাস্তা করে রুমে এসে ড্রেসআপ করে বের হয়ে গাড়িতে এসে বসলাম। এর পরে ড্রাইভার আংকেল আমাদের যে কলেজে নিয়ে যায়ে নামিয়ে দিলেন।
কলেজে পৌছে ঘড়িতে দেখি ৬.৩০ মিনিট বেজেছে। নেহা নেহার ফ্রেন্ড দের কাছে গেলো। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে আমার বন্ধুদের কাছে যেতেই প্রিন্সিপাল স্যার সকলকে গাড়িতে উঠার জন্য বললেন।সিটি লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত করা হয়েছে। একটু পরে সামিয়া এসে আমার কাছ থেকে মিমকে নিয়ে গেল।
মিমকে নিয়ে যাওয়ার পরেই ইকোনমিক স্যার এসে আমাকে বললেন,,
স্যারঃ এই লিস্ট নিয়ে সকল বাসে যায়ে দেখো তো সবাই ঠিক মতো উঠেছে কিনা?
আমিঃ ঠিক আছে স্যার।
এরপরে সকল বাসে যায়ে দেখে আসলাম। সবাই ঠিক ঠাকই বসেছে। মোট ১১ টি বাস যাচ্ছে আমাদের কলেজ থেকে। অনেক কয় বছর পর আমাদের কলেজ থেকে ট্যুরে যাচ্ছে এই জন্য স্টুডেন্টদের যাওয়ার আগ্রহ টা বেশি।
যাজ্ঞে, আমি আমাদের ডিপার্টমেন্টের জন্য যেই বাস ফিক্সড করা হয়েছে সেটাই গেলাম। ওমা গাড়িতে উঠে দেখি আমার বন্ধুরা সহ সবাই নিজ নিজ সিটে বসে পড়েছে। সব সিট পূর্ণ হয়ে গেছে। আমার পকেট থেকে টিকেটের কার্ডটা বের করে দেখি ৩৬ নাম্বার সিটটা আমার।
৩৬ নাম্বার সিটে যায়ে তো আমি অবাক। কেননা আমার পাশের সিটেই বসে আছে,,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২২
৩৬ নাম্বার সিটে যায়ে তো আমি অবাক। কারণ আমার পাশের সিটেই বসে আছে মিমি। যার কথা আমি গতকালকে শপিং মলে বলেছিলাম। আমার পাশের সারির দুই সিট পিছনে সামিয়া এবং আইসিটি বিভাগের ম্যাম বসে ছিলেন। তবে আমাদের কথা ওরা ওদের সিট থেকে শুনতে পাবে। মিম সামিয়ার কোলে বসে ছিলো। আর নেহা অন্য বাসে ছিলো।
আমি সিটে বসতেই মিম আমাকে দেখতে পেলো।আমাকে দেখেই বললোঃ বাবাই আমি তোমাল কাতে দাবো।
আমিঃ ঠিক আছে আম্মু এসো।
মিমকে আমি আমার কাছে নিয়ে এসে সিটে বসে পড়লাম। জানালার পাশে আমি বসেছি আর আমার পাশে মিমি বসেছে।
মিমি মিমকে কোলে নিয়ে আদর করতেছে। আগে ক্লাসে নিয়ে যাওয়ার কারণে সকলেই মিমকে চিনে কিন্তু মিম সবাইকে চিনে না। তেমনি মিমির ক্ষেত্রেও হয়েছে। মিমি মিমকে চিনে কিন্তু মিম মিমিকে চিনে না মানে তেমন পরিচিত নয়।
মিম মিমির কাছ থেকে আমার কাছে এসে বললোঃ বাবাই এতা ( মিমিকে উদ্দেশ্য করে) তে ?
আমিঃ এটা তোমার মামনি হয় আম্মু। আজ থেকে মামনি বলে ডাকবে আচ্ছা?
মিমঃ থিক আতে বাবাই। মামনি আমাল দন্য তকলেত এনেতো?(ছোট বাচ্চা তো তাই চকলেটের প্রতি আকর্ষণ বেশি)
মিমিঃ এই নাও আম্মু।(মিমি ওর ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে দিল।মনে হয় চকলেট নিয়েই এসেছিলো)
সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সামিয়া আমাদের দিকে চেয়ে আছে।আমি ওকে রাগানোর জন্য মিমির সাথে কথা বলতে লাগলাম।
আমিঃ আচ্ছা মিমি তুমি এতো সুন্দর কেন? তোমার সেই কাজল কালো চোখ। সেই আপেলের মতো গাল। সেই পাগল করা হাসি সব মিলিয়ে মনে হয় যেন স্বর্গের কোনো রমনি নেমে এসেছে।
মিমি মাথা নিচু করে লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে বললোঃ ধ্যাত কী যে বলো না।(🙊🙊🙊)
আমি আরেকটু পাম দিয়ে বললামঃ সত্যি মিমি তোমার রুপের কোনো তুলনা হয়না। তবে যাই বলো না কেন তোমার মতো সুন্দরী আমাদের কলেজে নেই।
মিমি খুশিতে গদগদ হয়ে বললোঃ সত্যি,,(🙊🙊🙊)
আমিঃ হ্যাঁ সত্যি। মন তো চাচ্ছে তোমাকে আমার মেয়ের আম্মু বানিয়ে ফেলি।
সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি রাগে ফুঁসতেছে। যাক তাহলে ঔষধ কাজে লেগেছে। রাগে ওর নাক কান লাল হয়ে গেছে। এটা সামিয়ার একটা অভ্যাস
মিমি মুচকি হেসে বললঃ না করেছে কে, বানিয়ে ফেলো।
ওমা এই মেয়ে বলে কী? আমি ওর দ্বারা আমার EX কে রাগাতে চাচ্ছি আর সে বলতেছে তাকে আমার মেয়ের আম্মু বানাতে।
আমি মিমিকে শান্তনা দিয়ে বললামঃ আমি আমার পরিবারের সাথে কথা বলে দেখি জানু কেমন ।
মিমিঃ ঠিক আছে জানু বলেই আমার গালে কিস করে বসলো।
হায় আল্লাহ,, এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম।
সামিয়া আর এসব সহ্য করতে না পেরে তার সিটে থেকে ওঠে আমাদের কাছে এসে মিমিকে বললোঃ এই মেয়ে এখানে কি চুমাচুমি করতে এসেছো? 😡😡😡😡( রেগে লাল হয়ে)
মিমি ভয়ে ঢোক গিলতে গিলতে বললঃ না মানে ম্যাম।
সামিয়াঃ কি মানে মানে করতেছো? আমার সিটে যায়ে বসো যাও?
মিমিঃ কেন ম্যাম?
সামিয়াঃ আবার কথা বলো। আমি যা বলতেছি তাই হবে। যাও বলতেছি?😡😡😡 আর যেন কখনো তোমাকে সাহিদের সাথে না দেখি।
কী আর করার মিমি মন খারাপ করে সামিয়ার সিটে যায়ে বসলো।
সামিয়া আমার পাশে বসলো। আর আমি মনের আনন্দে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে লাগলাম। মনে হচ্ছে আমি কিছুই জানিনা,,😎😎😎।
সামিয়া বিরবির করে বলতেছে, শয়তান ছেলে বলে কি ওই মিমি পেত্নি ছাড়া নাকি কলেজের অন্য কেউ সুন্দর নয় । তাহলে এতো দিন আমার সাথে ছিলি কেন? এতো দিন যখন আমার সঙ্গে রিলেশন করেছিলি তখন তো এতো সুন্দর করে আমাকে বলিস নি যে তোমার গাল গুলো আপেলের মত সুন্দর, কাজল কালো চোখ গুলো বেশি সুন্দর? আর আজকে একটা পেত্নিকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছিস। বলে কি তাকে ন আবার প্রোপোজ করবে। দাঁড়া তোর প্রোপোজ আমি করাচ্ছি।
সামিয়া যা যা বলতেছে সব কিছু আমি শুনতে পাচ্ছি। কারণ গান টা তখন আমি বন্ধ করে দিয়েছি।
সামিয়া কে বললামঃ ম্যাম কিছু বলতেছেন?
সামিয়া আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে থেকে বললোঃ আচ্ছা সাহিদ সত্যিই কি আমি তোমার অযোগ্য হয়ে গেছি।
আমিঃ এসব বলতেছেন কেন? আর মিমিকে ওঠে দিয়ে আপনি এখানে বসলেন কেন?
সামিয়া রেগে গিয়ে আমার কলার ধরে বললোঃ আর কোনো দিন যদি আমার নাম ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের নাম মুখে নিয়েছিস তাহলে তোকে শেষ করে দিয়ে আমিও শেষ হয়ে যাবো।
আমি শান্তশিষ্ট ভাবে সামিয়ার হাতটা আমার কলার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললামঃ হা হা হা,,,, আমাকে তো সেদিনই মেরে ফেলেছেন, যেদিন মিথ্যা দোষের জন্য মিথ্যা ষড়যন্ত্রের জন্য আমাকে চরিত্রহীন নামক উপাধি টা দিয়েছেন। এখন আবার নতুন করে মেরে ফেলার কি আছে। অযথা, আমার মতো চরিত্রহীন ছেলের লাইফে নিজেকে জড়িয়ে নিজের লাইফটা শেষ করে দিয়েন না।
আমার কথা শুনে সামিয়ার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
আমার হাত দুটো ধরে বললোঃ আমাকে কী ক্ষমা করা যায় না।
এখনো রেগে আছো আমার উপর।
আমি হাত দুটি ছাড়িয়ে নিয়ে আমার বুকের উপর হাত দুটি বেঁধে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললামঃ কারো প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। আর ক্ষমা, সেতো অনেক আগেই করেছি। নতুন করে আবার করার কি আছে।
সামিয়াঃ তাহলে আমার সাথে এমন করতেছো কেন?
আমিঃ দেখুন এখন এসব বলতে চাচ্ছি না।
সামিয়া আর কিছু না বলে। গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখ দিয়ে পানি ফেলতেছে। মিম ঘুমিয়ে গেছে। আমি মিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। আমার মেয়েটা একেবারে আমার মতোই ঘুম পাগলি।
আমিও সিটে মাথা লাগিয়ে দিলাম। হঠাৎ মনে পড়লো আজকে তো মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা হয়নি।আর আপনাদের বলা হয়নি গত কাল দুপুরের পর থেকেই কড়া মেডিসিনের জন্য আম্মু বেশ সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে আমার কথা ভাবলেই কান্না করে দেয়।
মাহফুজ ভাইয়াকে ফোন দিলাম। প্রথম বার রিসিভ করলো না। আবার দিলাম। এবার রিসিভ করলো,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম। ভাইয়া কেমন আছেন?
মাহফুজ ভাইঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। এখন রুডি কেমন আছে?( আম্মুর কথা উচ্চারণ করলাম না। কারণ সামিয়া পাশে বসে আছে। আম্মুর কথা বললে হয়তো বুঝতে পারবে)
মাহফুজ ভাইঃ আলহামদুলিল্লাহ। মোটামুটি সুস্থ। এখন ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ঘুমিয়ে রাখা হয়েছে।আর জেগে থাকলেই তোমার কথা। আর শোন এইবার যদি এই রকম সমস্যা হয় তাহলে কিন্তু বড় রকমের সমস্যা হতে পারে। আর পারলে তুমি চলে এসো।
আমিঃ দেখি ভাইয়া যাওয়ার চেষ্টা করবো। আচ্ছা ভাইয়া ভালো থাকবেন।
মাহফুজ ভাইঃ আচ্ছা ভালো থেকো।
ফোন রেখে দিয়ে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। বেশ ভালোই ঘুম হলো। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি সামিয়ার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছি আর মিম আমার কোলে পা সামিয়ার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। সামিয়া একহাত দিয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর অন্য হাত দিয়ে মিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আমি সামিয়ার কাঁধ থেকে মাথা তুলে ঠিক ঠাকই হয়ে বসে বললামঃ সরি,, আসলে ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারিনি।
সামিয়া মুচকি হেসে বললঃ সমস্যা নেই। ঘুম কেমন হলো ?
আমিঃ হুমম ভালোই হয়েছে।
দুজনেই আর কোনো কথা বললাম না। বাস তার আপন গতিতে চলতেছে। আর আমি বাহিরের দৃশ্য দেখতেছি। বাসের। হেলাপারের কাছ থেকে শুনলাম আর এক ঘন্টার পথ অতিক্রম করলে আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবো।
একটু পরে আমির মেয়ে ঘুম থেকে উঠলো। ঘুম থেকে উঠেই ওর মামনি কে বললোঃ মামনি আমার তকলেত তই?
সামিয়া মিমকে চকলেট বের করে দিয়ে বললোঃ এই নাও আম্মু।
এর পরে আমার মেয়ে তার মামনির কোলে আধোশোয়া হয়ে মনের আনন্দে চকলেট খাচ্ছে। আমি আমার মেয়েকে বললামঃ আম্মু তোমার ঘুম কেমন হলো?
মিমঃ দালো হয়েতে বাবাই। তোমার ধুম তেমন হলো?
সামিয়াঃ তোমার বাবাইয়ের ঘুমও খুব ভালো হয়েছে মামনি।
মিম আর সামিয়া দুজনে গল্প করতে লাগলো। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পরে আমরা পৌঁছে গেলাম আমরা আমাদের গন্তব্যে। বাস একটা হোস্টেলের সামনে থামলো। তবে এটা কক্সবাজার শহর থেকে একটু বাহিরে।
এই হোস্টেলটা আমাদের কলেজের টিচাররা অনলাইনে বুক করেছে। আর এটাই কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় হোস্টেল।
বাস থেকে নামতেই ইকবাল এসে সামিয়া কে বললোঃ ভাবি ভাইয়ের সাথে জার্নি করতে কেমন লাগলো,,?😜😜😜
সামিয়া লজ্জা মাখা মুখে বললোঃ খুব ভালো হয়েছে দেবরজি।
আমি সিফাতের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বললামঃ এই তোদের কোন কালের ভাবি হয়? আর তোদের না বলেছি ভাবি বলে ডাকি না 😡😡😡😡।
সামিয়াঃ সমস্যা নেই তোমরা আমাকে ভাবি বলে ডাকতে পারো।
আমি সামিয়া কে বললামঃ দেখুন ম্যাম এই বার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
বলেই আমি রাগ করে সেখান থেকে চলে আসলাম।
এরপরে স্যার আমাদের প্রত্যেক দুইজনে একটা রুমের চাবি দিলেন। আমি আর ইকবাল এক রুমে। শাকিব আর রিয়াদ এক রুমে।
অপরদিকে সামিয়া আর নেহা এক রুমে। ফ্রেশ হয়ে বাহিরে বের হলাম। একটু ঘুরাঘুরি করতেই সন্ধ্যা লেগে গেলো। আজকে আকাশ কালো বেশ ঘোলাটে। বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আছি , বাইরের দৃশ্য দেখতেছি। হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন বললোঃ একাই কি করতেছো?
পিছনে ফিরে দেখি মিমি দাঁড়িয়ে আছে।
আমিঃ ওহহহ তেমন কিছু না। তোমার সাথে একটা কথা আছে, তোমার সময় যদি হয় তাহলে একটু সাইটে গেলে ভালো হতো।
মিমি খুশি মনে বললোঃ হুমম আমারো তোমাকে কিছু বলার আছে। আচ্ছা চলো কোথায় যাবে?
আমিঃ হুমম এসো।
এরপরে মিমকে নিয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় গেলাম। সেখানে যায়ে মিমিকে বললামঃ মিমি তোমাকে যে কথা টা বলবো তারপরে যেন কোনো উল্টা পাল্টা কিছু করো না। আর আমাকে ভুল বুঝো না।
মিমিঃ কী এমন কথা বলবে তার জন্য এমন বলতেছো।
আমিঃ তুমি আগে আমাকে কি বলতে চেয়েছিলে তাই বলো। আমি পরে বলতেছি।
মিমিঃ আসলে সাহিদ আমি ভনিতা পছন্দ করি না। সোজা সুজি বলে দেয়। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি সাহিদ। আমাকে ফিরিয়ে দিও না।
আমি কী বলবো সব কিছু যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। করতে চাইলাম কি আর হলো কি?
আমিঃ এটা সম্ভব নয়।
মিমিঃ কেন? ( কান্না কান্না কন্ঠে)
আমিঃ দেখ মিমি তোমার প্রতি আমার সেই রকম কোনো ফিলিংস হয়নি। তোমাকে আমি বন্ধু ভেবে এসেছি। আর বাসে কথা গুলো বলার কারণ গুলো হলো, তোমাদের সামিয়া ম্যাম হলো আমার গার্লফ্রেন্ড। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।একটা ভুল বুঝাবুঝির জন্য আমরা একজন অন্য জনের কাছে থেকেও দূরে আছি। তবে ভালোবাসাটা একই আছে। তাকে রাগানোর জন্য তোমার সাথে ৎএমন করেছি। সত্যি বলতে জানো কি, তুমি যথেষ্ট সুন্দর। তুমি আমার থেকেও ভালো ছেলে পাবে। আমার না আছে কোনো পরিবার না আছে কোনো থাকার যায়গা। সব অন্যজনের। আর পারলে,,,,,
আমার কথা শেষ হতে না হতেই কোথা থেকে সামিয়া এসে
সজোরে মিমির গালে দুইটা থাপ্পড় মারলো। মিমি তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলো।
সামিয়া মিমিকে তুলে বলতেছেঃ তোকে কতবার বলেছি সাহিদের সঙ্গে কথা বলবি না। তারপরেও শুনিস নি। বলেই আরেকটা থাপ্পড় দিতে যাবে ঠিক তখনি আমি ওর হাতটা ধরে ঠাসস ঠাসস করে দুইটা লাগিয়ে দিলাম।
বেশ জোরে মারার জন্য সামিয়ার ঠোঁটের কিছু অংশ কেটে গেছে। সামিয়া আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তোবা কখনো ভাবতেই পারেনি তাকে আমি মারবো।
আমিঃ তোকে আমি কতবার বলবো আমি তোকে ভালোবাসি না। তোর মতো অবিশ্বাসির মায়ায় আর নিজেকে জড়াতে চাইনা। তারপরেও কেন তুই আমার পিছনে পড়ে আছিস। যা চোখের সামনে থেকে তোকে যেন আর না দেখি চোখের সামনে।(রেগে)
সামিয়া কান্না করতে করতে দৌড়ে রুমে চলে গেল। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। কী করবো বলেন? এখানে তো আর মিমির দোষ এ। আমি তো মিমিকে এখানে নিয়ে এসেছি।
আমি মিমিকে বললামঃ সরি মিমি, আমার জন্য তোমাকে এই রকম পরিবেশের সম্মুখীন হতে হলো। আমাকে মাফ করে দাও।
মিমঃ আরে সমস্যা নেয়। যে কোনো মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে অন্য কাউকে দেখলে সহ্য করতে পারে না। আর তুমি হয়তো আমার ভাগ্যে নেই। আমরা বন্ধু হয়ে থাকতে পারি তো নাকি? আচ্ছা তোমাদের সম্পর্কটা কত দিনের?
আমিঃ হুমম বন্ধু হতে পারি। আর আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে চাও তাহলে শুনো,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,(এরপরে কলেজ থেকে শুরু করে সামিয়ার সাথে প্রেম, বাসা থেকে বের হওয়া সব কিছু বললাম)
আমার কথা শুনে মিমি কান্না করতে করতে বললোঃ এত কিছু হয়েছে তোমার উপর?
আমিঃ হুমম। তবে কথা দাও এসব কথা আর ম্যামের সাথে আমার রিলেশানের কথা কাউকে বলবে না।
মিমিঃ ঠিক আছে। তবে সাহিদ ম্যাম তোমাকে হতো ভালোবাসে। আর কষ্ট দিয়ো না।
আমিঃ হুমম জানি। তবে আরেকটু দিবো।
মিমিঃ এমন কিছু করো না, যাতে আবার হারিয়ে যায়।
আমিঃ আরে না,,। আচ্ছা রুমে যাওয়া যাক নাকি?
মিমিঃ হুমম চলো।
এরপরে রুমে এসে দেখি ইকবাল শুয়ে থেকে ফোন টিপতেছে। আমি সোফায় বসে থেকে নেহার কাছে ফোন দিয়ে মিমের কথা জানলাম।
একটু পরে ডিনার করার জন্য ডেকে গেলো। সকলে একসাথে হোস্টেলের ক্যান্টিনে যায়ে ডিনার করলাম। ডিনার করে যে যার রুমে আসলাম। দীর্ঘক্ষণ জার্নি করার জন্য শরির টা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এই জন্য আজকে ঘোরাফেরা না করে একটু আগেই সবাই ঘুমিয়ে পড়লো।
তবে ডিনারের সময় নেহাকে একাই দেখলাম ওর বান্ধবীদের সাথে। মিম এতক্ষণ ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু। সামিয়া ডিনার করলো না কেন?
হোসস্ এতো ভেবে কাজ নেয়। রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত বেশি হয়নি। কেবল নয়টা বেজেছে। ইকবাল ঘুমিয়ে পড়েছে। একটা রুমে দুইটা করে বেড আছে। যার ফলে শুয়ে থাকতে অসুবিধা হবে না। শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে গেলাম।
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। হাতে। নিয়ে দেখি নেহা ফোন দিয়েছে। ঘুম কোথাও উধাও হয়ে গেল। ওদের কারো কিছু হলো না তো।
এক পাউন্ড টেনশন নিয়ে ফোন টা রিসিভ করলাম।
আমিঃ হ্যালো নেহা কারো কিছু হয়েছে নাকি?
নেহাঃ ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি আমার রুমে এসো?(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
আমিঃ কেন?
নেহাঃ তুমি এসো তাড়াতাড়ি,,,। (কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)
বলেই ফোন কেটে দিল।
আমি রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমের দরজা টা বাহির থেকে লাগিয়ে দিয়ে নেহার রুমের কাছে গেলাম। দরজায় ধাক্কা দিতেই নেহা এসে দরজা খুলে দিলো।
আমি রুমের ভিতরে ঢুকে সামিয়ার বেডের দিকে তাকিয়ে দেখতেই আমার কলিজা টা কেঁপে উঠলো। কেননা সামিয়া বেডের উপরে,,,,,,,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২৩
আমি রুমের ভিতরে ঢুকে সামিয়ার বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে তো অবাক হয়ে গেলাম। কারণ, সামিয়া বেডের ওপর শুয়ে আছে আর তার গায়ের উপর কম্বল থাকার পরেও থরথর করে কাঁপতেছে। আর আবল তাবল বকতেছে। সামিয়ার কোল্ডে এলার্জি আছে। যার জন্য এখন তার অবস্থা বেশি খারাপ।
সামিয়ার এই অবস্থা দেখে আমার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। হাজার হলেও সে আমার ভালোবাসা। মুখে তাকে যতই বলি না কেন ভালোবাসি না ভালোবাসি না। কিন্তু অন্তরে তার প্রতি আমার ভালোবাসা একই রয়েছে। তবে তার প্রতি আমার অভিমানটাও এখনো আছে। জানিনা এই অভিমানটা শেষ কবে হবে। আমি সামিয়ার বেডের কাছে যায়ে সামিয়ার কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরের কারণে সামিয়ার কপাল পুড়ে যাচ্ছে।
আমি নেহাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ নেহা ম্যামের এই অবস্থা হলো কী করে?
নেহাঃ আসলে ভাইয়া, কালকে সন্ধ্যার পর ম্যাম কোথা থেকে যেন দৌড়ে রুমে আসলো। রুম এসে কোনো কথা না বলে ওয়াশরুমে চলে গেল। একটু পরে দেখি শাওয়ারের শব্দ আসতেছে। আমি মনে করলাম জার্নি করার জন্য শরীরটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তাই শাওয়ার নিচ্ছে। আমিও আর কিছু বললাম না। প্রায় আধঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে তবুও বের হয়ে আসতেছে না। আমি ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখি ম্যাম ওয়াশরুমের মেঝেতে বসে থেকে কান্না করতেছে আর মাথার উপর ঝরনা থেকে পানি পড়তেছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ কী হয়েছে তোমার ?
ম্যাম বললোঃ কিছু হয়নি।
আমিঃ তাহলে এখন এইভাবে শাওয়ার ছেড়ে বসে আছো কেন?
ম্যামঃ আমার কিছু হয়নি। প্লিজ তুমি এখানে থেকে চলে যাও। আমাকে একাই থাকতে দাও।
আমি আর কিছু না বলে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসলাম। একটু পরে ডিনার করার জন্য ডেকে গেলো। আমি ম্যাম কে ডিনার করার জন্য ডাকলাম। কিন্তু সে বললো পরে ডিনার করবে। আমি জেদ করেও তাকে আমার সাথে ডিনার করতে নিয়ে যাতে পারিনি।
আমি মিমকে নিয়ে ডিনার করতে গেলাম।
ডিনার করে রুমে এসে দেখি ম্যাম এখনো শাওয়ার নিচ্ছে। আমি আর তার কোনো কথা না শুনে রুম থেকে ড্রেস নিয়ে যায়ে তার ভেজা ড্রেস গুলো চেন্জ করে দিয়ে ড্রেস পড়িয়ে দিয়ে তার বেডে শুয়ে দিলাম। তারপরে তাকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে?
ম্যাম আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ আমি হারিয়ে গেছি নেহা আমি আমার ভালোবাসার প্রতি হারিয়ে গেছি। তখন আমি বুঝতে পারলাম তোমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে।
নেহার কথা শুনে আমার দুই চোখ দিয়ে নোনাজল পড়তে লাগলো। কি করে পারলাম মেয়েটার সাথে এমন আচরন করতে। মন চায় বুকে জড়িয়ে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বলি,," পাগলি তোকে খুব ভালোবাসি রে কেন তুই বুঝিস না" । মন চায় আবার তাদের কাছে ফিরে যেতে।
কিন্তু কোনো এক অজানা শক্তি এসে বাঁধা দিয়ে বলে, "সাহিদ তারাও তো তোকে কম শাস্তি দেয়নি, তুই কি ভুলে গেলি?" তখনি আমি আর তাদের কাছে ফিরে যেতে পারিনা। জেগে ওঠে সেই পুরোনো ক্ষত গুলো। মনে পড়ে সেই তিন বছর আগের কথা গুলো। যখন তারা আমাকে বিনা দোষে বাসা ছাড়া করলো, বিনা দোষে চরিত্রহীন উপাধি দিলো। কি করে তাদের কাছে আবার ফিরে যাই।
নেহার কথাই আমি ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলাম।
নেহাঃ ভাইয়া জানি না তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে। জানার চেষ্টাও করি না তবে একটা কথা বলি ভাইয়া, এই মেয়েটা তোমাকে খুব ভালোবাসে। তাই বলি অতীতের সব কিছু ভুলে আবার নতুন করে শুরু করো।
আমি নেহার কথার উত্তর না দিয়ে বললামঃ নেহা তোর কাছে রুমাল থাকলে নিয়ে আয় তো।
নেহাকে রুমাল নিতে পাঠিয়ে আমি ওয়াশরুম থেকে এক জগ পানি নিয়ে আসলাম। পানি নিয়ে এসে সামিয়ার মাথার কাছে বসে নেহার কাছ থেকে রুমাল টা নিয়ে পানিতে ভিজিয়ে সামিয়ার মাথায় পট্টি দিতে লাগলাম।
সামিয়ার জ্বর ক্রমশই বাড়েই চলতেছে। গায়ের কাঁপুনি বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর জ্বরের ঘোরে ভুল ভাল বকতেছে। আমি আমার রুমে এসে ব্যাগ থেকে জ্বরের ক্যাপসুল নিয়ে এসে সামিয়া কে খাইয়ে দিলাম। সামিয়া এখনো অবচেতন অবস্থায় আছে।
প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে জল পট্টি দেওয়ার পরে সামিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলো। এতোক্ষণ নেহা আমার পাশেই বসে ছিল। আমি নেহাকে বললামঃ আপু তুই মিমকে নিয়ে তোর বেডে শুইয়ে পড়।
নেহাঃ আমি এখানে বসে আছি তুমি তোমার রুমে যায়ে ঘুমিয়ে পড়।
আমিঃ আমি এখানে আছি তুই যায়ে ঘুমিয়ে পড়। ঘুম জাগলে তুই অসুস্থ হয়ে পড়বি।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
এরপরে নেহা মিমকে সামিয়ার বেড থেকে নিয়ে যায়ে ওর বেডে ঘুমিয়ে পড়লো।
আমি সামিয়ার মাথাটা আমার কোলের উপর তুলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর মাথায় জল পট্টি দিয়ে দিচ্ছি। EX এর সেবা করতে করতে কখন যে রাত শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।
ফজরের আযানের সময় সামিয়ার বেড থেকে উঠে নিজের রুমে এসে অযু করে নামাজ পড়ে বেডে গা টা এলিয়ে দিলাম। এখন সামিয়ার জ্বর টা ছাড়ে গেছে। তবে একটু একটু আছে।
সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে সোজায় মেডিসিন কর্ণার থেকে কিছু জ্বরের ঔষধ নিয়ে এসে নেহাকে দিয়ে বললামঃ নেহা এই মেডিসিন গুলো তোর ম্যাম কে খাইয়ে দিস।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
আমিঃ এখন জ্বর কেমন আছে?
নেহাঃ জ্বর নেই তবে এই মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিলে একে বারে সেরে যেতে পারে।
আমিঃ ঠিক আছে।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ইকবাল আর আমি বসে আছি। একটু পরে রিয়াদ আর শাকিব আমাদের রুমে আসলো। শাকিব আর রিয়াদ বসতেই ইকবাল বলতে শুরু করলঃ জানিস তোরা আমাদের সাহিদ ভাই আজকে রাতে ভাবির কাছে ছিলো।
ইকবালের কথা শুনে শাকিব আর রিয়াদ আমার দিকে মুখ খোলা রেখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আমি অন্য গ্রহ থেকে এসেছি।
শাকিবঃ বলিস কি মামা এতো দূর আগিয়ে গেছে।
ইকবালঃ আরে আগে শুনি তো নাকি?
রিয়াদঃ হুমম বল?
ইকবালঃ রাত প্রায় দশটা বাজে, আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। পাশের বেডে তাকিয়ে দেখি সাহিদ নেই। মনে করলাম ওয়াশরুমে গেছে। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে যাওয়ার পরেও ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না। আমি ওয়াশরুমে ঢুকে দেখি কেউ নেই। গেলো কইরে, আমি ভাবলাম হয়তো বাইরে গেছে। রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখি বাইরে নেই। ম্যামের রুমে উঁকি দিয়ে দেখি আমাদের জানের দোস্ত সাহিদ কথা বলতেছে। তার মানে ভাইয়া ভাবির রুমে গেছে।
আমি রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। ফজরের একটু আগে ঘুম থেকে উঠে দেখি সাহিদ এখনো আসেনি। একটু পরে রুমে আসলো।
আমি ঘুমানোর ভান করে মিটিমিটি চোখে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম বন্ধুর শরির টা বেশ খারাপ। কারণ, সারা রাত হয়তো ম্যাস খেলেছে।😁😁😁😁
রিয়াদঃ এতো কিছু হয়ে গেল তারপরও তুই আমাদের কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না। ছিঃ ভাবতেও খারাপ লাগতেছে।
আমিঃ আরে ভাই ইকবাল যা বলতেছে তার কিছু সত্য কিছু মিথ্যা। আমি রাতে ঐখানেই ছিলাম কিন্তু,,,
আমাকে আর বলতে না দিয়ে শাকিব বললঃ বুঝি বন্ধু বুঝি। আমরা কচি খোকা না।
আমিঃ কচু বুঝিস তোরা,,,। থাক তোরা।
বলেই রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। কারণ, তাদের কাছে যতই থাকবো তারা ততই প্যাচাবে।
বাইরে আসতেই ফোনটা বেজে উঠলো। বের করে দেখি স্যার ফোন দিয়েছে। আমি রিসিভ করে বললাম,,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম।
স্যারঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। কোথায় আছো তুমি?
আমিঃ স্যার আমিতো বাইরে আছি। কেনো?
স্যারঃ তুমি হোস্টেলে যায়ে সকলকে ক্যান্টিনে নিয়ে এসো। ব্রেকফাস্ট করে আমরা ঘুরতে বের হবো।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার।
আমি হোস্টেলে ফিরে এসে সবাইকে ক্যান্টিনে যাতে বললাম। সকালে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে ঘুরতে বের হলাম। প্রথমেই হিমছড়ি গেলাম। এর পরে পর্যায়ক্রমে গেলাম বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে,রাডার স্টেশন ও লাইট হাউজে, লামার পাড়া ক্যাংএ, ইনানিতে। প্রকৃতির এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাই।
অনেক্ষণ যাবৎ ঘোরাফেরা করলাম। দুপুর দুইটা বেজে গেছে। এরপরে একটা রেস্টুরেন্টে যায়ে সবাই একসাথে লাঞ্চ করে হোস্টেলে আসলাম। সকলে গোসল করে আবার রওনা দিলাম সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে । বিকেলের সেই পড়ন্ত সূর্যের রোদটুকু এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের সময়টা উপভোগ করতে আমরা সৈকতে কাটাতে চায়।
আর আজকে রাতে রওনা দিবো সিলেটের উদ্দেশ্যে।
সৈকতে আমি, নেহা, মিম, সামিয়া একসাথে ঘুরতেছি। ইকবাল, শাকিব, রিয়াদ আর কিছু ফ্রেন্ড একসাথে ঘুরতেছে।
সামিয়া নেহা আর মিম ওরা তিনজন আমার সামনে সামনে যাচ্ছে আর আমি তাদের পিছু পিছু যাচ্ছি।
ফোনটা বেজে উঠলো। বের করে দেখি অফিসের এমডি ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে বললো, আজকে রাতেই আমাকে ঢাকা ব্যাক করতে হবে। অফিসের কি যেন জরুরী মিটিং আছে যেটা আমার স্বাক্ষর ছাড়া হবে না।
এতোক্ষণে ওর তিনজন আমার থেকে অনেকটা দূরেই আছে হঠাৎ মিমি দৌড়ে এসে বললোঃ সাহিদ দেখো তো আমার চোখে কি যেন পড়েছে। খুবই ব্যাথা করতেছে প্লিজ একটু দেখো।
বিকেল তিনটার রোদ বেশ কড়া না হলেও রোদে দাড়িয়ে থাকা বেশ সুবিধার নয়। আমি মিমিকে নিয়ে একটা গাছের নিচে নিয়ে গেলাম। পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে কিছু অংশ ছিঁড়ে নিলাম। মনে করলাম বালি পড়েছে হয়তো।
মিমির চোখের কাছে চোখ নিয়ে যায়ে ভালো ভালো ভাবে দেখি একটা ছোট্ট পোকা পড়েছে। টিস্যু দিয়ে পোকাটা বের করে দিয়ে মিমির চোখে যখনই ফুঁ দিতে যাবো তখনই কে যেন পিছন থেকে আমার কাঁধে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে নিলো। তাকিয়ে দেখি সামিয়া।
সামিয়া কোনো কথা না বলেই আমার গালে ঠাসসস ঠাসসস করে দুইটা থাপ্পড় মেরে বলতে লাগলোঃ লুচ্চা তোর লুচ্চামি কখনো শেষ হবেনা। তুই চরিত্রহীন ছিলি এখনো আছিস। তোর মতো চরিত্রহীন,,
আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে ঠাসসস ঠাসসস করে লাগিয়ে দিয়ে বললামঃ ব্যাসসসস,,, অনেক বলেছিস। ভেবেছিলাম সব কিছু ভুলে আবার তোকে আমার বুকে জড়িয়ে নিবো। কিন্তু না সেটা তুই হতে দিলি না। তোর মতো মেয়ের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।😠😠😠😠( একদম রেগে)
এতোক্ষণে সবাই আমাদের এই কাহিনী সবাই দেখলো। সবাই ভাবতেছে এদের সম্পর্ক টা কী?
আমি নেহাকে বলে হোস্টেলে ফিরে আসলাম। মাথায় রক্ত উঠে গেছে। আমি ভাবলাম হয়তো সামিয়া তার ভুল বুঝতে পেরে আমাকে আবার ভালোবাসতে শুরু করেছে। কিন্তু না এটা তার একটা আবেগ। রুমে এসে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ভিজতে লাগলাম।
_-_-_-_-_-_-_-_-
মিমিঃ আসলে ম্যাম আপনার ভালোবাসাটা আসল নয়। আর আসল হলে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে সন্দেহ করতেন না।
সামিয়াঃ মানে কী বুঝাতে চাচ্ছো?(অবাক হয়ে)
মিমিঃ আমি বলতে চাচ্ছি আপনি সাহিদের যোগ্য নয়। সাহিদ আপনাকে আগের মতই ভালোবাসে। কিন্তু আপনি সাহিদের ভালোবাসার মর্যাদা টা দিলেন না। গত কাল রাতে যখন আপনি আমাকে সাহিদের সাথে দেখেছিলেন তখন আমি সাহিদ কে আমার ভালোবাসার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সাহিদ আপনাকে ভালোবাসে বলে আমাকে রিজেক্ট করে দেয়। তবে আপনার সাথে এমন করার কারণ হলো সে আপনাকে কষ্ট দিতে চায় যে, ভালোবাসার মানুষ কে বিনা কারণে কষ্ট দিলে কেমন হয়। আপনাকে সে কয়েক দিনের মধ্যেই মেনে নিতে চেয়েছিল কিন্তু আপনি তা নিজ হাতে শেষ করে দিলেন।
মিমির কথা শুনে সামিয়া মাথায় হাত দিয়ে বিচে বসে পড়ে।
মিমি আবারও বলতে শুরু করলঃ আর আজকে আমার চোখে কি যেন পড়েছিলো। খুব ব্যাথা করতেছিল। আমি সাহিদ দেখতে পেয়ে তার কাছে দৌড়ে এসে চোখে কিছু পড়ার কথা বললে সাহিদ ট্যিসু দিয়ে আমার চোখের পোকা বের করে দেয়। আর আপনি এসে চড় মেরে কথা শুনিয়া দিলেন। এখনো সময় আছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে রাখুন। সেটা যেকোনো উপায়ে করতে পারেন। হয়তোবা আপনার কষ্ট হতে পারে তবুও চেষ্টা করুন। কেননা একবার হারিয়ে ফেললে সারা জীবন চোখের পানি ফেলতে হবে।
বলেই মিমি সেখান থেকে চলে গেল। সামিয়া বিচের বসে থেকে কান্না করতে লাগলো। নেহা সামিয়া কে বিভিন্ন ভাবে শান্তনা দিচ্ছে কিন্তু সামিয়া কান্না করেই যাচ্ছে। সামিয়ার কান্না দেখে মিমো কান্না শুরু করে দিয়েছে।
নেহা সামিয়া আর মিম নিয়ে হোস্টেলে ফিরে আসলো।
_-_-_-_-_-_-_-_-
আমি স্যারের কাছে যায়ে বললামঃ স্যার আপনার সাথে জরুরি কিছু কথা ছিল।
স্যারঃ হুমম বলো।
আমিঃ স্যার আমি আজকেই ঢাকা ব্যাক করবো।
স্যারঃ কেন? ( অবাক হয়)
আমিঃ স্যার কালকে সকালে অফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে। আর সেখানে আমি না থাকলে হবে না।
স্যারঃ আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে তো আর নিষেধ করা যাচ্ছে না।
আমিঃ ঠিক আছে স্যার। আর আমার বোন এবং আমার মেয়েকে একটু দেখে রাখেন।
স্যারঃ ঠিক আছে। কখন যাবে?
আমিঃ আটটার ফ্লাটে যাবো।
স্যারঃ ওকে।
স্যার রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে এসে প্যাক করতে লাগলাম। এতোক্ষণে সবাই বিচ থেকে চলে এসেছে। আমাকে প্যাক করতে দেখে ইকবাল বললঃ সাহিদ কোথায় যাবি প্যাক করেছিস কেন?
আমিঃ ঢাকায় যাবো দোস্।
ইকবালঃ কেন?(অবাক হয়ে)
আমিঃ অফিসে জরুরি মিটিং আছে। আর নেহাকে একটু দেখে রাখিস।
ইকবালঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
আমি নেহার কাছে ফোন দিয়ে বাইরে রুম থেকে আসতে বললাম।
নেহা বাহিরে এসে আজ দেখে অবাক। কারণ, আমি ল্যাকেজ নিয়ে বের হয়েছি।
আমাকে এই অবস্থায় দেখে বললোঃ ভাইয়া তুমি কোথায় যাবে?
আমিঃ আসলে অফিসের একটা জরুরি মিটিং আছে তো তাই আমাকে যেতে হবে।
নেহাঃ না গেলে হয় না।(করুন সুরে)
আমিঃ নারে বোন যেতেই হবে। আর আমার আম্মু কে একটু নিয়ে আয়।
নেহাকে মিমকে নিতে তার রুমে গেলো।
একটু পরে সামিয়া সহ ওরা তিনজন আমাকে কাছে আসলো। সামিয়ার আমাকে এইভাবে দেখে অবাক।
আমি আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে বললামঃ আম্মু তুমি আমার সাথে যাবে নাকি তোমার আন্নির সাথে থাকবে?
মিমঃ বাবাই থুমি তোথায় দাবে?
আমিঃ আমি ঢাকায় যাবো আম্মু। তুমি যাবে?
মিমঃ না বাবাই আমি আন্নি আর মামনির তাথে থাতবো।
আমিঃ আচ্ছা আম্মু থাকো। দুষ্টুমি করবে না।
মিমঃ আততা বাবাই।
আমিঃ আর নেহা মিমকে দেখে রাখিস।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া ভালো ভাবে যেও।
আমিঃ আচ্ছা।
আমি সামনে ঘুরে ল্যাগেজ হাতে নিয়ে যেই এক কদম ফেলবো তখনি সামিয়া দৌড়ে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ প্লিজ এবার আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর একবার আমাকে সুযোগ দাও।
আমি কিছু না বলে পা টি ছাড়িয়ে নিয়ে ইকবাল, রিয়াদ আর শাকিবকে বিদায় দিয়ে পা বাড়ালাম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে।
বিমান বন্দরে পৌঁছতে আট টা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি।
তারপরে বিমানে ওঠে পড়লাম।
বিমান ঢাকা ল্যান্ড করলো। বিমান থেকে নেমে বিমানবন্দরের বাইরে এসে দেখি ড্রাইভার আংকেল গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিমানে ওঠার সময় আংকেল কে আসতে বলেছিলাম।
গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলাম। ফ্রেশ হয়ে হালকা ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম। কারণ, গত রাতে একটা প্রতারকের সেবা করতে ই কাটিয়ে দিয়েছি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে অফিসে গেলাম। অফিসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে বাসায় এসে গাড়ি নিয়ে বের হলাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। ড্রাইভার আংকেল কে নিয়ে আসি নি। একাই এসেছি।
রং ড্রাইভ করতে ভালো লাগে। দীর্ঘক্ষণ ড্রাইভ করে রাজশাহী মেডিকেলের সামনে এসে পৌঁছলাম। গাড়ি পার্ক করে নার্সের ড্রেস আপ করে ভিতরে ঢুকলাম।
আম্মুর কেবিনে যায়ে দেখি আব্বু মাথা হেলে বসে আছে আর আম্মু ঘুমিয়ে আছে। এখন নজর দেখে মাহফুজ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলাম। মাহফুজ ভাই বললোঃ আম্মু এখন মোটামুটি সুস্থ। কয়েক দিন পর রিলিজ দিবে। মাহফুজ ভাই এর সাথে কিছু কথা বলে হাসপাতাল থেকে গাড়ির কাছে আসলাম।
আবার ড্রাইভ করে চলে আসলাম ঢাকায়।
আগামি কাল সকাল সাতটায় নেহারা সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরবে করবে। রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসতে রাত হয়ে গেল। ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কলেজে। কারণ , ট্যুরের বাস কলেজেই এসে সকল কে নামিয়ে দিবে।
একটু পরে বাস আসলো। একে একে সবাই নামলো। মিম নেহা আর সামিয়া এক সাথে নামলো। মিম আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। আমিও কোলে তুলে নিলাম।
এরপরে আমি বন্ধুদের সাথে কথা বলে নেহা আর মিমকে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে তিনজন মিলে নাস্তা করলাম। আজকে কলেজ বন্ধ আছে। নাস্তা করে নেহা ওর রুমে গেল ঘুমানোর জন্য। আর মিমকে আমার রুমে নিয়ে এসে গল্প করতে লাগলাম।
এই ভাবে দিন টা কেটে গেল।
পরের দিন কলেজে গেলাম। কলেজে ক্লাস তেমন হলো না। শুধু ট্যুরের কথাই হলো। ছুটির পরে আমি আর সামিয়ার রুমে গেলাম না।
ওদের দুজনকে নিয়ে বাসায় আসলাম।
গোসল করে নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে পড়তে বসলাম। কারণ পরিক্ষার আর বেশি সময় নেই।
রাতে ডিনার করার সময় নেহা যা বললো তা শুনে রাগে আমার,,,,,,,
(চলবে)
[ কক্সবাজারে ভ্রমন সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারনা নেই। কারণ কোনো দিন যাওয়া হয়নি। এই জন্য কোনো কোনো স্থানের নাম ভুল হতে পারে বা উল্টাপাল্টা হতেও পারে। সো এই বিষয়টা
ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার জন্য অনুরোধ করতেছি]
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২৪
রাতে মিম, নেহা আর আমি এক সঙ্গে ডিনার করেতেছি। মিম আমার কোলে বসে আমার হাতে তুলে খাচ্ছে। ডিনার করার সময় নেহা যা বললো তা শুনে তো আমার রাগে মাথায় রক্ত ওঠে গেলো।
নেহাঃ ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো।
আমিঃ হুমম বল।
নেহাঃ আসলে ভাইয়া সামিয়া ম্যাম যেই বাসায় থাকতো সেই বাসায় সমস্যা হয়েছে। এখন থাকার জন্য অন্য একটা বাসা খুঁজতেছে।
আমিঃ তো,,,?
নেহাঃ আমি বলতেছি যে তাকে আমাদের বাসায় রেখে দেই। তাতে তার কাছে আমার লেখাপড়াও ভালো হবে। আর মিম তার মামনি কে কাছে পাবে।
আমি নেহাকে ঠান্ডা মাথায় শান্ত ভাবে বললামঃ দেখ নেহা তুই কি চাস আমি তোদের কে ছেড়ে চলে যাই।
নেহাঃ না।
আমিঃ তাহলে এসব কথা আর বলিস না।
নেহাঃ প্লিজ ভাইয়া তুমি শুধু আমার এই কথাটা রাখো ।
আমিঃ আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।
এই কথা বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে মিমকে নিয়ে রুমে আসলাম। মিমকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে ছাদে গেলাম। ছাদে যায়ে আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতেছি, কেন সামিয়া কেন? কেন তুমি আমার সেই পুরোনো কষ্ট গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছো। আমিতো তোমাকে ছাড়া ভালোই ছিলাম। কোথা থেকে তুমি এসে আবার তোমার সেই মায়ায় জড়িয়ে ফেললে। যেই মায়ার কাছে তোমার প্রতি আমার ঘৃণা টা হার মেনে নিয়েছিলো। আমিতো সব কিছু ভুলে তোমাকে বুকে জড়িয়ে নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে আবার সেই একই ভাবে সন্দেহ করে চরিত্রহীন উপাধি দিলে। বেশ আমি চরিত্রহীনই হলাম কিন্তু আমার কাছে আসার জন্য আমার বাসায় থাকার জন্য এই রকম করতেছো কেন? হয়তোবা তুমি মনে করেছো আমি কিছুই বুঝতে পারিনি, হা হা হা,,,। দেখি তুমি কত দূর দৌড়াতে পারো।
_-_-_-_-_-_-_-_
নেহা মন খারাপ করে ডাইনিং টেবিল থেকে উঠে রুমে আসতেই ওর ফোন টা বেজে উঠলো। বেড থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সামিয়া ফোন দিয়েছে। নেহা রিসিভ করলো,,,,
নেহাঃ আসসালামুয়ালাইকুম। ভাবি কেমন আছো?
সামিয়াঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ। নেহা তোমার ভাইয়া কি বললো।(উত্তেজিত হয়ে)
নেহাঃ আসলে ভাবি ভাইয়া তো রাজি হচ্ছে না।
সামিয়াঃ ওহহ। (মন খারাপ করে)
নেহাঃ মন খারাপ করো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
সামিয়াঃ কিছুই ঠিক হবে না নেহা কিছুই ঠিক হবেনা। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। আমি মনে হয় আমার ভালোবাসা কে হারিয়ে ফেললাম।(কান্না করতে করতে)
নেহাঃ প্লিজ ভাবি তুমি ভেঙ্গে পড়ো না। আমি চেষ্টা করতেছি।
সামিয়াঃ প্লিজ নেহা তুমি কিছু করো।
নেহাঃ ঠিক আছে। তুমি কোনো চিন্তা করো না।
সামিয়াঃ আচ্ছা। পড়ে কথা বলবো।(ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে)
নেহাঃ ঠিক আছে। ভালো থেকো।
নেহার সাথে কথা বলে সামিয়া বেডে বসে থেকে চিৎকার দিয়ে কান্না করতে লাগলো। সামিয়ার মনে হচ্ছে সে সাহিদ কে হারাতে যাচ্ছে। বড্ড বেশিই ভালোবাসে যে সে সাহিদ কে। কিন্তু কিভাবে যে কি হয়ে গেল। হয়তো বেশি ভালোবাসার জন্য সন্দেহ টাও বেশি। আর একটা সম্পর্ক ভাঙতে সন্দেহের অবদানও সবচেয়ে বেশি।
নেহা ফোন রেখে ভাবতে লাগলো কি ভাবে সামিয়া কে তার বাসায় নিয়ে আসা যায়। আর এই জন্য তার ভাইকে রাজি করাতে হবে। কিন্তু কিভাবে? একটু পরে মনে পড়লো, তার ভাইতো তার কান্না আর কষ্ট সহ্য করতে পারে না। এসব ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল।
_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-_-
অনেক রাত পর্যন্ত ছাদে থেকে তারাদের খেলা দেখে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। ফজরের আজানে ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে অযু করে নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ে একটু স্টাডি করলাম।
আটটার সময় আমি আর আমার মেয়ে নিচে এসে ডাইনিং টেবিলে বসে আছি। নেহা আসলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে কলেজে যাবো।
আমার মেয়ের সাথে গল্প করতেছি মানে ট্যুরে যাইয়ে কী দেখলো, ওর মামনি কি খাওয়ালো, কি বললো এসব আরকি। গল্প করতে করতে বিশ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পরেও নেহা আসতেছে না। আমি আমার মেয়েকে বললামঃ আম্মু তোমার আন্নি কে ডেকে নিয়ে এসো তো।
মিমঃ আততা বাবাই।
আমার মেয়ে নেহাকে ডাকতে গেলো। আমি ফোন বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। একটু পরে আমার মেয়ে একাই নেহার রুম থেকে আমার কাছে আসলো।
আমি জিজ্ঞাসা করলামঃ আম্মু তোমার আন্নি কোথায়?
মিমঃ বাবাই আন্নি রাগ কলেথে! থাবে না বললো!(রাগ করেছে, খাবে না বললো)
আমিঃ রাগ করেছে মানে।(অবাক হয়ে)
চলতো আম্মু কী হয়েছে দেখি।
মিমঃ তলো বাবাই।
আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে নেহার রুমে গেলাম। রুমে এসে দেখি নেহা বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থেকে কান্না করতেছে।
আমি নেহার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললামঃ কি হয়েছে আপু তোর, কান্না করতেছিস কেন?( উত্তেজিত হয়ে)
নেহা কোনো কথা না বলে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করেই যাচ্ছে। এই বার আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না। আমি আমার হাত দিয়ে ওর মাথাটা আমার কোলে নিয়ে বললামঃ কি হয়েছে নেহা আমাকে বলবি তো।
না, নেহা কিছুই বলতেছে না। চোখ বন্ধ করে শুধু পানি ফেলতেছে।
আমি বললামঃ দেখ বোন, তুই যদি আমার সাথে এমন করিস তাহলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো বল্। তোরা ছাড়া আমার কে আছে।
নেহাঃ আমি কারো বোন নই। আমার জন্য কাউকে কষ্ট পেতে হবেনা। কেউ আমার কথা শোনে না, আমি কারো কেউ নই।
ওহহহ এই ব্যাপার। এতোক্ষণে বুঝলাম। মুচকি হেসে নেহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ বল তুই কি চাস ?
নেহাঃ ম্যাম কে আমাদের বাসায় থাকতে দিতে হবে।
আমিঃ ঠিক আছে যা।
নেহাঃ সত্যি,,।
আমিঃ হুমম। এখন ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। একসাথে নাস্তা কলেজে যাবো।
নেহাঃ ঠিক আছে।
আমি নেহার রুম থেকে বের হয়ে এসে মনে মনে হাসতেছি আর বলতেছি, সামিয়া তুমি আর কত কি করবো। আমার সহজ সরল বোনের মনে তুমি অভিমান ঢুকিয়ে দিলে। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য আমাদের ভাই বোঐ মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করাতে চেয়েছিলে। হা হা হা।
তোমাকে কখনই আমার বাসায় নিয়ে আসতাম না। কিন্তু আমার বোনের জন্য তোমাকে আমার বাসায় থাকতে দিলাম। নইলে আমার মা হারা বোনটা কষ্ট পাবে। আর সে কষ্ট পাইলে তার মাকে দেওয়া কথাটা আমি রাখতে পারবোনা।
তবে সামিয়া তুমি যখন আমার বাসায় আসতে চাইতেছো, থাকতে চাইতেছো, তাহলে বেশ তুমিও প্রস্তুত থেকো আমার অমানবিক অত্যাচার সহ্য করার জন্য।
নেহা নিচে আসলো তিন জন একসাথে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কলেজে পৌঁছে ওদের নামিয়ে দিয়ে বাইকটা পার্ক করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে লাগলাম।
একটু পরে ক্লাসে যায়ে ক্লাসে গেলাম। প্রথম ক্লাস শেষ হতেই সামিয়া এসে ক্লাসে ঢুকলো। মনে হয় ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলো।
সামিয়া ক্লাস করাতে শুরু করলো। আমার দিকে সে একভাবেই তাকিয়ে আছে। যা আমার অস্বস্তি বোধ করতেছে।
অস্বস্তির মাধ্যমে কোনো রকম ক্লাস টা শেষ করে বাইরে চলে আসলাম। আজকে আর ক্লাস করবো না। নেহার কাছে মিমকে নিতে গেলাম। কিন্তু মিম নেহার কাছে নেই। নেহা বললো মিম নাকি সামিয়ার কাছে আছে।
কি আর করার অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও গেলাম সামিয়ার রুমে। সামিয়ার অফিস রুমের দরজাটা হালকা ফাঁকা ছিল। দরজার ফাঁকা স্থান দিয়ে দেখি সামিয়া মিমকে তার টেবিলের (ডেক্স ) উপর বসে রেখেছে আর সে তার সামনে চেয়ারে বসে আছে।
কী যেন বলতেছে আর মিম খিলখিল করে হাসতেছে।
আমি দরজা নক করে বললামঃ আসতে পারি।
সামিয়া মাথা নিচু করে অনুমতি দিলো।আমি মিমের কাছে যায়ে বললামঃ আম্মু বাসায় যাবে এখন?
মিমঃ হ্যাঁ বাবাই দাবো।
আমিঃ চলো আম্মু।
মিমঃ বাই মামনি।(আমার কোলে উঠতে উঠতে)
সামিয়াঃ বাই মামনি।
মিমকে নিয়ে দরজার কাছে আসতেই সামিয়া বললোঃ সাহিদ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে প্লিজ শোন।
আমি তার কথা না শুনে দরজা খুলতে যাব তখন সামিয়া এসে আমার হাত ধরে বললোঃ প্লিজ সাহিদ,,,,
আমি আর বলতে না দিয়ে ঠাসসসস ঠাসসস করে দিয়ে বললামঃ কোন সাহসে আমার হাত ধরেছিস?
আমার থাপ্পড় খেয়ে সামিয়া সেখানে বসে থেকে কান্না করতে লাগলো। আমি সেদিকে খেয়াল না করে মিমকে নিয়ে ওর রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।
বাহিরে আসতেই মিম বললোঃ বাবাই মামনি তান্না তলতেথে তেন?
আমিঃ তোমার মামনি চকলেট খাবে তাই।
মিমঃ তাহলে একতা তিনে এনে দেও।
নাহহহ,,,, এই মেয়েকে কিছু বলে শান্তি নেই। শান্তনা মূলক বাক্য প্রদান করে বললামঃ তোমার মামনির কাছেই আছে অনেক চকলেট আছে। সেগুলো একাই খাবে তাই কান্না করতেছে। এই জন্য তোমাকে ঐখানে থেকে নিয়ে আসলাম। বুঝেছো?
মিমঃ হুমম বাবাই।
এরপরে মিমকে নিয়ে নেহার কাছে যায়ে বললামঃ নেহা তুই এখন বাসায় যাবি কী?
নেহাঃ কেন?
আমিঃ আমি এখন বাসায় যাবো । তুই যাবি নাকি?
নেহাঃ আমি পড়ে ম্যাম কে নিয়ে একবারে যাবো।
আমিঃ ম্যাম মানে?
নেহাঃ ম্যাম মানে মিমের মামনি কে নিয়ে যাবো।
আমিঃ ওকে আবার নিয়ে যাওয়ার কি আছে 😡😡😡।
নেহাঃ না মানে ভাইয়া তুমি যাও আমি একটু পরে ম্যামের সাথে আসতেছি।
আমিঃ ঠিক আছে ভালো ভাবে আসিস,,(গম্ভীর ভাবে)
নেহাঃ আচ্ছা ভাইয়া।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে মিমকে নিয়ে পার্কিং লটের দিকে যাতেই মিমির সাথে দেখা।
এর পরে ওর সাথে কথা বলার জন্য ওকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
মিমি আমাকে বললঃ সরি,, সাহিদ আমার জন্য সামিয়া ম্যাম তোমার সাথে সেই দিন ঐ বিভেব করলো।
আমিঃ আরে না এসব বাদ দাও। ট্যুরে কেমন সময় কাটলো তাই বলো।
মিমিঃ হুমম ভালোই কেটেছে। কিন্তু তোমার জন্য আমার কিছু টা খারাপ লেগেছে।
আমিঃ কেন আমার জন্য খারাপ লাগার কী আছে?
মিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মিমি বললামঃ আমার জন্য সেদিন তুমি সেখান থেকে চলে আসলে। আবার আমার জন্য ম্যামের সাথে তোমার সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে গেল।
আমি মুচকি হেসে বললামঃ আরে না যেটা ভাগ্যে আছে সেটা হবেই। আর সেই দিন সেখান থেকে আসার কারণ হলো, পরের দিন অফিসে একটা মিটিং ছিল।
কথা বলতে বলতে হঠাৎ নজর পড়লো ক্যান্টিনে। যেখানে সামিয়া, নেহা আর নেহার কিছু ফ্রেন্ড ছিল। ওরা সবাই খাচ্ছে কিন্তু সামিয়া আমার দিকে বিষন্ন মনে তাকিয়ে আছে। মুখ টা কালো হয়ে আছে।আর মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে যেকোন সময় ঝরনা প্রবাহিত।
আমরা মানে মিমি আর আমি ক্যান্টিন থেকে বেশ দূরে থাকলেও সামিয়ার চেহারা স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।
আমি সামিয়া কে কষ্ট দেওয়ার জন্য মিমির সাথে আরো বেশি করে হেসে হেসে কথা বলতে লাগলাম। মিমি বিষয় টা বুঝতে পারে বললঃ আমি জানি সাহিদ তুমি ম্যামকে এখনো ভালোবাসো। কিন্তু বলতেছো না, কারণ আরো কষ্ট দিতে চাও। তবে এমন বেশি করো না যাতে আবার,,,
শেষ হতে না দিয়েই বললামঃ ওও কিছু না। এটা সামান্য কিছু। আচ্ছা ভালো থেকো। বাসায় যাবো।
মিমিঃ আচ্ছা যাও।
এরপরে আমি এবং আমার মেয়ে বাইক নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে আমার মেয়েকে গোসল করে দিয়ে আমিও গোসল করে নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে বাবা আর মেয়ে একসাথে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বিকেলে নেহার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
নেহাঃ ভাইয়া ও ভাইয়া উঠো।
আমিঃ কি হয়েছে বল?(ঘুমের ঘোরে)
নেহাঃ ভাইয়া নিচে থেকে সামিয়া ম্যামের লাগেজ আর ব্যাগ টা নিয়ে এসো।
আমিঃ কিহহহহ,,,, বলে লাফ দিয়ে উঠে দেখি সামিয়া দরজার পাশে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসতেছে।
মেজাজ টা বিগড়ে গেলো। আমি রাগে কটমট করে বললামঃ আমাকে কি লোক মানুষ মনে হয়। আর আমি এখানে থাকতে দিয়েছি বলে আমাকে এসব করতে হবে আমি পারবো না। প্রয়োজনে এখান থেকে চলে যেতে পারে। আমি এসব করতে পারবো না।😠😠😡
সাহিদের কথা শুনে সামিয়ার হাসি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেল।
নেহাঃ প্লিজ ভাইয়া যাও একটু।
আমিঃ হোররর,, কোথা থেকে যেন এসব ঝামেলা আসে। আচ্ছা চল।
এরপরে বাসার বাইরে এসে গাড়ি থেকে সামিয়ার ল্যাগেজ আর কিছু ব্যাগ নিয়ে বাসায় আসলাম। বাসায় ভিতরে এসে দেখি সামিয়া মিমকে। কোলে নিয়ে বসে আছে।
আমি রেগে যায়ে বললামঃ বাসায় ভাড়া থাকতে এসেছে ভাড়াটিয়াদের মতো থাকবে। আমাদের সাথে কি যত্তসব??
সামিয়া আমার কথা শুনে দৌড়ে ওর রুমে চলে গেল। নেহার মন খারাপ করে বসে আছে।
আমিও রুমে চলে আসলাম। ডিনার করার সময় ডাইনিং টেবিলে যায়ে দেখি সামিয়া টেবিলে বসে থেকে মিমকে খাওয়াচ্ছে।
আর নেহা ওদের পাশে বসে থেকে আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে। আমি চেয়ারে বসেই নেহাকে বললামঃ নেহা উনি কি আমাদের পরিবারের সদস্য নাকি ভাড়াটিয়া?
নেহাঃ কেন ভাইয়া?
আমিঃ আমাদের সঙ্গে ডিনার করতেছে যে😡😡😡।
নেহাঃ প্লিজ ভাইয়া এসব বাদ দাও।
আমি রেগে যায় বললামঃ থাক তুই আমি খাবোই না।
এরপরে রুমে এসে বেডের উপর বসে আছি। একটূ পরে বুঝতে পারলাম কে যেন রুমে ঢুকলো। আমি তাকিয়ে দেখি সামিয়া ।
আমাকে তাকাতে। দেখেই বললোঃ প্লিজ তুমি আমার উপর রাগ করে থেকে না খেয়ে থেকো না। শরীর খারাপ করবে।(করুন সুরে)
আমিঃ দেখুন আমি আপনাকে এখানে থাকতে দিয়েছি বলে এই নয় যে, আপনি যখন ইচ্ছা তখন আমার রুমে আসবেন।আর আমার শরীর খারাপ হবে কি না হবে সেটা আমি বুঝবো। কাউকে আলগা পিরিত দেখাতে হবে না। আর এখন আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলে খুশি হতাম।(নিচের দিকে তাকিয়ে)
সামিয়া আর কিছু না বলে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আমি কিছুক্ষণ স্টাডি করে ছাদে গেলাম। ছাদে বসে থেকে মেঘের খেলা দেখতেছি হঠাৎ পিছনে কারো আসার শব্দ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখি সামিয়া আসতেছে। সামিয়া কে দেখে আমি নিচে নেমে আসতে চাইলে সামিয়া আমাকে সামনে এসে দাড়িয়ে বললোঃ সাহিদ আমাকে কি মাফ করা যায়না। আমি পারতেছি না। আমি মানলাম সেদিনের ভুলটাও আমার হয়েছিলো। কিন্তু আমার জায়গায় তুমি থাকলে কী করতে? প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও,,,(কান্না করতে করতে)
আমিঃ ম্যাম আপনি আমার বাসায় থাকার জন্য বা আমার কাছে আসার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা করেছেন। সেগুলোতে সফলও হয়েছেন। কিন্তু আবার আপনি কি চাচ্ছেন? আপনিও কি আমাকে পরিবার ছেড়ে যেতে বাধ্য করবেন। বের হয়ে যেতে বললে যাচ্ছি। তবুও আপনি আমাকে আপনার সেই মিথ্যা ভালোবাসার মায়ায় জড়ায়েন না। তাছাড়া আমি তো চরিত্রহীন, একজন চরিত্রহীনের সাথে কী ভাবে আপনার যায়। সুতরাং বলি কি, আপনি এসব বাদ দিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন।
এই কথা বলেই আমি ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে আসলাম।
_-_-_-_-
সামিয়া ছাদ থেকে নেমে রুমে এসে বলতে লাগলো, সাহিদ তুমি আমার প্রতি যতই রাগ, অভিমান করো না কেন আমি তোমার সেই রাগ অভিমান সব আমার ভালোবাসা দিয়ে শেষ করে দিবো। আমি জানি তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসো। কিন্তু আমাকে কষ্ট দিতে চাও। দেও সমস্যা নেই। তোমার সব কষ্ট মাথা পেতে সহ্য করবো তবুও তোমাকে আর ছাড়বো না।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
_-_-_
রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। মিম নেহার কাছে আছে। সকালে ঘুম ভাঙলো অপরিচিত কন্ঠে। যেই কন্ঠ সকালে শুনা যায়নি।
চোখ খুলে দেখি সামিয়া কফি হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি রেগে গিয়ে বললামঃ এই আপনার সমস্যা কি হ্যাঁ? ইচ্ছে মতো আমার রুমে আসতেছেন? আর আপনার কী কমন সেন্স নেই যে একজনের রুমে ঢুকতে গেলে অনুমতি নিতে হয়😡😡😡😡😡।
সামিয়াঃ না মানে তোমার কফি।
আমি কফি হাতে নিয়ে এক চুমুক দিতেই বুঝলাম এটা সামিয়া তৈরি করেছে। খুব টেষ্ট হয়েছে। আমি বললামঃ এটা কে বানিয়েছে?( জানার পরেও)
সামিয়া খুশি হয়ে বললোঃ আমি বানিয়েছি।
আমি কফির মিটার সামিয়ার গায়ে ঢেলে দিয়ে বললামঃ ছিঃ এসব মানুষ খায়? কি বানিয়েছেন এসব। কফিও বানাতে পারেন না। যান চোখের সামনে থেকে।
সামিয়া বললো কফির মগটা হাতে নিয়ে কান্না করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেল। যাওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম, যেই জায়গায় গরম কফি পড়েছে সেই জায়গাটা লাল হয়ে গেছে।
নিজেকেই খারাপ লাগতেছে। কী করে করলাম এরকম।
আমিও ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি মিম আর নেহা সোফায় বসে টিভি দেখতেছে। আমিও ওদের কাছে যায়ে বসলাম।
একটু পরে নাস্তা করে রেডি হয়ে কলেজের জন্য বের হলাম।
একটা জিনিস খেয়াল করলাম, সকালের পর থেকে সামিয়া কে আর দেখতে পাইনি। এমন কী নাস্তা করার সময়ও।
বাইরে এসে সামিয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম একসাথে যাবো বলে। আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নেহা বললোঃ ভাইয়া কার জন্য দেরি করতেছো?
আমিঃ তোর ম্যাম চলে গেছে কী?
নেহাঃ হুমম অনেক্ষণ গেছে। হাতে নাকি গরম পানি পড়েছে এ জন্য মেডিসিন নিয়ে একবারে কলেজে যাবে।
নেহার কথা শুনে নিজেকে খুব নিকৃষ্ট মনে হলো। কি করলাম আমি।
নেহাঃ কী ভাবতেছো ভাইয়া?
আমিঃ না কিছু না চল।
নেহাঃ হুমমমম।
এরপরে কলেজে গেলাম। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই ক্লাসের সময় হয়ে গেল। ক্লাসে যায়ে প্রথম ক্লাস করতেই পিয়ন এসে আমাকে বলে গেল এই ক্লাস শেষে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে যেতে।
আমি প্রথম ক্লাস শেষ করে প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের দরজানক করে বললামঃ মে আই কাম ইন স্যার?
প্রিন্সিপাল স্যারঃ হুমম এসো।
প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের ভেতরে ঢুকে দেখি সামিয়া,,,,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২৫
প্রিন্সিপাল স্যারের রুমের ভিতরে ঢুকে দেখি সামিয়া স্যারের সামনের চেয়ারে বসে আছে। আমি স্যারের কাছে যায়ে বললামঃ স্যার আপনি নাকি আমাকে ডেকেছেন?
প্রিন্সিপাল স্যারঃ হ্যাঁ।
আমিঃ তো স্যার বলুন কি করতে হবে আমাকে।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ সাহিদ তোমাকে আমি মিস সামিয়ার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিযুক্ত করে দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি নাকি উনাকে ঠিক মতো সময় দিচ্ছো না।
আমিঃ স্যার আপনি কি চাচ্ছেন আমি টিসি নিয়ে এই কলেজ থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ না। তবে এটার জন্য কলেজ থেকে টিসি নিয়ে বের হওয়ার কি আছে? ( অবাক হয়ে)
আমিঃ আমি এসব আর বলতে চাচ্ছি না। আর হ্যাঁ, আমার মতো একজন চরিত্রহীন লুচ্চা কী করে একজন টিচারের এসিস্ট্যান্ট হতে পারে? তারপরেও তিনি আবার ম্যাম। আমি সেদিনই আপনাকে বলেছিলাম আমি কোনো টিচারের এসিস্ট্যান্ট হতে পারবো না। কিন্তু আপনি আমাকে জোর করে এসিস্ট্যান্ট হতে বাধ্য করেছেন। আর এখন যদি আপনি আমাকে এইসবের মধ্যে জড়ান তাহলে আমি এই কলেজ ছাড়তে বাধ্য হবো বলে দিলাম।
এই কথা বলে আমি স্যারের রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। মেজাজ টা বিগড়ে গেলো। শালা যার জন্য দূরে থাকতে চাচ্ছি সে আমাকে তার দিকে টানতেছে। ক্লাসে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেই সামিয়া ক্লাস নেওয়ার জন্য ক্লাসে ঢুকলো।
আমিও ক্লাসে করতে লাগলাম। আজকেও আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ছিলো। আমাকে বিষয় টা খুব খারাপ লাগতেছে। কারণ ক্লাসের প্রায় সব স্টুডেন্ট আমাদের নিয়ে সমালোচনা করে বা করতেছে।
সব ক্লাস শেষ করে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে বসলাম। আড্ডা দিতে দিতে রিয়াদ আমাকে বললোঃ দোস্ ম্যাম মনে হয় তোকে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলেছে।
আমিঃ দেখ এটা ভালোবাসা নয়, এটা হলো আবেগ। যেটা কয়েকদিন পর শেষ হয়ে যাবে।
শাকিবঃ কিন্তু সাহিদ একটা বিষয় ভাব, ম্যাম অন্য কাউকে কিন্তু এসিস্ট্যান্ট না করে তোকেই করলো। আবার ট্যুরে যাওয়ার সময় বাসে তোর পাশে মিমিকে দেখে ম্যাম কি বিহেভ টাই না করলো।
আর ক্লাসে তো সব সময় তোর দিকে তাকিয়ে থাকেই। এখন এটাকে তুই যদি আবেগ বলিস তাহলে তো ভুল হবে।
আমিঃ আমি এসব শুনতে চাচ্ছি না। সো এই টপিক টা বাদ দে।
ইকবালঃ ঠিক আছে। কিন্তু একটা। কথা তুই আমাকে সত্যি করে বলবি?
আমিঃ হ্যাঁ বল।
ইকবালঃ তোর সাথে ম্যামের কি সম্পর্ক?
আমিঃ মানে কী বুঝাতে চাচ্ছিস তুই?
ইকবালঃ মানে টা হলো সহজ, সেই দিন কক্সবাজার বিচে ম্যাম যখন তোকে মিমির সাথে দেখেছিলেন তখন তোকে বলেছিলেন " তুই আগেও চরিত্রহীন ছিলি এখনো আছিস। আবার তোকে লুচ্চাও বলেছিলেন।" আবার ম্যাম কে বরণ করে নেওয়ার সময় তুই ম্যাম কে দেখে চমকে উঠেছিলিস আর ম্যাম ও তোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। যেটা কেউ লক্ষ্য না করলেও আমি করেছি।আরো অনেক প্রমাণ আছে যার মাধ্যমে বুঝা যায় তুই আর ম্যাম একে অপরকে আগে থেকেই চিনতিস। এবার সত্যিটা বল প্লিজ।
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। মাথা নিচু করে বসে আছি।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে রিয়াদ বললঃ প্লিজ ভাই তুই আমাদের বন্ধু ভেবে থাকলে বল।
আমি আর না বলে পারলাম না। আমি বললামঃ তোরা আমার সম্পর্কে কি জানিস?
রিয়াদঃ কি জানি মানে? তুই এই পৃথিবীতে এতিম ছিলি আর তোর বাবা (যিনি মারা গেছেন) তোকে রাস্তায় থেকে নিয়ে এসে নিজের সন্তান হিসেবে পরিচয় দিয়ে তোকে লালন পালন করেন। আর তিনি মৃত্যুবরণ করার সময় তার সব সম্পত্তি তোর নামে লিখে দিয়ে যায়।
এটাই তো আমরা জানি।
আমিঃ আমি এতিম নই।
ওরা সবাইঃ মানে?(অবাক হয়ে)
আমিঃ হুমম আমি এতিম না। আমি তোদের মিথ্যা বলেছিলাম। এই পৃথিবীতে তোদের মতো আমার মা-বাবা,ভাই-ভাবি সবাই আছে।
ইকবালঃ কিন্তু তারা কোথায় আছে? আর তুই বা তাদের ছেড়ে এখানে একাই আছিস কেন?(উত্তেজিত হয়ে)
আমিঃ তাহলে শোন তোরা,,,,,(এর পরে কলেজ লাইফ থেকে শুরু করে বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকায় আসা পর্যন্ত সব কিছু তাদের বললাম)
আমার সব কথা শুনে ওদের তিনজনের চোখে পানি চলে এসেছে। ইকবাল তার আবেগ কে ধরে রাখতে না পেরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ দোস্ত তোর উপর দিয়ে এতো কষ্ট গেছে আর তুই সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করেছিস। তুই আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করিস নি।(কান্না করতে করতে)
আমি কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর পরিবেশ টা ঠান্ডা হলে আমি ইকবাল কে বললামঃ দোস এবার তুই বল কীভাবে আমি সামিয়া কে মেনে নিবো। সব কিছু ভুলে মেনে নিতাম। কিন্তু সেদিনের তার ব্যবহারে আমাকে আবার বুঝিয়ে দিয়েছে যে, আমার প্রতি তার যে ভালোবাসা ছিলো সেটা তার আবেগ। আর যদিও ভালোবাসা হয় তাহলে আমি তাকে প্রচুর পরিমাণে কষ্ট দিবো। যেটা আমাকে দেওয়া কষ্টের চেয়ে হাজার গুনে বেশি। যাতে সে বুঝতে পারে ভালোবাসার মানুষ কে কষ্ট দিলে কেমন লাগে।
ইকবালঃ হুমম। কিন্তু আমার মনে হয় না এটা তার আবেগ। তুই ভালোভাবে বুঝে মেনে নে ভাই। বেশি কষ্ট দিতে যায়ে যেন আবার হারিয়ে না ফেলিস।
শাকিবঃ হ্যাঁ সাহিদ ইকবাল কিন্তু ঠিকই বলেছে।
আমিঃ আরে না হারিয়ে যাবে কোথায়? এখন আমার বাসায় থাকে।
ইকবালঃ কিহহহহ তোর বাসায় থাকে?
আমিঃ হুমমমম। আচ্ছা ভালো থাকিস তোরা। আমি বাসায় যাবো।
বন্ধুরাঃ ঠিক আছে যা।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নেহার কাছে গেলাম। মানে নেহা যেখানে ওর বান্ধবীদের সাথে বসে থেকে আড্ডা দেয় । কিন্তু সেখানে নেহা নেই, ওর কয়েকটা বান্ধবী বসে আছে।
আমি ওদের কাছে যায়ে বললামঃ নেহা কোথায় গেছে বলতে পারবে কি?
নেহার বান্ধবীঃ নেহা তো ওর ভাবির সাথে ক্যান্টিনে গিয়েছে।
আমিঃ ভাবি মানে?(কিছু টা অবাক হয়ে)
নিলা (নেহার বান্ধবী)ঃ ভাইয়া আপনি মনে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারতেছেন না। ভাবি আপনার সাথে আপনার বাসায় থাকতেছে আর আপনি আমাদের কাছে এসে না জানার ভান করতেছেন।
ওও এবার বুঝলাম আসল কাহিনী। আমি ওদের বললামঃ আরে তোমরা যা ভাবতেছো তা নয়।
নিলাঃ বুঝি ভাইয়া বুঝি। এসব বাদ দিয়ে ট্রিট কবে দিবেন বলুন।
কি এক মুশকিলে পড়লাম রে ভাই। বিয়ে না করেই আজ বিয়ের ট্রিট দিতে হচ্ছে। তাও আবার আমার EX এর।মন চাচ্ছে আজকে থাপ্পড় মেরে ওদের কান ফাটিয়ে ফেলি। কীসের এতো ভাবি ভাবি।(মনে মনে)
আমিঃ ঠিক আছে ক্যান্টিনে চলো।
এরপরে ওদের কে নিয়ে ক্যান্টিনে গেলাম। ক্যান্টিনে যায়ে দেখি সামিয়া, মিম আর নেহা বসে থেকে ফুসকা খাচ্ছে।
আমাকে নেহার বান্ধবীদের সাথে দেখে নেহা আর সামিয়া কিছুটা অবাক হলো।
মিম আমাকে দেখে আমার কাছে আসলো। নেহা ওর বান্ধবীদের জিজ্ঞাসা করলোঃ কী তোরা এখানে?
নেহার বান্ধবীঃ আরে ভাইয়া আজকে ট্রিট দিবে তাই আসলাম।
নেহাঃ ভাইয়া ট্রিট দিবে মানে?
নিলাঃ হুমম ভাইয়া বিয়ে করেছে তাই।
এমন সময় সামিয়া পানি খাচ্ছিলো।বিয়ের কথা শুনে সামিয়ার হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে গেল। বিষন্ন মুখে নিশার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললোঃ বি বিয়েয়ে ককরেছে মানে?
সামিয়ার এই অবস্থা দেখে আমার যে কি পরিমাণ খুশি লাগতেছে তাই আমি বুঝাতে পারবো না।
নিলাঃ হ্যাঁ ভাবি সরি ম্যাম আপনি এতো ইমোশনাল হচ্ছেন কেন? ভাইয়া ভাবি এক গ্লাস পানি খাওয়ান।
নিলার কথা শুনে যেন সামিয়ার কলিজায় পানি আসলো।
সামিয়া মুচকি হেসে বললঃ না না আমি ঠিক আছি।
কেউ আর কোনো কথা না বলে ফুচকা খাওয়া শুরু করলো। ওরা সবাই ফুচকা খাবে তাই ফুচকা অর্ডার দিয়েছি। আমি আর নেহার বান্ধবী একই টেবিলে বসেছি। নেহা আর সামিয়া আমাদের সামনের টেবিলে বসেছে। আমি আর সামিয়া মুখামুখি বসেছি। যার ফলে আমি কী করবো তা সামিয়া দেখতে পাবে। আর আমার ডান পাশের চেয়ারে নিলা মানে নেহার বান্ধবী।
আমি চেয়ারে বসে থেকে ওদের ফুচকা খাওয়া দেখতেছি। অবশ্য নিলা আমাকে ফুচকা খাওয়ার জন্য জেদ করলো কিন্তু আমি খেলাম না। আর আমার মেয়ে আমার কোলে বসে আছে। আমার মেয়েকে ফুচকা খাওয়ার কথা বললে, সে খাবে না। সে নাকি তার মামনির সঙ্গে খেয়েছে।
নিলা একটা ফুচক ওর মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে বললোঃ ভাইয়া আপনি একটা ফুচকা খান। আমি তুলে খাওয়াচ্ছি।
কী মেয়ে যে বাবা,,,,আমিতো অবাক না হয়ে পারলাম না।
আমি বললামঃ না আমি খাবো না তোমরা খাও।
নিলাঃ আপনি না খাইলে আমিও খাবো না।(মুখটা ভার করে)
আমি নিলার কথা শুনে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে আমার দেখি মায়াবি হরিণীর মতো তাকিয়ে আছে । হয়তোবা ভাবতেছে, সাহিদ আমি তোমাকে আমার হাতে খাইয়ে দিবো। তুমি ওদের হাতে খেয়ো না। কিন্তু সেই অধিকার তার নেই।
ওহহহ,,, এইতো একটা ভালো বুদ্ধি পেলাম তাকে মানসিক ভাবে হার্ট করার। আমি নিলাকে বললামঃ এতোই করে যখন বলতেছো। তাহলে দেও।
এরপরে নিলা আমার মুখে একটা ফুচকা তুলে দিলো। দেখি সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওকে আরেকটু হার্ট করার জন্য ফুচকায় একটা চিবানি দিয়ে বললামঃ আহহ তোমার হাতে ফুচকা খাইতে তো অনেক টেষ্ট।
নিলাঃ ভাবি কি আপনাকে এই ভাবে খাইয়ে দেয় না।
এইরে এইবার কী বলবো।
আমিঃ আরে সেই কথা আর বলো না তোমার ভাবি তো,,,,,
কথা শেষ না হতেই ফোনটা কেঁপে উঠলো ( ভাইব্রেশন মুডে ছিলো)।
পকেট থেকে বের করে দেখি অফিসের এমডি সাহেব ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে বললাম,,,,,
আমিঃ আসসালামুয়ালাইকুম।
এমডি সাহেবঃ ওয়ালাইকুমুস সালাম। স্যার আজকে একটু অফিসে আসতে পারবেন কি?
আমিঃ আংকেল আপনাকে আমি কত বার বলবো আপনি আমাকে স্যার বলে ডাকবেন না। নাম ধরে ডাকবেন। (রেগে)
এমডি সাহেবঃ আচ্ছা বাবা। তুমি কি আজকে অফিসে আসতে পারবে?
আমিঃ আচ্ছা দেখি। কয়টার সময়ে?
এমডি সাহেবঃ দুপুর দু টা থেকে তিনটার মধ্যে এসো।
আমিঃ ঠিক আছে আংকেল।
এমডি সাহেবঃ ঠিক আছে বাবা।
এমডি সাহেবের সাথে কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। এরপরে ফুচকার যা বিল হয়েছে তা পে করে দিয়ে ওদের (নেহার বান্ধবীদের ট) থেকে বিদায় নিয়ে নেহাকে গেটের কাছে যেতে বললাম। এরপরে আমি পার্কিং লটে যায়ে বাইক টা নিয়ে গেটের সামনে আসলাম।
বাইকে উঠার সময় ঘটলো এক বিপত্তি। নেহা, মিম আর সামিয়া গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আমি মিমি আর নেহাকে বাইকে উঠতে বললাম। কিন্তু আমার মেয়ে ওর মামনি কে ছাড়া বাইকে উঠবে না। আমি কিছু বুঝিনা এই ছোট্ট বাচ্চার কী করে তার মামনির প্রতি এতো টান? কয় দিনের পরিচয় হবে?
আমি বললামঃ দেখো মিম এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।( ধমক আর রেগে বললাম)
আমার ধমক শুনে আমার মেয়ে কান্না করতে লাগলো। এতো আরেক ঝামেলাই পড়লাম। মিমকে কান্না করতে দেখে সামিয়া বললোঃ থাক ওকে কিছু বলো না। আমি। ওকে নিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছি। নেহা তুমি বাইকে উঠো।
নেহাঃ না তুমি মিমকে নিয়ে বাইক বাইকে যাও। আমি রিকশায় যাচ্ছি।আর মিম রিকশায় উঠলে কান্না করে।
নেহার কথা শুনে সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। হয়তোবা আমি তাকে উঠার অনুমতি দিবো এই আশায়।
আমি সামিয়া কে বললামঃ বাসা ভাড়া দেওয়ার পরে আবার বাইকে করে নিয়ে যেতে হবে? শুনুন আমি আমার মেয়ের জন্য আপনাকে বাইকে নিচ্ছি। এর থেকে বেশি কিছু নয়। উঠুন।
সামিয়া খুশি হয়ে বাইকে উঠে পড়লো। আর আমার মেয়ে আমার সামনে তালের টাংকি তে বসে পড়লো। সে নাকি তার মামনির কোলে বসে থাকবে তো এখনে কেন?
নেহাকে একটা রিকশা করে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। আমি বাইক স্টার্ট দিতেই সামিয়া আমার কাঁধে হাত রেখে জড়িয়ে ধরতে চাইলো। আমি বাইকটা বন্ধ করে সামিয়া কে বললামঃ আমার মতো চরিত্রহীন ছেলের কাঁধে হাত রেখে জড়িয়ে ধরেছেন কেন? আপনিও তো নষ্ট হয়ে যাবেন। তাই বলি কি দুরত্ব বজায় রেখে বসেন।
আমার কথা শুনাতে পর সামিয়া আমার ঘাড় থেকে হাত নামিয়ে একটু সরে বসলো। আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
পুরো রাস্তায় সামিয়া আমার দিকে এগিয়ে আসেনি এমনকি শরীর টাচ করে নি। তবে গতিরোধকে বাইক ব্রেক করার সময় আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে এসেছিল। কিন্তু সাথে সাথে আবার ঠিক হয়ে বসেছে।
বাসায় পৌঁছার পরে ওদেরকে নামিয়ে দিয়ে বাইকটা পার্ক করে আমিও বাসার ভিতরে ঢুকলাম। সোজাই আমার রুমে যায়ে গোসল করে যোহরের নামাজ পড়ে রুমে বসে আছি। একটু পরে সামিয়া আমার রুমের দরজার সামনে এসে বললোঃ আসতে পারি কি?( মাথা নিচু করে)
আমিঃ আমার মতো চরিত্রহীন রুমে কি প্রয়োজন? আসুন।
সামিয়াঃ আমি তোমাকে একটা কথা বলবো একটু শুনবে প্লিজ।
সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার কাছে হাতজোড় করে বলতেছে।
আমিঃ হুমমম বলুন।
সামিয়াঃ সাহিদ তুমি আমাকে যেই কষ্ট দেওনা কেন আমি সব সহ্য করবো। কিন্তু প্লিজ তুমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে হেসে খেলে কথা বলো না। এটা আমি মেনে নিতে পারি না। তুমি কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে আমার কলিজাটা মনে হয় কেউ বের করে নেয়।
প্লিজ তুমি এই কথাটা রাখো।
আমি মাটির দিকে তাকিয়ে বললামঃ দেখুন এটা আমার পার্সোনাল লাইফ। আমি কার সাথে হেসে খেলে কথা বলবো এটা আমার ব্যপার। এতে কারো কিছু হলে আমি দায়ী নই। এখন আপনি যেতে পারেন।
সামিয়া আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল। কারণ সে জানে সাহিদ এক কথা একবারই বলে।
আমি রুমে বসে থেকে ফোন টিপতেছে। একটু পরে আমার মেয়ে এসে লাঞ্চ করার জন্য ডেকে গেলো।
আমিও লাঞ্চ করতে নিচে গেলাম। ডাইং টেবিলে যায়ে দেখি নেহা একাই বসে আছে। আমি নেহাকে বললামঃ নেহা তোর ম্যাম কই?
নেহাঃ রুমে আছে।
আমিঃ লাঞ্চ করবে না?
নেহাঃ বিকেলে রেস্টুরেন্টে যায়ে লাঞ্চ করে একবারে রাতের জন্যেও খাবার নিয়ে আসবে।
আমিঃ রেস্টুরেন্টে যাবে কেন?
নেহাঃ তো কোথায় খাওয়া দাওয়া করবে?
আমিঃ কোথায় খাওয়া দাওয়া করবে মানে। আমাদের সাথে খাওয়া দাওয়া করবে।
নেহাঃ তুমিই তো নিষেধ করেছো।
নিজেকে নিজের কাছে খারাপ মনে হলো। মেয়াটা একাই কোথায় খাবে ? আর না খেয়ে থাকলে শরীর খারাপ করবে।
আমিঃ আজ থেকে আমাদের সাথে খাইতে বলিস।
নেহাঃ সত্যিই বলতেছো?
আমিঃ হুমমম। এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।
নেহাঃ হুঁ,,,,।
নেহা আর মিম সামিয়া কে ওর রুমে গেল। আর আমি একাই লাঞ্চ করে রুমে আসলাম।
তিনটার সময় বাইক নিয়ে অফিসে গেলাম। অফিসে যায়ে স্টাফদের সাথে কিছু কথা বলে এমডি সাহেবের রুমে গেলাম।
আমাকে দেখে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন।
উনাকে বসতে বলে আমি তার সামনের চেয়ারে বসে পড়লাম।আমি বললামঃ আংকেল কি সমস্যা হয়েছে যার জন্য এতো জরুরী তলব?
এমডি সাহেবঃ আসলে বাবা, আমাদের কম্পানির লন্ডনে যে ব্রাঞ্চ আছে সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছে। আর তারা তোমাকে সেখানে যেতে বলে।
আমিঃ ওওও,, আপনি যাবেন না?
এমডি সাহেবঃ না বাবা সেখানে আমি গেলে হবে না। সেখানে তোমাকে যেতে হবে।
আমিঃ ঠিক আছে কিন্তু আমার সাথে তো একটা এসিস্ট্যান্ট প্রয়োজন।
এমডি সাহেবঃ সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমার পিএ বর্ষা যাবে। বর্ষার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।
আমিঃ আচ্ছা আংকেল।
এরপরে তিনি ফোন করে তার পিএ কে আসতে বললেন। কিছুক্ষণ পরে একটা মেয়ে আসলেন। মেয়েটিকে দেখে আমি আবাক না হয়ে পাড়লাম না। কারণ মেয়েটি হলো আমার ক্লাস মেইট তিশা। খুবই ভদ্র এবং সুন্দর মেয়ে। পড়া লেখাইও ভালো। ক্লাস তেমন করতো না। শুনেছিলাম কোনো এক অফিসে জব করে আর মাঝে মাঝে ক্লাস করে। আর্থিক সমস্যার জন্য জব করে নিজের লেখা পড়ার খরচ নিজেই চালাতো। কিন্তু এই মেয়ে যে আমার অফিসে জব করে তা আমি জানতাম না।
আর জানবোই বা কি করে। আমি তো তেমন অফিসে আসি না। আসলেও এমডি সাহেব এবং স্টাফদের সাথে কথা বলে চলে আসি। তবে কোনো দিন তিশার সাথে দেখা হয়নি। আর তিশার আরেক নাম বর্ষা।
আমি তিশাকে বললামঃ আরে তিশা তুমি এখানে জব করো?
তিশাঃ হ্যাঁ আমি আপনার অফিসে জব করি।
আমিঃ আরে আমাকে আপনি করে বলতে হবে না। তুমি করে বলবা।
তিশাঃ আচ্ছা।
এরপরে এমডি সাহেব আমাদের সব কিছু বুঝিয়ে দিলেন। আসলে আমি কোনো দিন ব্যবসার হাল না ধরায় এতো কিছু বুঝিনা। করেছিলাম একজন সাধারণ কর্মী হিসেবে । কিন্তু এই রকম ভাবে বস হিসেবে নয়। আগামি কাল সকাল সাতটায় আমাদের ফ্লাইট।
সেখানে প্রায় দুই দিন থাকতে হবে।
অফিস থেকে বাসায় আসলাম। বাসায় এসে দেখি মিম নেহা আর সামিয়া সোফায় বসে থেকে গল্প করতেছে। আমাকে দেখে মিম জড়িয়ে ধরে বললোঃ বাবাই তোথায় দিয়েথিলে?
আমি ওকে চুমু দিয়ে বললামঃ অফিসে গিয়েছিলাম আম্মু।
এই নাও তোমার চকলেট। বসে থেকে খাও।
মিমঃ আততা বাবাই।
রাতে মিম, নেহা, সামিয়া আর আমি একসাথে ডিনার করতেছি। মিম সামিয়ার কোলে বসে থেকে খাচ্ছে। আর সামিয়া বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি সে দিকে খেয়াল না করে ডিনার শেষ করে নেহা কে বললামঃ নেহা কালকে সকালে আমি লন্ডনে যাবো।
সাহিদের কথা শুনে সামিয়ার গলায় ভাত আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা। সে ভেবেছে সাহিদ তার জন্য এই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। মূহুর্তে যেন সামিয়ার পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেল। এই কাছে পেয়ে বুঝি হারিয়ে ফেললো।
নেহাঃ কেন ভাইয়া?
আমিঃ অফিসের কাজে।
নেহাঃ ওও ,।, কয় দিনের জন্য?
আমিঃ দুই দিন পর চলে আসবো।
সাহিদের এই কথা শুনে সামিয়া কিছু টা শান্তি পেলো।
নেহাঃ ঠিক আছে ভাইয়া।
আমি রুমে এসে ড্রেস প্যাক করতে লাগলাম। প্যাক করা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ফজরের নামাজ পড়ে ওদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে নাস্তা করলাম। এরপরে আমার মেয়েকে কিছুক্ষণ আদর করে ওদেরকে বিদায় দিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। এরপরে ড্রাইভার আংকেল কে সঙ্গে নিয়ে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেখি তিশা ওয়েটিং রুমে বসে আছে। আমি যায়ে ওর পাশে বসলাম। একটু পরে আমরা ফ্লাইটে উঠলাম। তার কিছুক্ষণ পরে আমাদের ফ্লাইট ছেড়ে দিলো।
দীর্ঘক্ষণ আকাশে উদ্দোয়মান থাকার পরে আমাদের ফ্লাইট ল্যান্ড করলো। এয়ারপোর্টের কাজ শেষ করে আমরা আমাদের অফিস থেকে পাঠানো গাড়িতে করে একটা হোস্টেলে গেলাম।এর পরে ফ্রেশ নাস্তা করে একটু রেস্ট নিয়ে অফিসে গেলাম। অফিসের সমস্যা সমাধান করতে বেশ সময় লাগলো। তবে একদিনেই সমাধান হয়েছে।
পরের দিন লন্ডন শহরটা ভালো ভাবে ঘোরাফেরা করে কিছু মুহূর্তকে ক্যামেরা বন্দি করে নিলাম।এই ভাবে। কেটে গেল দুই টা দিন। আজকে রাতে আমাদের ফ্লাইট। নেহা, মিম আর মিমের মামনির জন্য কেনাকাটা করলাম। আর তিশাকে তার পছন্দ মতো কিছু কিনে দিলাম।
হোস্টেল থেকে বের হয়ে এয়ার পোর্টে আসলাম। কিছু সময় আছে তাই লন্ডন এয়ার পোর্টাটা ঘুরে ঘুরে দেখতেছি। একটু পরে আমাদের ফ্লাইট ছেড়ে দিবে তাই ফ্লাইট উঠার জন্য বলতেছে।
আমরা আর দেরি না করে ফ্লাইটে উঠে পড়লাম।
বাংলাদেশে বিমান ল্যান্ড করার পরে আমি আর তিশা বের হয়ে বিমান থেকে আসলাম থেকে। চেকপোস্টে সব কিছু চেক করার পর আমরা এয়ার পোর্ট থেকে বের হলাম। বাইরে এসে দেখি ড্রাইভার আংকেল গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আর তিশা গাড়িতে উঠলাম। এরপরে তিশাকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমার বাসায় চলে আসলাম।
এই কয়দিনে তিশা আর আমি বেশ ফ্রী হয়ে গেছি। বাসায় আসতেই আমার মেয়ে আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। আমি ওকে আদর করে চকলেটের একটা বক্স দিলাম।
ড্রয়িং রুমে এসে নেহাকে ডেকে সামিয়া আর ওর জন্য যা কিছু এনেছি সব দিয়ে দিলাম।
রুমে এসে ফোন টা পকেট থেকে বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি সামিয়া আমার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে রক্ত বের হবে।
আমি বরলামঃ কি হয়েছে?
সামিয়া কোনো কথা না বলে আমার জামার কলার চেপে ধরে বললোঃ তোকে না বলেছি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলবি না তাহলে এই তিশা কে?(চিৎকার করে)
আমি ঠাসস ঠাসস করে এর গালে দুইটা থাপ্পড় দিয়ে বললামঃ তোকে আমি নিষেধ করিনি যে, তুই আমার পার্সোনাল লাইফে নাক গলাবি না। কিন্তু শুনিস নি। এখনি রুম থেকে বের হয়ে যা তোকে যেন আর চোখের সামনে না দেখি।
দরজা বন্ধ করে দিয়ে বেডে এসে শুয়ে পড়ে ভাবতে লাগলাম, আচ্ছা আমি কি সামিয়ার সাথে এসব কি ঠীক করতেছি? সে যদি ভালো না বাসতো তাহলে এতো অত্যাচার সহ্য করতো না।
পরোক্ষণেই মনে হলো, না না সাহিদ তুই কী ভাবতেছিস এসব।
আজকে সারাদিন এবং রাতে সামিয়া আমার সামনে আসে নি।
পরের দিন সকালে নাস্তা করে কলেজে গেলাম। সামিয়া নাকি আগেই এসেছে। কলেজে যায়ে দেখি বন্ধুরা বসে থেকে আড্ডা দিচ্ছে আমিও ওদের পাশে যায়ে বসলাম। লন্ডন সম্পর্কে কথা বলতেছি। একটু পরে মিমি আজ পাশে এসব বসে বললোঃ সাহিদ তুমি নাকি লন্ডনে গিয়ে ছিলে? কেমন ঘোরাফেরা করলে?
আমিঃ হুমম খুব ভালো । দেখার মতো অনেক কিছু আছে।
মিমিঃ তাই। তো কি ক্যামেরা বন্দি করো নি?
আমিঃ হুমম করেছি। দেখবে?
মিমিঃ কোনো দিন তো যেও পারবো না। দেখাও দেখি।
এরপরে আমি মিমিকে আমার ফোন বেজে করে পিকচার গুলো দেখাচ্ছি। আর মিমি প্রশ্ন করতেছে এটা কি ঐটা কী? আমিও ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছি। যার ফলে আমি আর মিমি একেবারে ঘনিষ্ঠ মানে কাছাকাছি চলে এসেছি।
আর আমার বন্ধুরা পাবজি খেলতেছে।
হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। মাথা উঁচু করে দেখি সামিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর চোখে পানি টলমল করতেছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দৌড়ে ওর রুমে চলে গেল।
এটা দেখে ইকবাল বললোঃ সাহিদ অনেক হয়েছে এবার আপন করে নে? দেখলি না কী ভাবে তোর দিকে তাকিয়ে আছে।
মিমিঃ হ্যাঁ সাহিদ তুমি ওকে আর কষ্ট দিয়ো না।
আমিঃ আরে এটা আবেগ।
শাকিবঃ এটাকেও তুই আবেগ বলতেছিস?
আমিঃ সে যদি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে তাহলে পরিক্ষা দিতে হবে?
রিয়াদঃ কী পরিক্ষা?
আমিঃ তুই সামিয়া কে ভালোবাসার কথা বলবি মানে তুই তাঁকে ভালোবাসিস। আর সে যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে আমাকে ভালো বাসে না।
রিয়াদঃ আমি ১০০% শিয়র তোকে ভালোবাসে। এতে আমাকে এসব বলার কী আছে?
আমিঃ আমাকে সে ভালোবাসে না। আর যদি ভালোবাসে তাহলে তোরা যা খাইতে চাইবি তাই খাওয়াবো।
রিয়াদঃ সত্যি?(খুশি হয়ে)
আমিঃ হুমম।
রিয়াদঃ আচ্ছা চল?
আমিঃ কোথায়?
রিয়াদঃ তোরা আয় আমার সাথে।
আমরা ওর সাথে সামিয়ার রুমের কাছে গেলাম। রিয়াদ আমাদের কে একটু সাইটে থাকতে বললো।
এরপরে রিয়াদ সামিয়া কে তার রুমের বাইরে একটু আসতে বললো। সামিয়াও আসলো। এসে বললোঃ কি হয়েছে?
রিয়াদঃ আসলে ম্যাম কী ভাবে যে বলি,,,(মাথা চুলকাতে চুলকাতে)
আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম বলবে টা কি। রিয়াদ আর সামিয়ার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি।
সামিয়াঃ বল সমস্যা নেই।
রিয়াদঃ ম্যাম আমি আপনাকে ভালোবাসি।
সামিয়াঃ হোয়াট,,,(রেগে)
রিয়াদঃ ম্যাম আপনাকে সত্যিই ভালোবাসি।
এই কথা বলার সাথে সাথে সামিয়া ঠাসস ঠাসস করে রিয়াদের গালে চড় মেরে দিয়ে বললোঃ কী বললি আবার বল?
রিয়াদঃ সরি ম্যাম আমি আপনাকে ভালোবাসি না এসব সাহিদের জন্য হয়েছে?
সামিয়াঃ মানে?
এরপরে রিয়াদ আমাদের ডাক দিলো ।আমি ভয়ে ভয়ে গেলাম।
রিয়াদ বললোঃ আসলে ম্যাম সাহিদ আমাকে এসব বলতে বলেছে।সে আমার সাথে বাজি ধরেছে যে যদি। আপনি,,,,
রিয়াদের আর কোনো কথা না শুনে সামিয়া আমার শার্টের কলার ধরে ওর রুমের ভিতরে নিয়ে যায়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। এরপরে আমার সামনে এসে আবার আমার কলার ধরে আমার চোখে চোখ রেখে বললঃ তুই আমাকে ভালোবাসি কি না? মানুষ কী ভুল করে না। আমার জায়গায় যদি তুই হইতিস তাহলে কি করছি? তোকে আমার প্রথমেই বিশ্বাস হয়েছিলো তুই এসব করবি না। কিন্তু তোর প্রতি একটা রাগ থেকে যায়। এই কলেজে যেদিন তোকে দেখেছিলাম সেদিন যে কি খুশি হয়েছিলাম তা বুঝাতে পারবো না। মনে করেছিলাম তুই আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলবি আমি তোকে এখনো ভা
লোবাসি। কিন্তু না আবার তোকে কাছে পাওয়ার জন্য আমি তোকে আমার এসিস্ট্যান্ট করলাম কিন্তু সেখানেও হলো না। কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারকে বলে ট্যুরে যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। যেটা এই কলেজে কয়েক বছর ধরে বন্ধ ছিল। কিন্তু সেখানে যায়েও তুই আমাকে দূরে ঠেলে দিলি। এরপরে তোর অপমান সহ্য করে তোর বাড়িতে থাকার জন্য মিথ্যা অভিনয় করে গেলাম তোর বাসায়। সেখানেও প্রতিদিন থাপ্পড় আর অপমান সহ্য করে থাকলাম কিন্তু ফল স্বরূপ পেলাম অবহেলা।আর আজকে তুই আমি বাজির বস্তু বানিয়ে ফেলেছিস।
কথা গুলো বলেই সামিয়া নিচেও দিকে তাকিয়ে রইল আর ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে।
আমি ভাবতে লাগলাম, আসলেই তো সামিয়ার জায়গায় যদি আমি হতাম তাহলে কী করতাম। তাররপে আমাকে পাওয়ার জন্য সে অপমান অত্যাচার সহ্য করতেছে।
নেহার মুখে শুনেছি সামিয়া রাতে যখন একা একা থাকে তখন আমার ছবিটা মোবাইলে বের করে দেখবে আর কান্না করবে। আর তাকেই আমি ছিঃ
সামিয়া আমার কলার ছেড়ে দিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বললোঃ আচ্ছা সাহিদ তোমার কাছে আমি কী এতো বড়ই পাপ করেছি যার কোনো ক্ষমা হয়না। আমাকে মাফ করে দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে বলা যায় না কি" সামিয়া আমি তোকে ভালোবাসি।"
বেশ তোমাকে বলতে হবে না। আমি যেহেতু খুবই বেশি পাপ করে ফেলেছি যার কোনো ক্ষমা নেই তাহলে আমি চলে যাবো তোমাকে ছেড়ে । কোন দিন আর আসবো না ভালোবাসার দাবি নিয়ে।
বলেই সামিয়া আমার কাছ হাত ছাড়িয়ে হাঁটা ধরবে। ওমনি আমি ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার বুকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ কোথায় যাবি তুই আমাকে ছেড়ে। আমিও যাবো তোর সাথে সেই অচিনপুরের অচেনা পথে। হাটবো দুজনে একসাথে দুই হাত ধরে।
আমার কথা শুনে সামিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ তাহলে আমাকে এতো কষ্ট দিলে কেন?
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ সরি জান পাখি আর কখনো দিবো না। এখন শুধু সুখ দিবো। বলেই ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁট চেপে ধরলাম।
প্রায় দশ মিনিট পর ছেড়ে দিলাম। সামিয়া হাঁপাতে হাঁপাতে বললোঃ যাহহ দুষ্টু এতক্ষণ কেউ করে।
আমি মুচকি হেঁসে বললামঃ তাহলে একটু শিখিয়ে দেও।
সামিয়াঃ এখন নয় বিয়ের পর।
আমিঃ ওরে বাবা তাই নাকি? (ওর দিকে এগুতে এগুতে)
সামিয়াঃ এই একদম ভালো হবে না কিন্তু? আচ্ছা আমাদের মেয়ে কই?
"মামনি আমি এথানে" পিছন থেকে কে যেন কথাটা বললো।
পিছনে তাকিয়ে দেখতো আমি বড় পড় একটা সক খেলাম। কেননা,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২৬
পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম। কেননা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে মিম আর নেহা। আর যাকে দেখে আমি সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম তিনি হলেন প্রিন্সিপাল স্যার।
আমি ভাবতেছে, স্যার এখানে কেন? স্যারকে এখানে দেখে আমি কিছু টা লজ্জা পেলাম। কারণ একজন কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের সামনে একজন ম্যামের সাথে রোমাঞ্চ করাটা লজ্জারই ব্যাপার🙊🙊🙊।
মিম এসে আমার কোলে উঠলো। আমিও ওকে কোলে তুলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিলাম।
প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের দিকে এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বললোঃ তাহলে সামিয়া তুই অনেক কষ্টে তোর ভালোবাসার মানুষ কে কাছে পেলি।
সামিয়ায় প্রতি উত্তরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললঃ হ্যাঁ মামা পেয়েছি। তবে এখানে তোমার অবদান টাই বেশি।
প্রিন্সিপাল স্যারকে সামিয়া মামা ডাকায় আমি আর নেহা খুব অবাক হলাম। আমি সামিয়া কে বললামঃ মামা মানে?(অবাক হয়ে)
সামিয়া কে প্রিন্সিপাল স্যার কিছু বলতে না দিয়ে তিনিই বললেনঃ অবাক হওয়ার কিছুই নেই আমি সামিয়ার মামা আর সামিয়া হলো আমার একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়ে।
আমিঃ কিন্তু,,
আমাকে আর বলতে না দিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার বললেনঃ হ্যাঁ তুমি হয়তো ভাবতেছো যে আমার বাসা সিলেটে হলে আমি এখানে কেন? আর সামিয়াই বা তোমাকে আমার কথা বলেনি কেন?তাইতো?
আমিঃ হ্যাঁ।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ আসলে ঢাকায় আমাদের একটা কম্পানি আছে। আর কয়েকটা বাসা আছে যেগুলো বর্তমানে ভাড়া দেওয়া আছে। আমি এইগুলো দেখাশুনার সুবাদে সিলেট থেকে ঢাকায় আসি আর এখানেই লেখাপড়া শুরু করি। আর আজকে আমি এই কলেজের প্রিন্সিপাল।আর আমি বাসায় মানে সিলেটে তেমন যাইনা। যার জন্য সামিয়া দের ওখানেই যাওয়া হয়না। আর এই জন্যই তোমার সাথে আমার পরিচয় নেই। বুঝতে পেরেছো?
আমিঃ হ্যাঁ স্যার। কিন্তু সামিয়া যে বললো আপনার অবদান বেশি। এটা কোন কাজে?
প্রিন্সিপাল স্যারঃ তাহলে শুনো। সামিয়া লেখা পড়া শেষ করে জব করতে চাইলে ওর বাবা মা নিষেধ করে। কিন্তু সামিয়া জব করবেই। একি কথা জব করবেই। ওর বাবা মা আর ওকে বাঁধা দেয়নি। কারণ, তোমাকে হারানোর পর থেকে সামিয়া একে বারে ভেঙে পড়েছিল। এখানে জয়েন করার কয়েক মাস আগে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠছিল। যার ফলে সামিয়ার মা বাবা আর তাকে জব করতে বাঁধা দেয়নি। যদি আবার তাদের একমাত্র সন্তান আগের মতো অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে তারা কীভাবে থাকবে। এই জন্য থাকে জব করার অনুমতি দেয় যাতে সে সুস্থ থাকে। ভেঙ্গে না পড়ে। এরপরে তাকে আমার এখানে মানে ঢাকায় পাঠানো হয় আর আমাদের কলেজে একটা ইংলিশ টিচার প্রয়োজন ছিল। সামিয়ার রেজাল্ট ভালো হওয়ায় তাকে এখানে জব পেতে কোনো সমস্যা হয় নি।
এরপরে যেদিন তুমি সামিয়াকে বরণ করে নিতে যাও। সেদিন সামিয়া তোমাকে দেখার পর থেকে কেমন জানি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলো। তবে তার চিন্তার মাঝে আমি দেখতে পেয়েছিলাম কোনো অমূল্য সম্পদ হারানোর পরে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ।
সেইদিন সামিয়া স্টেজ থেকে নেমে সোজাসুজি আমার রুমে আসে।আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ কী হয়েছে মা? তোকে সেই তখন থেকে চিন্তিত মনে হচ্ছে?
সামিয়া তখন আমাকে বলেছিলঃ মামা আজকে যেই ছেলেটা আমাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য স্টেজে উঠেছিল সে কে?
আমি(প্রিন্সিপাল স্যার)ঃ কেন মা তুই কি সাহিদ হাসানের কথা বলেছিস?
সামিয়াঃ হ্যাঁ।
আমিঃ সে হলো আমাদের কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র খুবই ভদ্র এবং মেধাবী। তার আরেক টা পরিচয় হলো সে এখান কার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামানের ছেলে। আর আখতারুজ্জামান হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
সামিয়াঃ আখতারুজ্জামান কী তার আসল বাবা নাকি অন্য কিছু?
আমিঃ না আসল নয়। আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে আখতারুজ্জামান সাহেব রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসতেছিলো। আর তার বিপরীত দিক থেকে একটা ট্রাক হর্ণ দিতে দিতে আসতেছিলো। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই। হঠাৎ করে কে যেন তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় যার ফলে সে এক্সিডেন্ট এর থেকে রক্ষা পায়। আর যে তাকে ধাক্কা দিয়েছিলো সে হলো সাহিদ হাসান সাহি। এরপর থেকে আখতারুজ্জামান সাহিদ হাসান সাহি কে সকলের কাছে তার ছেলে হিসেবে পরিচয় দেয়। আর তার মৃত্যুর কয়েক মূহুর্ত আগে তার সমস্ত সম্পত্তি সাহিদ হাসানের নামে করে দিয়ে যায়।
সামিয়াঃ কিন্তু আখতারুজ্জামানের কি কোনো পরিবার নাই ?
আমিঃ ছিলো কিন্তু আজ থেকে আট বছর আগে একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।
সামিয়াঃ ওও।
আমিঃ কিন্তু তুই এতো কিছু জানতেছিস কেন?
এরপরে সামিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ মামা এই সাহিদ ই হলো আমার সেই সাহিদ যে একটা মেয়েকে রেপ করার চেষ্টা করেছিলো।
আমিঃ কিহহহ। এটা আমার কখনো বিশ্বাস হবে না। তোদের মধ্যে কোনো ভুল হয়েছে। যেই ছেলে একটা মেয়েকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এসে নিজের বোনের মর্যাদা দেয়, যেই ছেলের সঙ্গে শয়ে শয়ে মেয়ে ঘোরাফেরা করে, তার পরেও সে তাদের দিকে ফিরে তাকাই না। সেই ছেলে কি করে এসব একটা জঘন্য কাজ করতে পারে? নিশ্চয় তোদের মধ্যে কিছু একটা ভুল হয়েছে নইলে এ মেয়ে ( রিপা) মিথ্যা নাটক করেছে।
সামিয়াঃ আমারো তো তাই মনে হয় আমার সাহিদ এই রকম কাজ করতে পারে না। (কান্না করতে করতে)
প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে বললেনঃ এরপরে সে কান্না করতে করতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। একটু পরে সেন্স ফিরলে সে তার ভাড়া বাসায় চলে যায় তবে সেটাও আমার বাসা।
কয়েক দিন পর এসে আমার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে রাজশাহীতে যায়। এর পরে সেখান থেকে সোজাসুজি আমার কাছে এসে বললোঃ মামা আমাকে একটা হেল্প করতে হবে।
আমি(, প্রিন্সিপাল স্যার)ঃ কী করতে হবে বল।
সামিয়াঃ -------------------। তবে আমাদের পরিচয় যে না কেউ না জানতে পারে।
আমিঃ ঠিক আছে তুই যা বলবি তাই হবে।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ এর পর থেকে সামিয়া আর আমার মিশন শুরু হয় কী করে তোমাকে সামিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করা যাবে। আমি বুদ্ধি বের করে তোমাকে সামিয়ার এসিস্ট্যান্ট বানিয়ে দিলাম। কিন্তু সেখানে কাজ হলো না। এরপরে সামিয়ার বুদ্ধিতে একটা ট্যুরের ব্যবস্থা করলাম। যেটা এর আগে কলেজ থেকে কয়েক বছর ধরে বন্ধ ছিল। এটা শুধু সামিয়ার জন্য করা হয়েছিল আর উদ্দেশ্যে ছিলো তোমাকে সামিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করা। কিন্তু এখানেও কাজ হলো না। এর পরে নেহা আর সামিয়ার বুদ্ধিতে সামিয়া কে তোমার বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। তবে আমার আর সামিয়ার সম্পর্কে নেহা কিছুই জানতো না। কিন্তু তোমার বাসায় সামিয়া অনেক অত্যাচার সহ্য করে ছিলো। যেটা সামিয়া আমাকে না বললেও আমি জানতে পেরেছিলাম। অনেক অত্যাচার অপমান সহ্য করার পর আজকে আমার ভাগ্নি তার ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেয়েছে। একজন মানুষ তার ভালোবাসার মানুষটাকে কত টুকু ভালোবাসলে তার দেওয়া অপমান, তার দেওয়া অত্যচার সহ্য করে শুধু তাকে পাওয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতো? তা আমি আমার ভাগ্নি কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। ভালোবাসার মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে, সন্দেহ হতেই পারে একজন অপর জনকে ভুল বুঝতেই পারে এর অর্থ এই নয় যে সেও তাকে ভুল বুঝবে, তার প্রতি অত্যাচার করবে। এটি কিন্তু ঠিক নয়।
পরিশেষে তোমাকে একটা কথাই বলি আমার মেয়ে তোমাকে খুবই ভালোবাসে যেটা আমি না দেখলে বুঝতে পারতাম না। সো সাহিদ তুমি আর তাকে কখনো আর কষ্ট দিয়ো না।
আমিঃ না স্যার আর কখনো কষ্ট দিবো না। এখন থেকে সুখেই রাখবো।
প্রিন্সিপাল স্যারঃ গুড। তাহলে আমি আসি। আর তোমরা চাইলে আজকে ঘোরাফেরা করে আসতে পারো। আজকে তোমাদের ছুটি।
সামিয়া খুশি হয়ে ওর মামাকে বললঃ থ্যাংকস মামা।
প্রিন্সিপাল স্যার মুচকি হেসে সামিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ হুমম আমার পাগলি মেয়ে।
প্রিন্সিপাল স্যার রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। স্যার যাওয়ার পর নেহা বললোঃ আচ্ছা ভাবি আমি একটা জিনিস বুঝলাম না ?
সামিয়াঃ কি বুঝলে না ননদি?
আমিঃ বিয়ে না হতেই এতো ভাবি ননদ ডাকা ডাকি বিয়ে হলে না যানি কী হয়।
সামিয়াঃ ওও হ্যালো,, এটা আমাদের ভাবি ননদের ব্যপার। আপনাকে কেউ নাক গলাতে বলেনি। আর কি বললে বিয়ে? তাই না? দাঁড়াও আজকেই আব্বুকে ফোন দিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলতেছি।
আমিঃ এই না না,, এখন আমি বিয়ে করে প্যারা সহ্য করতে পারবোনা।
সামিয়াঃ কীহহহ আমি প্যারা?
আমাদের কথা শুনে নেহা দাঁত কেলিয়ে হাসতেছে।
আমিঃ না না আপনি কেন প্যারা হতে যাবেন? আপনি তো হলেন আমার মেয়ের ভদ্র আম্মু। তাই না আম্মু (মিমকে উদ্দেশ্য করে)?
মিমঃ হ্যাঁ বাবাই। তিন্তু আমাল আম্মু তে?
আমিঃ এটা (সামিয়া কে) তোমার আম্মু।
মিমঃ এতাতো আমাল মামনি হয়।
সামিয়া মিমকে আমার কোল থেকে ওর কোলে নিতে নিতে বললোঃ আমিই তোমার আম্মু আমিই তোমার মামনি।
বুঝেছো আম্মু?
মিম সামিয়ার গলি জড়িয়ে ধরে বললোঃ হ্যাঁ আম্মু বুদেতি।
সামিয়াঃ ওকে সোনা।(কপালে চুমু দিয়ে)
নেহাঃ ভাবি আমি কিন্তু আমার উত্তর এখনো পেলাম না! ( মুখ ভার করে)
সামিয়াঃ বাসায় যায়ে ফ্রি টাইমে বলবো বুঝেছো?
নেহাঃ হুমম।
সামিয়াঃ চলো আজকে ঘুরতে যাই।
আমিঃ ঠিক আছে চলো।
কতদিন পরে আজকে দুজনে ঘুরতে যাবো ভাবতেই মনের মধ্যে একটা অজানা অনুভূতি জেগে উঠতেছে। আজ থেকে তিন বছর আগে কত একসাথে ঘোরাঘুরি করেছি? কত দিন পরে আজকে আবার ঘুরতে বের হচ্ছি। তবে সেই দিনগুলো আর আজকের দিনের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সেই দিনে ছিলো আমার মাথার উপর পিতা নামক একটা ছাদ। আর আজকে আমিই হয়ে গেছি একজনের পিতা নামক ছাদ। হা হা হা ভাবতেই অন্যরকম একটা অনুভূতি ফিল করতেছি। আজকে আমার আছে একটা নিষ্পাপ মেয়ে আর একটা আছে সরল সহজ মনের অধিকারী একটা বোন।যার মধ্যে নেই কোনো অহংকার। তাকে যদি বলি আপু তোর কি কিছু জামাকাপড় প্রয়োজন? সে বলবে না ভাইয়া আমি এতেই ঠিক আছি। অন্য কেউ হলে হয়তো আমার সম্পদের বড়াই করে নিজে আধুনিক হয়ে থাকতো। কিন্তু আমার বোন ঠিক তার বিপরীত।
যাইহোক, সামিয়া,মিম, নেহা আর আমি সামিয়ার রুম থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা ধরলাম। ক্যাম্পাসে পৌছতেই আমার বন্ধুরা আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হলো।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই রিয়াদ বললোঃ কি মামা কোথায় যাও? আমাদের বাজির কথা মনে নেই।
এইরে , আমার তো মনেই ছিলনা। কি জন্য যে বাজি ধরতে গেলাম?
আমিঃ আরে কিসের বাজির কথা বলতেছিস? ( না জানার ভান করে)
ইকবালঃ ওও ভাই তুই ভাবিকে পেয়ে আমাদের বাজির কথা ভুলে গেলি? আমাদের জন্য তুই আজ তোর EX গার্লফ্রেন্ড কে ফিরে পাইলি আর আমাদেরই ভুলে গেলি,,। (আমাকে ইমোশনাল করার চেষ্টা করে)
আমিঃ আচ্ছা তোরা কি চাস্?
রিয়াদঃ আমাদের তিনজনকে মোট পাঁচ হাজার টাকা দে তাহলেই হবে।
আমিঃ কিহহ,, পাঁচ হাজার টাকা😲😲😲। মানে পাঁচের পরে তিন তিনটা শূন্য।ভাই এতো টাকা আমার কাছে নাই। তুই আমার ভালো গুলমুল বন্ধু হস্ তাই না? একটু কম কর না দোস্।( রিয়াদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে)
রিয়াদঃ আমি তোর গুলমুল বন্ধু, ভালো বন্ধু সব কিছু। এখন টাকা বের। এসব ইমোশনাল কথা বলে কাজ হবে না।
কি করি কি করি? পাঁচ হাজার টাকা? হোসস্ খেলে তো বন্ধুরাই খাবে দিয়ে দেই। পকেট থেকে ম্যানিব্যাগটা বের করতেই সামিয়া ওর ব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করে দিলো।ওরা সামিয়ার থেকে নিতে না চাইলেও সামিয়ার জোরাজুরিতে নিতে রাজি হলো।
আমি বন্ধুদের কে বিদায় দিয়ে সামিয়া, নেহা আর মিমকে নিয়ে ক্যান্টিনে গেলাম। ক্যান্টিনে যায়ে কিছু খাওয়ার পরে ওদেরকে নিয়ে পার্কিং লটে আসলাম। এরপরে চারজনই চাপাচাপি ভাবে বাইকে উঠে বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে গোসল করে গাড়ি নিয়ে বের হলাম ঘুরতে। লাঞ্চ করে আবার ঘোরাফেরা করে ওদেরকে নিয়ে এতিমখানায় আসলাম। সেখানে বাচ্চাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
তবে এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য খাবার নিয়ে গেছিলাম।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে হালকা ডিনার করে সকলে মিলে আড্ডা দিতে বসলাম। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমি আমার রুমে গেলাম। আর সামিয়া, মিম আর নেহা নেহার রুমে গেল।
রুমে এসে রাফিকে ফোন দিলাম। একবার ঢুকতেই রিসিভ করলো।
আমিঃ কেমন আছিস?
রাফিঃ আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আমার বাসার সবাই কেমন আছে?
রাফিঃ সুস্থই আছে , আন্টিও এখন মোটামুটি সুস্থ। কিন্তু আন্টি মাঝেই তোর কথা ভেবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তোর বাবা আর ভাইয়া তো প্রতিদিন আমার কাছে এসে বলে তুই কোথায় আছিস তা আমি জানি কিনা।
আমিঃ ওওও,,, আচ্ছা শোন তোকে যে জন্য ফোন দিয়েছে ।
রাফিঃ হুমম বল।
এরপরে আমি আজকে সামিয়ার সাথে যা কিছু হয়েছে সব বললাম।
রাফিঃ আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো। আর তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আয়।
আমিঃ হুমম চেষ্টা করবো।
রাফির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। একটু পরেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম।
_-_-_-_-_-
আড্ডা দিয়ে রুমে যায়ে শুয়ে থেকে নেহা সামিয়া কে বললঃ ভাবি তুমি কিন্তু বললে না!
সামিয়াঃ বলতেছি মাই ডিয়ার ননদি শুনো এবার,,,,,,,,,,,
এরপরে সামিয়া নেহাকে সাহিদ আর সামিয়ার প্রথম দেখা থেকে শুরু করে সাহিদের সাথে প্রেম, সাহিদের সাথে ঘোরাফেরা করা, সাহিদের পরিবার এবং সামিয়ার পরিবারের লোকজনের কথা, সাহিদের সাথে রিপার মিথ্যা নাটক, এরপরে সাহিদ কে বাসা থেকে বের করে দেওয়া অর্থাৎ সাহিদের সাথে যা কিছু হয়েছে সব বললো।
সামিয়ার কথা শুনে নেহার চোখের কোণায় বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়েছে।
সামিয়া নেহা কে বললোঃ আমার জায়গায় তুমি হলে কী করতে নেহা বলো।
নেহাঃ ঠিকই আছে ভাবি। তবে ভুল বুঝাবুঝি একটা সম্পর্ক কে নিমিষেই ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু ভাবি তোমাকেও বিষয়টা বিবেচনা করে দেখা উচিত ছিল। যাজ্ঞে, যা হওয়ার হয়ে গেছে সেই সব ভুলে আবার নতুন করে শুরু করো। আর একটা মেয়ে তো আছেই একে কখনো মায়ের আদর থেকে বঞ্ছিত করো না প্লিজ।এটা আমার অনুরোধ।
সামিয়া মিমকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ নারে পাগলি এটা আমার মেয়ে একে কখনো আমার আদর থেকে বঞ্ছিত করবো না।
বলেই সামিয়া মিমের কপালে একটা চুমু দিলো।
এরপরে সামিয়া আর নেহা ঘুমিয়ে পড়লো।
_-_-_-_
ফজরের আযানে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানা থেকে উঠে অযু করে নামাজ পড়ে নেহার রুমে গেলাম। নেহার রুমে যায়ে নেহা আর সামিয়া কে নামাজ পড়ার জন্য ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলাম।
সামিয়া নামাজ পড়ে নাস্তা তৈরি করার জন্য রান্না ঘরে গেল।
আমি নিষেধ করলাম। কিন্তু সে নাস্তা তৈরি করবেই । আমিও আর বাঁধা দিলাম না।
নাস্তা করে গাড়ি (কার) নিয়ে কলেজে গেলাম।
কলেজে যাওয়ার পর ক্লাস শেষ করে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরলাম।
লেখাপড়া করে,আড্ডা দিতে, বোন, মেয়ে আর মেয়ের মাকে নিয়ে ঘোরাফেরা করতেই কেটে গেল একবছর।এই একবছরের মধ্যে এখনো আমি আমার পরিবারের সাথে দেখা করিনি। আম্মু এখন পুরোপুরি সুস্থ। রাফির ফোন দিয়ে মাঝে মাঝে আম্মুর সাথে কথা বলি। আম্মু অনেক বার বাসায় যেতে বলেছে কিন্তু যাইনি। যাওয়া হবে কিনা তা জানি না।
আর এই একবছরের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো আমি আর সামিয়া আগের তুলনায় বেস্ট ক্যাপুল ( লাভার) হয়ে গেছি। হ্যাঁ, আপনারা হয়তো ঠিকই ধরেছেন। আমার আর সামিয়ার এখনো বিয়ে হয়নি। সামিয়ার বাবা মা মাঝে মাঝে এসে আমার সাথে দেখা করে যেতেন। আর সামিয়া খুব কম সময় রাজশাহীতে মানে তার বাবা মায়ের কাছে যাইতো।
আমার লেখাপড়া শেষ করে ব্যবসার হাল ধরেছি। ভাবতে ছি সামিয়া কে বিয়ে করে লাইফটা সাজানো শুরু করবো। নেহা এবার মেডিকেল ফার্স্ট ইয়ারে। আর আমার মেয়ে এখন আমাকে আর ওর মামনি কে সবসময় জ্বালিয়ে মারে। একটু বড় হয়েছে তো তাই।
আর আমার বন্ধুরা এখন জব করতেছে।
আজকে বিকেল চারটায় অফিসে একটা মিটিং আছে। মিটিং টা সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানিনা। মানে কার সাথে হবে তা জানিনা। সব কিছু আমার পিএ তিশা (আরেক নাম বর্ষা) রেডি করেছে। আর হ্যাঁ এমডি আংকেল এখানে আর জব করে না। কারণ তার ছেলে তাকে নিয়ে খুলনায় থাকে।
হলরুমে ক্লাইন্টরা বসে আছেন আমার জন্য। একটু পরে আমি আমার পিএ তিশার সাথে হলরুমে ঢুকলাম। রুমে ঢুকে তাদের সাথে কথা বলতেই এক জায়গায় আমার নজর আটকে গেল। কারণ সেখানে ছিলো আমার বড় ভাই সাইম আহম্মেদ। সে আমার তাকে এক দানে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখার পরে আমি সাথে সাথে হলরুম থেকে বের হয়ে আমার কেবিনে আসলাম। আমার এমন বিহেভ দেখে তিশা আমার কাছে এসে বললোঃ সাহিদ তোমার কি হয়েছে?
আমিঃ আমি ঠিক আছি। তুমি যদি পারো তাহলে মিটিং টা কমপ্লিট করো আর না পারলে ক্যান্সেল করো।
তিশাঃ ঠিক আছে আমি পারবো।
আমিঃ গুড আমি বাসায় গেলাম। আর অফিসটা তুমি সামলে নিয়ো।
তিশাঃ ওকে।
আমি অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে বাসায় আসলাম।। বাসায় এসে কারো সাথে কথা না বলে রুমে গেলাম।
রুমে এসে অফিসের ব্যাগটা বেড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বেডের একপাশে বসে ভাবতে লাগলাম, ভাইয়া কেনো তুমি আবার আমার সামনে আসলে। তুমিই বলেছিলে আমি পাপি। আজ কেনো আবার আমার সামনে এসে আমাকে সেই কালো অতীত কে মনে করিয়ে দিচ্ছো।
একটু পরে সামিয়া রুমে এসে আমার সামনে বসে আমার কাধে হাত রেখে বললোঃ কী হয়েছে তোমার? এমন করতেছো কেনো? কি হয়েছে আমাকে বলো।
আমি আমার আবেগকে আর ধরে রাখতে না পেরে সামিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে ভাইয়ার কথা বললাম।
সামিয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ সাহিদ সব কিছু ভুলে যায়ে চলো না আবার আমরা সেই জিবনে ফিরিয়ে যাই। যেখানে থাকবে পরিবারের সব লোকেরা। একসাথে সালে বসে লাঞ্চ করবো, ডিনার করবো। যেখানে আমাদের ছেলে মেয়েরা খেলার সাথী হিসেবে পাবে তাদের দাদা দাদিকে।
আমিঃ তা সম্ভব নয় সামিয়া।
সামিয়াঃ কেন সম্ভব নয় বলো? তারাও তো আমার মতোই ভুল করেছিলো। আমাকে যদি মাফ করতে পারো তাহলে তাদের কেন পারবে না।মনেকর, তোমার ছেলে যদি একটা মেয়ের সাথে একাই একটা রুমে থাকে আর মেয়েটা যদি মিথ্যা চিৎকার করে তোমার ছেলে কে দোষী সাব্যস্ত করে তাহলে তুমি সেখানে যায়ে কি তাহলে করবে বলো।
আসলেই তো আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি। সামিয়ার কথাই লজিক আছে।
আমিঃ আচ্ছা ভেবে দেখি।
সামিয়াঃ কোনো ভাবা-ভাবী নেই। আমি আর কতদিন এভাবে থাকবো বলে। আমারতো শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা আছে তাই না?
আমিঃ ওওও তাহলে এই ব্যাপার। বলবে তো তাহলে। এদিকে এসো আজকের জন্য কিছু দিয়ে দেই।(মুচকি হেসে)
সামিয়াঃ আমি এখন এসব চাইনা। একেবারে বিয়ের পর।
আমিঃ তা তো বললে হবে না জান পাখি।(সামিয়া কে কাছে টেনে নিয়ে)
সামিয়াঃ এই ন,,,,,
ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার ঠোট এক করিয়ে দিলাম। একটু পরে সামিয়ার রেসপন্স দিতে লাগলো।
হঠাৎ করে আমার মেয়ে এসে বললোঃ তি ব্যপাল তোমলা এতানে লোমান্ত কলতেথো আল আমলা তোমাদেল দাকতেথি।[(তুতলিয়ে তুলিয়ে। আসলে বয়স টা ঠিকই বেড়েছে কিন্তু কথা গুলো এখনো স্পষ্ট হয় নি)]
আমি সাথে সাথে সামিয়া কে ছেড়ে দিলাম। আমার মেয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে দৌড়ে এসে ওর মায়ের কোলে উঠলো।
[ {আমাদের দুজনের বিয়ে না হওয়ার পরেও মিম আম্মু আম্মু বলে ডাকতেছে বলে আপনারা কিছু মাইন্ড করিয়েন না। কয়েক দিন পরেই বিয়ে করে ফেলবো। আপনাদের সকলের দাওয়াত। তবে গিফট ছাড়া কেউ বিয়েতে আসলে তার দাওয়াত বাতিল বলে গণ্য করা হবে }]
সামিয়া নিচের দিকে তাকিয়ে বললোঃ মেয়ের সামনে মান সম্মান টা খাবে আমার । ফ্রেশ হয়ে এসো একসাথে ডিনার করবো।
আমি কিছু না বলে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে নিচে গেলাম। এরপরে ডিনার করে আড্ডা দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
সকালে আমার মেয়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। আমার মেয়ে এসে আমাকে বললোঃ বাবাই কালা দেনো তোমালে দাকতেথে।
আমিঃ ঠিক আছে আম্মু তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।
মিমঃ আততা বাবাই।
ফ্রেশ হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই ড্রয়িং রুমের সোফায় আমার নজর গেল। বসে থাকা লোকদের দেখে আমি সিড়িতেই দাঁড়িয়ে গেলাম। কারণ তারা হলেন,,,,,,
গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম পর্ব ২৭ - শেষ পর্ব
ফ্রেশ হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই ড্রয়িং রুমের সোফায় আমার নজর গেল। বসে থাকা লোকদের দেখে আমি সিঁড়িতেই দাঁড়িয়ে গেলাম। কারণ, তাঁরা হলেন আমার মা, বাবা, ভাই,ভাবি আর একটা ছোট্ট বাচ্চা। তাদের দেখার পরে আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। কতদিন পরে আজ সেই চেনা মুখ গুলো দেখতেছি। যদিও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের দেখেছি। কিন্তু সেই দিনের দেখা আর আজকের দেখার মধ্য অনেক পার্থক্য।
আমাকে দেখার পরে আমার আম্মু দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললোঃ কেমন আছিস বাবা? আমাদের কথা কি তোর একবারের জন্যও মনে পড়েনি? শরিরের অবস্থা কি করেছিস? ( মুখ চোখে চুমু খেতে খেতে)
আমিও আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললামঃ তোমাকে ছাড়া কি করে আমি ভালো থাকি আম্মু।
অনেক্ষণ ধরে কান্না করার পর আম্মু একটু শান্ত হলো। তবে আজকের এই কান্না হলো কোনো হারানো রত্ন কে ফিরিয়ে পাওয়ার কান্না। যেটা কষ্টের কান্না নয়, সেটা হলো সুখের কান্না।
আমি আম্মুকে নিয়ে আব্বুর আর যারা ছিল তাদের সামনে যাতেই আব্বু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ আমাকে মাফ করে দাও বাবা। আমি বিনা দোষে তোমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি।(কান্না করতে করতে)
আমিও আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ ছিঃ আব্বু কী বলতেছে এসব ছেলের কাছে কখনো বাবা মাফ চায়? আর আমি তোমাদের অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি।
সাহিদের আব্বু সাহিদের কথা শুনে আরো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলো। মনে মনে ভাবতেছে, আমার ছেলে আমাদের এতো ভালোবাসে আর আমরা তার উপর একটা মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি।
আমি আব্বু কে ছাড়িয়ে দিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম। কতদিন পরে আজকে আমাদের দুই ভাইয়ের একসাথে দেখা। ভাইয়া কান্না করতে করতে বললোঃ প্লিজ সাহিদ তুই আমাদের ক্ষমা করে। আমরা না বুঝে তোকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছি।
আমিঃ ভাইয়া আমি তোমাদের সকলকেই ক্ষমা করে দিয়েছি। কারো প্রতি আমার রাগ নেই। আমার যেকেউ হলে তাকে এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে হতো। সো বাদ দাও এসব।
কি করবো বলেন তারা হয়তো না বুঝে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তারা ভুল বুঝে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে তাদের দেওয়া ভালোবাসার কাছে তাদের দেওয়া কষ্ট নিমিষেই হার মানিয়ে নিবে।
সেই ছোট্ট বেলায় আমি যখন স্কুলে পড়তাম, তখন আব্বু আমাকে তার ঘাড়ে করে স্কুলে দিয়ে আসতেন। যদিও গাড়ি ছিলো। আবার যখন স্কুল ছুটি থাকতো তখন তিনি আমাকে তার ঘাড়ে নিয়ে শিশুপার্কে নিয়ে যাতেন। আমার কে আনন্দ দেওয়ার জন্য নিজেই আমার সাথে খেলতেন।
আম্মুর কথা আর কি বলবো। আম্মু ও আমাকে ভাইয়ার থেকে বেশিই ভালোবাসাতো। যদিও একটা মিথ্যা কারণে তারা আমাকে ভুল বুঝেছিলো, কিন্তু আমার বাবা মায়ের জায়গায় যেকোনো বাবা মা থাকলে একই কাজ করতো। আমার মনেও তাদের প্রতি একটা অভিমান ছিল। যেই অভিমানের জন্য আমি তাদের কাছে ফিরে যেতে পারিনি। কিন্তু গতকাল সামিয়ার কথার দ্বারা সেই অভিমান আমার মন থেকে দূরে চলে গেছে। যদি আমার ছেলে এইরুপ মিথ্যা নাটকের ( রিপার) সম্মুখীন হতো আর আমি সেই মুহূর্তে কী করতাম। নিশ্চয় এই রকমই করতাম, যেটা আমার বাবা মা আমার সাথে করেছে। এসব ভেবে বুঝলাম আসলে মা বাবার এখানে কোনো দোষ নেই। তাছাড়া তারাও অনেক কষ্ট পেয়েছে। জীবনের শেষ পর্যায়ে তাদের একটু হাসি খুশি রাখা প্রতিটা সন্তানেরা কর্তব্য।
এর পরে আমি ভাবির কাছে এসে বললামঃ ভাবি কেমন আছো?
ভাবি একটা মুচকি হেসে বললঃ আগে ভালো ছিলাম না। কিন্তু এখন আমার ভাইকে পেয়ে ভালো আছি। এই কি অবস্থা করেছো শরিরের ( কপালে চুমু দিয়ে)? আমার জা (সামিয়া কে উদ্দেশ্য করে) তোমার ঠিক মত সেবা যত্ন করে না নাকি?( সামিয়ার দিকে তাকিয়ে)
ভাবির কথা শুনে আমার বাসাতে হাসির রোল পড়ে গেল । আমি আর সামিয়া মাথা নিচু করে আছি।
আমি লজ্জা লজ্জা মাখা মুখে বললামঃ আরে ভাবি তেমন কিছু না।
ভাবিঃ বুঝি বুঝি দেবর জি সব বুঝি।
আমিঃ আচ্ছা ভাবী এই বাচ্চাটাকে ( ভাইয়ার কোলের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে) কে?
ভাবিঃ এটা হলো তোমার একমাত্র আদরের ভাতিজা আব্দুল্লাহ আল রাফি চৌধুরী।
আমিঃ বাহহ খুব সুন্দর তো।
ভাবিঃ দেখতে হবে ভাতিজা টা কার ?
আমি মুচকি হেঁসে বললামঃ হুমম।
আব্বুঃ এসব কথা এখন বাদ দিয়ে এখন বলো তোমরা বিয়ে কবে করেছো?
আব্বুর কথা শুনে তেমন অবাক হলাম না। কারণ যে কেউ আমাকে আর সামিয়া কে দেখে মনে করবে আমরা দুজনে হাজবেন্ড এবং ওয়াইফ।
আমি আব্বুকে বললামঃ আব্বু আমরা এখনো বিয়ে করিনি।
আব্বুঃ কীহহহ তাহলে সামিয়া এখানে কেন? ( আবাক হয়ে)
সামিয়াঃ আসলে আংকেল,,,,,,,,, ,,,,,,, এরপরে সামিয়া সব কিছু বললো।
আম্মুঃ যাক খুব ভালো। তাহলে আমরা ধুমধাম করে বিয়ে দিতে পারবো।
ভাবিঃ ঠিকই বলেছেন আম্মু। তাইতো বলি আমার দেবরজির শরির এমন কেন?
ভাবির কথা শুনে আবার সবাই হাসতে লাগলো। সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি মাথা নিচু করে মুচকি মুচকি হাসতেছে।
আমি লজ্জা পেয়ে সোফা থেকে উঠে আব্দুল্লাহ কে রেখে রুমের দিকে আসার জন্য পা বাড়াতেই আমার মেয়ে এসে(এতক্ষণ নেহার সাথে রুমে ছিলো) আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমিও ওকে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললামঃ কি হয়েছে আম্মু?
মিমঃ বাবাই এই লোতদুলো তে?
মিমকে আমি আমার আম্মুকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা হলো তোমার দাদি। ভাইয়াকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা তোমার বড় আব্বু। ভাবিকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা তোমার বড় আম্মু। আর ছোট বাচ্চাকে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা হলো তোমার বড় ভাইয়া আব্দুল্লাহ আল রাফি।
এরপরে আমি আমার আব্বু কে দেখিয়ে দিয়ে বললামঃ এটা তোমার দাদু।
মিম খুশি হয়ে আমার কোল থেকে নেমে আব্বুর কোলে উঠে যায়ে বললোঃ তি মদালে আমাল দাদু আতে লে, আমালে ঘুলতে নিয়ে দাবে লে। আমালে চকলেত ( চকলেট টা একটু স্পষ্ট ভাবে বলতে পারে) তিনে দিবে লে,,,। ( হাত নাড়াতে নাড়াতে)
আমার আব্বুঃ কিন্তু তোমাকে তো চিনলাম না আপু (মিমকে)?
মিমঃ আমার নাম মিম হাতান। আমাল বাবাইয়েল নাম তাহিদ হাতান (সাহিদ হাসান) আল আমাল মামনিল নাম তামিয়া আততার ( সামিয়া আক্তার)। বুদেতো?
আমার আব্বু মিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ হ্যাঁ রে আমার পাকা বুড়ি আমি বুঝেছি।
আব্বুর কথা শুনে মিম খিলখিল করে হেসে দিলো। কেউ কখনো এইভাবে আদর করে কথা বলেনি।
আমি আব্বুকে বললামঃ আমি তোমাদের মিমের সম্পর্কে বলতেছি। মিম তুমি তোমার আন্টিকে ডেকে নিয়ে এসো তো আম্মু।( নেহার কয়েক দিন পর একটা এক্সাম আছে । সে জন্য নেহা এখন রুমে বসে থেকে পড়তেছে।)
মিম ওর দাদুর কোল থেকে নামতে নামতে বললোঃ আততা বাবাই।
মিম নেহাকে ডাকতে যাওয়ার পরে আমি মিমের সম্পর্কে আব্বু আম্মুকে সহ ভাইয়া ভাবিকে সব কিছু বলে দিলাম।
এরপরে আমি বললামঃ আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন মিমকে আমি আমার মেয়ে হিসেবে রাখব। কোনো দিন তাকে বাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবো না। আর তোমাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ তোমরা কখনো আমার মেয়েকে এসব কথা বলবে না।
আব্বুঃ ঠিক আছে। আর আমার নাতনি হিসেবে খুব পছন্দ হয়েছে।
আম্মুঃ আমারো।
ভাইয়াঃ বাবা আমি মিমকে নিয়ে কী ভেবেছি জানো?
আব্বুঃ কী?
ভাইয়াঃ মিমকে আমার রাফির বৌ বানাবো। কী বলো রাফির মা?
ভাইয়ার কথা সকলে হাসলাম। ভাবি হাসতে হাসতে বললোঃ ঠিকই বলেছো। বাড়িতেই বিয়াই বিয়ান পাবো।
ভাবির কথা শুনে আবার হাসতে লাগলাম। কতদিন পরে আজ পরিবারের লোকজন মন খুলে হাসতেছে। ভাবতেই ভালো লাগতেছে।
(পেইজটিকে লাইক দিয়ে ফলো)
আম্মু আমাকে বললোঃ বাবা তুই মিমকে ওর আন্টিকে ডাকতে পাঠালি ওর আন্টি কে?
আমিঃ আম্মু মিমের আন্টি হলো নেহা মানে আমার বোন । আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে একটা হাসপাতালে,,,,,,,,,,,,
এরপরে সব কিছু বললাম।
কথা শেষ হতেই দেখি নেহা মিমকে কোলে নিয়ে নিচে নামতেছে। নেহা এসে আমার পাশে বসলো।
আমি নেহাকে বললামঃ নেহা এটা হলো আমার আব্বু। এরপরে একে একে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।
নেহা আমার আব্বুকে বললোঃ আসসালামুয়ালাইকুম আংকেল কেমন আছেন?
আমার আব্বুঃ কষে একটা চড় মারবো বেয়াদব মেয়ে আংকেল কী হ্যাঁ আজ থেকে বাবা বলে ডাকি বাবা বুঝেছিস?
নেহা আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বললোঃ হ্যাঁ বাবা বুঝেছি।
আব্বুঃ এই পাগলি মেয়ে আর কখনো কান্না করবি না।
এরপর আম্মু নেহাকে কাছে টেনে নিয়ে আম্মু গলা থেকে একটা হার খুলে পড়িয়ে দিয়ে বললোঃ বাহ আমার মেয়েকে তো খুব মানিয়েছে।
নেহা অনেকদিন পরে এমন একটা মায়ের আদর পেয়ে নিজের আবেগ কে আর ধরিয়ে রাখতে না পেরে আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে লাগলো।
( আরো বিভিন্ন ধরনের গল্প পড়তে চাইলে পেইজটিকে লাইক দিয়ে ফলো করেন)
আম্মু নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললোঃ আর যেন কখনো আমার মেয়েকে কান্না করতে না দেখি।
নেহা চোখের পানি মুছে বললোঃ ঠিক আছে আম্মু।
আম্মুঃ গুড গার্ল।
এরপরে ভাইয়া নেহাকে কাছে ডেকে পাশে বসিয়ে নেহাকে বললোঃ কোন ক্লাসে পড়িস বোন? আমি কিন্তু তোকে তুই করে বলবো।
নেহাঃ সমস্যা নেই ভাইয়া। আমি এবার মেডিকেল দ্বিতীয় বর্ষে।
ভাইয়া নেহার কপালে চুমু দিয়ে বললোঃ তাহলে আমাদের পরিবারের মধ্যে ডাক্তার আর মাস্টার আসলো।
ভাবীঃ ঠিকই বলেছো।(দাঁত কেলিয়ে হেসে)
ভাইয়া বললোঃ আমার ভাই যে আমাদের এতো কিছু উপহার দিবে তা ভাবতেই পারিনি। প্রথমে একটা ফুটফুটে মিষ্টি ভাতিজি। এখন আবার একটা বোন।
আম্মুঃ আমিও খুব খুশি হয়েছি এদের দুইজন কে পেয়ে।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর আমি মিম আর আব্দুল্লাহ আল রাফি কে আমার কাছে ডাকলাম।
দুজনেই আমার কাছে আসার পরে আমি মিমকে বললামঃ আম্মু এটা তোমার ভাইয়া। আর আব্বু এটা তোমার আপু। দুইজনে খেলা করো আচ্ছা।
মিমঃ আততা বাবাই।
মিমকে রাফি কে বললোঃ ভাইয়া তোমাল নাম তি?
রাফি মিমকে বললোঃ আমাল নাম আব্দুল্লাহ আল লাফি তৌওধলি। তোমাল?
একি আমার ভাতিজাও তো দেখি আমার মেয়ের মতো অস্পষ্ট ভাবে কথা বলে। বাহ এদের স্বামী স্ত্রীর তো দেখি এখন থেকেই মিল আছে 😎😎😎😎।
মিমঃ আমাল নাম মিম হাতান।
এরপরে ওরা দুজন বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে লাগলো। মিম বলতেছে আমাল বাবাই আমাতে চকলেত দেয় আদল তলে। রাফিও তার বাবাকে তাকে কি দেয় তা বলতেছে।
একটু পরে সামিয়া এসে আমাদের নাস্তা করার জন্য ডাকলো। আমরা সকলেই নাস্তা করতে বসলাম। সামিয়া আর ভাবি দাঁড়িয়ে থেকে খাবার প্লেটে তুলে দিচ্ছে। মিম আর রাফি ওদের দাদির কাছে বসেছে। ওদের খাইয়ে দিয়ে আম্মু নেহাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার সোফায় বসলাম।
( বিভিন্ন ধরনের গল্প পড়তে চাইলে স্বপ্নবিলাসী গল্পের সমাহার পেইজটিকে লাইক দিয়ে ফলো করেন)
আব্বু আমাকে বললোঃ সাহিদ তোদের সব কিছু প্যাক করে নে। আজ থেকে আমাদের সাথে থাকবি।রেডি হয়ে নে।
আমিঃ বাবা আমি তো এখন যেতে পারবো না আমার অফিস আছে।
আম্মুঃ আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। কত দিন পরে তোকে কাছে পেয়েছি আর ছাড়তে চাচ্ছি না। তুই এখন আমাদের সাথে থাকবি।
আমিঃ কিন্তু,,,
আমাকে আর বলতে না দিয়ে ভাইয়া বললোঃ কোনো কিন্তু নয়। তুই আজ আমাদের সাথে যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল। আর হ্যাঁ নেহা ফোন তুইও বের হ। আজ থেকে তুই আমাদের সাথে থাকবি।
সামিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দেখি করুন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মানে তার যাওয়ার মতামত আছে। এছাড়াও অনেক দিন হয়ে গেল সামিয়া বাসাতে যায়নি। আর নেহার ও একটা মা বাবার প্রয়োজন। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে আমি বললামঃ ঠিক আছে চলো।
আমি রুমে এসে প্রয়োজনীয় পোশাক গুলো আর কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্যাক করে নিলাম।এর পরে তিশাকে ফোন করে বললাম আমি একমাসের জন্য রাজশাহীতে যাচ্ছি অফিসটা সামলে রাখতে। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাতে বললাম।
তিশা হ্যাঁ বললো।
আর আমার তিশার উপর যথেষ্ট বিশ্বাস আছে যে সে সব ভালো ভাবে দেখা শুনা করবে। এরপরে এতিমখানার ম্যানেজারের সাথে কথা বলে ল্যাকেজ নিয়ে নিচে আসলাম।
একটু পরে আমার মেয়ে ওর মা আর ওর আন্টি একসাথে নিচে আসলো।
বাসা থেকে বের হয়ে আমি দাড়োয়ান চাচাকে বলে গাড়ি নিয়ে বের হলাম রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। আমার গাড়িতে আছে সামিয়া, নেহা আর ভাবী।
আর ভাইয়ার গাড়িতে আছে মা, বাবা, মিম,আব্দুল্লাহ আর ভাইয়া।
দীর্ঘক্ষণ ধরে ড্রাইভ করার পর পৌঁছে গেলাম প্রান প্রিয় বরেন্দ্র ভুমি রাজশাহীতে। বাসায় পৌছে আমি আমির রুমে গেলাম। ভাবি নেহাকে নেহার রুম দেখিয়ে দিলেন। আর সেখানে সামিয়া আর মিমও গেছে।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আমি মিম আর সামিয়া বের হলাম সামিয়াদের বাসায়। নেহা আসেনি ওর শরীর ক্লান্ত। তাই রেস্ট নিচ্ছে।
(সবাই পেইজটিকে লাইক দিয়ে ফলো করেন।)
হবু শ্বশুর বাড়ি পৌঁছানোর পরে তাঁরা তাঁদের মেয়ে এবং সঙ্গে একটা কিউট নাতনি কে পেয়ে খুশি হয়ে গেছে।
শ্বশুর বাড়ি জামাই আদর পাওয়ার পরে আমি মিমকে নিয়ে আমার বাসায় আসলাম। সামিয়ার আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি নিয়ে আসিনি। কারণ, সামিয়ার মা বাবা তাদের মেয়েকে অনেক দিন পর আজকে পেয়েছে। তারাও ওর সাথে কিছু কথা বলবে আড্ডা দিবে এই জন্য আনিনি।
বাসায় এসে মিম রাফি কে দেখতে পেয়ে ওর সাথে গার্ডেনে খেলতে গেল। আমি একটু রেস্ট নিয়ে বের হলাম বন্ধুদের সাথে দেখা করতে। তাদের একটা জায়গার ঠিকানা দিলাম।
আমি সেখানে পৌঁছানোর পরপরই ওরা দুজন মানে রাফি আর সিফাত আসলো। ওদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ ধরে আড্ডা দিলাম । আড্ডা দিতে রাত প্রায় আটটা বেজে গেল। ওদেরকে বিদায় দিয়ে কিছু ফুচকা আর কিছু চকলেট নিয়ে বাসায় আসলাম।
বাসায় এসে কলিং বেল বাজাতেই ভাবি এসে দরজা খুলে দিল। বাসায় ভিতরে ঢুকে দেখি সামিয়ার বাবা, সামিয়ার মা, আমার বাবা, আমার মা আর ভাইয়া সোফায় বসে থেকে কি যেন আলোচনা করতেছে।
আমি সামিয়ার মা বাবা কে সালাম দিয়ে সিঁড়িতে আমার রুমে যাওয়ার জন্য উপরে উঠতেই আব্বু আমাকে দাঁড়াতে বললো।
আমিও দাড়িয়ে গেলাম।
আব্বু আমাকে বললোঃ সাহিদ এই মাসের পাঁচ তারিখে তোমার আর সামিয়ার বিয়ে। এই বিষয়ে তোমার কোনো আপত্তি আছে?
আমিঃ না বাবা কোনো আপত্তি নেই।
সামিয়ার বাবাঃ আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তো আর সমস্যা নেই।
তাঁরা আরো কিছু কথা বললো তা আমি না শুনে আমার রুমে আসলাম। রুমে ঢুকে দেখি সামিয়া, নেহা, মিম আর রাফি বেডে বসে থেকে আমার ল্যাপটপে কী যেন দেখতেছে।
সামিয়া আমাকে দেখতে পেয়ে ল্যাপটপ রেখে আমাকে বললোঃ কোথায় গিয়েছিলে?
আমিঃ বন্ধুদের সাথে দেখা করতে।
সামিয়াঃ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নাও।
আমি আর কথা না বলে ফ্রেশ হতে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে সামিয়া আর নেহাকে কিছু ফুচকা দিলাম আর কিছু রেখে নেহাকে তা ভাবিকে দেওয়ার জন্য বললাম।
আর চকলেট গুলো মিম আর রাফি কে দিলাম। ওদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সকলে ডিনার করতে গেলাম।
দুই পরিবার খুব আনন্দ ডিনার সেরে ফেললাম। ডিনার শেষে সামিয়া, সামিয়ার মা বাবা ওরা ওদের বাসায় চলে গেল।
আমিও ওদের বিদায় দিয়ে রুমে আসলাম। জার্নি করার ফলে শরীরটা বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। আর মিম ওর দাদা দাদির কাছে শুয়ে পড়েছে। আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সকলে মিলে বের হলাম শপিং মলের উদ্দেশ্য। কারণ বিয়ের আর মা দুই দিন বাকি। দীর্ঘ চার ঘন্টা সময় নিয়ে দুই পরিবারের শপিং করা শেষ হলো।
বাসায় এসে গোসল করে লাঞ্চ করে বের হলাম বন্ধুদের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। ওদের দাওয়াত দিয়ে আবার রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশে। ঢাকা পোঁছে সরাসরি অফিসে গেলাম। অফিসে যায়ে সকল স্টাফকে দুই দিন ছুটি দিলাম। আর আমার বিয়ের দাওয়াত দিয়ে আসলাম।
এরপরে এতিমখানায় যায়ে বাচ্চাদের দেখে আবার রওনা দিলাম রাজশাহীতে। বাসায় আসতেই রাত হয়ে গেল। ফ্রেশ হয়ে ডিনার করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু কথা বলে রুমে আসলাম। রুমে এসে সামিয়া কে ফোন দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
এইভাবে ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল একটা দিন। আজকে গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টা বেশ আনন্দেই কেটে গেল। সামিয়া আর আমার এক জায়গায় হলুদ সন্ধ্যার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। হলুদ সন্ধ্যা শেষে সামিয়ারা ওদের বাসায় চলে গেল। আর আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
আজকে আমার বিয়ে। ভাবতেই নিজেকে কেমন জানি বর বর লাগতেছে😏😏😏😏।
আমরা বাসা থেকে রওনা দিলাম সামিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে। আমার গাড়িতে আছে নেহা, মিম, ভাবি, রাফি, সিফাত, ইকবাল, শাকিব আর রিয়াদ। হ্যাঁ ওরাও এসেছে।
সামিয়াদের বাসার গেটের সামনে যায়ে গাড়ি থামানোর। গাড়ি থেকে নেমে গেটের কাছে যাতেই আমার কয়েকটা শালিকা মানে সামিয়ার কাজিনরা গেটে ফিতা বেঁধে দিয়ে বললো, টাকা ছাড়া নাকি আমাদের ভিতরে ঢুকতে দিবে না।
রাফি ওদের বললোঃ কত টাকা চায় আপনাদের?
ওদের মধ্যে একজনঃ পঞ্চাশ হাজার টাকা।
সিফাতঃ কিহহ,, এতো টাকা হবে না। কম করুন।
ওদের মধ্যে আরেকজনঃ না পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে হবে।
আমার বন্ধুরা ওদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি করে অবশেষে বিশ হাজারে নিয়ে আসলো। আমি পকেট থেকে বিশ হাজার টাকা বের করে দিয়ে ফিতা কেটে ভিতরে ঢুকলাম। ভেতরে ঢুকতেই উপর থেকে আমাদের উপর ফুল পড়া শুরু হলো। আর এতোক্ষণ মিম নেহার কাছে ছিলো।
বিয়ের যাবতীয় কার্যকলাপ শেষ করে সামিয়ার মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। সামিয়া ওর মা বাবার কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় প্রচুর পরিমাণে কেঁদেছে। এর আগে কখনো এমন ভাবে কান্না করতে দেখিনি। আর হ্যাঁ বিয়েতে প্রিন্সিপাল স্যার মানে সামিয়ার মামাও এসেছিলেন।
গাড়িতে পুরো রাস্তা সামিয়া আমার কাঁধে মাথা রেখে কেধেছিলো ছিলো। আমিও তাকে নিষেধ করিনি। কারণ সে তার মা বাবাকে ছেড়ে। অন্যজনের কাছে চলে যাচ্ছে এতে কাঁদায় স্বাভাবিক।
বাসায় পৌছে গাড়ি থেকে নেমে দরজার কাছে যাতেই আম্মু এসে সামিয়া কে বরণ করে নিলো। নেহা আর ভাবি সামিয়া কে আমার রুমে নিয়ে গেল।
আর আমি বন্ধুদের সাথে ছাদে গেলাম। ছাদে বেশ কিছুক্ষণ ধরে আড্ডা দিতেই আম্মু এসে ডেকে গেলো রুমে যাওয়ার জন্য। আমি বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসলাম।
আমার রুমের দরজার কাছে আসতেই দেখি ভাবি আর নেহা দাঁড়িয়ে আছে। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না কেন তারা দাঁড়িয়ে আছে। ওদের পাওয়াটা মিটিয়ে দিতেই ওরা দুজন আমাকে কিছু টিপস দিয়ে চলে গেল। আমি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। আমাকে দেখে সামিয়া খাটে থেকে নেমে এসে আমার পায়ে সালাম দিতে গেলে আমি আটকিয়ে আমার সামনে দাড় করিয়ে বললামঃ আরে পাগলি তোমার জায়গা আমার পায়ে নয় বুকে। ওযূ আছে তোমার?
সামিয়াঃ হ্যাঁ আছে।
আমি আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে দিয়ে বললামঃ ওয়াশরুমে যায়ে চেন্জ করে এসো।
সামিয়াঃ আচ্ছা।
সামিয়া ওয়াশরুমে যাওয়ার পরে আমি আমার ড্রেস চেঞ্জ করলাম। একটু পরে সামিয়া বের হলো। এর পরে দুজন দুরাকাত নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে আমাদের পার্থিব জীবনের জন্য দোয়া করলাম। এর পরে সামিয়া কে কোলে নিয়ে বেডের একপাশে বসিয়ে দিয়ে আমি ওর পায়ের কাছে বসে পকেট থেকে নেকলেস বের করে সামিয়া কে বললামঃ মনে আছে এই নেকলেসটির কথা?
সামিয়াঃ হ্যাঁ এটাতো তুমি মিমির জন্য কিনেছিলে।
আমিঃ নারে পাগলি এটা তোমার জন্যই কিনেছিলাম কিন্তু সেদিন তোমাকে রাগানোর জন্য মিথ্যা বলেছিলাম।
সামিয়া রেগে গিয়ে বললঃ কিহহহ আমি সেদিন কত কষ্ট পেয়েছিলাম জানো? দাঁড়াও আজকে দেখাচ্ছি মজা,,,,,
এরপরে সামিয়া আমাকে তার কাছে টেনে নিয়ে চার ঠোঁট এক করে দিলো। অতঃপর আমরা হারিয়ে গেলাম এক পবিত্র বন্ধনের মাধ্যমে ভালোবাসার অতল গভীরে।
ফজরে ঘুম ভাঙলো সামিয়ার ডাকে। ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। আবার ঘুম ভাঙলো আমার মেয়ের ডাকে।
মিমঃ বাবাই বাবাই ওতো দাদু তোমালে দাকে।
আমিঃ যাচ্ছি আম্মু। আচ্ছা আম্মু তোমার মামনি কোথায়?
মিমঃ মামনি বলআম্মুল তাথে লান্না কলতেছে।
আমিঃ ওহহহ আচ্ছা। আম্মু তুমি যাও আমি আসতেছি।
মিমঃ আততা বাবাই।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি সাড়ে নয়টা বেজে গেছে। হায় আল্লাহ লোকে কি বলবে এতক্ষণ ঘুমালে।
ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়ে নাস্তা করলাম। দুপুরের সময় শ্বশুর বাড়ি থেকে লোকজন আসলেন আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য।আমি, মিম আর সামিয়া বের হলাম তাদের সাথে যাওয়ার জন্য।
অতঃপর আম্মু আব্বুর থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম শ্বশুড় বাড়িতে।
সেখানে পৌঁছে আমি সামিয়া আর মিম সামিয়ার রুমে গেলাম। একটু পরে শ্বাশুড়ি মা এসে নাস্তা করার জন্য ডেকে গেলেন।
বেশ ভালো ভাবেই কেটে গেল কয়েক দিন শ্বশুর বাড়িতে। আজকে বাসায় যাবো। তাই আমরা বের হলাম বাড়িতে যাওয়ার জন্য।
আমাদের বাসায় পৌছতে রাত হয়ে গেল। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে এসে ডিনার করে কিছুক্ষণ সকলের সাথে আড্ডা দিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। আমি একপাশে মিম মাঝখানে আর অন্য পাশে।
আমাদের কে এভাবে থাকতে দেখে মিম আমার গলা ধরে বললোঃ বাবাই মামনিও তি আমাদেল তাথে থাকবে?
কোনোদিন আমাকে আর সামিয়া কে এই অবস্থায় মানে একই বেডে দেখে নি তো তাই বলতেছে।
আমি সামিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললামঃ হ্যাঁ আম্মু তোমার মামনি ও আমাদের সাথে থাকবে। নাহলে তোমার ভাইয়া হবে কি করে?
সামিয়াঃ যাহহ দুষ্টু মুখে কিছু আটকায় না।( লজ্জা পেয়ে)
মিমঃ তত্তি আমাল ভাইয়া হবে?
আমিঃ হ্যাঁ আম্মু।
মিম ওর মামনির গলা জড়িয়ে ধরে বললোঃ তি মদালে আমাল ভাইয়া হবেলে।(খুশি হয়ে)
সামিয়া মিমকে জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললোঃ ঘুমাও মা অনেক রাত হয়েছে।
মিমঃ আততা মামনি।
এরপরে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বের হলাম। আড্ডা দিয়ে বাসায় এসে গোসল করে সামিয়া, মিম, নেহা, আর রাফি কে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। ভাবিকে আসতে বলেছিলাম কিন্তু আসবে না।
অনেক্ষণ ধরে ঘোরাফেরা করে বাসায় আসলাম।
আর এই ভাবে আনন্দের মাধ্যমে অতিবাহিত হলো একমাস।
আজকে সবাই একসাথে ডিনার করতেছি । আমি বললামঃ আব্বু আমরা ঢাকাতে যাবো।
আব্বুঃ কেন?(অবাক হয়ে)
আমিঃ আসলে আমার অফিস, হাসপাতাল আর একটা এতিমখানা আছে সেগুলো দেখি শুনা করার জন্য সেখানে থাকতে হবে।
আম্মুঃ না যাওয়া হবে না।
আমিঃ আম্মু বোঝার চেষ্টা করো আর আমি সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন এসে থেকে যাবো।
আম্মু কোনো মতেই রাজি না। এছাড়া সবাই রাজি। আম্মুকে বোঝানোর পরে বললোঃ নেহা কে আমার কাছে রেখে যেতে হবে।
আমিঃ কিন্তু,,
আম্মুঃ কোনো কিন্তু নয়।
আমিঃ ঠিক আছে।
এরপরে নেহা কে টিসি নিয়ে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে দিলাম।
আর আমরা আজকে সকালে ঢাকা যাওয়ার জন্য বের হবো।
আব্বু, আম্মু সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাম ঢাকার উদ্দেশে। তবে আসার সময় নেহা আমাকে জড়িয়ে ধরে প্রচন্ড কান্না করেছিলো নেহা কে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাখে আসলাম। আমার মতে সে আমার মা বাবার কাছেই ভালো থাকবে।
দীর্ঘক্ষণ ধরে জার্নি করে ঢাকায় এসে পৌঁছলাম। গাড়ি পার্ক করে বাসায় ঢুকে রুমে যায়ে ফ্রেশ হলাম। এরপরে আসার সময় যে খাবার নিয়ে এসেছিলাম তা তিনজন খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
সন্ধ্যায় সামিয়ার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। এরপরে একটু ঘোরাফেরা করে তিশাকে ফোন দিয়ে কালকে অফিসে যাওয়ার কথা বললাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে অফিসে গেলাম।আর বাসায় সামিয়া আর মিম আছে। আর হ্যাঁ সামিয়া এখন জব করে না। এখন সংসার সামলায়।
অফিস শেষ করে বাসায় আসলাম।
এরপরে ওদের। মা এবং মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম। আর এই ভাবে ঘোরাফেরা করে, অফিসে কাজ করে, মা বাবার সাথে কিছু সময় দেওয়ার মাধ্যমে কেটে গেল চার বছর।
আজকে সকালে আমরা রাজশাহীতে এসেছি। এখন সকলে ডিনার করার পর বসে থেকে আড্ডা দিচ্ছি।
হঠাৎ, তাওহিদ কান্না করতে করতে আমার কাছে এসে বললোঃ বাবাই আপু আমার তকলেত কেলে নিতে।
আমি মিমকে বললামঃ কি ব্যাপার আম্মু তুমি আমার আব্বুর থেকে চকলেট নিয়েছো কেন?
মিম ওর মায়ের কোলে বসতে বসতে বললোঃ না বাবাই আমি তাওহিদের চকলেট নেয়নি। তাওহিদ আমাকে দিয়েছে আমি খেয়ে নিয়েছি । এখন এসে আবার চাচ্ছে, আমি এখন কোথায় পাবো।
মিমের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। আর তাওহিদ ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করে দিলো। নেহা এসে তাওহিদ ওর কোলে নিয়ে বললোঃ কী হয়েছে আমার জামাইয়ের?
তাওহিদ কান্না করতে করতে বললোঃ দেতো তো থাথুলি মা আমার তকলেত আপু নিয়ে দিততে না।
ওহহহ কিছু বুঝলেন না তো বলতেছি , তাওহিদ হলো আমার আর সামিয়ার ছেলে বয়স তিন বছর। আমাদের বিয়ের এক বৎসর পর জন্ম গ্রহণ করে। আর আমার মেয়ের বয়স প্রায় আট বছর। একটু আগেই তাদের মধ্যে চকলেট নিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তবে তাদের দুই ভাইবোনের ভালোবাসা টা অনেক গভীর।
নেহা এখন একজন ডাক্তার। আর নেহার বিয়েও হয়েছে একজন ডাক্তারের সাথে। তাদের আছে দুই বছরের একটা কন্যা সন্তান। যার নাম মাইশা।
আর আমার ভাইয়ের একটা সন্তান আব্দুল্লাহ আল রাফিই আছে। আর কোনো সন্তান নেয়নি।
সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পরে মিম আর তাওহিদ ওদের দাদা দাদির রুমে গেল থাকার জন্য। আমি আর সামিয়া চলে আসলাম আমাদের রুমে। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বেডে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে সামিয়া এসে আমার বুকের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললামঃ সামিয়া তুমি কি বলতে পারবে
আমাদের এই সুখের সংসারের মধ্যে মূল উক্তি কোনটা?
সামিয়াঃ হ্যাঁ পারবো।
আমিঃ বলো দেখি?
সামিয়াঃ আমাদের এই সুখের সংসারের মূল উক্তি
হলো------- "# EX গার্লফ্রেন্ড যখন ইংলিশ ম্যাম"
---------সমাপ্ত------------ -